প্রেম না অন্য কিছু
প্রেম না অন্য কিছু
সব সময়ের হাসিমুখে রিনা পিসিমা রান্নাঘরে-
কার মোচার ঘন্ট, কার বাঁধাকপিতে মাছের মাথা,
কারো বা পাতলা ডালের সাথে আলুভাজা ই পছন্দ।
মায়ের সাথে রান্নাঘর আর বাড়ির লোকেদের ডাক
সামলাতে ব্যস্ত পিসিমার সকাল থেকে বিকেল গড়ায়।
নিজের সংসার বলে কিছু ছিল না, বোঝার আগেই
বিধবার বেশ তাকে নিতে হয়েছিল। যখন সূর্য পাটে,
যাবার আগের আলো ঘরের দাওয়ায় মাখো মাখো;
পিসিমা গা ধুয়ে, তিলক লাগিয়ে কপালে গায়ে-
পা ছড়িয়ে বসে। নিচে বসে তপন দাদা, ক্ষেতের
কাজ সেরে গা হাত পা ধুয়ে এক থালা ভাত নিয়ে গোগ্রাসে।
প্রতিদিনের এই সময়টা যেন ধীর গতিতে এসে দাঁড়াত,
কারো কোন তাড়া নেই, টুকটাক এক দুটো কথা।
নিস্তব্ধ মায়ায় সেই ক্ষণ রিনরিন প্রেমে জড়ানো,
বিদায়ী রবি যদি আর কিছুটা আগে এসে দাঁড়াত এখানে।
বাতাসের কোনো আড়ম্বর নেই,
শুনিনি জলোচ্ছাসের কোন শব্দ।
কখন ও দেখেছি তপন দাদার কল্কের টান,
পিসিমার দূর থেকে বলা গ্রামের কথার।
উঠোনে ধানেরা রোদ পোহায়, আমার কাজ ঐ
পাখিগুলোকে মাঝে মাঝে শাসন করা।
বৃষ্টিতে দেখেছি দাদা ধরেছে তার ভাওইয়া গানে দোতারা,
পিসি চুল বাঁধে অগোছালো, প্রেমের চোখ খোঁজে গায়ক।
বেশ মনে আছে সেবার দাদা গ্রাম থেকে অনেকদিন পরে ফেরে,
সঙ্গে পরিবার।বউয়ের ঘোমটা ছিল বেশ লম্বা।
ঝড় উঠেছিল সেদিন।রান্নাঘরে বাসনের প্রলাপ,
অযথা হাসির রোল নেই, কারোর পছন্দের খাবারের
মাথাব্যথা ছিল না কারো। তিলক, হুক্কা, দোতারা
আর পড়ন্ত বিকেলে নদীর সাথে ঘাটের কথা হয়নি।
তপন দাদা নতুন বৌ এনে দূর থেকে প্রনাম করেছিল পিসিকে।
দেখেছি অঝোর ধারা পিসিমার মনে, সে প্রেম না অন্য কিছু।