নব্বই দশকের দুপুর 🌱
নব্বই দশকের দুপুর 🌱
#অণু কবিতা #ডায়েরির পাতায়
অলস দুপুরের রোমন্থন, কিছু আধভেজা স্মৃতি,
শব্দের মায়াজাল আর ভাবনার রোমান্টিকতা,
অচেনা শালিকের দল, সব কিছু ভুলে টালমাটাল।
ছাদে শুকনো মরিচের আচার
বারান্দায় শুকাতে দেওয়া শাড়ি ।
ঠাম্মার একগাল হাসি, আর থামে ঠেসান দেওয়া মেয়েদের দল, রাস্তার অলিগলি , অজানা অঙ্কে
দক্ষিণ আর উত্তরের দলাদলি।
ভবানীপুরের ফুচকা, শ্যামবাজারের লস্যি
পাড়ার মহিমবাবু দাঁড়িয়ে নেয় এক টিপ নস্যি।
ওবাড়ির ছাদে দাঁড়ানো কাদম্বরীর খোলা চুল,
দত্তদের ছোট ছেলের কাজের করে দিলো ভুল।
নব্বই দশক মানে বিকেলে ছাদে যাওয়ার
প্রতি অদম্য আকর্ষণ।
নব্বই দশক মানে কল্পনার রাজ্যে
অতীব সুখের সময় কাটিয়ে ফেলা আর
এই নব্বইয়েই জীবনকে প্রথম বুঝতে পারা।
নব্বই মানে বয়ঃসন্ধির জটিল সময়ে ভালো মন্দের পার্থক্য বুঝতে পারা ।
আবার নব্বইকে ভাবলেই
চোখে ভেসে ওঠা বাল্যের সরলতা।
নব্বই দশক মানে শাহরুখ খানের টোল ফেলা,
ভাঙা গালের হাসি দেখে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।
নব্বই দশক মানে তিন গোয়েন্দা আর
কাকাবাবু সিরিজ পড়া,
আর তার মাঝে ‘পূর্ব পশ্চিম’, ‘সাতকাহন’ ও ‘দূরবিন’-এর মতো কঠিন উপন্যাসও পড়ে ফেলা।
নব্বই মানে চিন্তা-চেতনার এক নতুন দুয়ার খুলে
যাওয়া।আর নব্বই দশক মানে বান্ধবীদের সঙ্গে ল্যান্ড ফোনে কথা বলার জন্য মুখিয়ে থাকা আর
মায়ের বকুনি খাওয়া ।
নব্বই দশক মানে বাবার মন ভালো থাকলে মাঝে মাঝে হাতে ১০০ টাকার নোট গুঁজে দেওয়া।
আর দিশেহারা আমার ভেবে কূল-কিনারা না পাওয়া।
নব্বই দশক মানে হিন্দি সিনেমার সমস্ত খুঁটিনাটি নখদর্পণে থাকা।
আর সিনেমা দেখে বই পড়ে অঝোরে চোখের জল পড়ে যাওয়া।
নব্বই দশকে না ছিল সেলফি, না ছিল র্স্মাট বা আইফোন , আর ছিল না সোশ্যাল মিডিয়া ;
ছিল তবু হৃদয়ের কথা সুন্দর করে বলার চেষ্টা।
নব্বই দশকে ব্যবহার হতো না ‘সেরাম’, ‘প্যারা’, ‘বিএফ’, ‘ব্রেক আপ’, ‘ক্রাশ খাওয়া’ এসব শব্দ ।
শুধু ছিল নিঃশর্ত ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অস্তিত্ব ।
নব্বই দশক মানে চিঠি লেখার জন্য লুকিয়ে
জায়গা খোঁজা, আর কলেজ ক্যাম্পাসে আর্কষণের মনোযোগ হয়ে ওঠা।
নব্বই দশক মানে আকাশে নীল চিঠির ডাক,
স্বপ্নগুলোকে গুছিয়ে রাতটাকে মশারির ভাঁজে
তুলে রাখ।
মাঝে মাঝেই ধূ ধূ রোদে উদাসী হাওয়ায় পথ চলা।
কোন এক সরস দুপুরে টেবিলের পাশে গরম কফির কাপে চুমুক দিয়ে মনকে মনের কথা বলা।
নব্বই দশকের স্মৃতি অতীতকে নিয়ে একা,
সবাই মিলে একসাথে আনন্দে, মিলেমিশে থাকা।।
(কলমে--পিয়ালী মুখোপাধ্যায়)