মাতৃত্বের পিছুটান🤰
মাতৃত্বের পিছুটান🤰
রিক্তা আজ সত্যিই রিক্ত
সে আজ অপরাধী ,
সবার চোখে সে আজ
সংসার ফেরারি আসামি ।
সংসারের পিছুটান ছাড়িয়ে এসে
নিজের মতো ভালো করে বাঁচার পথই
আজ তাকে বেশ্যা, নষ্ট মেয়ে ছেলে
চরিত্রহীন , কামুক ইত্যাদি বলে
কিছু সংখ্যক মানুষের কাছে আখ্যায়িত ।
রিক্তা সত্যিই অপরাধী
তার অপরাধ বলতে
ভালোবেসে ভালোবাসাকে
বুকের মাঝে বাঁধতে চাওয়া ।
কলেজ জীবনে অনেকের মাঝে
সেই মানুষটির প্রেমে পড়া ,
যার সে তেরো সংখ্যক প্রেমিকা ।
সেই মানুষটিকে একেবারে
নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা ,
যার বহুগামিতায়
কোনোরকম অনীহা ছিল না ।
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই রিক্তা অপরাধী
সব জেনেও কেন ভালোবাসলো ?
দিনের পর দিন নিত্যনতুন যন্ত্রনা
মুখ বুজে মেনে , চোখ বুজে শুধু
ভালোবাসাই রিক্তার অপরাধ ।
সেই ছেলেটির সাথে বিয়েও হোলো
দুবছর পর জন্ম নিল
একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান ,
শ্বশুর - শ্বাশুড়ী - স্বামী - পুত্র
এই ছিল রিক্তার সংসারের পিছুটান ।
রিক্তার সংসার ? কি তা ?
শ্বশুর - শ্বাশুড়ীর সেবা ,
স্বামীর সেবা , মদ্যপ অবস্হায় স্বামী ফিরলে
টেনে টেনে প্যান্ট খুলে হাফ্ প্যান্ট পড়ানো ,
ভেজা রুমাল দিয়ে মুখ মোছানো ,
ঠিক করে নেশার্ত শরীরটাকে টেনে
ভালো করে শুইয়ে দেওয়া ,
উপহারস্বরূপ বিশ্রী গালিগালাজ
আর গয়নাস্বরূপ প্রহার চিন্হ ,
এই ছিল তার কলেজ থেকে
চোখ বন্ধ করে ভালোবাসার অপরাধ ।
হ্যাঁ, সত্যিই রিক্তা অপরাধী ।
শ্বশুর বাড়িটিকে নিজের বাড়ি
আর শ্বশুর - শ্বাশুড়ীকে নিজের
বাবা - মা ভেবে আপন করে নেওয়া,
এইটা ছিল তার অপরাধ ।
দিনের পর দিন ভালো মানুষের
মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা
ঐ মানুষগুলোকে একটু বেশিই
আপন ভেবেছিল সে ,
হ্যাঁ , এটাই রিক্তার অপরাধ ।
শ্বশুর আর স্বামীর কড়া নির্দেশ
রিক্তা চাকরি করতে পারবে না ,
তার দায়িত্ব সংসার করা ,
বাচ্চা মানুষ করা ,
বাড়ির একমাত্র বৌমার দায়িত্ব পালন ।
প্রতিদিন মুখ বুজে
স্বামীর প্রহার জড়িত ভালোবাসা
আর পাঁচ রোজগারের ক্ষমতা নেই ,
কথা শুনে শুনে দিনযাপন
এই ছিল রিক্তার রোজনামচা ।
বুকের রক্ত দিয়ে একটু একটু করে
সেই সংসারকে আপন করা ,
হ্যাঁ , এটাই রিক্তার অপরাধ ।
রিক্তার অপরাধ ছিল
কলেজের থেকে ভালোবাসা মানুষটিকে
নিজের কাছে ধরে রাখতে চাওয়া ,
নিত্যদিন মুখ বন্ধ করে গঞ্জনা সহ্য করা
বাড়িতে ফিরে যেন আমার
মুখ দেখতে না হয় ,
ডিভোর্স নিতে হলে নেবে কিন্তু
ছেলেকে পাবে না ।
এইসব শোনাই ছিল রিক্তার কাজ ।
রিক্তা ভুলেই গিয়েছিল
যে সন্তানকে সে গর্ভে ধারণ করে ,
বুকের দুধ খাইয়ে , রাত জেগে
একটু একটু করে বড়ো করে তোলে ,
সেই সন্তান তার নিজের নয় ,
স্বামী আর শ্বশুরের বংশপ্রদীপ মাত্র ।
তাই এখন সে সন্তান সুখ বর্জিত ,
সংসার সুখ থেকে বঞ্চিত ,
বৌমার পদ থেকে উৎখাতিত ,
ডিভোর্সি পরিচয়ে পরিচিত ।
হ্যাঁ , দীর্ঘ বছর মুখ বুজে সব মেনে
যেদিন সে প্রতিবাদের ঝড় তুললো ,
সেদিন থেকেই সে সবকিছু থেকে বঞ্চিত ।
এক মা আলাদা হয়ে যায় নিজ সন্তান থেকে
আসলে স্বামীটি নিজেই নিজের যোনিতে
নিজ বীর্যস্খলন করে ,
নিজ গর্ভে দশমাস সন্তান ধারণ করে ,
প্রসবকালীন বেদনা সহ্য করে
জন্ম দিয়েছে নিজের বংশপ্রদীপ ,
তাই সে সন্তান রিক্তার নয় , তার স্বামীর ।
কারণ , সন্তানের জন্মতো স্বামী দিয়েছে !
হ্যাঁ, প্রতিবাদী হওয়াই রিক্তার অপরাধ ।
সংসারের বন্ধন ছিন্ন করে
আজ রিক্তা মুক্ত ,
কিন্তু তাও সে এখনও বেদনাকাতর
মা হয়েও মাতৃত্ব সুখ থেকে বিচ্ছিন্ন ।
বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে আজ সে
সবকিছুর পিছুটান থেকে নির্লিপ্ত ,
তবুও রয়ে গেল মাতৃত্বের পিছুটান ।