গো কাকু
গো কাকু
"তোমার নাম কি গো?"
"তুমি কোন স্কুলে ভর্তি হয়েছে গো?"
"আজকে কি দিয়ে ভাত খেয়েছো গো?"
উঃ বাবারে বাবা! কতোই না "গো" এর ছড়াছড়ি!
কে জানে তার কোথায় যে ছিলো বাড়ি!
এতো বেশী বেশী "গো" বলাটা ওনার খুব দরকারি?
মানুষ টাকে নিয়ে কি হাসাটাই না হাসতাম!
যখন উনি চলে যেতেন, আর আমরা খেলতাম।
কি জানি, বিরক্ত হয়তো একটু হতাম,
আবার একটু একটু লজ্জ্বাও পেতাম।
ভালোও যে একেবারে লাগতোনা,
সে কথাও জোর দিয়ে বলা যাবেনা।
মাঝে মধ্যে অফিসের কাজে হয়তো আসতেন,
বুঝতাম বেশ, উনি যে ছোটদের খুব ভালোবাসতেন।
আমার মেয়ে বেলার সেই আজব মানুষ "গো কাকু"
অনেকদিন না এলেও প্রাণটা করতো আঁকুপাঁকু!
আগেকার ছোটোবেলায় অনেকেই,
হয়তো বলতো তুমি করে কথা সেই সময়েই।
কিন্তু উনি বোধহয় মেয়েদের "মা" ভেবে,
সম্মান করতেন একটু বেশীই।
ছোটো দের শিশু না ভেবে,
মনে হয় একজন মানুষ বলে ভাবতেন।
অচেনা কোনো অতিথি যদি কখনো,
জিজ্ঞেস করতেন, "খুকি, তোমার নাম কি?"
কেন যে অপমান বোধ করতাম, আমিই জানি কি !
অথচ কিছুই বলার নেই,
তখনও তো লম্বায় বড়দের হাঁটুর নিচেই!
কবে যে বড়দের মতো লম্বা হবো, শাড়ি পড়বো,
মাথায় ঘুরতো শুধু ঐ চিন্তাটাই।
কখনও লম্বা বেনী দোলাবো, কখনও খোপা করবো,
এই আশাতে দিন গুণে যাই।
অথচ বাবা সেলুনে নিয়ে চুল "বয়েজ কাট" করায়,
সব মাত্র একটুখানি চুল বড় হলেই !
কখনও আবার ন্যাড়া করিয়ে মাথায় ডিম মাখায়।
ক্লাস ফোর-ফাইভ-সিক্সে এই অত্যাচার থেকে রেহাই,
এর পরেই বন্ধু-বেশী শত্রুরা মাথায় উকুন ছেড়ে দেয়।
নজরুল ইসলামের সাথে তুলনা, চুরচুর হয়ে যায়।
নিজেরাই আমার মাথায় উকুন আছে চ্যালেঞ্জ করে,
খুঁজে বের করে আমাকে দেখায়, আর বোকা বানায়।
দুঃখে আর অপমানের চোখে সত্যিই জল এসে যায়!
মাথা চুলকাতে গিয়ে পড়াশোনা মাথায় উঠে যায়,
ক্লাস সেভেনের ফার্স্ট গার্ল মাথা ন্যাড়া করে দেয়।
কালো কাপড়ের ভেইল পড়ে, রোজ সে স্কুলে যায়।
রাগে নিজের ক্ষতি করেও এভাবেই প্রতিশোধ নেয়।
