এখন নারী
এখন নারী
গ্রামের সেই মেয়েটি যে
প্রথম যেদিন বাস থেকে নেমে
এ কোলাহলপূর্ণ শহরে পা রাখলো
ভিতরে কিছুটা ভয় কিছুটা সংকোচ থাকা সত্ত্বেও
হালকা সুখের আমেজ, সাথে কিছুটা উত্তেজনা ছিল মন জুড়ে।
ঠিক সময়ে ঠিক পৌছে গেল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নিজ ডিপার্টমেন্টে।
জেনে নিলো তার বরাদ্দকৃত হোস্টেলের নাম।
গিয়ে দেখলো এ যেন এক আরেক পৃথিবী।
যার সাথে তার মায়ের বোনা ছোট্ট পৃথিবীর কোন মিল নেই।
এখানে গণরুম আছে যেখানে সবাই মিলে থাকে।
ক্যান্টিন আছে যেখানে নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে খেয়ে আসতে হয়।
এখানে খাবার জন্য কেউ ডাকে না।
প্রথম প্রথম কিছুটা অসুবিধা হলেও
মেয়েটা উচ্চাশার তাগিদে চেপে মেনে নিয়েছিলো অনেককিছুই
চোখ জুড়ে স্বপ্ন ছিল তা বাস্তবায়নের তীব্র আকাঙ্খা ছিল।
তবুও মাঝে মাঝে চোখ নোনাজলে ভরে যেত
বড্ড বেশি একা লাগতো।
কিছু বন্ধু হাত বাড়িয়েছিলো
তারই মাঝে দুএকজন হাত ধরতেও চেয়েছিলো!
কিন্তু প্রথম বর্ষ ছিল
মেয়েটি ভাবলো পড়াটাই হয়তো ভালো!
হঠাৎ এক রাতে কিছু জরুরী কেনাকাটা সেরে হোস্টেলে ফেরার পথে
মেয়েটি এক দল বখাটের পাল্লায় পড়লো
কিন্তু এরাও নাকি বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র
তাদের মধ্য থেকেই একজন সহৃদয় হয়ে তাকে বের করে আনলো
তার পরিচয় দিলো
দিনে দিনে বন্ধুত্ব বাড়লো, আস্হা বাড়লো
মেয়েটিও ভালোবাসার হাত ধরা, কোন অন্য স্বপ্নে বিভোর হওয়া শিখে গেল।
জীবন ভালোই যাচ্ছিলো, সুন্দর স্বপ্নের মত যাচ্ছিলো।
মেয়েটি থার্ড ইয়ারে উঠলো
তার কাছে তার বন্ধুর ব্যবহার কিছুটা অন্যরকম লাগছিলো।
সেই হাত ধরার তীব্র আকুতি যেন আর নেই
তার প্রতি তেমন মনোযোগ নেই
হঠাৎই মেয়েটি উপলব্ধি করলো
তার বন্ধু এখন আর তার নেই।
স্বপ্নগুলো চিৎকার করে বিদ্রোহ করছিলো
কিন্তু মেয়েটি একটিবারের জন্যও চোখের জল ফেলেনি
জীবনের সাথে লড়াই করে এগিয়ে গেছে
বহুবার ইচ্ছে হয়েছিল এ জীবনের সমাপ্তি টেনে দিতে
কিন্তু যাদের স্বপ্ন নিয়ে এতদূর আসা তাদেরকেই বা
কিভাবে নিরাশার রাজ্যে ঠেঁলে দেয়া যায়।
মেয়েটি স্নাতক হলো ।
মেয়েটির বাবা মা মেয়েটির জন্য বিয়ে ঠিক করলো
মেয়েটিও অমত করেনি
তার সাথে সুদূরে পাড়ি জমাতে
চলে গেলো সবকিছু ছেড়ে।
কিন্তু
সেখানেও জীবন খুব সুখের হয়ে উঠলো তা নয়।
নতুন শহরকে আর পুরোনো আবেগ নিয়ে ছুঁলো না মন।
বড় যান্ত্রিক এ শহরে এসে মেয়েটি যেন কিছুটা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করছিলো।
তবুও জীবনকে তো এগিয়ে নিতেই হবে
তার তালে তাল মিলিয়ে সামনে এগোতেই হবে
তাই মেয়েটি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলো।
কিন্তু সব সময় সব কিছু সঠিক নিয়মে ঠিক হয়ে ওঠে না।
ভেঙে পড়বো না, পড়া যাবে না
এ কঠিন মনোবল মনে বেঁচে থাকার এক অকৃত্রিম অনুপ্রেরণা যোগায় ।
মেয়েটি ভাবলো যাক
এবার তাহলে তার স্বপ্নের ডানা ছড়ানো যাক
তাই নিজের স্বপ্নকে তার শাখা প্রশাখা মেলতে দিলো
ভর্তি হলো নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে
পড়াশোনায় বরাবরই ভালো
তাই ফল অন্তত তাকে ঠকায়নি।
বেশ ভালো পদে একটি চাকরি পেয়ে গেলো
কিন্তু জীবন থেকে তাঁর অনেক কিছু হারিয়ে গেলো
কিছু অন্য স্বপ্ন যা মেয়েটি নিজের জন্য দেখেছিলো
তা চিরকালের জন্য হারিয়ে গেলো।
সংসার নামের মিষ্টি শব্দটি এ পৃথিবী থেকে যেন হারিয়ে গেলো।
মেয়েটির আর সংসার করা হয়ে উঠলো না।
তার অভিধান থেকে সে মুছে দিয়েছিলো এ শব্দটি
বড়ো কষ্টে বড়ো অভিমানে।
এখন সে একা একজন সফল নারী।
খুব সুন্দর শহরের ফুটপাত দিয়ে নির্ভয়ে এগিয়ে চলে।
কখনো পিছু ফিরে আর তাকায়নি।
তার পুরোনো শহর তার স্বপ্নে অচেনা ভয়াল দমকা হাওয়াই কেবল জুড়ে দেয়।
মেয়েটি প্রাণ খুলে বাঁচতে চেয়েছিলো
বাঁচার মত বাঁচতে চেয়েছিলো
নিজের জন্যে বাঁচতে চেয়েছিলো।
কিন্তু মাঝে মাঝে জীবনের কাছে
সফলতার অর্থ এখনও খুঁজে বেড়ায়!
তবুও থেমে যায় না
এখনকার নারীরা থামতে জানে না, থামতে চায় না,
পিছিয়ে না পড়ার এক অদ্ভুত অনুভূতি বড়ো তীব্র হয়ে গেছে আজকাল।
কেননা শারীরিক শক্তির প্রকট প্রভাব বারবার তাদের বড়ো দূর্বল করে দিয়ে গেছে।
মনোবল ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে বহুবার।
কিন্তু মেধা দিয়ে সেই অক্ষমতা পূরণ করেছে।
তাই মনের শক্তি দিয়ে সবকিছুকে অস্বীকার করার এক তীব্র বাসনা মনের অজান্তেই জেগে ওঠে।
তাই তারা এখন আর কারও দাসত্ব মেনে নিতে রাজি নয়।
খুশি মনে শৃঙ্খলে জড়াবে
কিন্তু তা বেড়ি মনে হলে তা ভেঙে ফেলার এক উদ্দাম সাহস নিয়ে বেঁচে থাকে এখনকার নারী।