দোতলার সেই ক্লাসরুমটা
দোতলার সেই ক্লাসরুমটা
ছোটোওয়ান, বড় ওয়ান, টু, আর থ্রী!
সাধারনত এই চার বছর অপেক্ষার পর,
অধিকার মিলতো সবার, দোতলায় ক্লাস করবার।
আমার মায়ের কল্যাণে একটা বছর কমেছিলো,
ছোটোওয়ানে ভর্তি নিয়েও,
সব পড়া কমপ্লিট দেখে, প্রথম দিনেই,
আদর করে ডেকে বড় ওয়ানে নিয়ে গেল।
এরপরে যখন আমি ক্লাস টু তখনও মাঝে মাঝে,
ক্লাস থ্রীর কোনো দাদা বা দিদিকে লজ্জা দেওয়াতে,
আমন্ত্রণ পেয়ে গিয়েছি ক্লাস থ্রী এর রুমে বেড়াতে।
তাই এই সব রুমগুলোই ছিলো আমার খুব চেনা,
শুধু সাধের দোতলার কোনও ক্লাসরুমে,
আমার কখনোই কোনোদিন ডাক পড়তো না।
যদিও কোনদিন "সহজ পাঠ" বইটা পড়তে পাইনি,
গল্পের ক্লাস ছিল, তাই আমার অভিযোগ ছিলনা।
ক্লাস থ্রীতেই রান, হেম, বখেয়া, চেইন, চারটে সেলাই,
নীল রুমালে সাদা সুতোতে ফুল তুলে হয়েছিল শেখা।
জানিনা এরপরে আরও কত কিছু ছিল অদেখা!
কালো জুতো জোড়া নিশপিশ করতো সিঁড়ি বাইতে,
তিনটে বছর অপেক্ষায় কাটলো দেখতে দেখতে।
শেষে আমার দোতলায় ওঠার সত্যি সময় হলো!
কিন্তু ঠিক সে সময়ে, বাবা বদলির অর্ডার পেলো।
সেদিন দোতলার ক্লাসরুমে চলছিলো নতুন ক্লাস।
কোনও এক ক্লাস চলাকালীন যেন আমি ভি আই পি,
সিস্টার এর কথায় সিঁড়ি বাইছি, প্রাণটা হাঁসফাঁস!
বন্ধুদের কাছে বিদায় নিতে চলেছি অতি ধীরে ধীরে।
সত্যিই শেষে দোতলার ক্লাসরুমটায় পৌঁছে গেলাম,
কিন্তু ক্লাস করতে নয়, শুধু সবাইকে বিদায় জানাতে।
সেদিন অনেক জোড়া চোখ শুধু আমাকেই দেখছিল,
আমার চোখ দুটো, চোখের জলে ঝাপসা হয়েছিলো।
বন্ধুরা শুনলে হয়তো রাগ করতে পারে,মনটা খারাপ,
ওদের জন্যে নয়, কথাটা যে একশো ভাগ সত্যি !
আমার মনে তখন শুধুই দোতলার ঐ ক্লাসরুমটায়,
ক্লাস করতে না পারার দুঃখ জেগে উঠেছিলো।