চৈতী বৃক্ষ
চৈতী বৃক্ষ
সাদা শাখা-লাল পলা পরা বাঙলার গ্ৰাম্য নারী,
ঘটিতে জল, পরনে লাল পাড় সাদা খোলের শাড়ি।
গ্ৰামের অশ্বত্থ তলায় আসে কিসের আশায়!
গাছের গায়ে তারা ভালোবাসার লাল সুতো জড়ায়,
সারাটা বছর বাড়ির সকলের সুস্থ থাকার কামনায়।
বৃক্ষের মধ্যে সেরা চৈতী বৃক্ষ, অশ্বত্থ তার নাম,
মনের ভক্তি দেখে-বুঝে নাকি পূর্ণ করে মনস্কাম।
স্বস্তি আসুক জীবনে তাদের, কথাটা ভেবে ভেবে,
অশ্বত্থ পাতায় সিঁদুরের স্বস্তিক চিন্হ আঁকে সবে।
শহরের হালখাতায় ধার-বাকি উশুলের তরে,
দোকানদার খাতকদের চিঠি দিয়ে নিমন্ত্রণ করে।
অন্ততঃ কিছু টাকা নিশ্চয়ই তার হয় আদায় ,
তাই তাদের হাতে হাতে মিষ্টির প্যাকেট ধরায়।
অগ্ৰহায়ণ মাসে ধান পাকলে সেবার জমিতে,
পাড়ার লোককে নিমন্ত্রন করেছিলেন ধান কাটতে।
হাউলি খাটতে তারা গিয়েছিলো খুশি মনে,
জানা কথা, মাংস ভাত তারা খাওয়াবে জনে জনে।
খাবার খেতে গিয়ে বাড়ির মুনিষের পড়ছিলো মনে,
বাড়ির ছুয়া-পুয়া গুলান আছে তার বাড়ির কোনে।
শাক, ডাল কোনদিন কি জুটছে ওদের কে জানে !
আজ পয়লা বৈশাখে একটা ঝারি বানালেই ছুটি,
মনিব গিন্নির তুলসী মঞ্চে পুঁতে দিতে হবে দিয়ে খুঁটি।
আজ থেকে একমাস তুলসী তলায় সারাক্ষণ ,
জল পড়বে টপ, টপ,খুশী থাকবে তুলসী দেবীর মন।
গত বছরের পান্তা খাওয়া হলো এ বছরের সকালে,
এবারে মুনিষ রাস্তায় চলছে, মনে মনে কত কিই __
যে সে ভাবছে, জেগে স্বপ্ন দেখছে, হাঁটছে হেলে দুলে।
পথে চৈতী বৃক্ষ, হাত জুড়ে কপালে করলো প্রণাম,
আশী টাকার খাসীর গল্প শেষ, বেড়ে গেছে দাম।
একসময় আশি টাকায় তো, এক কেজি কিনেছিলো,
দিনে দিনে কুলীক নদী দিয়ে অনেক জল গড়ালো।
কোনো চিন্তার দরকার নেই, আজ কত দাম হলো,
ভাগা, ভাগা মাংস থেকে এক ভাগা পছন্দ করে নিল।
আজ কোনো রকম হিসাব কিতাবের নেই দরকার,
ভন্ডুলদা তো সেদিন হাটবারে এ কথাই বলেছিলো।
যত টাকা লাগবে লাগুক , চিন্তার তো কিছু নেই,
ছুয়া-পুয়া আজ পয়লা বৈশাখে খাসীর মাংস খাবেই!
একবছরে হাওলাতের টাকা, সে শোধ করে দেবেই।