চালচিত্র
চালচিত্র
আনমনা বৃষ্টি যখন তখন
আপন খেয়ালে এলোমেলো,
বৃষ্টি ভেজা সোঁদা সুরভী
এক নিমেষে মন কে ছুঁলো।
ঝমঝম বৃষ্টির বাদ্যি বাজছে
মধুর মূর্ছনায়-
উদাস মনে প্রশান্তি এলো
প্রকৃতির স্নিগ্ধ দোলায়।
সহসা মনে উঁকি দিল হারানো শৈশব-
প্রাণোচ্ছল-ছটফটে হাসিমুখের
ছোট্ট সেই দামাল মেয়ে-
সংসারের যাঁতাকলে পড়ে
আজ ধীর-স্থির এক গৃহবধূ-
মুখে মিষ্টি হাসির অবগুন্ঠনে
এক মলিন হাসি আছে ছেয়ে।
বৃষ্টি এলেও আজ মন ভেজা না
হয়না হুল্লোড় করে উঠোনে ভেজা-
ভুলে গেছে সে শিলাবৃষ্টির শিল কুড়ানো
আর বন্ধুদের সাথে ঝড়ে ঝরে পড়া
আম কুড়ানোর মজা।
নাম লেখা কাগজের নৌকো
আর ভাসে না বৃষ্টির জলে,
রঙিন স্বপ্নও আর মেলে না ডানা
মন পবনের নীল গগনে।
ছোটবেলার সেই রান্নাবাটি
আর সাধের পুতুল খেলা,
বাস্তবে তা বড়ই কঠিন
কর্মব্যস্ততায় কাটে সারা বেলা।
প্রভাতে আর হয়না দেখা
পদ্মপাতায় টলটলে সেই শিশির বিন্দু,
সকাল থেকেই সংসারের
পাহাড় প্রমাণ কাজে
হাসি মুখে খায় যে সে হাবিডুবু।
সন্তানের প্রতিপালন আর
দায়দায়িত্বের ঘুর্ণিপাকে
প্রাণোচ্ছল মেয়েটি আজ
রাশভারী গিন্নি।
নিজের জন্য নেই
কোন সময়-নেই কোন ছুটি,
কিশোরি মনটা তার
সংসার যজ্ঞে দিয়েছে আত্মাহুতি।
রামধনুর সপ্ত রংও আর
রাঙায় না তার বিরস চিত্ত,
স্বামী-সন্তান নিয়ে আজ
ভরা সংসার তার
পরিবারই আজ তার চালচিত্র ।
এ যে সব মেয়েরই মনের কথা
সব মেয়ের মনের অব্যক্ত ব্যাথা,
তবু পরিবারের সবাইকে
ভালো রাখার মধ্যেই তার পরিতৃপ্তি-
সবার মুখের হাসি আর সহমর্মিতাই
তার পরম প্রাপ্তি।