অকালবোধন ##শরৎকাল
অকালবোধন ##শরৎকাল
ও মেয়ে, তোর নাম কি?
তোর বাড়ি কোথায়??
আমি?? .... আমি সতী গো ;
আমার বাড়ি ওই যে হেথায় |
এই গহন রাতে, একলা পথে,
চললি কোথা, কোন পানে?
ওই যে, ওই শ্মশান মাঝে যাই গো |
নেশার ঘোরে ভিরমি গেছে মিনসে স্বামী,
মস্ত বড়ো ওই বটের থানে |
জানিস না কি?? কুকুর শৃগাল
কত কিছুই ঘুরছে হেথা চারিধারে |
যদি ধরে জাপটে তোরে !
কি করবি তখন ওরে ?
কুকুর শৃগাল পশুর জাতি,
জাপটে ধরে, সাধ্য কি ?
মানসী বুকে মানব পশুই
বসায় যে তার দাঁত কপাটি |
এত কিছু জানিস !!!.. তবু
ভয় লাগে না ওই প্রাণে ?
গরিব ঘরেই মরণ বাঁচন |
ভয় পেয়ে যাব কোন স্থানে?
এমন সময় চারটে নর,
খাবলে ধরে সতীর শরীর |
লালসার আগুন ঝরায়,
তৈরী করে ক্ষত গভীর !!
আমি এক বৃদ্ধ মানুষ,
সবটা দেখেও চুপ হয়ে রই ;
আমার ঘরেও বাড়ন্ত জুঁই ----
প্রতিবাদী হই, সাধ্য কই??
নীরব সতী, সবটা সয়ে,
নিশ্চুপেতে যায় চলে |
ভস্মীভূত হচ্ছে যেন ---
সব, আজ তার চোখের জলে|
কদিন বাদে দূর্গা পুজো,
পাড়ায় কত কলরব, কত হইচই |
আমার চোখ শুধু সতীরে খোঁজে,
কিন্তু তার দেখা পাই কই?
মনটা আরও বিষিয়ে ওঠে,
যখন দেখি ওই দানব আবার
পাড়ার পূজার হর্তা - কর্তা - বিধাতা !
নারীর শরীর ছিঁড়ে খায় যারা,
নারীর আব্রু লুটে নেয় যারা,
তারাই নাকি পূজা কমিটির কর্তা !
একদিন গেছিলাম মণ্ডপে,
মাকে প্রণাম করতে ;
পারিনি ---- পালিয়ে এসেছি |
মায়ের চেহারায় যে সতীরে দেখেছি ----
দেখেছি, তার চোখে আগুন জ্বলতে |
চারদিন ধরে ঘরে বসে কেঁদেছি,
আর ক্ষমা চেয়েছি সতীর কাছে |
মাটির সতীরে পূজা করি,
আর মানবী সতীরে ঠেলি পিছে !
শত ধিক্কার, এমন মনুষ্যত্বকে !
কিন্তু আবার দুর্বল হয়ে যাই,
যখন জুঁই এসে দাঁড়ায় সম্মুখে |
বিসর্জনের দিন ----
মনটা সত্যিই বেদনায় ভরে আছে |
আজ যদি পাই সতীর দেখা,
তবে ক্ষমা চাইবো তার কাছে |
দূর্গার পায়ে যে অসুর আসীন,
সে তো বিদ্ধ, সে তো মৃত |
কিন্তু সমাজের এই অসুর ----
তারা আজও যে জাগ্রত !
তাদের যে মৃত্যু নাই,
নাই কোনো ভয়,
নাই কোনো ডর ;
তাই তো সতীরা নিশ্চুপে কাঁদে,
ভেঙে যায় তাদের সুখের ঘর |
উঠে পড়ি, এই বুড়ো হাড়ে
শক্তি করি সঞ্চয় |
আজ অবসান হোক অন্যায়ের,
ঘুঁচে যাক সমাজের অবক্ষয় |
হাতের কাস্তেটা নিয়ে ছুটে যাই মণ্ডপে |
দেখি, দাঁড়িয়ে আছে চার নরাসুর
মায়ের সমীপে |
প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে
চার নারী খাদক |
আর বিসর্জনের হেতু বাজনদার
বাজায় তার বাদক |
মাকে প্রণাম করে শুধাই,
মা, এ অসুরের কি মৃত্যু নাই?
শুধু কি মরণ হবে সতীরই লজ্জার?
তবে কেন মা বেশ ধরে আছো
অসুর বিনাশকারী রণসজ্জার?
মা নিশ্চুপ, মুখে হাসি |
কিন্তু মায়ের চোখে এখনও আগুনের তেজ,
এখনও মা যেন ক্রুদ্ধ ;
কিন্তু হঠাৎ করে যা ঘটে গেল,
আমি তাতে পুরো বাকরুদ্ধ !
দেখি, বিশালাকার প্রতিমা হুড়মুড়িয়ে
ভেঙে পড়েছে ওই চার অসুরের ঘাড়ে,
মায়ের ত্রিশূল, খাঁড়া সব বিদ্ধ করেছে ;
মা বধ করতে চেয়েছে যারে |
বিসর্জনের হেতু প্রতিমাকে যেই না দিয়েছে টান|
মৃন্ময়ী সতী জেগে উঠে দেখো,
রেখেছে মানসী সতীর মান |
চার নরাসূরের উপরে দূর্গা
ঝাঁপিয়ে এমন পড়ে !
প্রাণহীন হয়ে রক্ত ঝরায়
নিশ্চুপ ওই ধড়ে |
তাকিয়ে দেখি ----
মায়ের মুখে সতীর প্রতিফলন !
ক্রুদ্ধ সতী শান্ত হয়েছে,
করেছে অসুর নিধন |
সব সতীরই মাঝে যে মা,
তোমার দূর্গা রূপ !
তোমার মাঝেই সকল সতী
ঘুমোচ্ছে নিশ্চুপ |
যেদিন সতী জাগবে আবার,
মেলবে ত্রিনয়ন ;
সেদিনও তো হবে জেনো মা,
তোমার অকালবোধন |