Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sayandipa সায়নদীপা

Drama Horror

2.3  

Sayandipa সায়নদীপা

Drama Horror

অসতী

অসতী

9 mins
2.3K


বুকের ওপর প্রচন্ড চাপ অনুভূত হতেই ঘুম ভেঙে গেল শুভ্রর। গায়ের ওপর থেকে ক্যাথির হাতটা সরিয়ে উঠে বসলো সে, জোরে জোরে কয়েকবার নিশ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো। আজ কয়েকদিন ধরে রাত হলেই এমনটা হচ্ছে, হঠাৎ করে মনে হচ্ছে যেন বুকের ওপর কিছু চেপে বসছে। নাহ! ডাক্তারটা কাল দেখিয়েই নিতে হবে নয়তো বলা যায়না হয়তো বাড়াবাড়ি কিছু হয়ে গেল। বিছানা থেকে নেমে ঢকঢক করে অনেকটা জল খেল শুভ্র।

ক্রিং… ক্রিং… মোবাইলের রিংটা শুনতে পেয়ে ভ্রু কুঁচকে গেল ওর, এতো রাতে কে ফোন করছে! স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো লেখা আছে “মা”। 


“হ্যালো মা, কি হলো?”


“ঘুমোচ্ছিলি বাবু?”


“রাত দুটোর সময় ঘুমোবোনা তো কি করবো?” বিরক্ত গলায় উত্তর দিলো শুভ্র।


“সরি এই সময় তোকে ফোন করার জন্য কিন্তু খুব দরকারি কথা আছে রে।”


“কি?”


“তুই সোমবার আয়।”


“তুমি কি পাগল হয়ে গেছ নাকি? এ কি মেদিনীপুর খড়্গপুর যে আয় বললেই চলে যেতে পারবো?”


“মেদিনীপুর খড়্গপুর নয় বলেই এতো রাতে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি যাতে ঠিকঠাক সময়ে প্লেনের টিকিট কাটতে পারিস।”

“আশ্চর্য! আমি যেতে পারবোনা। আমার অফিসে অনেক কাজ।”

“আমি সবই বুঝতে পারছি বাবু কিন্তু আসতে তোকে হবেই। এখনই লোকে নানান কথা বলতে শুরু করেছে, এবার তুই শ্রাদ্ধে না এলে…”


“লোকে কথা বলছে মানে? কি কথা?”


“এখানের লোককে তো জানিস বাবু। তোকে নিয়েই নানান রকম কথা উঠছে আর কি… তোকেই সন্দেহ করছে অনেকে… মানে…”


“হোয়াট? আমাকে সন্দেহ করছে মানেটা কি? ওই মেয়েটা নিজে মরলো এতে আমাকে সন্দেহ করছে মানে?”


“বাবু কি করবি বল? ওই অসতী মেয়েটা তো এসেইছিল তোর জীবনটা ছারখার করতে। মরার পরেও শান্তি দিচ্ছেনা। যাইহোক, তুই এবারটায় চলে আয়, এরপর থেকে সব আমি সামলে নেব।”

“আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়।”


“বাবু! অবুঝ হোসনা। এখনই সবাই তোর দিকে আঙ্গুল তুলছে এবার ওর বাড়ির লোক যদি পুলিশে কেস ফেস করে দেয় তখন বুঝতে পারছিস তো কি হবে?”


“ওরা নিজেরাই ফাঁসবে তখন কেননা ওরাই জোর করে মেয়েটাকে আমার ঘাড়ে চাপিয়েছিল।”


“উফ! সেসব প্রমাণ করতে তোকে এখানে আসতে হবে আগে। তুই আসবি ব্যস। আমি আর কিছু জানিনা। রাখলাম।”


সিগারেটটা জ্বালিয়ে ছাদে এলো শুভ্র। আজ প্রায় একবছর পর বাড়ি ফিরেছে সে। এমনিতেই এখন ভ্যাপসা গরম তার ওপর দীর্ঘদিন অনভ্যাসের কারণে দেশে ফিরে এই গরমটা যেন আরও অসহ্য লাগছে। ছাদে তাও মৃদুমন্দ বাতাস দিচ্ছে, খানিকটা স্বস্তি। সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে হঠাৎ একটা মড়মড় শব্দ শুনে চমকে উঠলো শুভ্র। পরক্ষণে নিজেই হেসে ফেললো, তাদের নারকেল গাছের ডালগুলো হাওয়ার তালে দোল খেতে গিয়ে ছাদের ধারে ধাক্কা খেয়ে এমন শব্দ করছে। আগে এই শব্দ গা সওয়া ছিল, কিন্তু এখন অনভ্যাসের কারণে এতেই চমকে উঠছে। আকাশের দিকে তাকালো শুভ্র; সরু একফালি চাঁদ ছাড়াও অসংখ্য তারা জ্বলজ্বল করছে সেখানে। ছোটবেলায় আর সবার মতো শুভ্রও বিশ্বাস করতো যে মানুষ মারা গেলে আকাশের তারা হয়ে যায়। ঠাম্মাম মারা যাওয়ার পর কতদিন সন্ধ্যেবেলায় যে এই ছাদে এসে তারাদের ভিড়ে ঠাম্মামকে খোঁজার চেষ্টা করতো করতো তার ইয়ত্তা নেই! আচ্ছা কণাও কি আকাশের তারা হয়ে গেছে? ওখান থেকে সে দেখছে শুভ্রকে? 


 কথাটা মনে হতেই সিগারেটের ধোঁয়া লেগে কাশি শুরু হয়ে গেল ওর। সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েও বিশেষ লাভ হলো না, কাশি থামার নাম নিচ্ছে না। অগত্যা কাশতে কাশতেই নীচে নামার জন্য পা বাড়ালো শুভ্র। কিন্তু…ছাদের ওই কোণায় কে যেন দাঁড়িয়ে আছে না! কথায় বলে অন্ধকারেরও নিজস্ব আলো থাকে, ছাদে আসার পর থেকে আস্তে আস্তে অন্ধকারটা চোখে সয়ে গিয়েছিল কিন্তু ওই কোণটার অন্ধকারটা যেন কিছুতেই ভেদ করতে পারছেনা শুভ্র, শুধু বুঝতে পারছে ওখানে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। এত রাত্রে কে থাকতে পারে? চোর?


 “এই কে ওখানে?” জোর গলায় জিজ্ঞেস করলো শুভ্র, কোনো উত্তর পেলোনা। কিন্তু যে দাঁড়িয়ে ছিল অন্ধকারে সে যেন আরেকটু নড়েচড়ে শুভ্রকে তার উপস্থিতি সম্বন্ধে নিশ্চিত করতে চাইল। ভ্রু কুঁচকে গেল শুভ্রর, চোর হলে সে আবার এমন করে নিজের উপস্থিতি জানান দেয় নাকি! কিন্তু চোর না হলে এতো রাত্রে কে এভাবে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকবে! আত্মীয়দের কেউ কি তবে মজার ছলে ভয় দেখাতে চাইছে শুভ্রকে? কিন্তু যার স্ত্রীর পরের দিন শ্রাদ্ধ তার সঙ্গে কেউ এরকম মজা করবে এরকম একটা কথা চিন্তা করার জন্য নিজের ওপরই বিরক্ত হলো শুভ্র। হতেই পারেনা এমনটা। আরেকটু কাছে এগিয়ে গেল ও, “এই কে দাঁড়িয়ে ওখানে? কথা বলছ না কেন?”


“আমি শুভ্র।”


“ক-ক- কে?!” অতি পরিচিত নারী কন্ঠটা শুনতে পেয়ে অজান্তেই গলা কেঁপে উঠলো শুভ্রর।


“চিনতে পারছো না আমায়?” শ্লেষ মিশ্রিত শব্দ গুলো কেমন যেন যান্ত্রিক ভাবে উচ্চারণ করলো অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়ামূর্তি।


“কে?” উচ্চারণ করার আগেই শুভ্রর গলার স্বর যেন বাতাসে মিলিয়ে গেল।


“কটা দিন তো মাত্র, এরই মধ্যে আমায় ভুলে গেলে শুভ্র? আমি যে কণা।”


“কণা! না না এ হতে পারেনা। কে আপনি? আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন?”


“বিশ্বাস হচ্ছে না আমি কণা বলে?”


“নাহ।”


“তবে চক্ষু কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন করে নাও…”  অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়া মূর্তি আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতে লাগলো শুভ্রর দিকে। শুভ্রর মস্তিস্ক বলছে এটা কণা হওয়া কিছুতেই সম্ভব নয় কিন্তু তাও এক পা দুপা করে ও পিছিয়ে যাচ্ছে কোনো এক অজানা আতঙ্কে। 


কিন্তু কি হলো, কোথায় গেল সেই ছায়ামূর্তি? আর তো দেখা যাচ্ছেনা তাকে! থমকে গেল শুভ্র, নিজের আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো; নাহ! কোথাও কেউ নেই। তবে কি শুভ্রর মনের ভুল ছিল! ছাদে আর বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না, তাড়াতাড়ি নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো শুভ্র। আর তখনই দুম করে যেন মাটি ফুঁড়ে ওর সামনে আবার উপস্থিত হলো সেই ছায়ামূর্তি। আঁ… আঁ… আঁ… ভয়েই হোক কি ঘটনার আকস্মিকতাতেই ধপ করে পড়ে গেল শুভ্র। ছাদের মেঝেতে বোধহয় কিছু পড়ে ছিল, সেটা গিয়ে ফুটলো ওর পেছনে। যন্ত্রণায় আরেকবার কঁকিয়ে উঠলো।


 হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ… গগনভেদী হাসির আওয়াজ শুনে এবার ছায়ামূর্তির দিকে খুব ভালো করে তাকালো শুভ্র। কদিন আগেই অমাবস্যা গেছে তাই চাঁদের আলো বিশেষ নেই কিন্তু ছায়ামূর্তির মুখটা দেখতে শুভ্রর বিন্দুমাত্র অসুবিধা হলো না, “কণা!”


চিৎকার করে উঠলো ও। ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা কণার দেহ থেকে একটা হালকা নীল আলো বেরিয়ে অন্ধকারের মধ্যেও ওর চেহারাটাকে স্পষ্ট করে তুলছে।


“অবশেষে চিনতে পারলে তাহলে?”


“কিন্তু এ কি করে হয়! তুমি তো…”


“আমি তো নেই… হাঃ হাঃ হাঃ…” হাসির আওয়াজটা মেলাতে না মেলাতেই শুভ্রর সামনে থেকে আবার অদৃশ্য হলো কণার শরীরটা। চমকে গিয়ে শুভ্র চোখ ঘষল দুবার, নাহ কণা কেন কেউ কোত্থাও নেই তো! শুভ্র কি তবে পাগল হয়ে যাচ্ছে! ওর কি হ্যালুসিনেশন ঘটছে! চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো ও, মিনিট দুয়েক ওই অবস্থাতেই ভালো করে নিঃশ্বাস নিলো। বুকের ভেতরটা কেমন ঢিপঢিপ করছে। তাড়াতাড়ি নীচে যেতে হবে। চোখটা খুললো শুভ্র। নাআআআআ…. সামনে দাঁড়িয়ে কণা। বাচ্চা ছেলের মতো এবার কেঁদে ফেললো শুভ্র। 


“হাঃ হাঃ হাঃ…” হেসে উঠলো কণা।


“কণা!”


“হুম আমি কণাই, তোমার বিবাহিতা স্ত্রী।”


“কিন্তু তুমি কি করে…!”


“আসলে আমি অসতী তো তাই আমার মুক্তি ঘটেনি।”


“ম-ম- মানে?”


“আমার সাথে কেন এমন করলে শুভ্র?”


“ক-ক… কি করেছি আমি?”


“জানোনা বুঝি? আমার জলে বিষ কে মিশিয়ে ছিল শুভ্র?”


“বিষ! আমি কেন মেশাতে যাবো?”


“আমি কোথায় বললাম তুমি মিশিয়েছ? তাহলে কি তুমিই মিশিয়ে ছিলে?”


“এই তুমি কণা হতে পারোনা, কে তুমি? আমার সাথে প্র্যাংক করছো না? কিছু সায়েন্স ট্রিক ইউজ করে আমাকে ভয় দেখাচ্ছ!”


“এখনও তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না?”


“নাহ, তুমি যেই হও আমাকে ভয় পাওয়ানো এতো সোজা নয়। কণা ওর ওই কেরানী বয়ফ্রেন্ডের জন্য সুইসাইড করেছে এটাই সত্যি!”


“চোপ, একদম চোপ”, গলার আওয়াজে হৃৎপিণ্ডটা লাফিয়ে উঠলো শুভ্রর, “আর একবারও এই মিথ্যেটা উচ্চারণ করবেনা। আমার ডায়েরী চুরি করে এসব মিথ্যে গল্প সাজিয়ে সবাইকে ধোঁকা দিতে পারো কিন্তু আমাকে কেমন করে মিথ্যে বোঝাবে?”


“ডায়েরী!” এ ডায়েরীর কথা জানলো কি করে! তার মানে এ কি সত্যিই কণা! হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো শুভ্রর।


“আমি তোমার কি ক্ষতি করেছিলাম শুভ্র? তোমার সব শর্ত তো বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নিয়েছিলাম, তাহলে?”


“বিনা বাক্যব্যয়ে তুমি এমনি এমনি মেনে নাওনি, পেছনে তোমারও স্বার্থ ছিল।”


“স্বার্থ! হুম স্বার্থই বটে। বিয়ের পনেরো দিনের মাথায় বিদেশের মাটিতে নিয়ে গিয়ে আমার স্বামী আমায় বললো সে নাকি অন্য একজনকে ভালোবাসে, আমি তার থেকে যেন কোনো কিছুর প্রত্যাশা না করি…”


“আর তুমি সেটা মেনে নিয়েছিল কেননা তোমার মনে তো ছিল অন্য পুরুষ।”


“আমার ডায়েরী থেকে আমার প্রাক্তন প্রেমিক সাম্যর কথা জেনে খুনটাকে সুইসাইড প্রমান করতে এবং আমাকে অসতীর তকমা দিতে তোমার আর তোমার মায়ের খুব সুবিধে হয়েছে না? আমার মা বাবাকেও দাবিয়ে রাখতে পেরেছে।”


“তোমার মনে যে অন্য মানুষ ছিল সেটা অস্বীকার করতে পারো?”


“পারিনা। করতে চাইওনা কিন্তু আমি অসতী হলে তুমি কি শুভ্র? সাম্য নাহয় আমার মনে ছিল কিন্তু তুমি তো নিজের বিবাহিতা স্ত্রীকে ফ্ল্যাটে ফেলে রেখে দিনের পর দিন তোমার প্রেমিকার ফ্ল্যাটে রাত কাটাতে তার বেলা!”


“আমি কি করতাম? ক্যাথিকে মা বাবা কিছুতেই মেনে নিতে রাজি হলোনা, বাবা বললো ইন্ডিয়ান কাউকে বিয়ে না করলে দাদু আমাদের প্রোপার্টির পোর্শন দেবে না, তাই…”


“আমাকে বিয়ে করলে নাম মাত্র। শুভ্র, আমি সাম্যকে সেই কলেজে পড়ার সময় থেকে ভালোবাসতাম। কিন্তু তোমাদের বাড়ি থেকে সম্বন্ধ আসার পর সাম্যের কথা বাড়িতে জানাতে মা বললো সামান্য ক্ল্যারিক্যাল পোস্টে চাকরি করা সাম্যর সাথে আমার বিয়ে হলে নাকি পরিবারের সম্মান চলে যাবে। ওদের পছন্দ তোমার মতো ডলারে ইনকাম করা ইঞ্জিনিয়ার। আমি নিজে তো চাকরি করতাম! মাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে দুজনের রোজগারে ঠিক চলে যাবে সংসার। মা শুনলোনা, বললো আমি যদি তোমায় বিয়ে না করি তাহলে মায়ের মরা মুখ দেখবো। আমি তাও সাম্যর কাছে গেলাম। সেও ফিরিয়ে দিল আমাকে, বললো আমি নাকি স্বার্থপরের মতো ভাবছি। যে মা বাবা জন্ম দিল তাদের ভুলে যাচ্ছি। ফিরে এলাম আমি, তোমার সাথে বিয়ে হয়ে গেল। বিদেশে চাকরি করে বর, কত রোজগার তার আমার চাকরি করার কি দরকার! চাকরি ছেড়ে তোমার সাথে বিদেশে পাড়ি দিলাম। 

আমি সাম্যকে ভুলতে পারিনি ঠিকই কিন্তু নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়ে তোমার সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলাম শুভ্র। মানুষ তো জীবনে সব পায়না আমিও পাইনি। কিন্তু তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার কোনো অভিপ্রায় কোনোদিনই ছিলো না আমার। জানতাম ওখানে গিয়ে তোমাকে আমার অতীতের সব খুলে বলবো কিন্তু তার আগেই তুমি…”


“এসব এখন কেন বলছো তুমি?”


“কারণ আমার উত্তর চাই। আমি জানতে চাই কেন ওভাবে মেরে ফেললে আমায়? যে মা বাবার জন্য আমি সাম্যকে ভুলে তোমার সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলাম, লোকের কাছে ভিলেন হয়ে উঠেছিলাম। সবাই ভেবেছিলো তোমার পয়সার লোভে আমি প্রেমিককে ছেড়ে দিয়ে তোমাকে… কেউ জানতে চায়নি আমার মনের কথা, কেউ জানার চেষ্টাও করেনি। তুমি যখন নিয়ে গিয়ে আমাকে চরম আঘাতটা দিলে তখনও আমি বাড়িতে কিছু জানাইনি কারণ ভেবেছিলাম মা বাবা কষ্ট পাবে এতে। কিন্তু তুমি কি করলে! আমাকে মেরে ফেললে শুভ্র! আমার মা বাবার কোলটা খালি করে দিলে! যে মা বাবাকে কষ্ট পেতে দেবোনা বলে এতো কিছু সহ্য করেছি নিজে আর সেই মা বাবারই আজ কেঁদে কেঁদে অন্ধ হওয়ার জোগাড়। এই শোকের মধ্যেই তোমার মা ওদের প্রতিনিয়ত যা তা বলে অপমান করে যাচ্ছেন, আমার শ্রাদ্ধের প্রহসণ দেখতে জোর করে টেনে এনেছেন ওদের। কেন শুভ্র?”


“কেননা তুমি নিজের অধিকারের মাত্রা ভুলে গিয়েছিলে। তোমাকে আমার ঘরে থাকতে দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি কি করলে? আমার দরকারের সময় বললে ক্যাথিকে ওই ফ্ল্যাটে থাকতে দেবে না! আমাকে হুমকি দিলে আমার বাড়িতে সব জানিয়ে দেবে বলে!”


“একই ফ্ল্যাটে আমি কিভাবে মেনে নিতাম তোমার প্রেমিকাকে শুভ্র? আমিও তো মানুষ ছিলাম নাকি? তা বলে আমায় মেরে ফেললে!”


“ক্যাথির জবটা চলে গিয়েছিল তাই ও আর ওর অ্যাপার্টমেন্টের রেন্ট দিতে পারছিল না এদিকে আমার পক্ষেও দুটো অ্যাপার্টমেন্ট অ্যাফোর্ড করা সম্ভব ছিলো না তাই…”


“আমায় মেরে ফেললে!”


“বিশ্বাস করো কণা আমি ইচ্ছে করে করিনি মানে মুহূর্তের জন্য মাথায় এমন রোখ চেপে গিয়েছিল… তোমার ঘুম না হওয়ার জন্য ডক্টর যে স্লিপিং পিলস প্রেসক্রাইব করেছিলেন তারই পুরো শিশিটা তোমার জলে গুলে দি…”


“জানি আমি, খুব দক্ষতার সঙ্গে করেছিলে সব। শিশিটায় তোমার একটাও আঙুলের ছাপ ছিলো না তাই সুইসাইড প্রমাণ করতে কষ্ট হয়নি একটুও।”


“আয়াম সরি কণা, বিলিভ মি আমি এরকমটা করতে চাইনি…”


“তাই নাকি শুভ্র?….”


কণা এগিয়ে আসছে ক্রমশ, শুভ্র বসে বসেই পেছাচ্ছে একটু একটু করে…

আ… আ… আ… 

শুভ্রর মা অনেকদিন থেকেই বলতো ওর বাবাকে, “ছাদটা ঘিরে দাও, ঘিরে দাও।” করছি, করবো করেও আর ঘেরা হয়ে ওঠেনি এতদিনেও।


ভ্যাপসা গরমে কারুরই ভালো করে ঘুম ধরেনি তাই হঠাৎ করে কিছু একটা পড়ার আওয়াজ হতেই সবাই ছুটে বেরিয়ে এলো বাইরে। সিমেন্টে বাঁধানো উঠোনটা একটা কালচে তরলে ভেসে যাচ্ছে, তারই মাঝে পড়ে রয়েছে একটা নিথর দেহ, চোখ দুটো তার বিস্ফারিত। সবাই হতভম্ব, আতঙ্কিত; স্বাভাবিক নিয়মেই সবার চোখ আগে গেল সোজা ছাদের দিকে। আর কেউ দেখতে পেলো কিনা জানা নেই তবে কণার মা দেখতে পেলেন ছাদের ওপর থেকে তাঁর মেয়েটা তাঁকে হাত নেড়ে বিদায় জানাতে জানাতে শূন্যে মিশে যাচ্ছে।

(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama