Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Gopa Ghosh

Romance

4.9  

Gopa Ghosh

Romance

আবির গোলাপ

আবির গোলাপ

10 mins
1.2K


স্কুল থেকে ফিরেই সোজা বাড়ি এলো আজ গোলাপ। টিউশনি করতে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু গেলো না। আজ মনটা ঠিক ভালো লাগছিল না। শরীরটাও যুত নেই তাই একটু রেস্ট দরকার ছিল। কিন্তু গোলাপের এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরায় সবাই যে খুব খুশি যে হয়নি তা ও বেশ টের পেলো। আসলে গোলাপ ওর পরিবারে একমাত্র রোজগেরে। বাবা বিক্রম চন্দ্র একসময় জামা কাপড়ের ব্যবসা করতেন কিন্তু নেশার কবলে সে বেশ কয়েক বছর আগেই কর্পদক শূন্য । সারাদিন বাড়িতেই নেশা করে বসে থাকে। মা বাসন্তী গৃহ বধূ। গোলাপের কষ্ট বুঝলেও তার কিছু করার ক্ষমতা নেই। গোলাপের আরো এক ভাই আর বোন আছে তারা গোলাপের থেকে খুব একটা ছোটো নয় দু আড়াই বছরের তফাৎ। ওরা যমজ। গোলাপ সবই বোঝে, ঘরে টাকা আনা ছাড়া তার আর কোনো দাম নেই। মা ছাড়া তার কষ্ট কেউ বোঝে না। গোলাপের ভাই কিরণ আর বোন বকুলের সংসার নিয়ে কোনো চিন্তাই নেই। পড়াশুনা কলেজে গিয়েই থেমে গেছে কিরণের, গোলাপ অনেক বুঝিয়েছিল, বি কম টা কমপ্লিট করে নেওয়ার জন্য কিন্তু দিদির কোথায় কর্ণপাত করে নি। বকুল উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে আর কলেজে ভর্তি ই হয় নি। ওর মতে এর চেয়ে বাড়িতে বসে গানের চর্চা করলে হয়তো একদিন টিভি তে গানের চাম্পিওন শো গুলোতে চান্স মিলতে পারে আর সেটা হলে এত খেটে পড়াশুনা করে গোলাপ যা আয় করে তার থেকে দশগুণ বেশি আয় করবে। এখন আর গোলাপ ভাই বোনের কেরিয়ার নিয়ে কোনো কথা বলে না কারণ ও ভালো করে জানে ওদের কাছে ওর কথার কোনো মূল্য নেই। শুধু মাইনের টাকাটা মাসের প্রথমে মায়ের হাতে দিয়ে একটু খরচ কম করতে বলাটা ওর অভ্যেস হয়ে গেছে। বাসন্তী কোনো উত্তর না দিয়ে রান্না ঘরের কাজে চলে যায়। গোলাপ মাকে এসব বলবে না ভেবেও প্রতি মাসেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ও জানে সংসারে যা টাকা খরচ হয়, তার অধিকাংশ ই বাবার নেশা আর কিরণের হাত খরচা তে চলে যায়। বকুলের গানের টিউশনিতে টাকা দিতে গোলাপের আপত্তি নেই, কিন্তু বন্ধু বান্ধবের সাথে শপিং আর সিনেমা দেখার টাকায় ওর আপত্তি। বাসন্তী ঝামেলার ভয়ে গোলাপের কাছে অনেকদিন এসব চেপে রেখেছিল কিন্তু মাসের মাঝ খানেই সব টাকা শেষ হয়ে যাওয়াতে গোলাপ কে বলতেই হয়। গোলাপ সেদিন কিন্তু বকুলের সাথে খুব শান্ত ভাবে কথা বলে বুঝিয়েছিল। তাতে অবশ্য ফল কিছুই হয় নি, গোলাপ কাজে যাওয়ার পর বাসন্তীর ওপর রাগটা গিয়ে পড়ে বকুলের। মাকে যা নয় তাই শোনায় । বাসন্তীর তার পোড়া কপাল কে দোষ দেওয়া ছাড়া আর কিই বা করার ছিল।

সেদিন বাড়ি ফিরে গোলাপ অবাক হয়ে যায়, কতদিন পর ও সবাইকে এভাবে একসাথে বসে খেতে দেখছে। সকালে স্কুলের চাকরি, বিকালে তিনটে টিউশনি, ফিরতে তো প্রায় দশটা বেজে যায়। এভাবে তো ওর ও ইচ্ছে করে সবাইয়ের সাথে বসে গল্প করতে করতে ভাত খাবে কিন্তু একটা রবিবার ও ওর ফাঁকা থাকে না। একটা কোচিং এ পার্ট টাইম ক্লাস নিতে যায়। শুধু মাইনের টাকায় এত বড়ো সংসার চলে না। তবে ওকে অসময় দেখে শুধু বাসন্তী খেতে খেতে উঠে এলো, বাকিরা ওর দিকে একবার দেখে আবার নিজেদের মধ্যেই মশগুল রইলো। গোলাপ অবশ্য এটা আশা করে না। নিজের ঘরে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নেয়, আজ ওর এক ছাত্রীর জন্মদিন, সেখানে যেতেই হবে, না গেলে রূপসার মা খুব রাগ করবে। আন্টির সাথে ওর ছাত্রীর মা আর টিচার র সম্পর্ক নয়, খুব নিজের একজন বলে মনে করে গোলাপকে। মোবাইল টা বের করে বালিশের পাশে রাখতে গিয়ে দেখে একটা মেসেজ শো করছে ফেস বুকে, একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট। গোলাপ অজানা কারো ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করে না। তবে আজ যে পাঠিয়েছে সে অজানা নয়, ওর বি এড কলেজের বন্ধু আবির। ওরা এক সাথেই পাশ করে বেরিয়েছিলো। আবির আসানসোলের এক স্কুলে চাকরি নিয়ে চলে যায়। গোলাপ তার প্রায় মাস ছয় বাদে মধ্যম গ্রামে এক সরকারি স্কুলে জয়েন করে। এরপর আর ওদের দেখা হয়নি দুজনের। গোলাপের ব্যস্ত জীবনে আবির র স্মৃতি ক্রমশঃ ফিকে হয়ে গেলেও গোলাপ কিন্তু ওর প্রতি এখনও কিছুটা দুর্বল। আবিরের ওকে ভালো লাগতো , সেটা ও খুব ভালো করেই জানত।

আবিরের রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করতেই আবার ম্যাসেজ। " কি রে আমাকে ত ভুলেই গিয়েছি স"

না রে ভুলি নি, তোর মোবাইল নম্বর টা চেঞ্জ হোয়েছে না?

তোর টাও ত তাই?

হ্যা দিচ্ছি দাঁড়া

দুজনের মোবাইল নম্বর দেওয়া র পর আর কিছুক্ষণ চাকরি নিয়ে কথা হয়। আবির এই মাসের শেষে কলকাতায় আসবে, তাই গোলাপকে একবার দেখা করার জন্য খুব রিকুয়েস্ট করলো। গোলাপ কথা দিতে পারলো না, তবে খুব চেষ্টা করবে জানালো।

সেদিন আবির গোলাপের কথা মতো বেশ অনেকক্ষন আগেই কফি হাউসের গেটে হাজির হযেছিল। কিন্তু গোলাপ আসতে পারে নি। ওদের দেখা হলো হাসপাতালে। গোলাপ দেখা করার জন্য বেরিয়েও কিরণের ফোন পেয়ে বাড়ি ফিরে যায়। বিক্রম বাবু হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সারাদিন নেশা করে ওনার শরিরে আর কিছু ছিল না। গোলাপ একদম ভুলে যায় যে আবির কে ফোন করে জানাতে হবে ও আজ যেতে পারবে না। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আবির ফোন করে। গোলাপের যে এই অবস্থায় তাকে ফোন করে ডাকা উচিত ছিল এটাও জানায়। আধ ঘন্টার মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছে যায় আবির। সেই প্রথম গোলাপের বাড়ির লোকেদের সাথে আলাপ হলো আবিরের। কলেজে গোলাপের কাছে অনেক গল্প শুনছিল। বকুল তো আবিরের সাথে আলাপ করে খুব খুশি কারণ আবির খুব ভালো গান করে। ওর একটা গানের গ্রুপ আছে এটা জানার পর তো , আবদার করাও শুরু হয়ে গেলো। "আবিরদা আমাকে কিন্তু তোমাদের গ্রুপ এ মেম্বার করে নিতে হবে, প্লিজ না বোলো না"

সেবার বিক্রম বাবু প্রাণে বেঁচে ফিরে এলেও , চলা ফেরার ক্ষমতা আর থাকলো না। চিকিৎসার টাকা যোগাড় করতে আরো দুটো টিউশনি ধরলো গোলাপ। আবির এখন ওদের বাড়ি প্রায়ই যাওয়া আসা করে, যখন কলকাতায় আসে। গোলাপ যে নিজের জীবন নিয়ে কিছু ভাবে না, সেটা আবির এবারে খুব ভালো করে বুঝতে পারলো। পরিবার ছাড়া ও আর কিছু জানে না। আবির বেশ কয়েকবার মনের কথা গোলাপকে বোঝাতে চেয়েছিল কিন্তু কোনো ভাবে ঠিক এড়িয়ে গেছে। আবির এখন আর এসব নিয়ে ভাবে না। ওর চাকরি আর গান নিয়ে বেশ তরতরিয়ে জীবন টা এগিয়ে যাচ্ছে, আর কি চাই।

বকুল কিন্তু আবিরের গ্রুপ এ মেম্বার হয়েই ছাড়লো। আবির এখন কলকাতায় একটা স্কুলে চাকরিতে জয়েণ করেছে। ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে মাকেও দেশ থেকে নিয়ে এসেছে। এখন আবির সারাদিন অফিস আর গানের চর্চা তেই কাটিয়ে দেয়।

প্রতি রবিবার গ্রুপের সবার সাথে রিহার্সালে র দিন। বকুল আসে কিন্তু আজ পর্যন্ত গোলাপ কোনোদিন আসে নি। আবির অনেকবার আসার জন্য বলেছিলো। "সময়ের অভাব পড়ে যাবো কোনোদিন" বলে এড়িয়ে গেছে।

সত্যি গোলাপ একটু অন্তর্মুখী, আর বকুল ঠিক উল্টো। চেনা থাক কি না থাক, তার সাথে জমিয়ে গল্প করতে ওর জুড়ি নেই।

আবিরের মিউজিক গ্রুপ এ এর মধ্যেই বেশ পরিচিত বকুল।

এভাবেই একটা একটা করে দিন বিয়োগ হচ্ছিল সবার জীবন থেকে। গোলাপ ভুলতে বসেছিলো তারও জীবনে কিছু পাওয়ার আছে। আবির যে তাকে খুব পছন্দ করে ও জানে, কিন্তু এসব নিয়ে ভাবলে ওর চলবে না, ওকে আরো বেশী উপায় করে বাবার চিকিৎসা করাতে হবে, এইসব নানা ভাবনা সব সময় ঘোরে ওর মনে।

আবির র মা বকুলকে বেশ পছন্দ করে। ওর সাথে মাঝে মাঝে কেনাকাটা করতেও বেরিয়ে যায়। গোলাপ কে কোনোদিন দেখে নি, বারবার বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য বকুল কে বলে। বকুল কিন্তু সে কথার কোনো উত্তর করে না। আসলে ও চায় না, দিদি এখানে আসুক। আবিরকে বকুল মনে মনে ভালোবেসএ ফেলেছে। ওর সাথে গোলাপ কথা বলুক এটা ও কিছুতেই চায় না। তাই আবির যখন গোলাপকে ফোন করে, বকুলের রাগে গা জ্বলতে থাকে, কিন্তু কিছু করার থাকে না। আবির কিন্তু এটা লক্ষ্য করেছে, বকুল যে নিজেকে গোলাপের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবে সেটা ও জানে। প্রকাশ করে না।

প্রকাশ কিন্তু একদিন হলো তবে অন্যভাবে। আবিরের মা সেদিন ছেলেকে এবার বিয়ে করার জন্য চিন্তা ভাবনা করতে বললো। এটাও বললো যে মেয়ে তার দেখা হয়ে গেছে। আবির তো অবাক, " তুমি আবার কোথায় মেয়ে দেখলে, এখানে কাকে চেনো তুমি?"

"দেখেছি আর তাকে তোর ও খুব পছন্দ আমি জানি"

"তাই, তা তোমার ওই রাজকন্যা কোথায়

থাকেন শুনি"?

" শোন, কাল আমি বকুলের সাথে ওদের বাড়ি যাবো, হয়তো রাজকন্যা সেখানেই থাকে"

আবির র ফোন এসে যাওয়ায় আর কথা হয় না।

পরদিন বিকেলে বকুল নিয়ে যায় আবিরের মাকে। বাড়িতে সবাই খুব খুশি। এতটা কেউ আশা করে নি। বাসন্তীর কিন্তু মনটা ঠিক সায় দেয় না। সবার সামনে কিছু না বললেও পরে বকুলকে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলে। বকুল তো এই কথায় বাড়িতে হুলস্থুল বাঁধিয়ে দেয়। ও এখনই আবিরকে বিয়ে করবে, অপেক্ষা করতে পারবে না, যদি এতে কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে ও আত্মহত্যা করবে। বাসন্তী চুপ করে যায়।

গোলাপ পরদিন সব জানতে পারে, কিন্তু এ নিয়ে কোনো কথা বলে না। এমনকি মা ওর মত জানতে এলে , ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। বাসন্তী বুঝতে পারে গোলাপের হৃদয় টা ভেঙে চুরমার হয়ে গেলেও মুখে কিছু বলবে না।

আবির মাকে গোলাপের বাড়ি যেতে বারণ করলো না ঠিক, কিন্তু গোলাপ কি এখন ওকে বিয়ে করতে রাজি হবে, এই চিন্তা ওর পিছু ছারলো না। মোবাইল টা তুলে নিয়ে গোলাপকে ফোন করতে যাবে, গোলাপের একটা মেসেজ ঢুকলো " অনেক অভিনন্দন" আবির বেশ খুশি হলে লিখলো "তোকেও, তোর নতুন জীবনের জন্য" আর ম্যাসেজ এলো না। আবির এবার ফোন করলো কিন্তু ফোনটা বন্ধ। একটু অবাকই হলো। একটু আগেও তো মেসেজ পাঠালো আবার বন্ধ করে দিল কেনো। আবির আর গোলাপের ভালোবাসা র প্রকাশ হয়তও কম, কিন্তু অনেকটা ই গভীর। আবির এত বার ওর মনের কথা বোঝাতে গিয়ে ও সফল হয় নি বলে ভালোবাসা কমে যায় নি কারণ গোলাপের জীবনের ঘাত প্রতিঘাত গুলো ও খুব ভালো করে জানে। গোলাপের প্রতিটা কষ্ট এখন ওর মনে আঘাত করে।

ও চায় গোলাপকে নিজের করে নিয়ে ওর জীবনটাকে সুখ শান্তিতে ভরিয়ে দিতে, কিন্তু গোলাপের আরো কিছু সময় দরকার ছিল, কিরণের চাকরি, বকুলের বিয়ে আর সর্বোপরি বাবার সুস্থতা, এগুলো হলেই হয়তো গোলাপ শান্তি মনে আবিরের সাথে কথা বলতে পারতো। একসময় তো আবির ভেবেই নিয়েছিল গোলাপের কোনো প্রেমিক আছে। একদিন ওকে জিজ্ঞেস করতেই বেশ গম্ভীর হয়ে উত্তর দিয়েছিল "হ্যা রে আমি তো কবেই প্রেমে পড়েছি, তবে সে একটা হাঁদা, মেয়ে দের ভালোবাসা বোঝার মত ক্ষমতা নেই,'

সেই হাসি খুশি মেয়ে টা সংসারের যাঁতাকলে পরে এখন পাথরের মত হয়ে গেছে। দশটা কথা বললে একটার উত্তর দেয়। তবে আবির জানে মুখে প্রকাশ না করলেও গোলাপ মন থেকে ভালোবাসএ আবিরকে। ও বকুলকে নিজের বোনের মতো দ্যাখে, গোলাপের বোন আর ওর নিজের বোনের মধ্যে পার্থক্য করে না।

তবে বকুল এখন আগের থেকে অনেকটা শান্ত হয়েছে।

আজ গোলাপের জন্য মনটা খুব খারাপ করছে আবিরের। ভাবলো ফোন করে কোথাও একবার দেখা করবে কিন্তু বাদ সাধ লো বকুল,।

"আবির দা আজ তোমার সাথে একবার বেরোব, কিছু কেনার আছে"

আবির জানে ওর মা বকুলকে নিয়ে কেনাকাটা করতে বেরোয়, হয়তো এবারে যেতে পারবে না, তাই ওকে যেতে বলছে।

"ঠিক আছে ম্যাম, আমি রেডি"

বকুল খুব খুশি হয়। ওরা বেরিয়ে প্রথমে শ্যামবাজার আসে, মায়ের দুটো শাড়ি কেনার ছিল। আরো টুকি টাকি কেনার পর বকুল বললো " আবির দা এবার কিছু খাবো, খুব খিদে পেয়েছে"

"হ্যাঁ আমার ও"

রেস্টুরেন্টে ঢোকার আগেই সেদিন গোলাপের সাথে দেখা। আবির কথা বলতে এগোনোর আগেই গোলাপ ওকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায়।

আবির ফোন করার জন্য মোবাইলটা বের করতেই বকুল বাধা দিয়ে বলে "এখন আবার ফোন করছো কেনো, দিদি ত এইরকমই, তুমি তো ভালো করেই জানো"

হ্যাঁ, জানি বলেই তো ......" থেমে যায় আবির। কিন্তু ওর মনে তখন যে সাইক্লোন কিভাবে সব ওলোট পালোট করে দিচ্ছে তা বকুল কিছুই টের পেলো না।

সেদিন বকুলকে বাড়ি পৌঁছে দিতে আবির গোলাপের বাড়ি এলো। গোলাপের ঘর বন্ধ দেখেই বুঝল বাড়িতে নেই। গোলাপের মা আবিরকে দেখে খুব খুশি হয়ে বলে " এখন তো আমাদের বাড়িতে আর আসই না, কতদিন পর আজ এলে"

না আসলে, স্কুল আর গান নিয়ে এত ব্যস্ত থাকি".....

আবিরের চোখ গোলাপের ঘরের দিকে, এটা বাসন্তীর ও নজর এড়ায় না।

"তুমি গোলাপের ঘরে গিয়ে বসো, আমি চা করে আনছি"

আবির গোলাপের ঘরে গিয়ে বিছানার সামনে চিয়ারে বসে। বকুল বন্ধুর সাথে ফোনে কথা বলতে ছাদে চলে যায়। এর মধ্যেই গোলাপ ফেরে। সোজা ওর ঘরে ঢুকেই আবিরকে চিয়ারে বসা দেখে একটু অবাক হলেও বুঝতে দেয় না।

"কি রে তখন এত করে ডাকলাম, শুনতে পেলি না"?আবির বলেই চিয়ার থেকে উঠে গোলাপের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

"তোদের বিরক্ত করতে চাই নি" গোলাপের শান্ত গলা।

"একটা কথা বল তো, তুই কি বিয়েতে রাজি নয়"?

আবির জানে এসব কথা উঠলেই গোলাপ ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে চাইবে, তাই দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

"আমি রাজি না হলে তোকে কংগ্রাচুলেশন কেনো জানালাম। আর সবসময় আমি বকুলের ভালো চাই।"

এবার কথার মাঝেই থামিয়ে দেয় আবির,

"তোর মনে হয়, আমি বকুলের জন্য মাকে তোর বাড়ি পাঠিয়েছিলাম"?

হ্যাঁ, মাসিমা বকুলের কথাই বলে গেছেন, আর আমি জানি বকুল ও তোকে খুব ভালোবাসে ফেলেছে,"........ এবার গোলাপের গলাটা একটু ধরে আসে। এতক্ষণে আবির বুঝে ফেলেছে গোলাপের ব্যবহার টা এত বদলে যাচ্ছিল কেনো। ও তো মাকে গোলাপের জন্য পাঠিয়েছে ভেবে নিশিন্তে ছিল কিন্তু বকুলের কথা ও চিন্তাও করতে পারে না।

গোলাপ নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলে ওঠে " বকুল ছোটো থেকেই এমন, আমার সব প্রিয় জিনিসগুলো ওর চাই, আমি দিয়ে দিতাম, এখন আমার ভালবাসাও চেয়ে বসলো, কি করবো বল, কষ্ট হলেও এটাও আমি দিয়ে দেবো,"

এবার আবিরের বাঁধ ভেঙে গেলো, " তুই কত স্বার্থপর গোলাপ, নিজেরটাই শুধু ভাবিস, জেনে রাখ ভালোবাসা তুই যাকে হোক দে, কিন্তু আমি শুধু তোকেই চাই"

মুখে রুমাল চাপা দিয়ে চোখের জল আড়াল করতে চায় আবির।

গোলাপের চোখেও জল। জীবনে যা করে নি আজ তাই করলো গোলাপ। দুহাতে আবিরের মুখটা ধরে চোখের জল মুছতে মুছতে বলে

"তুই আমাকে এত ভালবাসিস?"

বেশ কিছুক্ষণ কারো মুখে কোনো কথা নেই। নিজেদের সামলে নিতে যে সময়টুকু লাগে সেটার পর প্রথম নিস্তবধতা ভেঙে আবির বলে " তুই কি ভাবলি, মুখে না বললে আমি কিছু বুঝবো না? তোর ভালোবাসার প্রকাশ কম, কিন্তু অনেক গভীর, আমি সব বুঝতে পারি, এখন আর না করিস না গোলাপ, প্লিজ"

পেছন থেকে বাসন্তী বলে ওঠে " তোমার কোনো চিন্তা নেই আবির, আমি আজই তোমার বাড়ি গিয়ে মা র সাথে সব কথা ফাইনাল করেই আসবো"

গোলাপ বুঝলো মা ওদের কথা সবই শুনেছে। তবু বললো "মা, তুমি চুপ করো, বকুল র কি হবে ভেবেছো"?

মা এবার বেশ জোরে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিল গোলাপকে "তোকে অত সবার চিন্তা করতে হবে না, বকুল এতক্ষণ তোদের কথা সব শুনেছে, ওকে আমি সামলে নেবো"

এর একমাসের মধ্যেই আবিরের সাথে গোলাপের বিয়ে হয়ে যায়। বকুল ও নিজের ভুল বুঝে শুধরে নেয় নিজেকে। সত্যি ভালোবাসা এমনও হয়, যেখানে হৃদয় টা ভেঙে চুরমার হয় যাবে জেনেও ভালোবাসা র মানুষটাকে অন্য কারো হাতে তুলে দিতে পিছপা হয় না, শুধু আশা একটাই তার ভালোবাসা সুখে থাকবে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance