Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sayandipa সায়নদীপা

Drama

5.0  

Sayandipa সায়নদীপা

Drama

ঘুগনি আর মিয়ানো মুড়ির গল্প

ঘুগনি আর মিয়ানো মুড়ির গল্প

5 mins
1.6K


“ইস্কুল” শব্দটা শুনলেই সকলের মনে কমবেশি একধরণের স্মৃতিমেদুরতা কাজ করে, অনেক রকম ভালো মন্দ ঘটনার সমাহার যা অবচেতনে সযত্নে লুকিয়ে রাখা ছিলো সেইসব যেন হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়তে চায় চেতন মনে। তবে এই দিক থেকে আমি খানিক ব্যতিক্রম। আমার স্কুলজীবন সেভাবে ঘটনা বহুল ছিলোনা, অন্তঃত ক্লাস টেন অবধি। আমি খুব একটা মিশুকে ছিলাম না, আজও নেই; হয়তো আমার অনাড়ম্বর স্কুল জীবনের নেপথ্যে থাকা একমাত্র কারণ এটাই। তবুও কিছু স্মৃতি তো রয়েই গেছে মনের অগোচরে, আজ সেই গুটিকতকের মধ্যে থেকেই একটা ভাগ করে নিতে চাই সবার সঙ্গে। নেহাতই তুচ্ছ একটা ঘটনা, তবুও দিনটা ভুলতে পারিনি আজও।


  ইংরেজ আমলে তৈরি আমাদের স্কুলের ক্যাম্পাসটা ছিল দেখার মতন। দিগন্ত বিস্তৃত খেলার মাঠ আর তারই মাঝে জাম, বট, অশত্থ সহ নানান ফুল ফলের গাছ। সব মিলিয়ে প্রাণ ভরিয়ে দেওয়া সবুজের সমাহার। একটুও বাড়িয়ে বলছি না, সত্যিই আমাদের স্কুলের ক্যাম্পাসটা ছিল এরকমই মনোমুগ্ধকর। এই কারণেই হয়তো কাউকে যদি আমাদের স্কুল ছেড়ে অন্য কোনো স্কুলে ভর্তি হতে হত, নতুন স্কুলে কিছুদিনের মধ্যেই সে হাঁফিয়ে উঠত এই সবুজে সবুজ খেলার মাঠ না পেয়ে । আমাদের স্কুলে শিশু শ্রেণী থেকে উচ্চমাধ্যমিক অবধি পড়ার সুযোগ ছিলো একই ক্যাম্পাসে। তবে শিশু শ্রেণী আর প্রাথমিক বিভাগ একসঙ্গে থাকলেও হাইস্কুলটা ছিল অনেকটাই দূরে, মাঝখানে ছিলো কাঁটা তারের বেড়া। প্রাইমারিতে পড়া কালীন বিনা অনুমতিতে কাঁটাতারের বেড়া টপকানো ছিল “বকুনিযোগ্য” অপরাধ। তাই হাইস্কুল বিল্ডিং এর সামনে স্তম্ভের মত আকাশচুম্বী দেবদারু গাছগুলো যতই হাত নেড়ে ডাকুক না কেন, সে ডাক অগ্রাহ্য করা ছাড়া উপায় ছিলো না প্রাইমারীর বাচ্চাদের। তবে বছরে বিশেষ চার পাঁচটা দিন এই সীমা অতিক্রম করা যেত - স্কুলের জন্মদিনে, স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দিন, আর যেত শারদ উৎসবের তিনদিন।


  তা যে সময়ের কথা বলছি তখন আমি পড়ি ক্লাস ওয়ানে। স্কুলে যাওয়া ছিলো আমার চিরকালের অপছন্দের জিনিস, তার ওপর যখন শিশু শ্রেণীর গন্ডি ছাড়িয়ে প্রোমোশন ঘটল ওয়ানে তখন তো প্রোমোশনের সঙ্গে সঙ্গে স্কুলে থাকার সময়টাও দেড় ঘন্টা থেকে বেড়ে হয়ে গেল এক্কেবারে সাড়ে তিনঘন্টা। কি ভয়ানক কান্ড বলুন তো, মনটা তো স্কুলে গিয়ে শুধুই ছটফট করতে আর অবাধ্য ঘড়ির কাঁটাগুলোও শত্রুতা করে নড়তেই চাইতো না একচুলও। আমার আজন্ম মারপিট করার সঙ্গীর তখন ক্লাস টেন। কাজেই স্কুলে দেখা হয়না একটা দিনও। প্রাইমারীর বারান্দা থেকে উঁকি ঝুঁকি মারলে হাইস্কুলের দিদিদের পিঁপড়ের মত, মানে ওই কাঠ পিঁপড়ের মত দেখায় আরকি। তার মধ্যে থেকে পরিচিত জনকে খুঁজে পাওয়া ভার (পিঁপড়েরা সব একই রকম দেখতে হয় কিনা)। তা সে যাইহোক, আমার এই অস্বস্তিকর স্কুল জীবনে একঝাঁক হিমেল বাতাস নিয়ে আচমকা হাজির হল শারদোৎসব। জীবনে প্রথম কাঁটা তারের বেড়া পেরিয়ে আমরা সব রেলগাড়ি করে হাজির হলাম হাইস্কুলে। স্টেজের সামনে বসে অবাক হয়ে দেখছিলাম রঙচঙে আনন্দের উৎসব। আচমকা পিঠে টোকা, পেছন ফিরে দেখি দাঁড়িয়ে আমার “চিরশত্রু”, এই প্রথম তাকে দেখলাম ইস্কুলে, চক্ষুকর্ণের বিবাদ ভঞ্জন হল। সে কানে কানে বলল, “টিফিনের সময় ওই দেবদারু গাছের নীচে চলে আসিস। মায়ের কাছ থেকে টাকা এনেছি সেলে খাবার কিনে রাখব।” বাধ্য ছানার মত ঘাড় কাত করলাম। এইবেলা “সেল” সম্পর্কে একটু বলা প্রয়োজন। শারদোৎসবের তিনদিন আমাদের নিউট্রেশনের দিদিরা বাড়ির থেকে ঘুগনি, আলুকাবলি ইত্যাদি নানাবিধ মুখরোচক খাবার বানিয়ে আনতো, তারপর টিফিনের সময় স্টল করে সেগুলো বিক্রি করতো নিচু ক্লাসের ছেলেমেয়েদের। বেশ একটা মেলা মেলা ব্যাপার চলত ওইসময়। দশজনের বাড়ির দশ রকম রান্না, সেই সঙ্গে পরিমাণ বাড়াতে একটু আধটু ভেজাল… হেঁ হেঁ… সব কিছু মিলে মিশে সেগুলোর যা স্বাদ হত তা বুঝে নিন। তবুও আমাদের কাছে সে ছিল এক বিরাট আনন্দ।


  তা যাইহোক, সেদিন ছিল কপাল মন্দ। একটা বাজতে না বাজতেই আচমকা শরতের পেঁজা তুলোর মত মেঘগুলো কি কারণে যেন গেল বেজায় ক্ষেপে। মুখ কালো করে গর্জন করা শুরু করল। আর আধঘণ্টা যেতে না যেতেই তুমুল বৃষ্টি। আমাদেরকে দুরন্ত এক্সপ্রেস বানিয়ে দিদিমনিরা ছুটলেন প্রাইমারীর ক্যাম্পাসে। কিন্তু আমার তো মন পড়ে রয়েছে দেবদারু তলায়। ক্লাসে ফিরে সবাই ব্যস্ত হয়ে গেল গল্প খেলায় কিন্তু আমার তো সেসব মন নেই। বারবার শুধু বারান্দায় ছুটে যাচ্ছি, বৃষ্টিফোঁটার ধাক্কাধাক্কিতে ধোঁয়ার মত কিছু যেন আচ্ছন্ন করে দিচ্ছে চোখ, দেখতে পাচ্ছিনা কিছুই। বারান্দার বৃষ্টির ঝাঁট এসে লাগছে গায়ে। মাসি দেখতে পেয়ে তেড়ে এলো, “যা ক্লাসে যা, এক্ষুণি সর্দি লাগবে।” ক্লাসে এসেও মন কি টেকে। বুকের ভেতরটায় কেমন যেন হুলুস্থুলস হচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে ছুটে চলে যাই কি আর এমন হবে, একটু তো ভিজবোই শুধু। বৃষ্টিটা কমল। ভাবলাম এবার বুঝি যাওয়ার অনুমতি পাবো, কিন্তু নাহ… অনুমতি আর মিলল না। হাইস্কুলের কয়জন দিদি ছাতা মাথায় তাদের ভ্রাম্যমাণ স্টল নিয়ে হাজির হল এরপর। দূর থেকে ওদের দেখে ভেবেছিলাম ওদেরই মাঝে আমার “চিরশত্রু”ও নির্ঘাত রয়েছে; কিন্তু এক এক করে যখন দিদিরা সবাই ঢুকে গেল ক্লাসে তখন দেখলাম নাহ সে নেই এদের মধ্যে, আশেপাশে কোত্থাও নেই সে। দিদিদের আগমন ক্লাসের মধ্যে চলতে থাকা কোলাহলে অনুঘটকের কাজ করল। সবাই হৈহৈ করে কিনতে লাগল আলুকাবলি, ঝাল মুড়ি। এদিকে ঠিক বাইরের প্রকৃতিটার মতোই আমার চোখেও নাম অকাল শ্রাবণ। সবাই দেখে ভাবল আমার কাছে হয়তো পয়সা নেই, তাই কাঁদছি। কেউ কেউ ভালোবেসে ভাগ দিতে এলো, নিতে পারলাম না আমি। পয়সা আমার ব্যাগেও ছিলো কিন্তু অভিমানে কিছু কিনতে ইচ্ছে করলনা। অভিমানটা ঠিক কার ওপর বুঝিনি- নিজের ওপর না তার ওপর নাকি এই প্রকৃতির ওপর। আবার বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম সেই চিরপরিচিত প্রকান্ড দেবদারু গাছ দুটো যারা এতদিন আমাকে হাত নেড়ে ডেকে এসেছে আজ ওই কালো আকাশটার সঙ্গে ওদের ঘনিষ্ঠতা দেখে মনে হল ঠিক যেন দুটো দৈত্য দাঁড়িয়ে।


  রিকশোয় চেপে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভেবেছিলাম আজ আর তার সঙ্গে কোনো কথা নয়; আমি নাহয় যেতে পারিনি কিন্তু সে কেন এলোনা তা বলে! সে তো বড়, সে তো সব পারে! আমি ফেরার ঘন্টা দুয়েক পর সে ফিরেছিল বাড়ি। এসেই আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিল এক ঠোঙা মিইয়ে যাওয়া ঝাল মুড়ি (এর জন্য মায়ের কাছে “বেআক্কেলে” বলে বকুনিও খেয়েছিল প্রচুর)। পরে শুনেছিলাম হাইস্কুল থেকেও চাইলেই প্রাইমারিতে আসা যায়না যখন তখন, বিশেষ করে বৃষ্টির সময় তো নয়ই। কাজেই সে আসতে পারেনি। তবে এক টিফিন কৌটো ভর্তি ঝোল, দুটো মটর আর পাঁচটা আলু নিয়ে সে দেবদারু গাছের অদূরে বৃষ্টির ঝাঁট অগ্রাহ্য গাড়ি বারান্দায় ঠাঁয় অপেক্ষা করছিল একঘন্টা। তারপর “অমৃত”এর ভাগ না দিতে পারার অনুশোচনায় ঝাল মুড়ি কিনে ফিরেছিল বাড়ি।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama