Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

নন্দা মুখার্জী

Romance

1.9  

নন্দা মুখার্জী

Romance

সঙ্গী

সঙ্গী

10 mins
1.0K


 বাস থেকে নামার সাথে সাথেই লোডশেডিং হয়ে গেলো। গলির ভিতর থেকে অনেকটাই হেঁটে তবে সুচরিতাকে বাড়ি পৌঁছাতে হয়। বাড়ি বলতে যা বোঝায় ঠিক তা নয়। একটা বাড়িতে সে পেয়িংগেষ্ট থাকে। তবু আস্তানা যখন ওটাই; ওটাকেই বাড়ি তো বলতেই হবে।

    দ্রুত একমনে হাঁটতে থাকে।শীতকালের রাত। রাত ন'টাতেই রাস্তা শুনশান। পিছনে কেউ একজন আসছে বুঝতে পারে। কিছুটা হলেও ভয় পেয়ে যায় সুচরিতা।আরও দ্রুত পা চালায়। বাড়ির সামনে এসে পিছন ফিরে দেখে ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে। সরাসরি প্রশ্ন ছোড়ে,

---কি চাই আপনার?

---আমার? আপনার কাছে কিছুই চাইনা। 

---মানে?

---মানে আর কিছুনা; এটা আমার বাড়ি। তা আপনি এই বাড়িতে কি জন্য?

   সুচরিতা আমতা আমতা করে বলে,

---না মানে আমি এই বাড়িতে ....

    কথা শেষ হয়না।বারান্দার লাইট জ্বলে ওঠে। অঙ্কুরের মা হাসি মুখে ছেলেকে বলেন,

---তোর এতো দেরি হোল বাবা? ট্রেন কি লেট ছিলো? 

   সুচরিতা এবার পিছনে চলে যায় অঙ্কুর গিয়ে মাকে প্রনাম করে। সুচরিতা পাশ কেটে তার ঘরের তালা খুলতে ব্যস্ত। একই বারান্দা দিয়ে তার রুমে ঢুকতে হয়।তিনি বলেন,

---তুই রাগ করবি বলে, তুতুন, তোকে জানাইনি। এ সুচরিতা,তুই বাইরে বাইরে থাকিস। ওকে আমি পেয়িংগেষ্ট রেখেছি। একটু কথা তো বলতে পারি। ও ভালো চাকরী করে রে! খুব ভালো মেয়ে। যতক্ষণ ঘরে থাকে আমার কাছেই থাকে। হাতে হাতে কত কাজ করে দেয় আমায়, একদম মেয়ের মত।

---তা উনি কি পুলিশে চাকরী করেন?

  মা একগাল হেসে দেন আর সুচরিতা লজ্জায় মুখ নিচু করে থাকে।

---না না ও পুলিশে চাকরী করেনা। ও একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকরী করে। ভালো রান্নাও করে। কোথায় আমি ওকে রেঁধে খেতে দেবো উল্টে ও আমার সব কাজ সেরে রান্না করে আমার খাবার গুছিয়ে রেখে তবে অফিসে বেরোয়। মনেহয় ও আমার মা।

   মায়ের কথা শেষ হতে না হতেই অঙ্কুর বলে,

---মা, আমি কয়েকদিন থাকবো। আজই বাইরে দাঁড় করিয়েই সব বলে ফেলবে?

    সকালে মা এসে বিছানার ভিতরেই কফি দিয়ে যান। সেটা খেয়েই অঙ্কুর আবার শুয়ে পড়ে। ন'টা নাগাদ উঠে মুখ হাত ধুয়ে পেপারটা হাতে করে রান্নাঘরে উঁকি মেরে মাকে বলে,

---মা,সকালবেলার মত সুন্দর করে এককাপ কফি দাও তো।

   অন্নদাদেবী কফি এনে ছেলের সামনে রেখে বললেন,

---তুতুন সকালের কফিটা সুচরিতা করেছিলো। এখন তো ও বেরিয়ে গেছে তাই আমার হাতের করা কফিটুকুই খা।

---তুমি পেয়িংগেষ্ট রেখেছো নাকি কাজের লোক রেখেছো মা।

---ছি! এ কি কথা? এভাবে বলতে হয়? আমি কি ওকে এসব করতে বলেছি। আমারই তো দু'বেলা ওকে রান্না করে খাবার দেওয়ার কথা। কিন্তু ও কিছুতেই শোনেনা।নিজে যতটুকু সময় পায় আমারই কাজ করে। আমার দরকার ছিলো একজন সঙ্গীর; যার সাথে আমি একটু কথা বলে সময় কাটাতে পারি। তোর বাবার বন্ধু রবিনকাকুকে বলেছিলাম সেই কথা। উনি এসে অনুরোধ করলেন মেয়েটিকে ঘর ভাড়া দেওয়ার জন্য। আমি না বলে দেবো ভেবেছিলাম। কিন্তু খুব করে বললেন উনি। গ্রামে বাড়ি। সকাল পাঁচটায় উঠে ট্রেন ধরে আর বাড়িতে পৌঁছাতে রাত দশটা হয়ে যায় কোন কোন দিন। দিনকাল ভালোনা। তাই একটা ভালো ঘর খুঁজছিলো শুধু থাকার জন্য। প্রথম প্রথম ও হোটেল থেকেই খাবার নিয়ে ঢুকতো। আর দুপুরে অফিস ক্যান্টিনে খেতো। কিন্তু এতো মিষ্টি স্বভাব মেয়েটার ভালো না বেসে পারা যায়না। তখনও ও আমার কাছে এসে টুকটাক কাজ করতো। আমি না বললেও শুনতোনা। তখন আমিই বললাম আমার কাছেই খাওয়ার জন্য। তুই কি ভাবছিস আমি এই খাবারের জন্য ওর কাছ থেকে কোন টাকা নেবো। কেন আমার ছেলে কি কম রোজগার করে নাকি? আমার তো শুধু একজন সঙ্গীর দরকার ছিলো। তুই বিয়ে করলে আমি কি ঘর ভাড়া দিয়ে সঙ্গী খুঁজতাম?

---আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। পুরো রামায়ন শুনিয়ে গেলে। তা রবিনকাকু কি বললো? মেয়েটি ভালো তো? আজকাল কাউকেই বিশ্বাস করা যায়না। যা দিনকাল পড়েছে!

---হ্যাঁ সে সব আমি শুনে নিয়েছি। ওনাদের গায়েরই মেয়ে। শুধু মা আছেন। মেয়েটি পড়াশুনায় খুব ভালো ছিলো। তাই চাকরী পেতে খুব অসুবিধা হয়নি। একটু গুছিয়ে নিয়ে মাকেও নিয়ে আসবে বলেছে। আর আমি নিজেও তো দেখছি সত্যিই মেয়েটি খুব ভালো।

---হ্যাঁ -ওই মেয়ে মেয়ে করে নিজের ছেলেটাকে ফেলে দিওনা।

   অন্নদা দেবী ছেলের কানটা ধরে বললেন,"তাই বল তোর হিংসা হচ্ছে!"


  সেদিন সন্ধ্যা-

   অফিস থেকে ফিরে আসলে অঙ্কুরই গেট খুলে দিয়ে একটু পাশে সরে দাঁড়ায়। এর আগে বার কয়েক মা বলে গেছেন, "কিরে তুই তো বাড়িতে এসে সন্ধ্যা হলেই বেরিয়ে পড়িস। আজ বেরোবি না?"

    কিন্তু মায়ের তুতুন কোন উত্তর করেনি। হয়তো সে নিজেও জানেনা কেন আজ সে বেরোল না। বাস্তব এটাই কিছুতেই আজ তার মন সায় দিলোনা, ভিতর থেকে কোন তাগিদ সে অনুভব করলোনা বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারার। সুচরিতা চুপচাপ ঘরে ঢুকে গেলো। অঙ্কুরও এসে নিজের ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়লো।সুচরিতা ফ্রেস হয়ে মাসিমার কাছে এসে বসে জানতে চায়,

---চা খেয়েছো?  

---কোথায় আর খেলাম! তোর দেরি হচ্ছে এই নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ---তুই বরং তিনকাপ কফি কর।

---কিন্তু তুমি তো এখন চা খাও।আমি তুমি চা ই খাবো।

---এতো পরিশ্রম তোকে করতে হবেনা।

---এমন কি পরিশ্রম? দু'কাপ চা আর এককাপ কফি করতে। তুমি এখানেই বসো আমি করে দিচ্ছি। আর হ্যাঁ, আজ রাতে রুটির তরকারি কি হবে? নলিনী রুটি করে দিয়ে গেছে?

---রাতে ভাবছি ধোকার ডালনা করবো। তুতুন রুটি দিয়ে ভালো খায়। আমিই করবো, তোকে আজ করতে হবেনা। সারাদিন পরিশ্রম করে সবে তো আসলি। আর হ্যাঁ নলিনী রুটি করে দিয়ে গেছে।

   দু'কাপ চা আর এককাপ কফি করে সুচরিতা। কফি নিয়ে মা ছেলেকে দিয়ে আসেন। সুচরিতা ধোকার ডালনার আলু কুটতে কুটতে বলে, "তুমি আমায় দেখিয়ে দাও আমি করছি। সে কোন নিষেধই শোনেনা। অন্নদাদেবী কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বলেন,

---তুই একটা কথা আমার শুনিসনা। তোর মায়ের সাথে আমার দেখা হোক; দু'জনে মিলে তোকে শাসন করবো।

---মাসিমা একটা কথা বলার ছিলো।

---হ্যাঁ বলনা কি বলবি !

   কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সুচরিতা বলে,

---কাল তো শনিবার, আমি অফিসের পথেই বাড়ি চলে যাবো। সোমবার ছুটি নিয়েছি। ভালো একটা ঘর ভাড়া পেয়েছি। এবার মাকে নিয়েই ফিরবো।

  অন্নদাদেবী আকাশ থেকে পড়েন। এই তো একমাসও হয়নি। এর মধ্যেই চলে যাবি? অবশ্য কিছু বলারও নেই। তোর মা ও তো একা রয়েছেন।

---আসলে সবাইকেই বলছিলাম তাই খোঁজটা একটু তাড়াতাড়ি পেলাম। তোমার এখানে আলাদা একটা রান্নাঘর থাকলে তো যেতামই না।

---তুতুনকে বলি ওদিকে একটা রান্নাঘর করে দিতে।

---সেটা তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। এতদিন মা একা একা থাকবেন? তুমি রান্নাঘর শুরু করো আমি আবার চলে আসবো।

---কি বলবো বলতো? মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো।

  রাতের খাবারটা আজ সুচরিতা ঘরে নিয়ে যায়। এ ক'টাদিন সে মাসিমার সাথে গল্প করতে করতে খেয়েছে। অন্নদাদেবী বুঝতে পারলেন সুচরিতা তুতুননের সামনে বসে খেতে চায়না। মার মুখটা গম্ভীর দেখে অঙ্কুর জানতে চায়,

---তোমার কি হয়েছে মা?

---মেয়েটা খাবারটা নিয়ে ঘরে চলে গেলো। আগামীকাল বাড়ি যাবে। একটা ভালো বাড়ি পেয়েছে,মাকে নিয়ে সোমবার ফিরবে।

   বিদুৎ এর সক খেলে যেমন হয় অঙ্কুরের বুকের ভিতরটা ঠিক তেমন করে উঠলো। কিন্তু কতটুকু জানে বা চেনে সে সুচরিতাকে যার চলে যাওয়ার খবরে সে এতটা আঘাত পেলো।' তবে কি আমি সুচরিতাকে ......। কিন্তু প্রেম কি জীবনে এভাবে হঠাৎ করেই আসে? '


  পরদিন সকাল-

   খুব ভোরে অঙ্কুর নিজেই এককাপ কফি করে খেয়ে বেড়িয়ে যায়। খুব তাড়াতাড়ি করে বাইরের কাজগুলো সেরে সুচরিতার অফিস বেরোনোর আগেই ফিরে আসার ইচ্ছা থাকলেও দশটার আগে কিছুতেই সে ফিরতে পারেনা। সুচরিতা অফিস বেরোয় সাড়ে ন'টায়। মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। এই আঠাশ বছর জীবনে কোনদিন যা হয়নি আজ কেন সেটা হচ্ছে অঙ্কুরের বুঝতে আর বাকি নেই। সে যে সুচরিতার প্রেমে পড়েছে এটা তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। কিন্তু সে তো সুচরিতা সম্পর্কে কিছুই জানেনা। যে টুকু সে তার মায়ের কাছে শুনেছে। এ দুদিন কোন কথাও হয়নি। সুচরিতার কথা মনে পড়লেই বুকের ভিতর কেমন যেন করছে। এ অনুভূতি ব্যক্ত করার ক্ষমতা তার নেই। সবসময় তার কথা ভাবতে ভালো লাগছে। বন্ধুরা কেউ কেউ রাস্তায় দেখে কত টিটকারি করলো এবার এসে রাস্তায় বেরোয়নি কেন মাসিমার পেয়িংগেস্টের কারনে কিনা জানতে চেয়ে হাসাহাসি করলো। কিন্তু তার যেন কোন কিছুই ভালো লাগছিলোনা। কতক্ষণে সে বাড়িতে ফিরবে! কিন্তু তাড়াহুড়ো করে এসেও সে সুচরিতার দেখা পেলোনা। অনেকক্ষণ আগেই সে বেরিয়ে গেছে। সে যে অফিস থেকে আজ বাড়ি ফিরবেনা এটা সে মায়ের কাছেই জেনেছে। আপাতত যে কাজটা তার করতে হবে তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলো। মাকে ডেকে বললো,

---মা, চলো একটু ফাঁকা জমিটা গিয়ে দেখি। তুমি মোটামুটি আমায় একটা আইডিয়া দাও কোথায় কি করতে হবে।

---কি ব্যপারে? ঘরের কথা বলছিস? এবারই শুরু করবি?

---হ্যাঁ, তুমি যখন করতে বললে আর আমি বেশ কিছুদিন ছুটি নিয়ে এসেছি এবারই শুরু করি। একটু পরেই মিস্ত্রী আসবে সন্ধ্যার আগেই ইঁট,বালি, সিমেন্ট চলে আসবে।

---ওরে বাবা! তোর তো দেখছি প্রচন্ড তাড়া।

---তাড়া আর কিসের? তুমি বললে কথাটা; বাড়িতে আছি তাই শুরু করে দিলাম।

  কিন্তু অঙ্কুর মনে মনে বললো, 'তাড়া তো আছেই মা। পারলে আমি আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের ন্যায় আজই ঘরটা তুলে দিতাম।' আনুসঙ্গিক সব কাজ মিটিয়ে পরেরদিন থেকেই শুরু হোল সুচরিতার থাকা ঘর লাগোয়া একটি রান্নাঘর।

   দু'দিন মায়ের সাথে গ্রামে কাটিয়ে সোমবার মাকে নিয়ে দুপুরের দিকে সুচরিতা অঙ্কুরদের বাড়িতে আসে। গেট বারান্দার গ্রিল খোলায় ছিলো। সারা বাড়ি বালি আর বালি। বারান্দায় সিমেন্টের বস্তা জড়ো করা। বাড়িতে ঢুকেই সে মাকে নিয়ে সোজা মাসিমার ঘরে ঢোকে। বেলা তখন তিনটে হবে। টেবিলে মা ও ছেলে খাচ্ছে।সুচরিতা ঢুকেই বললো,

---এতো বেলায় খেতে বসেছেন মাসিমা?

 ---ওমা চলে এসেছিস?

---হ্যাঁ মাসিমা। সন্ধ্যার আগেই বেরিয়ে যাবো যা সামান্য জিনিসপত্র আছে টা নিয়ে।

---কিন্তু তোর তো যাওয়া হবেনা মা। তুতুনকে বলেছিলাম একটা রান্নাঘর থাকলে তুই আর দিদি এখানেই থাকতে পারতিস। ও ভালো কথা দিদি কোথায়?

---মা ড্রয়িংরুমে বসে আছেন।

  অন্নদাদেবী তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে হাত মুখ ধুয়ে বসবার ঘরে এলেন। অঙ্কুরের মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে হাত জোর করে নমস্কার করে বললেন,

---আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে।

---আমারও আপনাকে খুব চেনা লাগছে, কেন বলুন তো?

---আপনার নাম টা যদি জানতে পারতাম।

---আমার নাম অন্নদা বসু।

    সোফা ছেলে লাফিয়ে উঠলেন সুচরিতার মা।

---অনু? আমি ঠিকই ধরেছিলাম সই!

---তুই আমার সেই রাধা? দেখ কি কান্ড!

কত যুগ পরে দু'জনের দেখা। বয়সের ভারে ছেলেবেলার সব স্মৃতি ভুলে গেলেও তোর কথা এখনও মাঝে মাঝেই মনে পড়ে। এখনও মাঝে মধ্যে তোকে স্বপ্ন দেখি।

---এইভাবে যে আবার কোনদিন দেখা হবে স্বপ্নেও ভাবিনি।

  দুই সখি পুরনো দিনের গল্পে মেতে উঠলেন। সুচরিতা 'থ'। সে দুই বন্ধুর মিলনের দৃশ্য দেখছে আর ভাবছে বাইরেই বুঝি মানুষের বয়স বাড়ে, ভিতরে তারা সেই কিশোর কিশোরীই থাকে। অন্নদাদেবী সুচরিতাকে বললেন,

---ওরে ও সুচরিতা... যা না মা ফ্রিজ থেকে মাকে একটু মিষ্টি আর জল এনে দে। অনুরাধাদেবীর দিকে মুখ করে বললেন, "মেয়েটা বড্ড লক্ষ্মী রে তোর। এই তোর মনে আছে আমাদের পুতুলের ছেলেমেয়ের বিয়ের কথা? এবার আমরা এ কথা রাখবো কি বলিস?"

   অঙ্কুর খেয়ে ঘরে চলে গেছিলো। সুচরিতাকে রান্নাঘরে যেতে দেখে সেও তড়িঘড়ি রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকলো। সুচরিতা তখন ফ্রিজ থেকে মিষ্টি বের করছে। অঙ্কুর তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো যেন ফ্রিজের ভিতরেই তার কাজ।

---কিছু বলবেন?

---না মানে একটু জল খেতাম।

---কিন্তু এখন ঠান্ডা জল খেলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে।

---তাহলে এমনি জলই খাই।

  কথাটা বলে জল ভরা বোতলের দিকে এগিয়ে গেলো। পুনরায় ফিরে এসে বললো,

---একটা কথা ছিলো।

---হ্যাঁ বলুন।

---ঘরটা পুরো শেষ হতে দিন পনের লাগবে।

---তো ?

---না -তাই বলছিলাম আর কি!

  সুচরিতা হেসে দিয়ে মিষ্টির প্লেট নিয়ে বেরিয়ে গেলো। কিন্তু সে হাসি যে একজনের বুকে সেল হয়ে ঢুকলো তা কি অপরজন বিন্দুমাত্র বুঝতে পারলো?


   সেদিন সন্ধ্যায় -

   মা মেয়েকে বললেন,

---দেখ সূচী আজ তো ওই বাড়িতে যাওয়া আর হলনা। তুই ওখানে ফোন করে বলে দে আমরা ওই বাড়ি নেবোনা। আমরা এখানেই থাকবো।

---তা কি করে হয় মা? আমি কথা দিয়েছি।

 "হয় হয় খুব হয়"। বলতে বলতে অন্নদাদেবী ওদের ঘরে ঢুকলেন।

---তুই ফোন করে বলে দে তোরা যাচ্ছিস না। সই চল আমরা একটু ঘুরে আসি পাশের বাড়ি থেকে।

 কথা কটি বলে তিনি তার সইকে যে চোখ টিপলেন তা সুচরিতার নজর এড়ালোনা। বেরিয়ে গেলেন দুই সখি যেন সদ্য দুই কিশোরী।

  এ ঘরে সুচরিতা একা আর ওদিকে অঙ্কুর ঘরে একা। কিছুক্ষণ পরে অঙ্কুর দরজার এপাশ থেকে বললো,

---ভিতরে আসতে পারি?

---হ্যাঁ আসুন।

---একটা কথা ছিলো। বলছিলাম কি কয়েকদিনের মধ্যেই তো ঘরটা হয়ে যাবে যদি এখানেই আপনারা থেকে .......

  চুপ করে গেলো অঙ্কুর। সুচরিতা বললো,

---যাওয়া তো হচ্ছেনা বুঝতে পারছি। তা আর কিছু বলবেন?

  অঙ্কুর আমতা আমতা করছে দেখে সুচরিতা একটা খাম বের করে অঙ্কুরের হাতে দিয়ে বলে,

---ঘরটা করতে আপনার তো অনেক টাকা খরচ হচ্ছে তাই এটা রাখুন।

---আমি কি আপনার কাছে এটা চাইতে এসেছি?

---তা আপনি তো বললেন না কি জন্য এসেছেন। তাই আমি ভাবলাম...

---আপনার ভাবনার তারিফ না করে পারছিনা।

 রাগে গজগজ করতে করতে অঙ্কুর বেরিয়ে গেলো। মাথায় তখন তার আগুন জ্বলছে। খামটা এনে খাটের উপর রাগ করে ছুড়ে ফেলে দিলো। সেটি খুলে দেখার প্রয়োজনও বোধ করলোনা। অন্নদাদেবী সুচরিতাকে ডেকে বললেন,

---আমি তোর মায়ের সাথে একটু গল্প করি। দুজনে একসাথেই খাবো। তুই একটু কষ্ট করে তুতুনকে খাবারটা দিয়ে দিবি মা?

---ঠিক আছে, খাবারটা দিয়ে দিচ্ছি কিন্তু আমিও তোমাদের সাথেই খাবো।

  অঙ্কুর গিয়ে খাবার টেবিলে বসলো। সুচরিতা অঙ্কুরের গম্ভীর মুখ দেখে অবলীলায় জানতে চাইলো-

---কি হয়েছে আপনার? খামটা দিয়েছি বলে রাগ করেছেন আমার উপর? খুলে দেখেছেন?

---না খুলিনি। মায়ের বাড়ি ওটা আমি মাকেই দিয়ে দেবো রাতে।

  সুচরিতা আঁতকে উঠে বললো,

---না-ওটা আপনার। মাসিমাকে দেবেননা। আপনিই খুলে দেখবেন খেয়ে গিয়ে।

   অঙ্কুর কোন কথা না বলে গম্ভীর মুখে খেয়ে উঠে গেলো। তবে বারকয়েক সুচরিতার সাথে চোখাচোখি হওয়াতে প্রতিবারই সে দেখেছে সুচরিতা মুচকি মুচকি হাসছে। ঘরে ঢুকেই সে খামটা নিয়ে খুলে দেখলো তার মধ্যে একটা চিঠি।পড়তে শুরু করলো ----

অঙ্কুর,

    তুমি যে মুখে কথাটা বলতে পারবেনা আমি জানতাম। মা আর মাসিমা যে আমাদের সুযোগ করে দিলেন এবং সেই সুযোগে তুমি আমার কাছে আসবে এটাও আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। সেটা বুঝতে পেরেই আমি চিঠিটা লেখা শুরু করলাম। তোমার ভাবনাটা মা আর মাসিমার 'পরে ছেড়ে দাও। তোমার আর আমার মনের ইচ্ছাটা তাদেরও মনের ইচ্ছা। এতো লাজুক তুমি? এতো সুযোগ পেয়েও 'ভালোবাসো' কথাটা মুখে বলতেই পারলেনা? তোমার সমস্যাটা আমি সলভ করে দিলাম। হ্যাঁ-আমিও তোমায় ভালোবাসি। এতো তাড়াতাড়ি ঘটনাটা ঘটে গেলো নিজেও বুঝতে পারলামনা। তাই তো পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ এসে যখন দেখলাম ঘর শুরু হয়েছে তখন বুঝতে পারলাম-ভালোবাসাটা আমার একতরফা নয়। কাল অফিস ছুটির পর কথা হবে।

                  ইতি

                    সুচরিতা

  

নীচুতে একটা ঠিকানা দেওয়া। অঙ্কুর চিঠিটা পড়েই দরজা খুলে বেরিয়ে এসে দেখে সুচরিতারা দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়েছে। অগত্যা সেও ঘরে এসে প্রসন্নমনে সকালের কফির অপেক্ষায় শুয়ে পড়ে। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance