Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sayandipa সায়নদীপা

Drama Romance

2.4  

Sayandipa সায়নদীপা

Drama Romance

সুখের ঘরের চাবিকাঠিটা

সুখের ঘরের চাবিকাঠিটা

8 mins
1.7K


বাচ্চাটাকে দেখে ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন সুরমা দেবী। কুহেলীর ডাকে চমক ভাঙলো। কুহেলী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি হলো চমকালে কেন? কি দেখছিলে?”


সুরমা দেবী আঙ্গুল তুলে সামনের দিকে ইশারা করলেন। কুহেলী তাকিয়ে দেখলো ওই তিন সাড়ে তিন বছরের জন কুড়ি বাচ্চা বিভিন্ন রকমের গাছ সেজে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার ধারে। কোনো প্লে স্কুল থেকে এসেছে বোধহয়!


“কি হলো?” অবাক হয়ে জানতে চাইলো কুহেলী।

সুরমা দেবী বললেন, “ওই আপেল গাছ সাজা বাচ্চাটাকে দেখ। অবিকল বাবুর মত না?” 


চোখ বড় বড় করে তাকাল কুহেলী। কয়েকদিন আগেই পিসতুতো ননদ বৃষ্টি ওদের ছোটবেলার অ্যালবাম বের করে দেখিয়েছিল। সেখানেই দেখেছিল স্বয়মের ছোটবেলার ছবি। এতো বছর আগের ছবি বলে স্পষ্ট মুখটা বুঝতে পারেনি তাই এই বাচ্চাটাকে দেখে সত্যিই মনে হল যেন ছোট্ট স্বয়ম দাঁড়িয়ে। মুচকি হাসলো কুহেলী।


হোটেলে ফিরে শ্বাশুড়ি বৌমা বাচ্চাটার কথা ফলাও করে বলতেই স্বয়ম বলল, “শুনেছি পৃথিবীতে একই রকম দেখতে নাকি সাতজন মানুষ থাকে। বাচ্চাটা তাহলে আমার ছোটবেলার ডোপ্যাঙলার।”

“সত্যি বলছি রে বাবু, মনে হচ্ছিল যেন হুবহু তুই দাঁড়িয়ে।” উত্তেজিত হয়ে বললেন সুরমা দেবী। মৃদু হেসে নিজের ঘরে চলে গেলো স্বয়ম, পেছন পেছন এলো কুহেলী।

“চা খাবে?” জানতে চাইলো কুহেলী। কানে হেডফোনটা গুঁজতে গুঁজতে স্বয়মের উত্তর এলো, “না।” 


ব্ল্যাংকেটে আপাদমস্তক মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল স্বয়ম। কানটা লাল হয়ে উঠল কুহেলীর। দরজা খুলে ব্যালকনিতে চলে এলো। শীতটা ভালোই আছে এখানে, তবুও দাঁড়িয়ে রইল ও। আজ ওদের বিয়ের তিনমাস পর স্বয়ম হানিমুনে আসতে রাজি হয়েছে। তবে শর্ত মা বাবাকেও সঙ্গে আনবে। কেমন হানিমুন এটা? অনেক চেষ্টার পরেও সুরমা দেবী আর অম্বরিশ বাবু নিরস্ত্র করতে পারেননি ছেলেকে। অগত্যা আসতেই হয়েছে। স্বয়মের এহেন শর্তে খুব একটা অবাক হয়নি কুহেলী। যে লোকটা ফুলশয্যার রাতে আগে রুমে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়তে পারে তার থেকে এর বেশি আর কি আশা করা যায়! এই তিনমাসে ক’বার তারা শারীরিক ভাবে মিলিত হয়েছে সেটাও গোনা যাবে। আর সবচেয়ে মজার কথা লাজলজ্জার মাথা খেয়ে প্রত্যেকবার এগিয়ে গিয়েছে কুহেলীই। আশ্চর্য রকমের নিরাসক্ত এই লোকটা। কিন্তু কেন? শারীরিক ত্রুটি যে কিছু নেই সে ব্যাপারে কুহেলী নিশ্চিত। তবে সমস্যাটা কোথায়? স্বয়মকে কুহেলী সেই ছোটবেলার থেকেই অল্পস্বল্প চেনে, প্রাণচঞ্চল আড্ডাবাজ একটা ছেলে। কিন্তু বিয়ের পর মনে হচ্ছে যেন অন্য এক স্বয়মকে দেখছে সে। কুহেলীর হয়তো এখন কাঁদা উচিৎ কিন্তু ঠিক কান্নাও যেন পাচ্ছেনা। এক অদ্ভুত রকমের বিতৃষ্ণায় মনটা ভরে যাচ্ছে। লোকটার ওপর রাগতে গেলেও রাগতে পারেনা ঠিক। কেন! কুহেলী জানেনা।


আজ বিকেলে খানিক জোর করেই স্বয়মকে হোটেলের ঘর থেকে বের করেছিল কুহেলী। দুজনে পাহাড়ি রাস্তায় এলোমেলো ভাবে হাঁটছিল। সঙ্গে ক্যামেরাটা নিতে ভোলেনি স্বয়ম। ক্যামেরার শাটার টেপার সঙ্গে সঙ্গে ওর মুখটা অদ্ভুত এক প্রশান্তিতে ভরে যাচ্ছিল। ভালো লাগছিল কুহেলীরও। ছবি তোলাটা স্বয়মের প্যাশন। মায়ের কাছে শুনেছিল স্বয়ম নাকি ফটোগ্রাফি নিয়ে পড়তে চেয়েছিল, কিন্তু বাড়ির অনুমতি পায়নি তাই পড়াও হয়নি। অতি তুচ্ছ জিনিসকেও স্বয়ম তার ক্যামেরার ফ্ল্যাশে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। এখনও তাই করছিল। পাহাড়ের অতি সাধারণ জীবনযাত্রার টুকরোগুলোকে ক্যামেরায় বন্দি করে নিচ্ছিল মুহূর্তে মুহূর্তে। কতকগুলো পাহাড়ি বাচ্চা স্বয়মের হাতে ক্যামেরা দেখে পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। ওরা বোধহয় টুরিস্টদের সঙ্গে ছবি তুলে তুলে বেশ অভ্যস্ত। একগাল হেসে ওদের ছবি তুলে একটা বাচ্চার চুল গুলো ঘেঁটে দিলো স্বয়ম। আর তখনই সামনের বাড়িটা থেকে বেরোলো সেই বাচ্চাটা। আজকে তার পরনে ক্যারাটের পোশাক। কুহেলী মুখ তুলে দেখলো ওটা একটা ক্যারাটে ক্লাব।


“স্ট্রেঞ্জ…!” স্বয়মের মুখ থেকে শব্দটা বেরিয়ে আসতেই ওর দিকে তাকাল কুহেলী। মুখে বলল, “এই বাচ্চাটার কথাই তো কাল বলছিলাম।” 

স্বয়ম মাথা নেড়ে বাচ্চাটার দিকে এগিয়ে গেলো। তারপর ওর দিকে ঝুঁকে বলল, “তোমার নাম কি?”

“অন্তলিপ ঘোছ। তোমাল নাম কি?”

“আমার নাম? আমার নাম স্বয়ম ব্যানার্জি।”

“আল ওই আন্তি তাল?”

“হাঃ হাঃ … আমার নাম কুহেলী।” বাচ্চাটার আধো আধো বুলি শুনে হাসতে হাসতে জবাব দিলো কুহেলী।

স্বয়ম কুহেলীর দিকে ফিরে বলল, “চলো এগোনো যাক।”


কুহেলী মাথা নেড়ে সায় দিলো। ওরা দুজন কিছুটা এগোতেই পেছনে শুনতে পেলো একটা গলা, “বুড়ো তোকে কতবার বলেছি না এরকম একা একা রাস্তায় বেরোবি না। আমি তো তোর স্যারের সাথে…”


কুহেলী অবাক হয়ে দেখল গলাটা শোনা মাত্রই ক্ষিপ্র গতিতে পেছন ঘুরল স্বয়ম। বাচ্চাটার জবাবটা কানে এলো, “আমি তো এট্টু ওই আংকল আল আন্তিতাল ছাতে গপ্পোসপ্পো করছিলাম।”


বাচ্চাটা আঙ্গুল তুলে কুহেলীদের দেখালো। এতক্ষণে ওর মাও মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়েছে ওদের দিকে। কুহেলী হতভম্ব হয়ে দেখল স্বয়ম আর ওই মেয়েটা পরস্পর তাকিয়ে আছে একে অন্যের দিকে। দুজনের চোখেই এক অদ্ভুত রকমের বিহ্বলতা। বাচ্চাটার দিকে তাকাতেই কুহেলীর শরীরের সমস্ত রক্ত যেন জল হয়ে গেলো। 


হোটেলে ফিরেই স্বয়ম যে বাথরুমে ঢুকেছে এখনও বেরোয়নি। সেইখানে একটাও বাক্য বিনিময় করেনি ওই দুজন কিন্তু তাও ওদের চোখ যেন অনেক কথা বলে গিয়েছে। কুহেলীর গলার কাছটা শুকিয়ে আসছে বারবার। জল খেয়েও যেন তেষ্টা মিটছেনা। একটা অদ্ভুত রকমের অস্বস্তি গ্রাস করছে ওর সমস্ত চেতনা। ব্যালকনিতে এলো কুহেলী। সন্ধ্যে নেমেছে খানিক আগেই। পাহাড়ের বুকে গড়ে ওঠা বাজারটাকে দূর থেকে দেখে যেন জোনাকির মালা মনে হচ্ছে। কুহেলীর চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। 


“ওখানে দাঁড়ালে সর্দি লেগে যাবে।” স্বয়মের গলা ভেসে আসতেই চোখ মুছে পেছন ফিরল কুহেলী। দেখলো স্বয়ম বাথরুম থেকে বেরিয়েছে। ওর সামনের দিকের চুলগুলো ভেজা। চোখ দুটো লাল। রোজ সন্ধ্যের মত কানে হেডফোনটা গুঁজে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল সে। গুটিগুটি পায়ে ঘরের ভেতর এলো কুহেলী। একটা ঢোঁক গিলে স্বয়মের গা থেকে লেপটা টেনে সরিয়ে দিলো। আচমকা লেপটা সরে যেতেই চোখ খুলে তাকাল স্বয়ম, কুহেলীকে দেখে হেডফোনটা খুলল। কুহেলী বলল, “ওঠো কথা আছে।”


স্বয়মের এডামস আপেলের কম্পন নজর এড়ালো না ওর। স্বয়ম উঠে বসতেই কুহেলীও বসল তার সামনে। কিভাবে কথাটা শুরু করবে ঠিক বুঝতে পারছিল না ও। তাও মনের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে বলল, “তিনমাস বিয়ে হয়ে গেলো আমাদের। তাও তোমাকে বরাবর ভীষন অচেনা ঠেকেছে। বারবার মনে হতো ভালো স্বামী স্ত্রী হয়ে উঠতে পারছিনা দুজনেই, আর আজ তো হাতে নাতে প্রমাণ পেলাম। স্বয়ম…”

“কি?” অস্ফুটে বলল স্বয়ম।

“ভালো স্বামী স্ত্রী হতে গেলে আগে ভালো বন্ধু হতে হয়। কোনো গোপনীয়তা থাকে না দুজনের মধ্যে। ভালো স্বামী স্ত্রী কোনদিনও হতে পারবো কিনা জানিনা কিন্তু আমি তোমার ভালো বন্ধু হতে চাই।”

“কুহেলী…”

“প্লিজ বলবে ওই মেয়েটা কে? আর… শুধু ওটাই না, আমি সব কিছু জানতে চাই। প্লিজ স্বয়ম…”

“বেশ… তবে তাই হোক। আমি তোমাকে সবটা বিয়ের আগেই জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু কারুর দিব্যির কাছে হার মানতে হয়েছিল।”

“আজকে আমি সব জানতে চাই।”

“বলবো। সব বলবো। 


কুহেলী তুমি জানো কিনা জানিনা উচ্চমাধ্যমিক থেকে আমার রেজাল্ট খারাপ হতে শুরু করেছিল। অনেক ভেবেও কিছু কারণ খুঁজে পাচ্ছিলামনা। কলেজে বাধ্য হয়ে আর্টস নিলাম কিন্তু সেখানেও ফেল। ফার্স্ট ইয়ারের রেজাল্ট কহতব্য নয়। কোনোমতে অনার্সটা টিকিয়েছিলাম। ঠিক এই সময় আমার জীবনে এলো রিমিল। ক্লাসে আগেই পড়ত কিন্তু… সবাই আমার বাইরের অ্যাপিয়ারেন্সটা দেখে ভাবতো আমি হয়তো দারুণ রেজাল্ট করব কিন্তু সেটা যখন হল না সবাই আড়ালে হাসাহাসি শুরু করল। ব্যতিক্রম শুধু রিমিল। এই সময় আমার দিকে ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো। ওর সাহায্য আর অনুপ্রেরণায় সেকেন্ড ইয়ারেই অনেক উন্নতি করলাম। তারপর থার্ড ইয়ারে ফার্স্ট ক্লাস। ফার্স্ট ইয়ারটায় অতো কম না পেলে গ্র্যাজুয়েশনের টোটালটা আরও ভালো হতে পারত। যাইহোক, এরই মাঝে কখন যেন রিমিল আর আমি অনেক ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলাম। বন্ধুর চেয়েও অনেক বেশি কিছু। কেউ কাউকে কনফেস করিনি প্রথমে, কিন্তু ওকে ছাড়া এক মুহূর্তও আমার চলত না। থার্ড ইয়ারের শেষে দুজনে দুজনের কাছে কনফেস করলাম। এরপর ও ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার ডিগ্রি পড়তে গেল আর আমি কলেজে সুযোগ পেলাম। ভয় পেতাম, ইউনিভার্সিটিতে নিশ্চয় অনেক ভালো ছেলে আছে। রিমিল হয়তো… কিন্তু নাহ, ও একবারের জন্যও আমার সঙ্গ ছাড়েনি। শুধু পড়াশুনায় সাহায্যই না। সমস্ত বিপদ আপদ, মন খারাপ সব কিছুতে পাশে থেকেছে। আমি ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে গেলে পাগলেও মত আচরণ করি। ও সেই সব অবলীলায় সহ্য করেছে। সাত বছর একসঙ্গে ছিলাম আমরা।”


“তাহলে বিয়ে করলে না কেন দুজনে?”

“যখন শুধু বন্ধু ছিলাম রিমিল প্রায়ই বলতো চাকরি পেলে ও কোনো পাহাড়ি এলাকায় সেটেল করতে চায়। সবার থেকে দূরে। আমি হাসতাম। তারপর… আমার বিশ্বাস ছিলো মা-ই হবে সেই প্রথম মানুষ যে আমাদের সম্পর্কটাকে মেনে নেবে। কিন্তু কখনও টের পাইনি আমার মা আর তোমার মা নিজেদের মধ্যে আগেই কমিটমেন্ট করে রেখেছে। মা ভয় দেখালো বিষ খাওয়ার… কি করতাম আমি বলো? মাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি ভেবেছিলাম তোমাকে সব খুলে বলবো, তুমি নিশ্চয় আমাকে বুঝবে। কিন্তু মা আমাকে দিব্যি দিলো যাতে তোমাকে কিছু না বলি। আমি মাকে কষ্ট দিতে চাইনি তাই নিজেকেই…”

দুহাতে মুখ ঢেকে ফেলল স্বয়ম।


“আর রিমিল… তার কথাও তো ভাবোনি তুমি। তোমরা তো ফিজিক্যালিও…” উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো বলল কুহেলী।

স্বয়ম মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলল, “ট্রাস্ট মি কুহেলী কোনোদিনও আমরা ফিজিক্যালি ইনভলভড হইনি। কিন্তু… যেদিন ওকে সব জানালাম ভীষন কান্নাকাটি করেছিল। তারপর আচমকা একদিন আমার আগে যেখানে পোস্টিং ছিল সেখানের বাসায় আসে। ওকে অনেক শান্ত দেখাচ্ছিল সেদিন। আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম ওকে দেখে। সেদিনই আচমকা ও… তারপর প্রথম আমরা… আর ওইদিনই শেষ। সেদিন একটুও টের পাইনি ওর আসল প্ল্যানটা কি ছিল।”

“প্ল্যান?”

“হুমম… জানো তো মেয়েটা বড্ড জেদি ছিল। যখন চাকরি না পেয়ে ফ্রাস্ট্রেশনে ভুগছি বলতো কিছু না কিছু একটা ঠিক হয়ে যাবে। আমি বলতাম কিছু না কিছু দিয়ে বাঁচা যায়? ও বলতো তুই আমাকে যেমন রাখবি আমি তেমনই থাকবো, শুধু আমাকে ছেড়ে যাসনা কখনও। কিন্তু আমি কথা রাখিনি। ও বলেছিল যে ওর জীবনের প্রথম ভালোবাসা আমি, আর যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন ও চায় এটাই যেন শেষ হয়।”

“হুমম… তোমাকে প্রত্যক্ষ ভাবে পায়নি কিন্তু তোমার সন্তানের মধ্য দিয়ে ও তোমাকে পেতে চেয়েছে। ও তো ওর তরফে কথা রেখেছে কিন্তু তুমি…!”

“আমি একটা মেরুদন্ডহীন মানুষ। আমি ওকে দেওয়া কথা রাখতে পারিনি, কোনোদিনও পারবোও না। ও যে সাহসটা দেখিয়েছে আমি তার সিকিভাগও…”


 মনের মধ্যে জমে থাকা শক্ত পাথরটাকে গলিয়ে ফেলে আজ অনেকদিন পরে খানিক হলেও শান্তিতে ঘুমোচ্ছে স্বয়ম। কুহেলী এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়েছিল। কটা বাজে কে জানে! অনেক রাত হবে নিশ্চয়। কুহেলীরও বুকের ভেতরটা আজ অদ্ভুত রকমের হালকা লাগছে। যে প্রশ্ন এতদিন ওকে তাড়া করে বেড়াত আজ সব কিছুর উত্তর পেয়ে গেছে একসঙ্গে। আজ আর স্বয়মের ওপর কোনো অভিমান হচ্ছে না, বরং ওর জন্য সিমপ্যাথি হচ্ছে। আজ প্রায় চার বছর ধরে মানুষটা কত বড় বোঝা বুকে বয়ে চলছিল! কুহেলীর চোখ দুটো আচমকা আর্দ্র হল। নাহ নিজের জন্য নয়, সেই মেয়েটার কথা ভেবে যে নিজের ভালোবাসার মানুষটার জন্য নিজের সব কিছু উজাড় করে দিয়েছিল কিন্তু বিনিময়ে শুধু পেলো প্রত্যাখ্যান। কুহেলীর মা আর স্বয়মের মা দুই বান্ধবী অনেকদিন আগেই দুজনের ছেলে মেয়ের চার হাত এক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু জানতে চাননি ছেলে মেয়ের মনের কথা। কুহেলীর জীবনে বসন্ত আসেনি কোনোদিন তাই ও আপত্তি করেনি কিন্তু স্বয়ম… কুহেলীর ভাবতেও অবাক লাগছে কি পরিমাণ মানসিক চাপ সহ্য করে বেঁচে ছিল লোকটা! বিয়েটা করতে চার বছর দেরি করেছিল হয়তো সেই কারণেই। ভেবেছিল হয়তো মায়ের মন গলাতে পারবে কিংবা হয়তো ভেবেছিল ভুলতে পারবে নিজের ভালোবাসাকে। দুটোর কোনোটাই হয়নি। 


গায়ের উপর একটা চাদর জড়িয়ে ব্যালকনিতে এলো কুহেলী। ভীষন কষ্ট হচ্ছে ওর… ভীষন… স্বয়মকে ও ভালোবাসে কিনা জানেনা, কিন্তু নিজেকে তো ভালোবাসতো, তাই সেই নিজের জন্য ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আজ। আমিই কেন? আমার সাথেই কেন এমন হতে হল? ব্যালকনি থেকেই ঘুমন্ত স্বয়মের দিকে একবার তাকাল কুহেলী। আচমকা মনে হল যেন অন্য কারুর সুখের ঘরে সে জোর করে ঢুকে পড়েছে, তার চাবিকাঠিটা তাকেই ফেরৎ দেওয়া উচিৎ। আবার পরক্ষণেই মনে হল ওর নিজের তো কোনো দোষ নেই, কেন শুধু শুধু কষ্ট দেবে নিজেকে? এই সংসার ওর, কেন ছাড়বে ওর অধিকার? 


ঠান্ডা মেঝেয় ধপ করে বসে পড়ল কুহেলী। কিছুটা উৎকণ্ঠা, খানিক উত্তেজনা, অনেকটা দোলাচল আর কষ্ট --- সবমিলিয়ে একটা মিশ্র অনুভূতি সময়ের অপেক্ষায় জমে বরফে পরিণত হল...


(শেষ)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama