Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sayandipa সায়নদীপা

Drama

3  

Sayandipa সায়নদীপা

Drama

বাজি - দ্বিতীয় কিস্তি

বাজি - দ্বিতীয় কিস্তি

6 mins
1.6K


অক্টোবর, ২০০৭

   

                         ৩


  “উফফ ভাই… হচ্ছে না হচ্ছে না…”

“কি হচ্ছেনা ভাই?”

“পারলাম না পটাতে।”

“কাকে? শিউলিকে?”

“হুম রে। এতো ট্রাই নিলাম তাও হলোনা।”

“ধুর ভাই আমাদের দিয়ে আবার মেয়ে পটবে! শোনো ভাই যাদের পকেট গড়ের মাঠ তাদের এসব শখ সাজে না।”

“যা বলেছিস ভাই, এমন কোনো মেয়ে আজ অবধি পেলাম না যে পকেট ছেড়ে এই দিলটাকে ভালোবাসবে।” নিজের বুকের বামদিকটা চাপড়ে কথাটা বললো সমর।


 সমরের বলার ভঙ্গিতে একসাথে সবাই হেসে উঠলাম হো হো করে। আজ বহুদিন পর হোস্টেল থেকে বাড়ি ফিরেছি তাই মন মেজাজটা বেশ ফুরফুরে আছে। হোস্টেলে থাকাকালীন বন্ধুদের সাথে এই অনাবিল আড্ডাটা ভীষণ মিস করি। হোস্টেলে অনেক ছেলে থাকলেও তাদের কাউকে ঠিক আমার বন্ধু বলা যায়না। এমনিতেই আমি একটু ইন্ট্রোভার্ট, তারওপর আমার হোস্টেলের অন্য ছেলেদের জীবনযাত্রার সাথে আমার জীবনযাত্রার বিস্তর ফারাক। ওদের সাথে বন্ধুত্ব করে সেটা বজায় রাখার মতো সামর্থ্য আমার নেই। এমনিতেই ওরা আমাকে একটু নিচু নজরে দেখে, কয়েকজনের ভাব এমন যেন তারা মালিক শ্রেণীর সদস্য আর আমি নিরীহ শ্রমিক। সব অপমান, ব্যঙ্গ এখন মুখ বুজে সহ্য করে যাই চুপচাপ কারণ আমি জানি আমারও দিন আসবে ঠিক। এখন কোনো বাজে কাজে সময় নষ্ট না করে আমাকে আমার লক্ষ্যে স্থির থাকতে হবে। তাই কলেজ হোস্টেলের ওই বন্ধুদের থেকে আমার এই স্কুলজীবনের বন্ধুরা অনেক ভালো, এখানে অন্তত মালিক শ্রমিক বিচারটা কেউ করেনা বন্ধুত্বে। সেটা হয়তো সকলেই একইরকম পরিবার থেকে উঠে এসেছে বলেই সম্ভব হয়েছে। তবে সে যাই হোক, বাড়ি এলে এই বিকেলের আড্ডাটায় আমার আসা চাইই চাই।


   “ওই যে যাচ্ছেন মিস ইউনিভার্স।” হঠাৎ ব্যঙ্গ করে বলে উঠল কৌশিক।

“কে রে?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমি।

“ওরে আমার ভেবলু কার্তিক একটু চোখ কান খোলা রাখলেই সব বুঝতে পারবে কিন্তু তা না সবসময় লেট লতিফ..” আমার থুতনিটা ধরে নাড়িয়ে কথা গুলো বললো জিৎ। 

“আহ জিৎ, কেতু কি করে জানবে এসব! ও কি এখানে থাকে!” পুস্পল আমার সমর্থনে এগিয়ে এলো দেখে বেশ খুশি হলাম। হাসি হাসি মুখ করে বললাম, “একদম তাই। এবার বলবি কি ব্যাপারটা কি?”

“হুম… স্যান্যাল ডাক্তারকে চিনিস?” জিজ্ঞেস করলো জিৎ।

“নারে। কে উনি?” ব্যাজার মুখে জিজ্ঞেস করলাম।

“ধুরর ভাই...ভাল্লাগেনা। তুই না একটা ইয়ে…”

“ঠিক বলেছিস এই কেতুটা না আর মানুষ হলো না।” জিৎকে সমর্থন করল কৌশিক, তারপর সবার মধ্যে এই নিয়ে একটা হাসির হিল্লোল উঠে গেলো। ইতিমধ্যেই কেউ একটা অন্য প্রসঙ্গ তুলে আনায় ওই মিস ইউনিভার্স প্রসঙ্গটা চাপাই পড়ে গেলো, আমিও তেমন মাথা ঘামালাম না। অনেকদিন পর বেশ উপভোগ করছিলাম আজকের বিকেলটা, এই আড্ডা এই হুল্লোড়। 


  বিকেলটা শেষ হয়ে আসছে, আকাশের পশ্চিমদিকটা তে এখনো একটা কমলা রং ছড়িয়ে আছে আর তার ওপর দিয়ে কয়েকটা পাখি ডানা মেলে চলছে নিজের বাসার উদ্দেশে, সেখানে ওদের ছোটো ছোটো ছানাগুলো নিশ্চয় অপেক্ষায় বসে। আচ্ছা ওদেরও কি ওভার টাইম করতে হয় বাবার মতো!


  “এনাফ ইজ এনাফ… আই সুন এন্ড হার… ইউ শী..” দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বলতে বলতে বাইকটা স্ট্যান্ড করলো প্রত্যুষ দা। ওর এই বিখ্যাত ইংরেজি শুনে হঠাৎ করে পেটটা গুড়গুড় করে হাসি পেয়ে গেলো আমার কিন্তু হাসার উপায় নেই। এখানকার বিধায়ক বিনায়ক দাসের একমাত্র ছেলে প্রত্যুষ দাসের ইংরেজি শুনে হাসবো আমি সংকেত সেন, সরকারি অফিসের সামান্য কেরানী জ্যোতির্ময় সেনের ছেলে! হাঃ হাঃ তাহলে তো সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে লেগে যাবে।


  “আরে প্রত্যুষ দা কি হলো! কি হলো!” ছুটে গেলো ঘনা আর মান্তা, প্রত্যুষ দার দুই চামচা। এরা দুজন ছাড়াও এরকম বেশ কয়েকজন আছে এই দলে যারা বড়লোক বাবার এই ছোটলোক ছেলে প্রত্যুষ দার পা চাঁটতে পছন্দ করে। আমার কোনোদিনই এই ছেলেটাকে ভালো লাগেনা কিন্তু ওই যে বললাম সেই অপছন্দটাকে বাইরে প্রকাশ করব এমন বুকের পাটা আমার নেই। যাইহোক, প্রত্যুষ দা এসে ধপ করে বসে পড়লো আমার পাশে। তারপর বললো, 

“আই প্রমিস যে যে মিস ইউনিভার্সকে ওঠাতে পারবি তাকে আমি দু হাজার টাকা রিওয়ার্ড দেব।”

“তুমি দেখো দাদা শুধু ওঠাবোই না একেবারে ** করে নাচিয়ে ছাড়বো।”

 নিজের মুলোর মতো দাঁত কপাটি বের করে কথাগুলো বললো মান্তা। প্রত্যুষ দা সরু চোখে ওর দিকে শুধু তাকালো একবার, আর তাতেই মান্তার মুখে সদ্য জ্বলে ওঠা প্রদীপটা দপ করে নিভে গেলো। প্রত্যুষ দা এবার আমাদের উদ্দেশ্যে বললো,

“বুঝলি তো পারতাম আমি লগা, রাজা এদের বলে মেয়েটাকে একদম শেষ করে ছাড়তে কিন্তু এই প্রত্যুষ দাস মেয়েদের সম্মান করে তাই সে পথে যাইনি। কিন্তু মেয়ে মানুষদের এতো ঘ্যাম ভালোনা। বল কে পারবি মালটাকে ওঠাতে?

আরে কেত কুমার যে! কখন আসা হলো?”

এতক্ষনে প্রত্যূষদার নজর পড়েছে আমার দিকে, হ্যাঁ ও এই নামেই ডাকে আমাকে। এর পেছনে অবশ্য বিশেষ একটা কারণ আছে। আমার থেকে দু বছরের বড় প্রত্যুষ দা ফেল করে করে আমার সাথে একই ক্লাস হয়ে গেলো ক্লাস নাইনে। তারপর সে বছর ও আবার করলো আর আমি ক্লাসে ফার্স্ট হলাম। সেই থেকে ও আমাকে একদম সহ্য করতে পারেনা। আমার ফার্স্ট হওয়াটা ওর আঁতে ঘা দিয়েছিলো জোরে।


                      ৪


   আড্ডা শেষে যখন বাড়ি ঢুকলাম মা তখন সন্ধ্যে দিচ্ছে। ঘরে ঢুকে বোনকে চুপিচুপি জিজ্ঞেস করলাম, “হ্যাঁ রে ডাঃ স্যান্যালটা কে?”

“আরে দাদাভাই তুই দেখিসনি রুমকিদের বাড়ির পর যে বাড়িটা হয়েছে? কি সুন্দর বাড়িটা। একতলা বাড়ি কিন্তু এতো সুন্দর সাজানো… উফফ… আর কি সুন্দর বাগান… এই দাদাভাই তুই চাকরি পেলে ওরম একটা বাড়ি বানাবি?”

“হ্যাঁ রে পাগলী, তোকে ওর থেকেও বড় বাড়ি বানিয়ে দেব।” একগাল হেসে বোনের গাল দুটো টিপে দিলাম।

“কিন্তু তুই ওনার খোঁজ করছিস কেন?”

“এমনি। আচ্ছা ওনার কি কোনো মেয়ে আছে?”

“উহু… মেয়ের খোঁজ কেন রে? কি ব্যাপার?” বোনের কথায় দুস্টুমির ইঙ্গিত। 

আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম, “খুব পেকেছ না? নিজের বড়ো দাদার সাথে ইয়ার্কি হচ্ছে?”

“দাদার সাথে ইয়ার্কি হবে না তো কার সাথে হবে শুনি? আচ্ছা যাই হোক। ডাক্তার বাবুর একটাই মেয়ে রেনেসাঁ দি।”

“রেনেসাঁ! বাবারে!” 


“হিঃ হিঃ নাম শুনে ভ্রু কোঁচকাচ্ছিস কেন রে?”

“কিছুনা। এমনি।” বোন বেশি কিছু জিজ্ঞেস করার আগে ঘর থেকে বেরোতে যাচ্ছিলাম কিন্তু পারলাম না, বেরোবার আগেই সে তার পরবর্তী প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, “তুই ওর কথা কি করে জানলি?”

“ওই কিছুনা। এমনি আড্ডায় জিত আর প্রত্যুষ দার মুখে শুনলাম তাই…”

“হুম ওরা তো বলবেই। রেনেসাঁ দি এসে ওদের সবার আঁতে ঘা দিয়েছে কিনা, বিশেষ করে ওই প্রত্যুষ দাসের।”

বোনের কথাটা শুনে স্বাভাবিকভাবেই কৌতুহলটা আমার বেড়ে গেলো, বিকেলে আড্ডায় অসম্পূর্ণ রয়ে যাওয়া কথাটা সম্পূর্ণ শোনার আগ্রহে ওর কাছে ফিরে এসে বললাম, “এরকম বলছিস কেন?”

“বলবো না তো কি করব! জানিস তো দাদা রেনেসাঁ দি না খুব ভালো মেয়ে, শিউলি, রুমকিদের মতো নয় যারা ওই ছেলেদের নজর কাড়তে ব্যস্ত থাকে সারাদিন। রেনেসাঁ দি ওর পড়াশুনো আর কবিতা লেখা নিয়েই থাকে। জিৎ দা, প্রত্যুষ দার মতো ছেলেদের দিকে ঘুরেও তাকায়না। আর সেটাই হয়েছে ওদের গায়ে জ্বালা ধরার কারণ। প্রত্যুষদা রোজ রেনেসাঁ দি’কে কলেজ থেকে ফেরার সময় বিরক্ত করে। আমি অবাক হয়ে যাই এই ছেলেগুলো পারেও বটে…”

“হুম, বুঝলাম কিন্তু তুই এতো খবর পাস কোথা থেকে?”

“রেনেসাঁদি নিজে আমাকে বলেছে।”

“বাহ্ এতো ঘ্যাম যার তার সাথে তোর তো দারুণ বন্ধুত্ব দেখছি।”

“হ্যাঁ রে। সেবার বাবা যখন হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লো তখন তো স্যান্যাল কাকুর কাছেই ছুটে গেছিলাম আগে, সেই কদিন হল ওরা এসেছেন এ পাড়ায়। সেদিনই রেনেসাঁদির সাথে আলাপ হয়।”


“কি বললি বাবা অসুস্থ হয়েছিল? কবে কখন? আমি জানিনা কেন?”

“এই যাহ… এই দাদাভাই না না কিছুনা… কিছু হয়নি… স্লিপ অফ টাং। আমি আসি রে পড়তে বসতে হবে।” স্পষ্ট বুঝলাম ও আমাকে এড়িয়ে যেতে চাইছে বোন। ওর হাতটা টেনে ধরলাম,

“বল বলছি বাবার কি হয়েছে…”

“তোকে বলে ফেলেছি জানলে মা বাবা আমাকে মেরে ফেলবে যে।”

“মা বাবাকে কিছু বলবো না। তুই নির্ভয়ে বল।”

“আচ্ছা। জানিস তো দাদাভাই আগের বার তুই যখন এসেছিলি সেবার তুই চলে যাওয়ার ঠিক পরের দিন হঠাৎ বাবা বুক চেপে বসে পড়ে, দিয়ে কেমন গোঁ গোঁ আওয়াজ করছিলো মুখ দিয়ে। খুব ঘামও দিচ্ছিলো। আমি আর মা তো খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। তারপর আমি সঙ্গে সঙ্গে স্যান্যাল কাকুদের বাড়ি গিয়ে ওনাকে ডেকে আনি, উনিই কি সব করতে বাবা একটু সুস্থ হলো দিয়ে স্যান্যাল কাকুই গাড়িতে করে বাবাকে হসপিটাল নিয়ে গেলেন।”

“এতো কিছু হয়ে গেছে আর তোরা আমাকে কিচ্ছু জানাসনি!”

“কি করবো বল, মা বাবা বারবার করে বলে দিলো তোকে যাতে কিছু না জানাই।”

“উফফ বাইরে থাকার এই জ্বালা। এতো কিছু হয়ে গেল আর আমি… যাইহোক ডাক্তার কি বলেছেন?”

“আমি ঠিক জানিনা মানে পাছে তোকে বলে দি তাই মা বাবা আমাকেও কিছু বলেনি ঠিক করে। তবে হার্টে কিছু সমস্যা হয়েছে এটুকু জানি।”


  ধপ করে বসে পড়লাম খাটে। ভেতরটা কেমন যেন মুচড়ে মুচড়ে উঠছে, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। বাবার কিছু হয়ে গেলে! উফফ… না না… কিছু হতে পারেনা বাবার।


ক্রমশ...



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama