তৃষিত তিতাস (পর্ব ২)
তৃষিত তিতাস (পর্ব ২)
#FAN_FICTION_EAN_and_YUG
#Reincarnation_and_The_Unsung_Love
রচনা - উশ্রী ও তিতির
টিউশনি হসপিটাল, কলকাতা :
------------------------------------------
কেন থেমে গেছে নদী? মন বুঝেও বোঝে না...
ব্যথা জমে কালো চোখে, নিদ্রা আসে না..
ঠিক তোর মতোন কেউ, ভালোবাসে না... বাসে না...
ঠিক তোর মতোন কেউ, ভালোবাসে না....
(গান সৌজন্য : পরিনীতা)
উজানের প্রিয় গানটা চালিয়ে স্নানে যায় উজান... শাওয়ার চালিয়ে দেওয়ালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে... চোখ বন্ধ করলে আজো সেই আবছায়া যুবতীটিই উজানের সামনে এসে দাঁড়ায়... রক্তাক্ত হাত বাড়িয়ে দেয় সে উজানের দিকে... কিন্তু উজান ছুঁতে পারে না... জলগুলো যত ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে উজানকে, উজান ততই ছুঁতে চাইছে, ডুবে যেতে চাইছে সেই স্বপ্নের মুহূর্তগুলোতে... যেন এইটুকুই আসল উজান... হঠাৎই চিরপরিচিত সেই যুবতীর আওয়াজ পেয়ে চমকে ওঠে পেছনে তাকায় উজান,
যুবতী : (চোখ পাকিয়ে) কি ব্যাপার !! এইভাবে সময় নষ্ট করছো কেন !!! O.T. আছে না তোমার !! এই তোমাকে তো আমি চিনি না... কাজে ফাঁকি দিয়ে মন খারাপ করছো !! যাও, তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও... আমি আছি তো... যেখানে আমরা আলাদা হয়েছিলাম, সেখানেই আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি... যেখানে আমাদের গল্প শেষ হয়েছিল, আবার সেখান থেকেই শুরু হবে... আমি আসব তো... তোমার কাছেই ফিরে আসব... বলেছিলাম তো, পরের.... পরের জন্ম বলে যদি কিছু থাকে... আমি... আমি ফিরব তোমার কাছে... আমি ফিরে আসব.... যাও বীইই, নাহহ উজান, তৈরি হয়ে নাও...
উজান স্নান সেরে তৈরি হতে থাকে... এমন সময় নীলিমা ঢোকে উজানের ঘরে...
নীলিমা : Ohhh Ujaan... you are looking dammm hot... Silent Killer..
উজান : বাজে কথা বলে মাথা খারাপ না করে যেটা বলতে এসেছো, সেটা বলো...
নীলিমা : কাল টিউলিপ মেডিকেল টিম North Bengal যাচ্ছে মেডিকেল ক্যাম্পে... তুমি lead করবে Teamকে...
উজান : কোথায় যাবে !!
নীলিমা : মঙ্গরগঞ্জ ...
উজান : (উদাসীনভাবে) ... মঙ্গরগঞ্জ !!
কিছু ছেঁড়া ছেঁড়া সাদা কালো ছবি :
------------------------------------------------
বন্দেমাতরম....
'বেত মেরে তুই মা ভোলাবি আমরা কি মা-র সেই ছেলে !!'
করব না হয় মরব...
What did he said !!
He said- Do or Die....
Then Let Him Die....
Hang Him...
বাসু দা... আমাদের গুলি, বোমা খুব ভেবে চিন্তে খরচ করতে হবে... অযথা নষ্ট করার মতো গুলি বা বোমা কোনোটাই আমাদের ভাণ্ডারে নেই....
মনোবলটা তো অফুরন্ত আছে...
আর ভালোবাসা !!!
সেটা নয় পরের জন্মের জন্যই তোলা থাক...
এটা কি করলে বীরু !!!
বিশেষ কিছু না... জন্ম জন্মান্তরের বাঁধনে বেঁধে রাখলাম তোমায়... এই জন্মে স্বাধীন ভারতের সূর্য আমি বা তুমি কেউই দেখতে পারব কিনা জানি না... কিন্তু পরের জন্মটা হবে শুধু আমাদের ভালোবাসার...
বাসুদা... সরে যান... ওরা গুলি চালাচ্ছে...
ভীমা, তুমি রত্নাকে দেখো... ওর গুলি লেগেছে...
বীরু কোথায় !!! বীরুউউউউউ....
(জোরে একটা গুলির শব্দ)
আহহহহ... বীরুউউউউউ....
নাহহহ রুক্মিণী... তোমার কিছু হবে না... আমি... আমি কিছু হতে দেব না তোমার...
আমার... আমার সময় শেষ বীরু... আহহহ....
নাহহহ... না... না... তুমি.... তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না... তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে...
পরের.... পরের জন্ম বলে যদি কিছু থাকে... আমি... আমি ফিরব তোমার কাছে... আমি ফিরে আসব....
বীইইই... বীরুউউউ.... বন্দে.... মা...
বন্দে... মাতরম রুক... রু !!!
টিউলিপ হসপিটাল, কলকাতা :
--------------------------------------------
মাথাটা চেপে ধরে বসে যায় উজান... যন্ত্রণা করছে সাংঘাতিক... আবার সেই ছেঁড়া ছেঁড়া শব্দগুচ্ছ ভীড় করে আসে উজানের সামনে...
উজান : (মনে মনে) আমি জানি রুক্মিণী, যতদিন না তুমি আমার সামনে এসে দাঁড়াচ্ছো... এই যন্ত্রণা থেকে আমার... আমার মুক্তি নেই !!! কিন্তু তুমি কোথাও রুক্মিণী !!! মনে পড়ে আমাকে !!! তোমার প্রতিশ্রুতিটা !!! তুমিও কি ভাবো আমার কথা !!! আমি তো এখানে মরেও বেঁচে আছি....
নীলিমা : কি হলো উজান !! আবার মাথা যন্ত্রণা করছে...
উজান : (নিজেকে একটু সামলে) না তেমন কিছু না... একটা ওষুধ খেলেই চলে যাবে...
নীলিমা : আমি জল দিচ্ছি...
উজান উঠে ওষুধ বার করতে উঠে যায়... কিন্তু নীলিমা জল আনতে গিয়ে হঠাৎই উজানের স্কেচিংটা দেখে তুলে নেয়...
নীলিমা : উজান জল...
উজান : Thank you.... (উজান ওষুধটা খায়)
নীলিমা : এটা কে উজান !! সেই তোমার স্বপ্নের, পূর্ব জন্মের মেয়েটা... যে বারবার তোমাকে হানা দেয়...
উজান : ওটা দাও আমাকে... ওটা আমার অনেক কষ্টের... ওটা দাও... বন্ধু হিসেবে তোমাকে ওর কথাটা বলাই আমার ভুল হয়েছে...
নীলিমা : (ব্যঙ্গের হাসি হেসে)
Zara Tasveer Se Tu Nikalke Saamne Aa
Meri Mehbooba
Meri Taqdeer Hai Tu Machalke Saamne Aa
Meri Mehbooba
Meri Mehbooba Meri Mehbooba
উজান : নীলিমা... ওকে নিয়ে একদম মজা করবে না... আমাকে দাও ওকে...
নীলিমা : 'ওর কথা' !! 'ওকে দাও' !! কে এই 'ও' !!! শোনো উজান, বাপি আজ আন্টির সাথে কথা বলবে... মঙ্গরগঞ্জ থেকে ফিরলেই তোমার আর আমার Engagement... তোমার reincarnation নিয়ে তুমি থাকো... সেটাকে বা তোমার আগের জন্মের কাউকে আমার আর তোমার মাঝে আনার চেষ্টা করো না...
নীলিমা ছবিটা উজানের বুকে ছুড়ে দিয়ে চলে যায়... উজান তার আঁকা ছবিটা বুকে জড়িয়ে ধরে চোখের জল আড়ালের নিষ্ফল চেষ্টা করেও কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে উজানের চোখ দিয়ে...
উজান : (মনে মনে) তোমার স্মৃতি নিয়ে আমি সারাজীবন একা কাটিয়ে দিতে পারি রুক্মিণী... কিন্তু তোমার জায়গায় অন্য কাউকে আমি বসাতে পারব না... তোমার জায়গাটা আমি অন্য কাউকে দিতে পারব না... এবার তোমার ফেরার, তোমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার সময় এসে গেছে রুক্মিণী... এবার হয় তুমি আমার সামনে এসে দাঁড়াবে, নয়তো আমাকে নিজেকেই নিজে শেষ করে দিতে হবে... কোনটা বাছবে সেটা আমি তোমার হাতে ছেড়ে দিলাম !!!
মঙ্গরগঞ্জ, উত্তরবঙ্গ :
------------------------------
বিকাশবাবু : এই নে হিয়া... ওষুধটা খেয়ে নে তো মা... দাঁড়া, আমি ধরি...
হিয়া খুব কষ্টে উঠে বসে... বাবার কাছ থেকে ওষুধটা খায়... কথা বলতেও তার খুব কষ্ট হচ্ছে... কোনোরকমে বাবার সাথে কথা চালিয়ে যায়...
বিকাশবাবু : আবার সেই জ্বরটা এলো... মাঝে মাঝে যে কি হয় তোর !!! জ্বরের ঘোরে কি যে সব বলিস- 'বন্দেমাতরম' টুকু ছাড়া বোঝা দায়... কাল জ্বরে তো জ্ঞান হারিয়েছিলিস... ডোডো ডাক্তার ডেকে আনলো, তাই রক্ষে... আচ্ছা হিয়া, ডোডোকে নিয়ে কিছু ভাবলি মা...
হিয়া : ডোডো !! (কাশি) বাবা ডোডোকে নিয়ে কি ভাববো !!
বিকাশবাবু : আর পাঁচটা মেয়ে যেটা ভাবে... ভালোবাসার কথা, বিয়ের কথা...
হিয়া : নাহহহ... ডোডোকে আমি কোনোদিনই ওই চোখে দেখি না... আর তাছাড়া, আমার সবসময়ই মনে হয়, কেউ একটা আছে... যে আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে, যার কাছে আমার কথা দেওয়া আছে, যে এসে দাঁড়ালে আমাকে তার কাছে যেতে ছুটে যেতে হবে...ণ
বিকাশবাবু : কে আসবে হিয়া !!
হিয়া : জানি না বাবা... কিন্তু তার সাথে আমার জন্ম জন্মান্তরের সম্পর্ক.... এই জন্মের ওপার থেকে ডাক দেয় সে আমাকে... (হাঁপাতে হাঁপাতে) কি নাম !! কেমন দেখতে !! আমার... আমার সঙ্গে কি সম্পর্ক !!! কিছু জানি না আমি... শুধু জানি, সে আসবে... আসতে তাকে হবেই...
বিকাশবাবু জোর করে হিয়াকে শুইয়ে দেয়... হিয়া জানলা দিয়ে বাইরের দূরের ওই পোড়ো বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকে... কেন জানি না, নিজের মনের চোখে ওই পোড়ো বাড়িটার ছাদে একটা তেরঙ্গা পতাকা উড়তে দেখে হিয়া... বারবারই দেখে... কিন্তু শুধু চোখে সে দেখেছে সেখানে কোনো পতাকা নেই... বিকাশবাবু হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকেন... হিয়ার ভেতরটা কেঁদে কেঁদে ওঠে... তার খালি মনে হয়- সে আসবে... তাকে আসতেই হবে হিয়ার কাছে... তারা যে পরস্পরের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ... তাই, হিয়াকেও অপেক্ষা করতে হবে...
বিকাশবাবু : থাক হিয়া... কথা বলিস না... কত ছোট থেকে তুই এইভাবে অসুস্থ হয়ে পরিস... এক মাসের মেয়েকে রেখে তোর মা চলে গেল... ওই ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে আমি নাস্তানাবুদ... এর মধ্যে দেড়/ দু'বছর হবে তোর বয়স- হঠাৎই এই ধুম জ্বর এলো... জ্বরের ঘোরে আধো আধো বুলিতে কত কিছু বলে যাচ্ছিলিস, কিন্তু স্পষ্ট শুনলাম 'বন্দেমাতরম'... (হেসে) তখন অবশ্য বলছিস, 'বল্তেমাততম'... এরপরেও বারবার এই জ্বরটা তোর আসে... জ্বরের ঘোরে অস্ফুটভাবে এখনো কত কিছু আবোল তাবোল বলে যাস !! কিন্তু ওই 'বন্দেমাতরম' বলাটা ছাড়িস না... হিয়া... হিয়া... ঘুমিয়ে গেছে...
বিকাশবাবু হিয়ার গায়ে ভালো করে চাদরটা টেনে দেয়... মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যেতে গিয়ে দেখে হিয়া ডাইরির ভেতর পেনটা রেখে দিয়েছে... গুছিয়ে রাখতে গিয়ে খুলে পড়েন, ওতে লেখা আছে-
মৃত্যুর ভয় আজ আর নাই,
প্রতি রাতে তার পায়ের শব্দ পাই...
নয় এ আহ্বান এই প্রথমবার,
জন্মান্তরে করাঘাত বারংবার...
কি যেন বলো তোমরা... জাতিস্মর !!
আত্মার পরিত্যাগে দেহ নশ্বর...
(কবিতা : জাতিস্মর, কলমে : অচিন পাখি)
(This is not a historical documentation of India's Struggle for freedom, but a work of fiction which is loosely based on events that rocked undivided India during the years 1919 to 1946...)


