Arpita Pal

Romance

4  

Arpita Pal

Romance

তোমার ঘরে বসত করে

তোমার ঘরে বসত করে

9 mins
513


এক ঘরে লোকের ভিড়, তাদের গম্ গম্ আওয়াজ আর চারিদিকের দামি আলোর রোশনাইয়ের মাঝে হঠাৎ একজনের উপর চোখ আটকে যায় সায়ন্তিকার। মানুষটার পোশাক-আশাক আর আগের মতো নেই। যেরকমটা আট বছর আগে ছিল। নতুন পোশাকের আদলে পুরনো মানুষটাকে দেখে সায়ন্তিকার শরীরে যেন এক উষ্ণতার ঢেউ খেলে গেল। এক মুহূর্তে শরীর আর মন উত্তেজিত হয়ে উঠল। গাড় নীল রঙের জিন্সের সাথে কালো রঙের ব্লেজার আর তার সাথে চোখে কালো ফ্রেমের চশমা যেটাও আট বছর আগে ছিল না। চুলেও সম্ভবত জেল লাগিয়েছে, সব মিলিয়ে অর্কদীপকে বেশ দারুন লাগছে। অর্কদীপ যদিও সায়ন্তিকাকে দেখতে পারছে না। সে সায়ন্তিকার সামান্য পেছন ঘুরে দাঁড়িয়ে কয়েকজনের সাথে গল্প করছে। এমন সময় অর্কদীপ সায়ন্তিকার দিকে ঘুরতেই সায়ন্তিকা সাথে সাথে মাথা নিচু করে পেছন ঘুরে সামনের টেবিলের উপর সারি দিয়ে রাখা ওয়াইনের গ্লাস গুলো থেকে একটা গ্লাস তুলে নিয়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে পড়তে যাবে সেই সময় হঠাৎ পেছন থেকে শুনতে পায় বহু বছরের চেনা পরিচিত গলায় খুব পুরনো একটা ডাকনাম। যেটার অধিকার সে শুধুমাত্র একজনকেই দিয়ে রেখেছে । 

 " সায়ন? কেমন আছিস্? "

সায়ন্তিকার শরীরে আবারও যেন একটা উষ্ণতার ঢেউ খেলে যায়। মনের মধ্যে কেরকম একটা অস্থির ভাব আনাগোনা করছে। সে এমন একটা অবাক ভাব নিয়ে পেছন ফিরল যে বোঝাতে চাইছে সায়ন্তিকা অর্কদীপকে আগে এখানে দেখেইনি। এই প্রথম দেখতে পেল।

 " আরে তুই? What a pleasent surprise ? "

 " Surprise তো আমিও হয়েছি। তবে তোর মতন এই মুহূর্তে নয়। অনেক্ষণ আগে। প্রথম যখন এই পার্টিতে ঢুকি তখন। "

 " কখন এসেছিস এখানে? "

 " তাও এক ঘন্টাতো হলই। "

 " তাহলে তুই এতোক্ষণ পর আমার সামনে এলি যে? "

 " যেরকমভাবে তুই আমাকে অনেক আগে দেখতে পেলেও আমার সাথে কথা বলবি কিনা hesitate করছিলিস্। ঠিক সেইরকমই আমারও একটা বিষয়ে hesitation হচ্ছিল। "

 " কি বিষয়ে hesitation....."

সায়ন্তিকার কথা শেষ হল না। তার আগেই একজন মহিলা ব্যস্তভাবে তাদের দুজনের মাঝে ঝড়ের গতিতে প্রবেশ করল। তাতে অর্কদীপ আর সায়ন্তিকা দুজনেই বেশ অবাক হয়ে গেল। তবে অবাক হওয়ার সাথে অর্কদীপ একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল।

মহিলাটি যেমন ভাবে ঝড়ের গতিতে আসলো তেমন ভাবে দুরন্ত গতিতে বলতে শুরু করল-

 " এই দেখ না। আবার ঝিনুকের পেটে ব্যথা করছে। বার বার বললাম আইসক্রিমটা খাস্ না। এই জন্য আমি এখানে আসতে চাইনি। তুমি জোর করলে বলে তাই। "

এই কথাগুলো বলতে বলতে মহিলাটির হঠাৎ সায়ন্তিকার দিকে চোখ গেল। সেও অবাক দৃষ্টিতে মহিলাটির দিকে তাকিয়ে থাকলেও মনে মনে যা বোঝার বুঝে গেল। মহিলাটি এবার ক্ষমাপ্রর্থী স্বরে সায়ন্তিকাকে বলল-

 " ওহ্-হ্। আপনাকে না একদম খেয়াল করতে পারিনি। I'm extremely sorry. আসলে আমার মেয়েটাকে নিয়ে হয়েছে যত জ্বালা। এসে থেকেই বায়না করছে আইসক্রিম খাবে। কয়েকদিন ধরে ওর পেটে গণ্ডগোল হচ্ছে। ডাক্তারের ওষুধও খাচ্ছে। আর এখন এই আইসক্রিম খেয়ে এই অবস্থা। "

সায়ন্তিকা স্বাভাবিকভাবে হেসে বলল-

 " No no its ok. বাচ্চারা তো এসব কিছু বোঝে না। ওরা যা ভালোবাসে সেটার জন্যই বায়না করে। "

এরপর সায়ন্তিকা কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারল না। বরাবরই সে স্বল্পভাষী। অর্কদীপ এতোক্ষণ ধরে সমস্তটাই চুপ করে দেখছিল। এবার সে মুখ খুলল-

 " কেয়া, ও হল সায়ন্তিকা। আমার কলেজের বন্ধু। আর কেয়া হল আমার অর্ধাঙ্গিনী। সবসময়ের সঙ্গী। "

এই বলে কেয়ার কাঁধে হাত দিয়ে কিছুটা নিজের কাছে টেনে নিল। তারপর কেয়ার হাত ধরে থাকা বাচ্চা মেয়েটাকে কোলে তুলে নিয়ে অর্কদীপ বলল-

 " আর এই হল আমার ঝিনুক। আমার মন ভালো করার ওষুধ। "

অর্কদীপ ঝিনুকের গালে একটা চুমু দেয়। সে আবার বলল-

 " ঝিনুক তোমার ভালো নামটা আন্টিকে বলে দাও দেখি। "

ঝিনুক আদো আদো গলায় বলল-

 " রূপরেখা ব্যানার্জি। "

সায়ন্তিকা ঝিনুকের হাতটা ধরে বলল-

 " বাঃ বেশ সুন্দর নামতো তোমার। তবে ঝিনুক আমাকে কিন্তু একটা promise করতে হবে। "

 " কি promise? "

 " তোমার পেট যতদিন না ঠিক হচ্ছে ততদিন তুমি আইসক্রিম খাবে না। "

ঝিনুক এই কথা শুনে কেয়ার দিকে তাকায়। সায়ন্তিকা আবারও বলে-

 " ঝিনুক ভালো মেয়েরা কিন্তু promise রাখে। "

এই কথাটার পরই সায়ন্তিকা আর অর্কদীপের মধ্যে সামান্য চোখাচুখি হয়। ঝিনুক কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বলল-

 " Promise. "

সায়ন্তিকা ঝিনুকের গালে হাত রেখে আদরের স্পর্শ দিয়ে বলে -

 " That's like a good girl. "

অর্কদীপ এবার ব্যস্তভাবে কেয়াকে বলল-

 " কেয়া চলো আমরা এখুনি বেড়িয়ে পড়ি। এরপর যদি ঝিনুকের পেটে ব্যথাটা বেড়ে যায় তাহলে মুশকিল হবে। "

কেয়া অর্কদীপের কোল থেকে ঝিনুককে নামাতে নামাতে বলে-

 " একদম নয়। তোমার বসের পার্টিতে তোমার থাকাটা দরকার। আমি বরং ঝিনুককে নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছি। "

 " আরে না না। তা কি করে হয়? ওর শরীর ভালো না। তুমি পারবে তো সব সামলাতে? "

 " ঠিক পারব। মা হয়ে মেয়েকে সামলাতে পারব না? তুমি একদম চিন্তা করো না। আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি। আমাদের বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে আবার এখানেই যেন চলে আসে। "

 " কেয়া আমার মনে হয় তোমার একা যাওয়াটা ঠিক হবে না। আমারও তোমার সাথে যাওয়া উচিৎ। "

 " তুমি এতো কেন চিন্তা করছো বলো তো? Don't worry. I will manage। "

 " Ok তাই হোক। আচ্ছা সায়ন্তিকা তুই এখানে একটু দাঁড়া। আমি কেয়া আর ঝিনুককে গাড়িতে তুলে দিয়ে আসছি। "

 " হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। "

এরপর সায়ন্তিকা ঝিনুকের সামনে গিয়ে হাঁটু মুড়ে তার দুগালে হাত দুটো রেখে কোমল স্বরে বলল-

 " ঝিনুক promise-টা মনে থাকবে তো? "

ঝিনুকও একদিকে মাথা হেলিয়ে বলল-

 " হ্যাঁ মনে থাকবে। "

সায়ন্তিকা সাথে সাথে ঝিনুকের দুগালে চুমু দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল। এরপর উঠে দাঁড়িয়ে কেয়ার হাত ধরে বলল-

 " খুব ভালো লাগল তোমার সাথে আলাপ হয়ে। জানি না এরপর আবার কবে দেখা হবে। "

কেয়াও সায়ন্তিকার হাতের উপর আরেকটা হাত রেখে বলল-

 " এই ভাবে কেন বলছো? নিশ্চয়ই দেখা হবে। "

সায়ন্তিকা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়ে। তারপর বলে-

 " I hope so. ভালো থেকো। "

এরপর অর্কদীপ, কেয়া আর ঝিনুককে নিয়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে পড়ে। সায়ন্তিকা কেয়া আসার পর হাতে ধরে থাকা ওয়াইনের গ্লাসটা টেবিলে রেখে দিয়েছিল। এখন আবার সেই টেবিল থেকে একটা গ্লাস তুলে নিয়ে তাতে একটা চুমুক দিয়ে সামনের খোলা ছাদে রেলিং-এর ধারে গিয়ে দাঁড়াল। এখানেও চেয়ার টেবিলের ব্যবস্থা করা আছে। তবে বিশেষ লোকজন নেই। ভেতরের কোলাহল এখান থেকে খুব বেশি শোনা যাচ্ছে না। ক্রমাগত বয়ে চলা ধীর শীতল ঠাণ্ডা বাতাস সায়ন্তিকার এতো বছরের নিস্তরঙ্গ মনটাকে হঠাৎ করেই যেন তরঙ্গায়িত করে দিল। এক অদ্ভুত ভালো লাগা মনটাকে ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলছে। যেটা এতদিন মনে হয়নি সেটাই এখন হঠাৎ মনে হতে লাগল। জীবন যা নিয়ে নেয় সেটা আর ফিরিয়ে না দিলেও তা রয়ে যায় কোনো এক অজানা প্রান্তরে অন্য এক রুপে। আট বছর আগে অর্কদীপ আর সায়ন্তিকার মাঝে গড়ে ওঠা সেই ভালবাসার সম্পর্কটা এখন আর না থাকলেও একে অপরের প্রতি সম্মানটা রয়ে গেছে। চারপাশের ঠাণ্ডা পরিবেশের মাঝে মনের ভেতর উষ্ণ অনুভূতিটা খুব ভালো ভাবেই অনুভব করতে পারছে সে। এমন সময় সেই চেনাপরিচিত ডাকনামটা শুনতে পেয়ে সায়ন্তিকার নিশ্চল মুহূর্তটা আচমকাই ভেঙে গেল। পেছন ফিরে দেখে অর্কদীপ ব্যস্তভাবে এদিকেই এগিয়ে আসছে।

 " কি রে সায়ন? তুই এখানে? ওদিকে কত খুঁজলাম। তারপর একজন বলল তুই নাকি এদিকে এসেছিস্। "

সায়ন্তিকা কোনরকম উদ্বেগ প্রকাশ না করে শান্ত গলায় বলল-

 " আয় ঐ দিকটায় গিয়ে বসি। "

ছাদের কোণায় টু-সিটের একটা টেবিল ফাঁকা ছিল। সেখানে গিয়েই তারা বসলো। অর্কদীপের হাত ফাঁকা দেখে সায়ন্তিকা জিজ্ঞেস করল-

 " এসব কি এখন চলে না? নাকি আমায় খুঁজতে গিয়ে আর খেয়াল হয়নি? "

এরপরেই দুজনের মুখে একটা চাপা হাসি খেলে গেল। অর্কদীপ বলল-

 " বলতে পারিস্ একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছি। "

 " তা সেটা কি বউয়ের কারণে? "

 " না না একদমই নয়। আমার একটা লিভার প্রায় ড্যামেজ। "

হঠাৎই এরকম একটা অপ্রস্তুতকর কথা শুনে সায়ন্তিকা মুখের সামনে ওয়াইনের গ্লাসটা তুলতে গিয়েও তুলতে পারল না। আচমকাই মনের ভেতর কোথাও একটা চাপা ব্যথা অনুভব করল। ওয়াইনের গ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে সায়ন্তিকা ক্ষীণ স্বরে বলল-

 " I am so sorry। But কি ভাবে হল? "

 " না না sorry বলতে হবে না। এতগুলো বছর পর দেখা। তাই এখন atleast formalitity করিস্ না। "

এর প্রত্যুত্তরে সায়ন্তিকা কিছুই বলতে পারল না। শুধু চোখের দৃষ্টি ধীরে ধীরে টেবিলের দিকে নামিয়ে নিল। 

অর্কদীপ আবার বলতে শুরু করল-

 " সেইদিন সন্ধ্যেবেলায় তোর সাথে শেষ দেখা হওয়ার পর যখন বাড়ি এসে নিজের ঘরে ঢুকলাম তখন অদ্ভুত এক বিষণ্ণতা, অবসাদ আর একাকীত্ব আমায় ঘিরে ধরল। নিজের আমিটাকেই কোথাও যেন খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মনে হচ্ছিল আমার মনের সব চেতনা, অনুভূতি, ইচ্ছা-অনিচ্ছা গুলোকে তোর কাছে রেখে দিয়ে এসেছি। আর তারপরেই শুরু হল আমার জীবনের বিশৃঙ্খলতা। সর্বক্ষণ নেশার মধ্যে ডুবে থাকতে লাগলাম। নেশা করতে গিয়ে কিছুই আর বাদ রাখলাম না। যা আগে কখনও খাইনি সেগুলোও খেতে লাগলাম। একমুহূর্তও নেশা না করে থাকতে পারতাম না। মা-এর পেনশনের টাকার অনেকটাই নেশার পেছনে নষ্ট করেছি। মা বয়স্ক মানুষ। তাই আমায় বুঝিয়ে পেরে উঠতেন না। পরে বন্ধুদের দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতেও কোনো ফল হল না। একবার তো রাগের চোটে মায়ের গায়ে হাতও তুলে ফেলেছিলাম। আর সেটার শাস্তি ভগবান আমায় কয়েকদিনের মধ্যেই দিল। প্রচণ্ড পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলাম। ডাক্তার জানিয়ে দিল আমার একটা লিভার প্রায় ৫০% এর উপর ড্যামেজ হয়ে গেছে। আরেকটার অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। তাই এই পরিস্থিতিতে যদি নেশাটা না ছাড়তে পারি তাহলে প্রান সংশয় পর্যন্ত হতে পারে। সেদিন হাসপাতালে মাকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিলাম। হয়তো মৃত্যুকে এতো কাছ থেকে দেখতে পেয়ে। "

এরপর অর্কদীপ থেমে যায়। শেষের কথাগুলো বলতে গিয়ে তার গলার স্বর যেন সামান্য কেঁপে উঠল মনে হয়। এতক্ষণ সায়ন্তিকা অর্কদীপের কথাগুলো মাথা নিচু করে শুনছিল। এবার সে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে অর্কদীপের চোখটা ছল ছল করছে। তবে সায়ন্তিকার সান্তনা দেওয়ার অধিকার বা সাহস কোনোটাই নেই। এখন তার চুপ করে থাকাটাই শ্রেয়। অর্কদীপ আবারও বলে উঠল। এবার তার গলার স্বর ভারি হয়ে এসেছে।

 " হাসপাতাল থেকে ফিরে নেশাটাকে চিরতরে বিদায় দিলাম। তারপর দু মাসের মধ্যে মা মারা যান। সেইদিন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে নিজেকে নিজের কাছে প্রমান করতেই হবে। কয়েকমাসের মধ্যে একটা ছোট কোম্পানিতে চাকরি পেয়ে গেলাম। সেখানে তিন বছর কাজ করার পর এখনকার এই কোম্পানিতে চাকরিটা পাই। "

এরপর দুজনেই বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। অর্কদীপের মনটাও এতো বছর পর অনেকটা হালকা হয়েছে। আজও নিজের মনের কথাগুলো বলার জন্য সায়ন্তিকা ছাড়া আর কাউকে বিশেষ বলে উঠতে পারে না।

নিস্তব্ধতা ভাঙল সায়ন্তিকাই। সে বলল-

 " কেয়ার সাথে কি love marriage? "

তার প্রশ্নে অর্কদীপ যেন চমকে উঠল। হয়তো কিছু ভাবছিল। 

 " হ্যাঁ কি বলছিস্? "

সায়ন্তিকা প্রশ্নটা আবার রিপিট্ করে। অর্কদীপ তার উত্তরে বলে-

 " একেবারেই নয়। Totally arranged। ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটে পরিচয়। তিন মাসের মাথায় বিয়ে। সবটাই আমার বড়ো মাসির উদ্যোগ। "

কথাগুলো বলতে বলতে সায়ন্তিকার দিকে চোখ যায় অর্কদীপের। বাতাসে বার বার এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুলগুলোকে হাতের আঙ্গুলের ছোঁয়ায় ঠিক করার চেষ্টা করছে। স্লিভলেস ব্লাউজ আর কালো রঙের হালকা সিল্কের শাড়িতে সায়ন্তিকার লাবন্যময় রূপটা চোখে পড়ার মতো। শরীরে হালকা মেদ জমলেও আকর্ষণটা ভাবটা রয়েই গেছে। হাওয়ায় ঠাণ্ডার পারদ এখন একটু বেড়েছে। সায়ন্তিকা শাড়ির আঁচলটা গায়ে জড়িয়ে নিল। তবে অর্কদীপ ভাবল হয়তো এভাবে তাকানো এখন বারণ। সাথে সাথে চোখ নিচু করে সে বলল-

 " আমার কথাতো অনেকটাই বললাম। তোর কথাতো কিছুই বললি না। "

সায়ন্তিকা এবার অর্কদীপের দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে বলল-

 " আমি unmarried। "

সে যে unmarried এই কথাটা অর্কদীপের একেবারেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। সায়ন্তিকা বলে চলে-

 " আমি জানি তোর বিশ্বাস হবে না। তবে এতাই সত্যি। তোর পরে আর কাউকে আমার ভালবাসার ভাগ দেওয়া সম্ভব ছিল না। Even এখনও নয়। বাড়িতে এই নিয়ে অনেক ঝামেলা অশান্তি হয়। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে এক মুহূর্তের জন্য সরে আসিনি। শেষের দিকে আমাকে একপ্রকার আমার হালেই ছেড়ে দেওয়া হয়। এখন একটা MNC-তে job করি। এই পার্টিতে আমার এক বন্ধুর মারফত আসা। পরশু সকালের ফ্লাইটে ইতালি চলে যাচ্ছি। নিজের জীবনটাকে নিজের মতো করে enjoy করছি। বলতে পারিস্ আমি এখন বেশ ভালোই আছি। "

এইসব কথাগুলো শোনার পর অর্কদীপের মনে যেন একটা অপরাধপ্রবনতা কাজ করতে থাকে। নিজেকে আজ খুব ছোট মনে হচ্ছে। কিন্তু কার কাছে? সায়ন্তিকার কাছে নাকি তার ভালবাসার কাছে? এতদিন ধরে মনের ভেতর একটা ভুল ধারনা তৈরি করে রেখেছিল। সায়ন্তিকা হয়তো স্বামী সন্তান নিয়ে বেশ সুখেই আছে। অর্কদীপ তার জীবনে ঘটে অপ্রিয় ঘটনা গুলোর জন্য সায়ন্তিকাকেই দায়ী করতো। কিন্তু এখন গল্পতা সম্পূর্ণ উলটো। সায়ন্তিকা যে সারাজীবন নিঃসঙ্গভাবে পথ চলাটাকে বেছে নিতে পারে সেটা অর্কদীপ এক মুহূর্তের জন্যও ভাবতে পারেনি। আবার যেন সে নতুন করে সায়ন্তিকার প্রেমে পড়ে গেল। তবে এই প্রেম মোহ-মায়া বা আকর্ষণের নয়। এই প্রেম শ্রদ্ধার। যেই শ্রদ্ধায় মানুষটার সামনে মাথা নত হয়ে যায়। সায়ন্তিকাকে যেন নতুন করে ভালবাসতে ইচ্ছে করছে, কাছে পেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সময়ের কথা সময়ই বলে। এখন সময় অর্কদীপকে বলছে যাকে ছুঁতে গিয়েও ছুঁতে পারছো না, যাকে ইচ্ছে করলেও ধরে রাখতে পারছো না, যার গন্ধে তোমার মন ব্যকুল হয়ে পড়ছে, যেই পুরনো মানুষটাকে নতুন করে রাঙিয়ে তুলতে ইচ্ছে করছে সে তোমার মনে বাস করে।

এরই মধ্যে কোনো এক নাম না জানা বাংলা ব্যান্ডের একটি দল গানের আসর বসিয়েছে ছাদের এক প্রান্তে। আর সেখান থেকেই গান ভেসে আসছে। সেই গানের স্রোতেই হারিয়ে যাচ্ছে তাদের মনের কথা গুলো। 

 

 

"এক জনে ছবি আঁকে এক মনে, ও মন

আরেক জনে বসে বসে রঙ মাখে, ও মন 

ও আবার সেই ছবিখান নষ্ট করে

কোন জনা, কোন জনা,

সেই ছবিখান নষ্ট করে

কোন জনা, কোন জনা,

তোমার ঘরে বসত করে কয় জনা মন জানো না

তোমার ঘরে বসত করে কয় জনা। "......          


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance