Aparna Chaudhuri

Romance Thriller

3  

Aparna Chaudhuri

Romance Thriller

তিন্নি (পর্ব ৯)

তিন্নি (পর্ব ৯)

3 mins
292


পরের দিন অফিসে যাবার সময় ওরা দেখলও রোজির ঘরের দরজা তখনও বন্ধ। মৃগ আর তিন্নি ওর ঘরের দরজা ধাক্কা দিল। কোন আওয়াজ এলো না। ওরা আরও জোরে ধাক্কা দিল। কিন্তু ভিতর থেকে কোন শব্দ হলনা।

তিন্নি মৃগকে আগেরদিন রাতের ঘটনা বলল। শুনে মৃগ বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো। ও আরও জোরে দরজা ধাক্কা দিতে লাগলো। কিন্তু তাতেও কোন সাড়াশব্দ পাওয়া গেলো না। 

এই সব করতে করতে প্রায় আধ ঘণ্টা কেটে গেছে। ওরা দুজনেই অফিসে পৌছনোর জন্য লেট হয়ে গেছে। মৃগ তিন্নিকে বলল বাড়ির সিকিউরিটি গার্ডদের ডেকে আনাতে। ও নিজে অফিসে শুভমকে ফোন করলো। সমস্ত কথা খুলে বলল, রাতে তিন্নির দেখা ঘটনাও।

এদিকে তিন্নি সিকিউরিটি গার্ডদের নিয়ে ততক্ষণে পৌঁছে গেছে। বিল্ডিঙের সেক্রেটারি মিঃ স্বামিও এসে পৌঁছে গেছেন। সকলের সামনে গার্ডরা ধাক্কা দিয়ে দরজা ভেঙ্গে ফেলল। রোজি বিছানায় অদ্ভুত ভাবে শুয়ে আছে। মাথাটা বিছানার বাইরে ঝুলছে। পরনে বাইরের পোশাক। একপায়ে জুতো পরা রয়েছে। অন্য পায়ের জুতোটা পড়ে আছে দরজার পাশে।


মিঃ স্বামী সবাইকে ঘরের ভিতর যেতে বারন করলেন। উনি নিজে ভিতরে গিয়ে নাকের কাছে হাত দিয়ে দেখলেন স্বাস পড়ছে কিনা। তারপর ওদের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লেন। উনি ঘরের বাইরে এসে নিজের মোবাইল থেকে পুলিশকে ফোন করলেন।


তিন্নি আর মৃগ কেমন যেন হতভম্ব হয়ে বসেছিল। ওরা বিশ্বাসই করতে পারছে না রোজি আর নেই। হঠাৎ তিন্নির খুব কান্না পেল। কি ভেবে এখানে এসেছিল, আর কি হচ্ছে। চোখের সামনে মা আর বাবার মুখ ভেসে উঠলো। এই সব শুনে ওদের কি অবস্থা হবে। ও মৃগের দিকে তাকাল। দেখলো মৃগও কাঁদো কাঁদো ।


ওদের ফ্ল্যাটে এখন আশপাশের ফ্লাটের বেশ কিছু লোক এসে জড়ো হয়েছে। এই সব লোকেদের তিন্নি আগে কখনও দেখেনি। সকলেই ওদের কাছে জানতে চাইছে কি হয়েছে। এক কথা বলতে বলতে ওরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সবাই ঘরে উঁকি ঝুঁকি মারছে। ঘরের সামনে একজন সিকিউরিটি গার্ডকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে যাতে কেউ ভিতরে যেতে না পারে।


পনেরো মিনিটের মধ্যে পুলিশ এসে পৌঁছে গেল। একজন ইন্সপেক্টর তার সঙ্গে তিনজন পুরুষ আর একজন মহিলা কন্সটেবল। পুলিশ আসার সঙ্গে সঙ্গেই ফ্ল্যাট প্রায় ফাঁকা হয়ে গেল। শুধু মিঃ স্বামী আর দুজন সিকিউরিটি গার্ড রইল। ইন্সপেক্টর হাতে দস্তানা পরে তার দলবল নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। খানিকক্ষণ বাদে বেরিয়ে এলেন মোবাইলে কথা বলতে বলতে। ফরেন্সিক টিম এসে পৌঁছয়নি তখনও।

ইন্সপেক্টর মিঃ সংগ্রাম বিজয়কুমার ইংরাজিতে নিজের পরিচয় দিয়ে মৃগ আর তিন্নির সামনে সোফায় এসে বসলেন। তিন্নি শক্ত করে মৃগের হাতটা ধরল। দেখলও ওর হাতটা বরফের মত ঠাণ্ডা।


“ আপনারা ভিক্‌টিমের ফ্ল্যাটমেট?” মাথার টুপিটা খুলতে খুলতে বললেন ইন্সপেক্টর বিজয়কুমার।

ওরা নিঃশব্দে ঘাড় নাড়ল।

“ আপনি রাতে কিছু জানতে পারেন নি?” এবার উনি প্রশ্নটা করলেন তিন্নিকে। কারণ তিন্নির ঘরটা রোজির ঘরের সঙ্গে একদম লাগা।

তিন্নি বলল ও রাতে কি দেখেছে।

“ আপনি সেই লোক দুজনকে, যারা ওকে পৌঁছতে এসেছিল তাদের দেখলে চিনতে পারবেন?”

“ না। আমি আধো অন্ধকারে দেখেছিলাম।“

“ উনি কি প্রায়ই এরকম রাতে ফেরেন?”

“ হ্যাঁ। “

“ ওনার কোন আত্মীয় বা বন্ধুর ঠিকানা জানা আছে আপনাদের?”

তিন্নি মৃগের দিকে তাকাল। মৃগ মাথা নেড়ে জানালো যে না ।

ফরেন্সিক টিম পৌঁছতেই আবার পুলিশের লোকেরা তৎপর হয়ে উঠলো। ফোটোগ্রাফার নানা জায়গা থেকে নানা রকম ছবি তুলল। তারপর স্ট্রেচারে করে লাশ নিয়ে যাওয়া হল পোস্টমর্টেমের জন্য। সারাঘর থেকে আঙুলের ছাপ নিয়ে নেবার পর পুলিশ খানা তল্লাশি শুরু করলো। তখনি পাওয়া গেলো প্যাকেট গুলো। রজির টয়লেটের ফ্ল্যাশের মধ্যে লুকিয়ে রাখাছিল।


কনস্টেবল ওই প্যাকেটগুলো নিয়ে বেরিয়ে আসতেই ইন্সপেক্টরের চেহারা একেবারে বদলে গেল। এতক্ষণ খুব শান্ত ও ভদ্রভাবে উনি ওদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। হঠাৎ ওনার মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে উঠলো। ভুরু কুঁচকে উনি ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,” আপনারা বলতে চান যে আপনারা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না? এই ওনাদের দুজনের ঘরও তল্লাশি কর। আর আপনাদের মোবাইল ফোন গুলো দিয়ে দিন। কারুর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন না। “

(ক্রমশ...)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance