তিন্নি( পর্ব ৮)
তিন্নি( পর্ব ৮)
সেদিন অনেক রাত অবধি তিন্নি আর মৃগ বসে বসে গল্প করলো। আলোচনার সিংহভাগই হল শুভমকে নিয়ে। কাজের ব্যাপারে শুভম কতটা সিরিয়াস সেই নিয়েও মৃগ অনেক কথা বলল। যখন কাজ থাকে না শুভম একদম অন্য মানুষ কিন্তু কাজের সময় ওর মত স্ট্রিক্ট বস কমই দেখা যায়। বিশেষ করে দেরি করে পৌছনো, ডেডলাইন মিস করা এসব তো শুভমের কাছে একেবারে ক্ষমাহীন অপরাধ।
“রোজি কাজে কেমন রে?” জিজ্ঞাসা করলো তিন্নি।
“ কাজে খুবই ভালো। আর ও নিজের কাজের সময় কাউকে ছেড়ে দেয় না।“
“ ওর বয় ফ্রেন্ডরা?”
“ ডেডলাইন থাকলে ও কোনও বয়ফ্রেন্ডকে পাত্তা দেয় না। আরে সেবার কেরালা থেকে ওর বিএফ ওকে সারপ্রাইজ দেবার জন্য এসে পৌঁছে গিয়েছিল। তখন ওর ক্লোজিং চলছে। তাকে একেবারে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল। “
“ সেকি?”
“ হ্যাঁ রে। তাই ওকে বসেরা খুব পছন্দ করে।“
“ আর বয় ফ্রেন্ড রা?”
“ খুব। যেমন মাথা গরম হলে লাথি ঝ্যাঁটা মারে আবার যার প্রতি সদয় তাকে গিফটে গিফটে ভরিয়ে দেয়। আর ইট সিমস , শি ইজ ভেরি গুড ইন বেড। নিজের চেয়ে কম বয়সী ছেলে ওর বেশী পছন্দ। বয়স্করা নাকি অল্পেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে।“ বলে হি হি করে হেসে ফেলল মৃগ।
তিন্নির কান গরম হয়ে গেল, কিন্তু নিষিদ্ধ আলোচনার একটা আলাদা মজা আছে, যা আগে ও পায়নি।
“তুই জানলি কি করে?”
“ কেন ও-ই বলেছে। ওর সঙ্গে কোনদিন কথা বললে বুঝতে পারবি, ও এসব নিয়ে খুব ফ্রি। ও বেশ কয়েকটা ডেটিং সাইটের মেম্বার। “
“ তাদের সঙ্গেও কি......” তিন্নি আর কথাটা শেষ করতে পারেনা।
“ অবশ্যই। তাদের সঙ্গে ও হোটেলে রাত কাটিয়ে আসে।“
“ তুই কোন ডেটিং সাইটের মেম্বার?”
“ কেন ? তুই হবি?” মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করলো মৃগ।
“ না না। তা নয় আমি জিজ্ঞাসা করছি তুইও কি মানে......”
“ ব্লাইনড ডেটে গিয়ে হোটেলে রাত কাটিয়েছি কিনা?”
তিন্নি কোন উত্তর দিতে পারলো না। ওর দিকে তাকিয়ে মৃগ খুব মজা পেল। খানিকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে বলল,” তুই এখনও ভার্জিন তাই না?”
তিন্নি লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। কোন কথা বলল না। এতো খোলাখুলি সেক্স নিয়ে আলোচনা করাতে ও অভ্যস্ত নয়। ওকে চুপ করে থাকতে দেখে মৃগ বলল।
“ ডেটিং সাইটের মাধ্যমে বাইরে গেলেই সেক্স করা কম্পালসরি নয়। আর তা ছাড়া আমার একজন স্তেডি বয় ফ্রেন্ড আছে। সে দিল্লি তে থাকে। “
তারপর মোবাইল খুলে তার ছবি দেখালও।
“ কবে বিয়ে করবি?”
“ এখন দেরি আছে। “
রাতে ওরা একসাথে খেয়ে শুয়ে পড়লো। কাল তাড়াতাড়ি উঠতে হবে, আর লেটে পৌঁছতে চায় না তিন্নি।
আলো নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল তিন্নি। ঘুম ভাঙলও একটা আওয়াজ শুনে। মনে হল একটা ধাতব কিছু মাটিতে পড়লো। মোবাইলে দেখলও রাত দুটো পনেরো বাজে। তিন্নি বিছানা থেকে উঠে পা টিপে টিপে ঘরের দরজার কাছে গেলো । তারপর ধীরে ধীরে ঘরের দরজাটা একটু ফাঁক করলো। সেই ফাঁক দিয়ে দেখলও রোজি একজন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে নেশায় বুঁদ। আর একজন লোক ওর ঘরের দরজাটা চাবি দিয়ে খোলার চেষ্টা করছে। তার হাত থেকেই চাবিটা পড়ে যাওয়ার আওয়াজে তিন্নির ঘুম ভেঙ্গেছে।
লোক দুজনকে ও আগে দেখেনি। নিঃশব্দে ওর ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিল তিন্নি।
( ক্রমশ...)