তিলোত্তমা
তিলোত্তমা
ছেলে-
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে,মন বাড়িয়ে ছুঁই,দুইকে আমি এক করি নাএক কে করি দুই৷
হেমের মাঝে শুই না যবে,প্রেমের মাঝে শুইতুই কেমন করে যাবি?পা বাড়ালেই পায়ের ছায়াআমাকেই তুই পাবি৷
চা ওয়ালা - চায়ে চায়ে, মেয়ে - আমাকে দিন এক কাপ ( কবিতার ব্যাকগ্রাউন্ডে)
ছেলে - তবুও তুই বলিস যদি যাই,দেখবি তোর সমুখে পথ নাই৷তখন আমি একটু ছোঁব,হাত বাড়িয়ে জড়াব তোরবিদায় দুটি পায়ে,
কী দেখছেন?
মেয়ে - আপনাকে,ছেলে - কেনো? ছেলে দেখেন নি আগে।মেয়ে - আপনাকে প্রথম বার, কবিতা থামালেন যে?ছেলে - যে ভাবে তাকিয়ে রয়েছেন।মেয়ে - মন খারাপ? ছেলে - ছেলেদের মন খারাপ হতে নেই বুঝি?মেয়ে - বসা যাক, ও দাদা এদিকে দুকাপ চা।ছেলে - দাড়ান একটা সিগারেট আনি।মেয়ে - ঠাটিয়ে মারবো এক চর, ওহ সরি সরি সরি, আসলেছেলে - বুঝেছি অভ্যেস।মেয়ে - অনেক বছর পর মুখ ফুটে বেরিয়ে গেলো।ছেলে - ছাড়ুন আজ তবে সিগারেট থাক, তা অনেক বছর পর কেনো?মেয়ে - কারন যাকে বলতাম সে আমায় দশমীতে বিসর্জন দিয়েছে।ছেলে - মানে?মেয়ে - মানে কিছুই না স্যার ওই দিন এসে বলে সে নাকি...ছাড়ুন তো, তা আপনার দেবদাসের মতো অবস্থা কেনো? চুল এলোমলো এতো বড়ো, চোঁখের নিচে কালি এ ভাবে গঙ্গার পাড়ে।ছেলে - ভুল ভাবছেন যারা এক বার ভালোবাসে তারা কখনো ছেড়ে যায়না, যায় শুধুই তাদের শরীর, মৃত্যুর আগ অব্দি একে অপরকে ভালোবাসে, শুধু শরীর মন আলদা থাকে, তবে এখানে একটা কিন্তু আছে।মেয়ে - কী?ছেলে - জুতো ছিড়ে গেলে ছেঁড়া জুতো পড়বেন? মেয়ে - না , ছেঁড়া জুতো কেনো কিছুই পড়বনা।ছেলে - ঠিক একই ভাবে সামনের মানুষটা, দিন রাত খারাপ আচরন, কথা, খারাপ ব্যাবহার করে তাদের প্রতি একবার ভালোবাসা উঠলে, আর জন্মায় না, সে যতো কাছেই চলে আসুক। মেয়ে - তাই হয়তো তাকে খুব সহজেই ছেড়ে আসতে পেরেছি, কষ্ট হয়েছে, তবে ভালো আছি।ছেলে - আপনি কবিতা ভালোবাসেন?মেয়ে - বাসি তো, শুনবেন?ছেলে - আমার শেষ ইচ্ছে এটাই...মেয়ে - মানে?ছেলে - মানে আপনার কাছে শেষ ইচ্ছে প্রকাশ করলাম হাহা।একটু ফাঁকা জায়গা টায় চলুন , অসুবিধা নেই তো?মেয়ে - চলুন।ছেলে - গঙ্গার পাড়ে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে শুনবো ।
মেয়ে - হাহা তবে শুনন, তার আগে বলুন আপনার গল্প টা?ছেলে- তবে শুনুন
(আবহ পাল্টাবে রাতের কথোপকথন)
তিলোত্তমা- দেখো বিরক্ত কেনো করছো? কি হয়েছে বলো?ছেলে - শোনো একটু?তিলোত্তমা - সময় নেই।রাখো পড়ে ফোন করছি।( ফোন বাজলো)আবার কি হলো?ছেলে - আমি যানি তুমি এখন ফ্রী।দেখো আমি আমি?তিলোত্তমা - তোমার সাথে আমার স্ট্যাটাস যায়না, আমার ফ্যামিলি এর তোমার অনেক আলাদা।ছেলে- শেষ বার দেখা করতে পারি আমরা? তিলোত্তমা- না!ছেলে - আমার শেষ আনুরোধ?তিলোত্তমা- আচ্ছা
( গাড়ির আওয়াজ রাস্তায় )
ছেলে-একটু বসি?তিলোত্তমা- না!বলো?ছেলে- তিলোত্তমা আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারবোনা! আমি মেনেনিতে পারবোনা তুমি অন্য কারো সাথে থাকবে, কতো মানুষ তো না খেয়েও সংসার করে , কতো ভুল ক্ষমা করে আমি দুহাত জোর করে ক্ষমা চাইছি আমার অজান্তে করা ভুল গুলো ক্ষমা করে দেও।আমি বলবোনা বার বার চলো চা খাবো, একটু হাঁটতে বেরোব, দেখা করবো না তুমি যখন যেটা বলবে সেটা হবে, তিলোত্তমা তিলোত্তমা, আমি তোমায় ছাড়া সত্যি অগোছালো থাকবো, আমি বড়ো হয়েগেছি, নিজের খেয়াল রাখতে শিখেছি, আমি ভালো হয়ে গেছি এখন, আর কিছুটা সময় দেও তুমিও আমায় গুছিয় দেও দেখব আমি গুছিয়ে নিয়েছি নিজেকে ।
( কথা শেষ হয়ে সাউন্ড বেরিয়ে যাচ্ছে, আর মেয়ের কবিতা ব্যাকগ্রাউন্ড হয়ে ঢুকছে)
মেয়ে- " কি এক ইশারা যেন মনে রেখে এক-একা শহরের পথ থেকে পথে অনেক হেঁটেছি আমি; অনেক দেখেছি আমি ট্রাম-বাস সব ঠিক চলে;তারপর পথ ছেড়ে শান্ত হ’য়ে চ’লে যায় তাহাদের ঘুমের জগতে:
সারা রাত গ্যাসলাইট আপনার কাজ বুঝে ভালো ক’রে জ্বলে।কেউ ভুল করেনাকো— ইঁট বাড়ি সাইনবোর্ড জানালা কপাট ছাদ সবচুপ হ’য়ে ঘুমাবার প্রয়োজন বোধ করে আকাশের তলে।"ছেলে - বাহ ।জীবনানন্দের ভীষণ প্রিয় একটা কবিতা।
*চোখের জল টা মুছুন, তার পর
(রাস্তার ধারে সেই আগের আবহ)
ছেলে - তিলোত্তমা , এই দিকে তাকাওতিলোত্তমা - আমার ঘেন্যা করছে তাকাতে।
( ছেলের পড়ে যাওয়ার আওয়াজ)তিলোত্তমা- একি কি হোলো তোমার , চুপ কেনো? কিছু বলো ??টেক্সী টেক্সী? ( কাঁদো কাঁদো গলায় )
ছেলে - তিলোত্তমা, তিলোত্তমা? এ শহরের আরেক নামও কিন্তু তিলোত্তমা হাহা।( বেডে শুয়ে হসপিটালের রুমে ঢুকতে গিয়ে)
( হসপিটালের আবহ)
চুপ একদম চুপ( কাঁদো গলায়,)ডাক্টার বাবু?
ডাক্তারবাবু - দেখুন ওনার নার্ভের সমস্যা ছিলো, ঠিক মতো না খেয়ে,না ঘুমিয়ে, দেখুন ওনার সময় অনেক কম।
তিলোত্তমা- কি বলছেন কী?( কাঁদো গলায়)
( ছেলের বেডের পাশে গিয়ে)
বসালাম? তুমি ভালো আছো ?।ছেলে - হা, তিলোত্তমার, আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারবোনা,
তিলোত্তমা - লজ্জা নেই, বিন্দু মাত্র আত্তসন্মন বোধ নেই? তুমি আবার?( চেল্লানো, কাঁদো গলায়)
ছেলে - তোমার হাত টা দেওনা, হাতটা একটু ধরবে?শোনো?
তুই উঠবি আমার নায়ে,আমার বৈতরনী নায়ে৷নায়ের মাঝে বসব বটে,না-এর মাঝে শোব৷হাত দিয়েতো ছোঁব না মুখ,দু:খ দিয়ে ছোঁব৷তুই কেমন করে যাবি?
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে,মন বাড়িয়ে ছুঁই,দুইকে আমি এক করি নাএক কে করি দুই৷
( তিলোত্তমা -হাত টা ছেড়ে দিলে কেনো? বলো বলো , আমি কোনোদিন ছেড়ে যাবনা! তাকাও)তিলোত্তমার কান্না কণ্ঠ তার মাঝে আগের মেয়ের গলা)মেয়ে- মানে? আরে কোথায় আপনি, আপনি কোথায়??(, দুটো কান্না, খোঁজা এক সাথে মিক্স)End
" তিলোত্তমা "~ বাবু মশাই

