আর্ধনারী
আর্ধনারী
উপন্যাস কলকাতা তে পড়াশোনা করে । কালিয়াগঞ্জ থেকে কলকাতা 6.30এ ট্রেন। হঠাৎ দুপুরে কোলকাতা আসতে হবে ঠিক হওয়ায় সে তৎকালো পায়না। জেনারেল এ উঠে পরে আর এখানেই পরিচয় দীপ্ত থেকে হয়ে ওঠা লাভলি মাসির সাথে । ট্রেন মালদা পেরিয়েছে, প্রায় অনেক রাত উপন্যাস ট্রেনের দরজার কাছে গিয়ে বসে, ভীষন সুন্দর চলন্ত ট্রেনে স্থির চাঁদ, দ্রুত গতিতে চলে যাওয়া গাছ, বাড়ি, সে বসে পড়লো ট্রেনের দরজার হাতল ধরে সত্যিই এক অপরূপ দৃশ্য তার মাঝে তার মাঝে ঠান্ডা হাওয়া, হঠাৎ একটা হাত কাঁধে ঠেকলো বললো ..
লাভলি- " এই হিরো টাকা বের করো"
উপন্যাস - আপনারা কি পেয়েছেন বলুন তো, একটু আগে খুজরো নেই বলে,20 টাকার নোট দি,আর সে দিচ্ছি বলে ট্রেন থামলে অমনি নেনে যায়। আমি কোথায় পাবো এতো টাকা আমি কি ইনকাম করি।
লাভলি - তোমার পাশে বসি?
উপন্যাস - হ্যা বসো, কিন্তু এই ছোটো যায়গায় তুমি বসবে কি করে , চেপে বসতে হবে।
কথক - লাভলি উপন্যাসের মাথায় হাত বুলিয়ে, ব্যাগ টা কোলে রেখে পাশে বসলো, বললো কি হয়েছে বাবু ? মন খারাপ? বাড়ির সবাই ভালো আছেন?
কথক- উপন্যাস অবাক হয়ে দেখলো ভালো ভাবে তার মুখের দিকে,যেমন চোখ ,তেমন নাক,চুল চুপ থাকলে যে কেও ধরতে পারবেনা।
উপন্যাস -ভালো আছে,আর আমিও কিন্তু চিন্তা তো হয় আমায় এতো কাদ
স্ট কোরে পড়াচ্ছেন কি যে হবে কিছু না করতে পারলে।
লাভলি - আমি দুহাত ভরে আশীর্বাদ করছি খুব ভালো হবে তোর। অনেক দূর এগোবি, আমাদের কথা শুনেছি ভগবান শোনেন,আমি মন থেকে চাই আমার এই কথা গুলো উপড়ালা যেনো ফলিয়ে দেয়।
উপন্যাস - তোমার হাত দেবে,অনেক ভালবাসা, তোমার কথা যেনো সব ঠিক হয়ে । একি তোমার হাতে এগুলো সিগারেটের পড়ার দাগ না ,কে করেছে অমন?
লাভলি - সে অনেক গল্প, শুনবি?
ওর নাম শব্দদেব মুখার্জি। একদিন বাড়িতে বউয়ের সাথে ঝামেলা কোরে রাস্তার পাশে এক বেঞ্চিতে আমি বসে আছি আমার পাশে বসে।
কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করতে বলে।
শব্দ- আজ মাসের 28 তারিখ আমার পকেটের অবস্থা খারাপ। এদিকে বউ এর ভাইয়ের বেশ কিছু টাকা লাগবে ,আমায় দিতে বলছে,আমি নেই বলেছি এই নিয়েই ঝামেলা, আর ভালো লাগেনা।
কথক - শব্দ মুখে দু হাত রেখে মাথা নিচু করে বসে রইলো। লাভলি মাথায় হাত রেখে বললো,
লাভলি - আমি দিচ্ছি টাকাটা,পরে আমায় দিয়ে দিও, আর এটুকু বিশ্বাস করতেই পারি ,আর না দিলেও ক্ষতি নেই সারাদিন তো অনেক মানুষের থেকেই টাকানি।
কথক - শব্দ কিছুক্ষণ মুখের দিকে চেয়ে ,টাকা টা নিলো বললো
শব্দ - এখানে অনেক বেশি টাকা আছে এত লাগবে না। আচ্ছা বেশ আমি রাখলাম বাকি টুকু আমারও একটু লাগবে,আচ্ছা তোমার প্যামেন্ট নম্বর টা দেও ।
কথক - লাভলি নাম্বার টা দিলো। দুই দিন পরে টেক্সট এলো লাভলির ফোনে ।
শব্দ - আমরা কি দেখা করতে পারি কাল, আসলে তুমি মানুষটা যতোটা ভালো , ঠিক ততটা দেখতেও,ফাঁকা রাস্তায় একটু হাঁটতে তো পারি, তাছাড়া তুমি আমায় হেল্প যা করলে তাতে আমারও তো কিছু কর্তব্য আছে ।
কথক - লাভলি অনেক ভেবে বললো।
লাভলি - দেখো শব্দ তুমি খুব ভালো , কিন্তু আমার সাথে রাস্তায় বেরোবে এটা সবাই কি ভাবে নেবে ,আচ্ছা বেশ কাল তবে 9 টায় ওই একই যায়গায় যেখানে কাল দেখা হয়ে ছিলো।
কথক - লাভলি পৌঁছে দেখে শব্দ এক গুচ্ছ ফুল নিয়ে বসে।আর হাতে একটা খাম , লাভলি কে দেখে উঠে দাঁড়ালো শব্দ, লাভলির কাছে গিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো।
শব্দ - এই ফুল গুলো তোমার জন্যে , আর এই নেও এতে দেওয়া তোমার টাকা আছে ইচ্ছে করেই আমি টাকা টা অনলাইন করিনি,দেখা করে ধন্যবাদ জানানো টা বেশি দরকারি ছিলো, মানুষটাকে দু চোখ ভরে দেখতে না হলে পেতাম না যে।
( আবহাওয়া পাল্টাবে ট্রেন)
লাভলি - উপন্যাস আমাদের বন্ধুত্ব গড়ালো প্রেমে,আমি চাইনি ভালো বাসতে কিন্তু ভালো বেসে ফেললাম।
আমি গুরুমা, আমাদের সমাজ , রাস্তায়, বাসে ট্রেনে টাকা তোলা বন্ধ করলাম। আমরা ঘর বাঁধলাম, শারিরীক সম্পর্ক হতে থাকলো । আমি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দি এবং বলি তুমি তোমার সংসার সব সামলাও কিন্তু সপ্তাহে একদিন হলেও আমার সাথে থাকতে হবে।
জানো উপন্যাস আমি রোজ রান্না কোরে অফিসে যাওয়ার পথে লুকিয়ে দিয়ে আসতাম। এভাবে বছর দুই পার হলো। আমি বললাম আমরা বাচ্চা দত্তক নেবো ,সে রাজিও হলো।
একদিন বৃষ্টির রাতে দরজায় ধাক্কা দিয়ে আমার নাম ধরে ডাকতে থাকে , দরজা খুলতে দেখি শব্দ ড্রিংক করে আমার সামনে। আমাদের কথা কাটাকাটি শুরু হয়,আমার গায়ে হাত তোলে,ওর দেওয়া এই হাতের দাগ গুলো। উপন্যাস আমি বুঝতে পারছিনা কোনো প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছিনা।সে ভোর বেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো ।। এর পর কয়েক দিন, মাস আমি কোনো ভাবেই ফোনে পাইনা, আমায় সব যায়গা থেকে ব্লক করে,ওর অফিসে গিয়ে জানতে পারি,
( আবহাওয়া পাল্টাবে)
সিকুরিটি গার্ড - কি অফিসেও হাজির কোনো টাকা পয়সা হবেনা।
লাভলি - আমি টাকা চাইতে আসিনি,আমি শব্দ দেব মুখার্জি ও আমার বন্ধু ওর কোনো যোগাযোগ না পেয়ে অফিসে এসছি।
সিকুরিটি গার্ড - ও শব্দ বাবু উনি তো ছেড়ে দিয়েছেন এই চাকরি, আর তাছাড়া নতুন বিয়ে হয়েছে উনি যাকে ভালোবাসতেন ছোটো থেকে তার সাথে ।
কথক - লাভলি কোনো যোগাযোগের ঠিকানা জানতে চাইলে বলে কোনো কিছুই সে জানে না। লাভলির চোখে জল গড়িয়ে পড়ছে।
( ট্রেনের আওয়াজ জোরে থেকে আস্তে আস্তে বেড়িয়ে গেলো)
সমাপ্ত
সিকুরিটি গার্ড -

