Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Darshan Sahoo

Horror

3.7  

Darshan Sahoo

Horror

থাবা

থাবা

6 mins
20.8K


    গৌরীপুর মোড়ে বাস থেকে নেমে ভীষণ অবাক আর হতভম্ব হয়ে পড়লাম, দেখি সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে, তার উপর কোথাও কোনো জনমানবের চিহ্নমাত্র নেই। হাতের ঘড়ির দিকে তাকাতেই আমি চমকে উঠলাম, রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে বাজে। ট্রেন মিস, তার উপর ঠেলাঠেলি-গুঁতোগুতি এড়ানোর জন্য দুটো বাস ছেড়ে দিয়েছি ঠিকই, তবে এতটা যে রাত হয়ে যাবে তা ভাবতেই পারিনি। হয়তো অতটা অবাক হতে হতো না যদি দীর্ঘ এ পথটা বাসের মধ্যে আরামে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে না কাটাতাম।

তা যাই হোক, গৌরীপুর মোড় থেকে মিনিট তিরিশেক সাইকেল জারনি করলেই তিন চারটে ছোট গ্রাম ও একটা বিরাট নির্জন ফাঁকা মাঠ পেরিয়ে আমার গাঁয়ের দেখা মেলে। গৌরীপুর মোড় থেকে ডানহাতি রাস্তাটায় হনহনিয়ে ঢুকে পড়লাম আমি, ইঁট বিছানো এই পথটাই সীতাগঞ্জ-এর সামনে দুটি শাখায় ভাগ হয়ে গেছে, আর তারই একটা ছুটে গেছে আমার গাঁয়ের দিকে। ডানহাতি রাস্তাটা ধরে কিছুটা হাঁটার পর বাঁপাশে এক ছোট্ট বাড়ির বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম, লোহার টিনবাঁধা সে দরজা, দরজার ওপরের দেওয়ালে বাংলায় মোটা মোটা অক্ষরে লেখা,-" সাইকেল জমা রাখা হয়"। এটা বুড়ো পরেশ সেন-এর বাড়ী, যারা কাজ-কর্ম, লেখা-পড়া ইত্যাদির তাগিদে গাঁ ছেড়ে শহরের দিকে যায়, তারা প্রায় সকলেই এখানে তাদের সাইকেল আর মোটর-সাইকেলগুলো জমা রেখে যায়৷ ভাড়া খুবই কম, সাইকেল প্রতি পাঁচ টাকা আর মোটর সাইকেল দশ টাকা।

বাড়ির টিনের দরজায় কয়েকবার সজোরে আঙুলের টোকা দিলাম কিন্তু কোনো সাড়া মিললো না। শীতের ঠান্ডা হাওয়া দাঁতে দাঁতে কাঁপুনি ধরাচ্ছিলো, মাথার মাফলারটা তাই আরও শক্ত ও কায়দা করে বেঁধে নিলাম। হাতের তালুদুটো ঘষতে ঘষতে ডাক দিলাম,- "কাকু.... দরজাটা খুলুন, সাইকেলটা নেব"। তারপর আরও কয়েকবার আঙুলের টোকা দিলাম, তাও কোনো কাজ হলো না। খুড়তুতো এক দাদাকে ফোন করার জন্য পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখি বেচারি খিদে পেটে কেঁদে কেঁদে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে। এক বিরক্তিসূচক শব্দ করে দরজার দিকে ফিরে দাঁড়ালাম, দেখলাম ওপারে একটা কুঁজো কালো মূর্তি অন্ধকার ঠেলে দরজার দিকে এগিয়ে আসছে। কিছুটা সামনে আসতেই লোকটার হাতের হ্যারিকেনের মৃদু আলোয় তাকে স্পষ্ট চিনতে পারলাম, হ্যাঁ..দোকানী পরেশ সেন। এতক্ষনে আশ্বস্ত হলাম, মনের অনেক দুশ্চিন্তা দূর হলো, মাথাটাও খানিক হালকা হলো।

বুড়ো পরেশ সেন হ্যারিকেনটা উঁচিয়ে ধরে আমার মুখখানা ভালো করে কয়েকবার দেখে নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো,- "ও, তুমি ! তা এতো রাত অবধি কোথায় থাকো বাপু?" আমি তেমন কিছু না বলে শুধু একটু হ্যাঁ হুঁ দিয়ে তার পিছু পিছু ঘরে এসে ঢুকলাম, বুড়োর সারা শরীর কালো মোটা আরামদায়ক চাদরে ঢাকা, মাথায় মাঙ্কি টুপি, পায়ে একজোড়া ছাল ওঠা কালো বুট আর চোখে সেই চেনা মোটা ফ্রেমের চশমাটা। কয়েক সেকেন্ড বাদে টর্চ হাতে দরজার বাইরে বেরিয়ে এসে সাইকেলে চড়ে বসলাম; আর তক্ষনাৎ বাড়ির মোটা লোহার দরজাটা সশব্দে বন্ধ হয়ে গেল।

ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে আমি সাইকেল চালাতে থাকলাম, ইতিমধ্যেই হাতে দস্তানাজোড়া গলিয়ে নিয়েছি। হঠাৎই খেয়াল করলাম কাঁপা কাঁপা ঠোঁটদুটো আমার অজান্তেই কখন গুনগুনিয়ে সুর ভাঁজতে শুরু করে দিয়েছে। শিশুকালে পড়া সেই লাইনটাও মনে মনে আওড়ে উঠলাম,- "উহঃ আহঃ কেন করো/ শীত লাগে তো গানটি ধরো", এভাবেই গুনগুন করতে করতে চললো আমার অভিযান। তা প্রায় পনেরো-বিশ মিনিট সেভাবেই যাওয়ার পর হঠাৎ যেন আবহাওয়ার হালকা পরিবর্তন অনুভব করলাম, ঠান্ডাটা বোধ হয় এবার একটু বেশিই হুল ফোটাচ্ছে। দেখলাম অন্ধকারে ডুবে থাকা বাড়িঘর আর গাছপালাগুলো কেমন যেন রহস্যময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিয়ে, তারা যেন আমাকে ঘিরে চুপিসারে কিসব ফন্দি এঁটে চলেছে। শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা কিছু একটা যেন নীচের দিকে অনবরত নেমে যেতে থাকলো, সাইকেলের প্যাডেলে আমি জোরে চাপ দিলাম, কিন্তু সাইকেলটা আগের মতো আর টানতে পারলাম না, পা দুটো যেন ঠান্ডায় জমে গেছে। মনে হলো সাইকেলের পেছনে কেউ যেন হিমালয় পর্বতটাকে বেঁধে দিয়ে গেছে, আর আমি কেতরে কেতরে সেটাকে টেনে নিয়ে চলেছি। ভয়ে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেললাম, আরো একবার সাইকেলের গতি বাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলাম, আর ঠিক তখনই আমার ঠান্ডা দেহের বাম কাঁধে এক হিমশীতল হাতের থাবা এঁটে বসলো। সাথে সাথে আমি বীভৎস এক চিৎকার করে সাইকেল থেকে গড়িয়ে পড়লাম, কাঁধের সেই জায়গাটা এখনো ঠান্ডা হয়ে রয়েছে, তবে থাবাটা যেন সরে গেছে মনে হলো। কয়েক সেকেন্ড বাদে আমি আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালাম, ঘোর মাতালের মতো পাদুটো কেঁপে চলেছে আর গলাটা যেন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। দু-তিনবার ঢোঁক গিলে টিমটিমে টর্চের আলোয় চারপাশটাকে দেখলাম, তারপর ভয়ার্ত কাঁদো কাঁদো গলায় চেঁচিয়ে উঠলাম,- "কে তুমি? কি চাও?", গলার আওয়াজ তো দূরের কথা, ছোটখাটো কোনো শব্দও কানে এসে পৌঁচ্ছালো না। আমি সাইকেলেটা দুহাতে চেপে ধরে আবারও একবার চিৎকার করলাম,- " কে তুমি, কি চাও আমার কাছে?" কয়েক সেকেন্ড কোনো সাড়া নেই, তারপর হঠাৎই একসময় অমাবস্যার ঘন কালো অন্ধকার ফুঁড়ে ঠিক আমার কানের সামনে অশরীরীটা মৃদু-ফাঁপা আর ভয়ানক ভাঙা ভাঙা স্বরে বলে উঠলো,- "আমি কে, কি হবে তা জেনে? সাইকেলটা চালাও,দ্রুত চালাও, তোমার কোনো ক্ষতি করবো না, অন্যথায়...হে হে হে....তুমি শেষ"। শব্দের সাথে বেরোনো তার মুখের ঠান্ডা বাতাস আমার এক কান দিয়ে ঢুকে অন্য কান ফুঁড়ে বেরিয়ে গেল, আর বীভৎস এক দুর্গন্ধে সারা গা গুলিয়ে উঠলো। 

 আমি মুখ বুজে প্রথমে সাইকেলে চড়ে বসলাম, তারপর প্যাডেল করতে আরম্ভ করলাম। এবারেও সেই একই কান্ড, সাইকেল টানতে গিয়েও টানতে পারলাম না, কোনো রকম গড়িয়ে চললো যা। হঠাৎই আমার বাম কাঁধে ঠিক সেই জায়গায় আর পেটের ডানদিকে আবারও তীব্র ঠান্ডা থাবার উপস্থিতি অনুভব করলাম, অশরীরীটা আমাকে দুহাতে চেপে ধরেছে। দেহের ওই দুই স্থানের মাংসপেশি যেন জমে বরফ হয়ে গেলো, এবার দেখলাম সাইকেলটা সজোরে ছুটছে। বুঝতে পারলাম না কোনদিকে ছুটে চলেছি আমরা, সাইকেলটা থামানোর জন্য সজোরে ব্রেক কষলাম তবুও থামাতে পারলাম না৷গাছপালা-ঘরবাড়ি ফুঁড়ে সাইকেল এগিয়ে যেতে থাকলো। একসময় সাইকেলটা তিনমাথা রাস্তার মোড়ে এসে পড়লো, চিনতে পারলাম আমি সেই রাস্তা, এটাই তো সীতাগঞ্জ মোড়। মোড়ের বামহাতি রাস্তাটায় নামলেই আর দশ-পনেরো মিনিটের পথ, প্রথমে পড়বে সেই ফাঁকা মাঠ, তারপরই আমার গ্রাম।

মনে পড়লো মাঠের মাঝখানের ভৌতিক শ্মশানটার কথা, কতো না আজব, কতো না ভয়ঙ্কর সব কান্ড ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি তাকে ঘিরে। গাঁয়ের লোকেদের বলতে শুনেছি ওই শ্মশানে গভীর অমাবস্যার রাতে নাকি সারারাত জুড়ে চলে ভুতেদের তান্ডব, তারা পথিককে ভুলপথে চালিত করে মজা দেখে আর তাদের থলির ভেতর থাকা খাবার-দাবার, ফল-মূল সবই আত্মসাৎ করে ফেলে। ঘন্টা খানেক আগে অবধি আমি এসকল রটনাগুলোকে এতটুকুও পাত্তা দিইনি, কিন্তু আজ এই গভীর অমাবস্যার রাতে দাঁড়িয়ে এক বীভৎস নতুন অভিজ্ঞতার শিকার হলাম। ঘটনা-রটনা আর বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝের সুদৃঢ় প্রাচীরটা যেন নিমেষেই এক উন্মত্ত সাগরের ঢেউ-এ বরফের মতো গলে গেল।

অবশেষে এসে পৌঁচ্ছালাম শ্মশানের রাস্তাটায়, বহুদিনের চেনা পথটা আজ যেন অচেনা ঠেকছে। কিছুক্ষন আগে অবধি চারিদিকটা ছিল ঘন অন্ধকারে ঢাকা, কিন্তু এপথে পৌঁছে দেখি কোথা থেকে মৃদু মৃদু সব আলো পড়েছে বড়ো বড়ো বট-অশ্বত্থ-শ্যাওড়া গাছের চূড়াগুলোতে, কি বীভৎস গা ছমছমে সে আবহাওয়া; কোনো একদল অশরীরী অতিথির অপেক্ষায় শ্মশানটা যেন সেজেগুজে বসে রয়েছে।সাইকেলের কেরিয়ার জুড়ে বিরাজমান অশরীরীটা তখন আর অতটা ভীতির সঞ্চার করছিল না, তার ঠান্ডা হাতের থাবাটাকেও আমার দেহ মানিয়ে উঠেছিল; মনে মনে ভাবলাম, একবার এই মাঠ পেরোতে পারলে বাঁচি। পেছনের অশরীরীটা কোথায় চলেছে?, আমার সাথে সাথেই বাড়ি অবধি যাবে নাকি কে জানে!এইসকল ভাবতে ভাবতেই হঠাৎই এক জোরালো ঠেলা খেয়ে আমি সাইকেল থেকে ছিটকে রাস্তা দিয়ে গড়িয়ে পড়লাম শ্মশানের উল্টো দিকের নিচু মাঠে।

   মাঠের মাঝে চিৎ হয়ে পড়েই দেখলাম রাস্তার পাশে ঝুলে থাকা বটের ডালটা ধরে কেউ যেন হুড়মুড় করে গাছে চড়ে বসলো, এতক্ষন সঙ্গে সঙ্গে আসা অশরীরীটাই হবে বোধ হয়। তারপরই হঠাৎ শ্মশানের সমস্ত গাছ-পালাজুড়ে এক জোরালো আলোড়ন শুরু হলো, সাথে বিকট সব চিৎকার। সহস্র অশরীরীর দাপাদাপিতেই বোধ হয় গাছের ডালগুলো হুড়মুড় করে একসাথে ভেঙে পড়লো, মাঠ-ঘাট সব কাঁপতে শুরু করলো আর ঘাস বিছানো সমতল মাঠটা অজস্র ফাটলে ভরে গেল।পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ানোর সামর্থ্য ছিলোনা আমার, তবু বহু কষ্টে কোনোরকম উঠে কাতরাতে কাতরাতে বাড়ি ফিরলাম। মুখ,হাত-পা'টা ভালো করে ধুয়ে নরম বিছানায় শরীরটাকে টানটান করে মিলে দিলাম, সারা দেহে অসহ্য ব্যাথা, থার্মোমিটারে দেহের তাপমাত্রা ধরা পড়লো ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট।পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম গায়ে ব্যাথার বিন্দুমাত্রও নেই, শরীরের তাপমাত্রাও পুরোপুরি স্বাভাবিক, কালকের ঘটনাটাও আর অতটা দগদগে ঠেকছে না, দেখলাম আমার সাইকেলের কিছু কিছু অংশ বেঁকে গেছে।

 ইতিমধ্যে মা হাতে ব্যাগটা দিয়ে গেল বাজারে যাওয়ার জন্য, আমিও তক্ষনাৎ ব্রাশটা সেরে নিয়ে বাজারে বেরিয়ে পড়লাম। হাট'টা বসে সীতাগঞ্জ মোড়ে, সেখানেই চলেছি।সেই একই পথ,কয়েক মিনিট পর শ্মশানের রাস্তাটায় এসে পৌঁছালাম।সাইকেল থামিয়ে শ্মশানটাকে ভালো করে দেখতে লাগলাম, কিন্তূ সেখানে অস্বাভাবিক কিছুই খুঁজে পেলাম না, গাছগুলো আগের মতোই ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর ঘাস বিছানো মাঠটাও রয়েছে আগেরই মতো সমতল। আমি আর কিছুই ভাবতে পারলাম না, মাথাটা আবার ভার হয়ে আসতে থাকলো। শ্মশানটা ছেড়ে আসার সময় দেখি মাঠের গাছপালা, বেঁটে বেঁটে ঘাস আর লোহার চুল্লিটা আমার দিকে ঘাড় ফিরে সমানে হেসে চলেছে।


Rate this content
Log in

More bengali story from Darshan Sahoo

Similar bengali story from Horror