STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Drama Action Thriller

2  

Nityananda Banerjee

Drama Action Thriller

তারানাথ তান্ত্রিক (২)

তারানাথ তান্ত্রিক (২)

3 mins
58

ভেঁপু বাজিয়ে রাতের শেষ ট্রেনটা চলে গেল। জনশুন্য মন্দিরের দরজা বন্ধ হল । বটগাছের তলায় বাঁধানো চাতালে বসে রাত্রিযাপনের চিন্তা মাথায় যেন বজ্রাঘাত মনে হল । জনমানবহীন মন্দিরে তান্ত্রিক একলা মন্দির চত্বর পরিদর্লনে বেরোলেন ।চাতালে অবস্থানরত আগন্তুকের উদ্দেশ্যে বললেন -' গ্রাম সন্নিকটে, যেতে পার । রাতের মত থাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে ।'

আগন্তুক নতুন। কি ভাবে গ্রামে যাবে ভেবে পেল না । শুধু এটুকু জানে যে সেখান থেকে গ্রামের দূরত্ব প্রায় দু'মাইল। এতটা পথ একা অন্ধকারে কি ভাবে যাবে, আর যেয়েই বা কাকে বলবে, কে তার কথা বিশ্বাস করবে - ইত্যাদি ভেবে কোন কুলকিনারা করতে না পেরে তান্ত্রিককে ঐ গাছের নীচে থাকবার অনুমতি চাইল। তান্ত্রিক বললেন - দেখ ব্যাটা ! এ' হচ্ছে শ্মশান ! এখানে সচরাচর কেউ দিনের বেলায়ও আসে না, আর এই রাতে তুই এখানে একলা থাকতে পারবি না। তার চেয়ে গ্রামে গিয়ে থাকার ব্যবস্থা কর।

আগন্তুক রাজী হল না । তান্ত্রিক অগত্যা তাকে গুহার ভেতরে নিয়ে গেলেন । প্রায় আধশোয়া অবস্থায় খানিকটা যেতেই আগন্তুকের শিরদাঁড়ায় ব্যথা শুরু হল । তান্ত্রিকের ঠেলায় আরও কিছুটা গিয়ে প্রায় অচৈতন্য হবার উপক্রম হল । বলল - বাবা! আর পারছি না। এই ভ্যাপসা গরমে আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত।

- সেজন্যই তো তোকে গ্রামে যেতে বলেছিলাম।

- বাবা ! এর চেয়ে বাঁধানো চাতালটাই ভালো ছিল।

- তা'হলে তাই কর । ওখানেই থেকে যা।

তান্ত্রিক কথা বাড়ালেন না, দিব্যি পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। আগন্তুক পা জড়িয়ে ধরে বলল - বাবা আমাকে ক্ষমা কর, আমার আর নড়ার শক্তিও নেই।

- তবে এখানেই মর।

বলে তান্ত্রিক বিদায় নিলেন।আগন্তুক অজ্ঞান অবস্থায় সেখানেই পড়ে থাকল।

রাত শেষ হয়ে ভোর হল । ঊষার আলোয় জ্ঞান ফিরে পেয়ে আগন্তুক দেখল তান্ত্রিক স্নান সেরে যজ্ঞ করছেন ঘন্টার শব্দে দিগ্বিদিক গম্ গম্ করছে। শরীরে বল পেয়ে আগন্তুক

ফেরার সিদ্ধান্ত নিল । পিছিয়ে কিছুদূর আসতেই দেখল এক বিশাল ময়াল হন্তদন্ত হয়ে তার দিকেই আসছে। এক্ষুণি গিলে ফেলবে যেন । সে গতি বাড়িয়ে কোনমতে বাইরে বেরিয়ে এল । প্রকৃতির অমল শোভায় তার বাহ্যজ্ঞান ফিরে পেল যেন। দেখল তান্ত্রিক তার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছেন । বিপদ কেটে গেছে ভেবে হাতজোড় করে বাবার উদ্দেশ্যে প্রণাম জানাল। ঠিক সেই সময়, তান্ত্রিক এক বিশাল খাঁড়া বের করে তাকে বলি দিতে উদ্যত হলেন । ভয়ে তার চোখমুখ শুকিয়ে গেল । তান্ত্রিকের অট্টহাসিতে চারদিক ভরে উঠল।

এক আঁজলা রক্ত মায়ের পায়ে নিবেদন করে তান্ত্রিক পুনরায় হোমে বসলেন। আগন্তুকের মুণ্ডহীন ধড়টা কিছুক্ষণ ছটফট করে চিরতরে স্তব্ধ হয়ে গেল।

মা মুণ্ডমালিনীকে তরতাজা মুণ্ড উৎসর্গ করে তান্ত্রিক সিদ্ধযোগের আর এক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে ফেললেন।

আগন্তুক তান্ত্রিকের নবতম শিকারে পরিণত হয়ে ধড়সমেত মুণ্ড পুড়ে ছাই হয়ে গেল।

এর কিছুদিন পর গোটা মন্দিরচত্বর পুলিশে ঘিরে ফেলল। তান্ত্রিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে কোন সূত্র মিলল না। তান্ত্রিক চোখ বন্ধ করে পুলিশ অফিসারকে বললেন - সব মা জানেন। যুবকটি এখন কোথায় কি করছে সব তাঁর নখদর্পনে।

পুলিশ তান্ত্রিককে গ্রেপ্তার করল। কোমরে দড়ি দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল। থানায় গিয়ে পুলিশ অফিসার দেখলেন আসামী উধাও।

(ক্রমশ:)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama