Apurba Kr Chakrabarty

Romance Classics

4.5  

Apurba Kr Chakrabarty

Romance Classics

সুর অসুর

সুর অসুর

25 mins
624


এন এম সাহেব ভীষণ অমায়িক ভদ্র মানুষ। অফিস বস বলে তার কোন গর্ব অহংকার নেই। তার অফিসের ড্রাইভারকেও,আপনি সম্ভাষন ছাড়া কথা বলেন না। সে সময়ে ড্রাইভার স্কেল অনেক কম। কিন্তু অনিল বাবু বাড়ির অভাব থাকলেও তেল চুরি বা বেশী কিলোমিটার রান বেশী দেখিয়ে বাড়তি আয়ের পথে হাঁটত না।

আগের অফিস মাস্টাররা তার সততার মূল্যায়ন তেমন না করুক, এন এম সাহেব তাকে আর্থিক ভাবে সুবিধা করে দিতেন। অনিল তাই অফিসের এই বড় সাহেবের ভীষণ ভক্ত।তার বাড়ির সুখের দুখের কথা তেমন না বললেও এখন তার ডিউটির মাঝে যাতে একটু রিলিফ পায়, শুধুমাত্র সেটাই বলেছিল,

"স্যার মায়ের অবস্থা ভালো নয়,শয্যাশায়ী একটু সেবা যত্ন করতে রাত জাগি। দিনে আমার স্ত্রী আর ভাগনি সেবা করে।রাতে আমিই মায়ের কাছে থাকি। কদিন যদি একটু --"

আর কিছু বলতে হয়নি।কথা থামিয়ে এন এম সাহেব বললেন,

"ওকে বস ! আমি ড্রাইভিং জানি,লাইসেন্সও আছে।আপনি শুধু পাশে বসবেন, সরকারী গাড়ির কিছু নিয়ম আছে তো।না হলে বস যে দিন আপনার সমস্যা হত অফিসে আসতেই বলতাম না। আমি চালালে যদি আপনার ঘুমও আসে সমস্যা নেই।আর অফিস এসে দরকারে রেস্ট নেবেন, ঘুমিয়ে নেবেন।

অনিল ভীষণ বিনয়ের সাথে বলে,

"এতটা স্যার না হলেও চলবে। আমাকে অফিসের নাইট গার্ডের রুমে ঘুমের শুধু অনুমতি দিন, যখন দরকার ডেকে নেবেন ,এটাই যথেষ্ট স্যার। আপনি বড় অফিসার, অফিস বস, অফিসের গাড়ি স্যার আপনি কেন চালাবেন !"

এন এম,পুরো নাম, নরেন্দ্র মিত্র,বয়স ছত্রিশ সাঁইত্রিশ সুদর্শন অবিবাহিত একক মানুষ।ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবার বিষয়ে ভীষণ রিজার্ভ। সরকারী কোয়ার্টারে থাকেন। অফিসের নাইট গার্ড তার সব কিছুই রান্না থেকে কাপড় কাচা ঘর পরিস্কার করে দেয় ,এ জন্য তাকে এন এম সাহেব রীতিমত প্রারিশ্রমিক দেন।

গল্প বই পড়া থেকে নানা জ্ঞান মুলক ম্যাগাজিন কিনে পড়াশোনা করে , আর রেডিও শুনেই তার অফিসের পর অবসর সময় কাটে। শরীর চর্চাতেও অনেকটা সময়ই ব্যায় করেন। নরেন্দ্র পুরের ছাত্র, সৎ চরিত্রবান ধার্মিক সংস্কার মুক্ত। বি সি এস গ্রুপ এ অফিসার। সরকারী শ্রম দপ্তরের, এমপ্লয়মেন্ট অফিসার , দুর্গাপুরে তখন পোস্টিং,তিন মাস এই অফিসে এসেছিলেন এর মধ্যেই অফিসের সবার মন জয় করেছেন ।আগে বালুরঘাট পোস্টিং ছিলেন।

সেদিন দুপুরে একটা অফিসের কাজে আসানসোল যাচ্ছিলেন, অনিল ভ্রাইভার শুধু বলেছে "এই ভিরিঙ্গি মোড়ের পাশেই স্যার আমার বাড়ি।"

"চলুন তাহলে আপনার মাকে দেখে আসি।"

"এখনই স্যার! "

"হ্যাঁ আপনার কোন অসুবিধা আছে !"

"কী যে বলেন স্যার,এতো আমার সৌভাগ্য!"

একগাল হেসে অনিল গাড়ি ঘুরিয়ে তার বাড়ির কাছে এসে গাড়ি থামাল। ছোট বাড়ি, ইটের দেওয়াল টালীর ছাদ,প্রাচীর ঘেরা ,সদরে কপাট নাড়তেই একটি মেয়ে এসে দরজা খুলে দিল।

খুব সাধারণ রংচটা শাড়ি আর ব্লাউজ,দেখতে খুবই সুন্দরী উজ্জ্বল গৌরবর্ন লম্বায় পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি।এন এম সাহেবকে দেখে মেয়েটি হতচকিত,নত মুখে, পাশে সড়ে দাঁড়াল।

অনিল বলল," আমার স্যার ,মায়ের অসুস্থতা শুনে নিজেই দেখতে এসেছেন। "

এন এম বলেন "ইনি আপনার স্ত্রী!"

"না স্যার ও আমার ভাগনি!"

"ও সরি ! "

লজ্জায় হটকারিতায় এমন সুন্দরীর সামনে এন এম সাহেবের মহিলার মাথায় সিঁদুর বা হাতে শাখা আছে কীনা নজর পরেনি।আর প্রাথমিক অনুমানে অনিল বাবুর সহধর্মীনি ভেবে পরস্ত্রীর দিকে তাকাতে সম্ভ্রম হচ্ছিল। এবার মেয়েটির দিকে তাকাল, যৌবন যেন তার শরীরে উপচে পড়ছে। এত কাছ থেকে কোন এমন রূপসীকে সে বোধহয় জীবনে দেখেনি। অনিল বলল যা মহামায়া স্যারের জন্য একটু ভালো সরবৎ কর। আর তোর মামী কৈ!"

"মামীমা বাথরুমে।"

অনিল মনে মনে ভাবে গিন্নি ঠিক সময় বুঝেই বাথরুম যায়। অতি বিনয়ের সাথে এন এম সাহেব কে বলে,

"স্যার ঘর দিয়ে আসুন। দ্বিধাগ্রস্ত এনএম অমিলের পিছন পিছন ঘরে গেল।ফ্যামিলি লাইফ বিষয়ে তিনি বেশ আনাড়ি।বাড়ির ভিতর বেশ পরিপাটি, দুটি মাত্র ঘর,বারান্দা ঘিরেই এক পাশে রান্নার ঘর, এক পাশে বাথরুম, মাঝে বড় লম্বা বারেন্দায় ডাইনিং কটা চেয়ার আর খাবার টেবিল। একটা চেয়ারে এন এম স্যার ঘরে না ঢুকে বারেন্দায় বসে বললেন,

"আপনার মা কোন ঘরে আছেন!"

"আপনি স্যার ঘরে বসুন।বারেন্দায় কেন!"

"না না এই ভালো, বাইরের পোষাকে ঘরে ঢুকব না।"

বাথরুম থেকে থতমত মুখে লজ্জায় মুখ হেঁট করে অনিলের স্ত্রী জবা স্নান সেড়ে বের হল। শাড়ি ব্লাউজ বাথরুমেই পরে ছিল ।স্বামীর অফিসের বড় কর্তা এসেছেন, হঠাৎ তাদের গরীব বাড়িতে, কিন্তু কী করবে কী বলবে! কী ভাবেই বা সম্মান জানাবে আহ্বান করবে!

অনিল বলল,"গিন্নি আমাদের অফিসের বড় সাহেব, আমাদের স্যার, দেবতুল্য মানুষ। "

জবা দুহাত জোড় করে নমস্কার করল।একটু হেসে বলল, "কী ভাগ্যি আমাদের। "

অনিল বলল ," মহামায়া স্যারের সরবৎ করলি!"

জবা বলে "বেশ মানুষ তুমি ও মায়ের কাছে, নোংরার মধ্যে আছে,ঐ পোষাকে রান্নার ঘরে সাহেবের সরবৎ করবে কী করে !আমি এখুনি করে দিচ্ছি!"

এন এম বলেন," এত ব্যস্ত হবার কী আছে! অনিল বাবু এমন করে না। উনাকে একটু সময় দিন। আমি বরং আপনার মাকে দেখে আসি।"

অনিল এবার একটি ঘরে নিয়ে গেল। মেঝে জড়াজীর্ন শরীরে এক বয়স্কা শুয়ে ,পাশে মহামায়া, তার নোংরা পোষাক সড়িয়ে, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাচা পোষাক পাল্টে, চাদর ঢাকা দিচ্ছিল।

এন এম দেখছিল একটু কাজের ব্যস্ততায় মহামায়া শাড়ি সড়ে গেছিল,সুডৌল বুকের ভাঁজ আর পাতলা ঘামে ভিমে জর্জেট ব্রাউজে ভেদ করে বক্ষের ডিতর সব কিছুই যেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিষ্ময়ে তাকিয়ে ছিলেন,এন এম সাহেব, এত কাছ থেকে এমন বেশে কোন নারীকে সে দেখেনি।জীর্ণশীর্ন অনিলের মাকে দেখবে! না ভাগনীকে দেখবে! এন এম সাব যেন ধর্ম সংকটে।

মহামায়া বাড়িতে ব্রা পরে না।সে সময়ে ব্রা এর এত চল ছিল না। মামীমা স্নান গেলে তার পর বেলা বারোটা থেকেই মহামায়া দিদার সেবা যত্ন করে। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলে,মামা এলে স্নান করে পোষাক পাল্টে ঠাকুর ঘরে প্রদীপ জ্বালায় ধূপ ধুনো দেয়।তার পর মামাতুতো ছোট ভাই বোনদের পড়ায়, আবার মামীর রান্নার সাহায্য করে।

অবসন্ন ক্লান্ত কেমন আনমনা আপন মনে মহামায়া দিদার যত্ন পরিচর্যা করছিল,আর তার যৌবন আজ এন এম গোগ্রাসে গিলছিল। অনিল ভাবছিল এই অপরিস্কার অস্বস্তিকর একটা গন্ধে দাঁড়িয়ে স্যার কত দরদ দিয়ে মাকে দেখছে।

মহামায়া হঠাৎ এন এম সাহেব দিকে তাকাতেই বেশ বিব্রত সংকোচে শাড়িতে শরীর ঢাকার চেষ্টা করতে এন এম ভাবলেন,  তার ঠিক হচ্ছে না।এভাবে কোন মেয়ে মানুষের শরীর এত কাছ থেকে নজর দেওয়া ভদ্রতা নয়।প্রসঙ্গ বদলাতে তাই মহামায়াকে জিজ্ঞেস করে,

 "কোন ক্লাসে পড়াশোনা করছ!"

মহামায়া লাজুক মুখে হাসল কোন উত্তর দিল না।

অনিল বলল "স্যার ও দুবছর আমার বাড়িতে এসেছে তার আগেই ওর পড়াশোনা শেষ করেছে। "

"এর মধ্যি সব পড়াশোনা শেষ!আপনার ভাগনির বয়স কত!"

"তা হল স্যার একুশ বাইশ বছর হবে বৈকি !"

"না না কী যে বলেন এত হবে!"

মহামায়া মুখটিপে হাসছিল আসল বয়স তার পঁচিশ বছর, মামা কমিয়ে বলেছে তাতেও স্যারের মন হচ্ছে আরও কম!ভাবছিল কেমন হাবা গোবা মানুষেরাও কত বড় অফিসার হয়!

মহামায়া চমক আরো বড় বাকী ছিল, এন এম সাহেব বলল,

"আপনি ভাগনিকে এনে মায়ের এত সেবা যত্ন করাচ্ছেন,আপনার ভাগনি কিন্তু উনাকে খুব আপন জনের মতই সেবা যত্ন করছে।"

"ও তো আমার ভাগনি স্যার!"

"সেটাই তো বলছি ,আপনার ভাগনি , মাকে আপন জনের মতই কত দরদ দিয়ে যত্ন করছে।"

"আপনি ভুল করছেন স্যার,ওর মা আমার দিদি।আমার মা ভাগনির মায়েরও মা, মানে ওর দিদা, আপনজনই তো !"

এন এম যেন নিজের ভুল বুঝতে পেরে বলে,

"সরি সরি আসলে সেই ছোট বেলা থেকেই সংসারে থাকি না ।এই সব সম্পর্ক গুলো কেমন সব ঘুলিয়ে যায়।"

অনিল বলল, "স্যার আপনার সরবৎ,একটু ঐ ঘরে চলুন স্যার, এ ঘরে পরিবেশ বুঝতেই পারছেন ,মা আর বেশীদিন নেই," একটু মনমরা হয়ে অনিল বলল।

এ ঘরে গন্ধ যা টেকা দায়,ওডোমক্স বা ঐ জাতীয় সুগন্ধির জোড়ে এঘরে থাকা কোন রকম সম্ভব। না হলে মৃতপ্রায় মানুষের পেচ্ছাব পায়খানা আর শরীরের ভিতর বাহিরে পচন! যন্ত্রণার ট্যাবলেট আর ঘুমের ওষুধ জোরে বৃদ্ধা আছেন।একটু জাগলেই এনাসিন দে বাবা এনাসিন বলে সুর ধরে,থামতে চায় না। সিজে মাজুরে দশা, এভাবে মাকে দেখতে অনিলের বড় কষ্ট দুঃখ হয় ,তার তেমন টাকা নেই, আর সে যুগে মানুষ ঠকানোর এত সব নার্সিংহোম গলিতে গলিতে গজিয়ে ওঠে নি।"

এন এম আবার বাইরে বারান্দায় এসে চেয়ারে বসে সরবৎ খেলো।

 "বৌদি ভীষণ ভালো সরবৎ করেছেন, আবার এই সরবৎ খেতেই আসব ।" বলে এন এম সাহেব হাসলেন।

শিশুসুলভ এন এম এত সংসারের মার প্যাঁচ জানে না। বলল, "আজ তাহলে অনিলদা উঠা যাক।"

অনিল বলে "স্যার গিন্নি যে চা বসিয়েছে। "

"আবার চা,কী ব্যাপার বৌদি,আমি এসে আপনার কত কাজ বাড়ালাম"

রান্নার ঘর থেকেই জবা বলে "এটা আবার কাজ হল স্যার! আপনারা কত বড় বড় সব কাজ করেন। "

"না না ও সব কিছুই নয় ,মনে হয়। আমাদের কাজ সব গতে বাঁধা, আবার আমরা অফিসাররা তো সই করেই দায় চুকাই, কাজ তো আমার জুনিয়র অফিসের ভাইরা করে, কী বলেন অনিল দা।"

"স্যার আপনি বড় মনের মানুষ, আগের সাহেবদের হাব ভাব ছিল যেন উনিই সব ,যাক স্যার এ সব বড় বড় সাহেব স্যারদের ব্যাপার আমি সামান্য মানুষ।"

"মহমায়া নোংরা কাপড চাদর গুলো বালতিতে ভরে এনে বলল,  

"মামীমা গরম জল আর ডিটারজেন্ট পাউডার বালতিতে ঢেলে দাও,কেচে শুখুতে দেবো"

"হ্যাঁ গরম জল রাখাই আছে রে, দাঁড়া যাচ্ছি।"

নোংরা বীভৎস দুর্গন্ধ মৃতপ্রায় মানুষের মল মুত্রে ভিজা চাদর পোষাক বালতিতে ছিল  তাতেই গরম জল আর ডিটারজেন্ট গুড়ো জবা মামী খানিক ঢেলে দিল।এই কাচাকাচিটা প্রতিদিন সেই করে।সারাদিনের জমা করা থাকে ঘরের একপাশে স্তুপ করে। দুখী হতাশগ্রস্ত মহামায়ার কোন ঊপায় ছিল না। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা কাজ করলেও তার শরীর স্বাস্থ্য বেশ ভালো, মেদহীন, মেয়েলী গড়ন আর  মুখমন্ডল বড় আকর্ষণীয়,সঙ্গে তার তীব্র গৌড় বর্ন সচরাচর বাঙালি ঘরে দেখা মেলে না।

এন এম অবাক বিষ্ময়ে দেখছিল। এত তৎপরতায় এক সাথে কত কাজ এরা করছে।

গ্রীষ্মের সময়, মহামায়ার শরীর পোষাক সব ঘেমে ভিজে যেন স্নান করে জল না মুছে আছে, মুখ কপাল বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িয়ে,পড়নের ব্লাউজ শাড়ি ভিজে সপসপে। এই সময় মামা থাকে না। মামাতুতো ভাই আর বোন স্কুলে যায়।মামী আর মহামায়া।এন এম সাহেব থাকলেও মহামায়ার এত সব হূস নেই। লজ্জা সরম তার কবে চুকে গেছে।একটা সময় তার জীবনের উপর ঝড় নয় মহা সাইক্লন বয়ে গেছে।আবার সুস্থ জীবনে ফিরতে পারবে ,স্বপ্নেও ভাবত না। ভাবলে আজও ভয় ত্রাস আর আতঙ্কে বুকের ভিতরটা শুকিয়ে যায়। কেউ সেদিন তাকে রক্ষা করতে পারেনি।

কাপড় শায়াসহ হাটুর উপর অবধি হাফ লুঙ্গির মত করে কোমরে বেঁধে, মহামায়া বাথরুমে পাশে উঠানে একটু বাঁধানো মত জায়গায় জোড়ে জোড়ে কখনও থুপিয়ে,কখনও রগড়ে রগড়ে নোংরা চাদর কাপড় কাচছিল, তার দুই উরুর নিন্মাংশ থেকে পা দুটো অনাবৃত খোলা দেখা যাচ্ছিল। যেন তা  কলা গাছের থরের মত সাদা মসৃণ আর উজ্জ্বল পুষ্ঠ।এন এম সেদিকেই নজর ছিল একানাগাড়ে। জবা বৌদির চায়ের প্রশংসা তো খুব করছিল,কিন্তু কেমন মনটা হাঁপিয়ে উঠছিল মহামায়ার রূপে।

এত কাছ থেকে নারীর এমন মায়াবী রূপে সে যেন বশীভুত।কাপড়ের নিচের দিকটা অনেকটা ঝুলে গেছিল ,কাজের ব্যাস্ততা আর গরমে ঘেমে ক্লান্তিতে এত সবে মহামায়ার খেয়াল ছিল না।এন এমের দৃষ্টি কতটা অবধি গেছিল কতটা দৃষ্টিগোচর হয়েছিল, তা সেই জানে।মহামায়ার আবার কাজের মধ্যেই হঠাৎই এন এম এর দিকে নজর ও তার চোখে দৃষ্টিকোণ দেখে খুব লজ্জায় বিব্রত, কিন্তু কী আর বলবে! পুরুষের স্বভাব! দোষের কী এতো প্রাকৃতিক নিয়মেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মোহ স্বাভাবিক।

কত সব বিশ্বের খ্যাতনামা কবি আর চিত্র শিল্পী,স্থপতি কলার নামে! শিল্পের নামে ! নারী শরীর আর তার নগ্ন রূপের বর্ণনা কল্পনার জাল বুনেছেন।এমন কী এক ইংরাজ বিখ্যাত কবি, নারীর দুই উপত্যকার মাঝেই নাকি বিশ্বের সব সৌন্দর্য লুকিয়ে,কবিতায় লিখেছেন! হয়ত তিনি পুরুষ বলেই এমন,না জানি কবি মহিলা হলে এই সৌন্দর্য স্থানটি কী ইংগিত করতেন !

মহামায়া এসবে লজ্জা পেলেও, স্বাভাবিক কাজকর্ম সে নিজের মতই করছিল।

এন এম সাহেব বরং মহামায়া শাড়ি গোড়ালি অবধি নামিয়ে উল্টো মুখে কাচাকাচি করতে থাকায় বুঝল এবারও তার আচরণে মহামায়া লজ্জিত। খুব খারাপ লাগছিল। আবার প্রসঙ্গ বদলে মহামায়াকে কাছে ডেকে এনে কোন দরদ আর সৌজন্যতা দেখাতে অনিলকে বলল,

"আমি আর বসব না। আপনার ভাগনির শিক্ষাগত মান,জন্ম তারিখ বয়স এসব দেবেন। একটা কিছু কাজের ব্যবস্থা যদি করা যায় দেখব।অবশ্য ও যদি ইচ্ছুক থাকে।"

অনিল জানে সাহেবের এ ব্যাপারে অনেক যোগাযোগ আর ক্ষমতা আছে।মহামায়াকে অনিল ডেকে বলে

"কাচাকাচি এখন থাক,মহামায়া একবার সাহেবের কাছে আয় তাড়াতাড়ি।"

সাহেব বলে কথা,মামার অফিসের বড় কর্তা যতই তার এদিক ওদিক চাক্ষুষ করুন মান্যতা তো দিতে হবেই। মামার করুনা আর দয়ায় তার ভবিষ্যত নির্ভর করছে।

তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে ভিজে কাপড়ে মুছতে মুছতে এন এম এর স্যার থেকে একটু দুরত্বে এসে দাঁড়াল , কেমন লজ্জা সংকোচে মুখ নামিয়ে ছিল।

সাহেব বলেন, "লজ্জার কিছু কিছু নেই, আমার পাশের চেয়ারে বসো।" মহামায়া মুখ টিপে একটু হাসল। পুরুষ চরিত্র তার বেশ জানা।

মামা বলল "শোন স্যার তোর কাজের ব্যাপারে স্যার কিছু আলোচনা করবেন, সরকারী কাজ বুঝলি! উনার অনেক ক্ষমতা।"

এসব শুনে মহামায়ার চোখ জ্বল জ্বল করে এক বুক আশায়, নড়েচড়ে এন এম সাহেবর নিকট চেয়ারে এসে বসল।সে জানে,নার্সের কাজে জন্য, এক, এম এল এ মশাই কত মেয়ের যে ইন্টারভিউ নিয়ে ছিলেন, আর তার এই ইন্টারভিউতে নাকি মেয়েটিকে একা যেতে হতো,এম এল এ সাহেবের বাড়িতে ।ঘরে ঢুকলে ঘর বাইরে থেকে বন্ধ হত, আর ইন্টারভিউ শেষ হলে, আবার পরবর্তী ডেট পড়ত।

এইভাবে প্রলোভন দিয়ে কজনের নার্সের চাকরী হয়েছিল তার জানা নেই। তবে বেশ কজনকে ঐ এম এল এ সাহেবের সৌজন্যে নার্সিংহোমে যেতে হয়েছিল। কুমারীকালীন মাতৃত্ব কলঙ্ক দুর হলেও পরবর্তী কালে মাতৃত্বের সম্ভাবনা নষ্ট হয়েছিল এমন একজনের নাম সে জানে। তাই সরকারী চাকরীর জন্য লুকিয়ে চুরিয়ে তার অসর্তকতা মুহূর্তে সাহেব কী দেখল কী এসে যায়! আরও অনেক কিছুই সে দিতে প্রস্তুত।

আর তার এ ব্যাপার আগেই তাকে অনেক কিছুই দিতে হয়েছিল, নিজের ইজ্জত সম্মান সব নিয়ে নিঃস্ব করে ,তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দেহ মন লুন্ঠিত হয়েছিল, কুমারীত্ব লুটে খেয়েছিল। আরও কত কী!এই সভ্য সমাজে নারীর নূন্যতম সম্ভ্রম নিয়ে সে বাঁচতে পারেনি।আর দরিদ্র দুর্বল বাপ ভাই প্রতিবেশীরা কেউ তার ইজ্জত সম্মান রাখতে পারে নেই। সাহায্যে এগিয়ে আসেনি।বাবা মা তাকে দুর দুরান্ত মামার কাছে গোপনে পাঠিয়ে ছিল, একটা সুযোগ পেয়েই। পাড়া প্রতিবেশীরা জানে তার বিহারে বিয়ে হয়েছে,কেউ ভাবে মহামায়া দেহ ব্যবসা করে বাপ ভাইকে টাকা পাঠায়, কেউ একটু ইজ্জত দিয়ে ভাবে,মেয়েটার গর্ভে বাচ্চা এসেছিল ,হয়ত তাই আত্মহত্যা করে নিজের ও পরিবারের মান বাঁচিয়েছে।

সে দু বছর গ্রামে যায়নি, বাড়ির মানুষ তার বিষয়ে গ্রামে বলে তারা নাকি ওর খবর জানেই না। দেড়শো কিমি দুরে তার মামার কাছে, দুর্গাপুরের এক এঁদো বস্তির মত পল্লিতে থাকে ,এতসব কেউ জানে না।তার নিরাপত্তা আর ভবিষ্যত সুরক্ষার জন্যই এসব করা।আর অনিল যত সরল সাদা সিদে হোক, মামী তেমন নয়, মহামায়াকে রীতিমত গতর খাটিয়ে খেতে দেয়।

ক্লাস টেন অবধি তার বিদ্যা সেই সুযোগটাও নেয়, মামাতুতো ভাই বোন দুটো পঞ্চম আর সপ্তম শ্রেণিতে এখন পড়ে ,মহামায়া সেই দু বছর আগে থেকেই তাদের পড়ায়।সন্ধ্যার সময় তার সময়টা অবশ্য ভালো কাটে।মহামায়ার আর কোন পথ নেই, জানে না কী তার ভবিষ্যত।মামা তাকে স্নেহ করে এটাই তার ভরসা।

মামার সাহেব তাই এন এম স্যারের উপরে একটা বিশ্বাস হল।

এন এম সাহেব, মহামায়া যেমন ভাবছিল তেমন নয়।

নারীর শরীরে কৌতুহলী হতেই পারেন, কামুক বা বদ চরিত্রের মানুষ নয়। তার জীবনটাও নাটককে হার মানায়। দুবছরে বাবা মারা যায়, মা তার বয়স যখন চার কী পাঁচ একদিন উদাও হয়ে গেছিল। মা তাকে নিয়ে বিধবা হয়ে বাবা মায়ের কাছে থাকত। শেষে তার আশ্রয় হল,মায়ের বাবা মা। তারা ঠিক করেছিলেন নাতিকে নৈতিকবোধ সম্পন্ন একজন সুশিক্ষিত মানুষ করে তুলবে।

বাবা নেই ,মা পালিয়েছে এই পরিবেশে তার সমস্যা হতে পারে। সেই প্রাথমিক থেকেই তাকে নরেন্দ্র পুরে ভর্তি করেছিলেন। পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ সে বেশ অস্বস্তিকর বোধ করে।মেধাবী ছাত্র ছিল,পদার্থ বিজ্ঞানে মাষ্টার করে বি সি এস পরীক্ষায় গ্রুপ এ উর্ত্তীন হয়ে কাজ পেলো তখন তার বয়স পঁচিশ। দাদু আগেই মারা যায়। মামা কাকা পিসিরা থাকলেও যোগাযোগ নেই। দিদা যখন মারা যায় তার তখন বয়স সাতাশ।

বিয়ে থা,তেমন তার ঝোঁক ছিল না, আর যোগাযোগ করার কেউ নেই, একক জীবন কাটানোর মনস্থির করেছিল। দীর্ঘ দিন কাজ করলেও তেমন সঞ্চয় ছিল না।হবে কী হবে! দান ধ্যান আর দেশ ঘুরে বেড়ানো তার সখ। নারী সঙ্গ, নারীর শরীর, নারীর আচরণ তার ব্যবহার রুচী, চাহিদা এসব তার কোন ধারনাই নেই।প্রায় নারী বর্জিত সমাজিক পরিবেশে সে মানুষ। এই প্রথম,মহামায়াকে কাছ এত কাছ থেকে দেখল।

সে যুগে নীল ছবির ভিডিও দুরে থাক,বট তলার বই  বিষয়েও তার ধারনা ছিল না। এক নারীর প্রতি উদাসীন, এক অন্য জগতে মানুষ এন এম সাহেব । অনিলের স্যার অফিস বস এন এম,সাহেব একটা অফিসের মহিলা কর্মী অবধি বারো বছরে তার অধীন বা উদ্ধতন যাইহোক কোনদিন  পায়নি।

মহামায়ার মায়ায় এক নজরেই সে ছিল মোহগ্রস্থ।কিন্তু কী করে তার সাথে আলাপ ঘনিষ্ঠ হওয়া যায়! এইটুকু এন এম বুঝেছিল ,মেয়েটি সুখী নয় ,মুখে হাসি নেই, কেমন আনমনা দুখী কাজ নিয়েই ব্যস্ত!এই বয়সেই সে কেমন যেন মানসিক ভাবে ক্লান্ত অবসন্ন। নীরবতার মাঝে যেন মুখোর অনেক কিছুই তার চাহনীতে সে বলতে চায় এন এম সাহেব কে।

একরাশ আশা আর ভরসা নিয়ে কেমন আবেগঘন মুখে মহামায়া বলে,

"মামার মুখে আপনার অনেক প্রশংসার শুনেছি , আপনি স্যার ভীষণ ভদ্র সৎ ভালোমানুষ। আজ আপনাকে দেখে তাই মনে হল,তবে আপনি এতটাই সরল সাদাসিদে না দেখলে বিশ্বাস হতো না।"

এক অতীব সুন্দরীর কাছে এমন প্রশংসা শুনে,এন এম ভীষণ আপ্লুত। হেসে বলে,

 "তুমিও ভীষণ ভালো মেয়ে।তোমার একটা ভালো কাজের ব্যবস্থা আমি যে ভাবেই হোক করব।"

মামা একটু বাথরুম রুমে গেছিল সেই সুযোগে মহামায়া বলল,

"আপনি এত ভালো চাকরী করেন মামার মুখে শুনেছি একা ,তেমন আত্মীয়স্বজন যোগাযোগ নেই। কোয়ার্টার ছেড়ে বাড়ি যান না।একা কেন! একটা সুন্দরী মেয়েকে তো বিয়ে করতে পারেন। আপনি দেখবেন এতে অনেক ভালো থাকবেন। "

এন এম হাসতে হাসতে বলে,

"কে আমায় বিয়ে করবে! আর বিয়ের যোগাযোগ কে করবে! এই বেশ আছি।"

"আমি ঘটকালী করব! " বলে মহামায়া খুব হাসছিল!

এন এম একটু সংকোচ আর লজ্জায় চুপ ছিল।

মামা বাথরুম থেকে ফিরে একটু অস্বস্তি নিয়ে বলল।

"কী হল স্যার! মহামায়া তো হাসেই না,এত হাসছে আজ ! আর আপনি গম্ভীর। "

এন এম বলে,

" আপনার ভাগনি খুব জলি! ভালো মেয়ে ওর সাথে আলাপ করে খুব আনন্দ পেলাম। "

মহামায়ার চোখ জলে ভরে গেছিল, একটু মুখ নামিয়ে নিজের কাজে গেল। এন এমের নজরে এল, ভাবছিল মহামায়া মামার বাড়িতে ভালো নেই। বাধ্য হয়ে থাকে কিন্তু কেন ! সে জানে না।

সেদিন আর অনিলের বাড়ি থাকেনি। আসানসোল যাবার তাড়াছিল।

গাড়িতে ওঠে দেখল ,মহামায়া তার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে, কেমন যেন সে অনেক কিছুই বলতে চায়। চোখ দুটো ছল ছল করছে,রং চটা পুরোন শাড়ি আর ব্লাউজ তার সৌন্দর্য কে খাটো করতে পারেনি।এন এম তার দিকে তাকিয়ে হাসল,হাত নাড়ল। মনমরা দুখী মহামায়ার তাতে কোন হেলদোল নেই,একভাবেই তাকে দেখছিল।

আসানসোল থেকে ফিরতে এদিন একটু তার বেলা হয়েছিল, অফিস আর না ঢুকে কোয়ার্টার কাছে নেমে একটু সমীহ আর কিন্তু কিন্তু করে বলল,

"অনিল দা ভাগনির বিয়ের যোগাযোগ করছেন না?"

"না স্যার ওর বিয়ের ইচ্ছা নেই, আমাকে প্রায়ই বলে তোমার অফিস থেকে লোন করে দাও,হাতের কাজ জানে, বাড়িতে বসে করবে। বোকা মেয়ে জানে না,লোন তো ব্যাংক দেবে, আর এক্সচেঞ্জের কার্ড ছাড়া আমরা লোন কেশ ব্যাঙ্কে পাঠাব কী করে!"

"বাদ দিন না ওর কথা! আমি কায়স্থ আপনারা ব্রাহ্মণ, না হলে ও যদি আমাকে পছন্দ করত! আমিই আপনার ভাগনিকে বিয়ে করতাম। ভীষণ ভালো মেয়ে যেমন সুন্দরী তেমনি কাজের , খুব বিনয়ী হাসিখুসী, বেশভুশা এত সাধারণ ভাবা যায় না।"

অনিল যেন হতভম্ব, খানিকক্ষন চুপ থাকে,তারপর বলল ,

"সত্যি স্যার আপনার মত মানুষ হয় না।রাখুন তো স্যার বামুন! আপনি কায়স্থ কেন! আপনার মত মানুষ ডোম দুলে হলেও আমার ভাগনির সাথে বিয়ে দিতাম।কিন্তু স্যার আমি অধস্থন ড্রাইভার, গরীব ,আমার ভাগনি টেন অবধি পড়েছে, আপনি সত্যিই মহামায়াকে বিয়ে করবেন !"

"আমার আপত্তি নেই, আপনার ভাগনিকে জিজ্ঞেস করবেন, আমার বয়স বেশী এছাড়াও আমার কিছু ইতিহাস আছে ওকে বলব , সব শুনে যদি ও রাজী হয় আমি আপনাকে একশ শতাংশ নিশ্চিত করছি ওকে বিয়ে করতে আপত্তি নেই। আর আমার গার্জেন আমি, তাই আমার দিক থেকে সমস্যা নেই।তবে এসব খুব গোপন রাখবেন অফিসে এসব জানলে আমার একটু ইজ্জত সম্মান যাবে।"

"কিন্তু স্যার বিয়ে করলে গোপন থাকবে কী। "

"ওরে বাবা বিয়ে হলে সেটা অন্য, সেখানে ইজ্জত সম্মান প্রশ্নের কথা বলছি না! কিন্তু আমি প্রস্তাব দিলাম আপনার ভাগনি মানল না।আপনি যে বলেছেন  ও নাকি বিয়ে করতে রাজী নয়।"

"না না স্যার, এই সব কথা বিয়ে না হলে জীবন থাকতে কাউকে বলব না।আর প্রস্তাব আপনি নয় ,আমি দিয়েছি ,বিয়ে হলেও সবাইকে তাই বলব, আপনার মান সম্মান সবার আগে।"

এন এম আর কিছু বলল না,একটা টেনশন কাজ করছিল যদি মহামায়া অমত করে খুব লজ্জার। কিন্তু মহামায়ার রূপে আর তার পরিস্থিতির চাপে দুঃখ কষ্ট তার খুব মনে লেগেছিল। 

সন্ধ্যার সময় মামা বাড়ি ফিরেই বলল,"মহামায়া আজ কার মুখ দেখে উঠেছিলি মা!"

"কেন কী হল!"

"আমার বড় সাহেব তোকে ভীষণ ভালো লেগেছে তোর সম্মতি চেয়েছে। "

"কীসের সম্মতি!"

"তোকে বিয়ে করতে উনি ইচ্ছুক "

জবা তো থ বলে কী কর্তা! এত বড় অফিসার সাথে বিয়ে মহামায়ার! তা হলে আর এমন বিনা পয়সার কাজের লোক আর কোথায় পাবে!

মহামায়া বলল,

"উনি আমার বিষয়ে কিছুই জানেন না ,আগে আমার ইতিহাস উনাকে বলব।সব শুনে উনি রাজী হবেন কী না সন্দেহ। যদি তারপর রাজী হোন তখন দেখা যাবে।"

"কী তোর ইতিহাস!"

"বাবা যা বলেছে খানিকটা ঠিক খানিকটা চেপে গেছে।আমিও এসব কথা তোমাদের বলব না।"

"ওকে বলার দরকার কী!"

"আমি এই রকম সরল সাদাসিদে মানুষকে ঠকাব না।আমার একটা করুন ইতিহাস আছে। বিয়ে করতেই আমার তাই আপত্তি ।অন্য কেউ হলে রাজী হতাম না, উনার মনে আমি কষ্ট দেবো না।আমি তাই জবাবও দেবো না, উনার সম্মান হানি হবে ।উনি বিয়ে অসম্মত হলে উনার সম্মান যাবে না।আর আমার সম্মান ইজ্জত কিছু নেই !উনি যদি আমার সব ইতিহাস শুনে বিয়ে সম্মত হোন, এ বিয়ে আমি করব।"

জবা চুপ ছিল এতক্ষণ এবার বলে,

"দেখ মহামায়া সব গোপন কথা সবাইকে বলার কী দরকার। আমি জানি কুমারী মেয়ের পেট হয়েছে। ওষুধ খেয়ে খসিয়েছে,তার দুরে বিয়ে দিয়েছে,এখন সুখেই আছে।কিন্তু জানলে এ বিয়ে হতো না এত সাধুপনার কী দরকার তোর! তোর বাপ মায়ের আর তোর সাতজন্মের পুণ্যি যদি এমন বর পাস।"

"কিন্তু মামীমা যদি সত্যিটা কোন দিন প্রকাশ হয় তার চেয়ে দুঃখ অপমান কিছু নেই।আমার মনে হয় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিশ্বাস ভরসাই আসল। কোন কিছুই গোপন থাকা উচিত নয় ,তাতে আমার বিয়ে না হয় তোমাদের দয়ায় খেতে তো পারছি।ঐ লুকোচুরিতে নেই।"

অনিল ভাগনির কথায় যুক্তি পেলো কিন্তু কী এমন ঘটনা যেটা মহামায়া তাদের বলবে না।তার বাবা গোপন করে এখানে তাকে রেখে গেছে!

একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে বলে

 "হ্যাঁরে খুন টুন করে পালিয়ে আসিস নি তো!"

মহামায়া খুব হাসছিল,তারপর বলল,

"তুমি নিশ্চিত থাকো মামা আমি কারোর কোন ক্ষতি করি নেই।আমার জীবনে চরম এক লাঞ্ছনার কথা , গর্ব করে বলার কী আছে!"

"তাহলে ওকে বলবি কেন!"

"কারণ সেটা শুধুই স্বামী স্ত্রী সম্পর্কিত।উনি আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছেন,তাই সব বলব "

অনিল পরদিন এন এম কে সব কথা বললে।এন এম বললেন ,

"আমার জীবনের একটা ঘটনা ওকে বলব ওর ও জানা দরকার,খুব বুদ্ধিবতী আপনার ভাগনি।সব কিছুই জেনে বুঝেই বিয়ের মত ভালো একটা সারা জীবনের বিষয় । দুদিন পর অশান্তি ডিভোর্স আমারও পছন্দ নয়।"

এন এম সাহেব বললেন 

"আগামী রবিবার আমাদের অফিসের নাইট গার্ড বাড়ি যাবে।কোয়ার্টারে ও আসবে না, খুব নিরিবিলিতে আপনার ভাগনিকে নিয়ে আসুন। সামনা সামনি কথা হবে,আপনিও থাকবেন।"

"এমন কিছু কথা ওর বিষয়ে যেটা আমরাও জানি না স্যার, আমাদের ও বলবেও না, শুধুমাত্র যেটা আপনাকে বলবে কারন ওটা নাকি একান্ত স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কিত,অমনি ওকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন তাই আপনাকে বলবে !"

এন এম সাহেব খুব হাসলেন ,বললেন,

"আপনার ভাগনি পাগল একটা ! ও কে তাই হবে।ওর সব প্রস্তাবে আমি রাজী।"

রবিবার সন্ধ্যা ছটায় কড়া নাড়ার শব্দে এন এম সাহেব কোয়ার্টার বারান্দার দরজা খুলে দেখল অনিল ও তার ভাগনি গেটে দাঁড়িয়ে।গ্রীলের চাবি খুলে তাদের ডাকল অনিল বলল,"স্যার আমি একঘন্টার পর এসে আপনার সাথে কথা বলব।আর ভাগনিকে নিয়ে যাব।"

এন এম সাহেব বললেন,

"সে কী কান্ড!মহামায়া একা আমার ঘরে এটা ঠিক হবে না।"

"ও যে স্যার আপনার সাথে একান্তে কিছু কথা বলতে চায় ,আমার থাকাও ওর অসুবিধা।"

মহামায়া মুখ নামিয়ে দাঁড়িয়েছিল।

এন এম সাহেব বললেন "তুমি একা এখন সন্ধ্যাবেলা আমার ঘরে আমার সাথে থাকবে!"

"আমার কোন সমস্যা নেই স্যার। আমি একাই চাইছি ,আমার কিছু জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা আপনাকে একান্তেই জানাব।"

এন এম আর কিছু বলে না ।অনিল চলে গেল,ভিতর থেকে গ্রীলের দরজা চাবি তালা লাগিয়ে মহামায়াকে ঘরে এনে সোফায় বসাল।

মহামায়া এদিন ওদিক তাকিয়ে বলল,"ঘরটা বেশ বড় আপনার, ভারী সুন্দর।"

"তোমার একা অজানা পুরুষ মানুষের সাথে এক ঘরে ভয় করছে না!"

"আপনি বাঘ ভালুক না!"

বলে মহামায়া খুব হাসছিল। একটু থেমে বলল, "আপনি আমার বেশ পরিচিত, মামার কাছে আপনার কথা অনেকে শুনেছি। আপনি সৎ ভদ্র বিনয়ী সব গুণই আপনার আছে।আর কামুক দুশ্চরিত্র পুরুষ মানুষ যে কী ভয়ঙ্কর আমার জানা,সে ভয়ঙ্কর বীভৎস অত্যাচার আমার অভিজ্ঞতা আছে, এসব বলতেই আপনার কাছে আসা ।"

এন এম , অনিল ও মহামায়ার জন্য মিষ্টি আর নোনতা খাবার ব্যাবস্থা করেছিল। রান্নার ঘর থেকে একটা চীনামাটির পাত্রে মহামায়ার জন্য যত্ন করে খাবার আনতে দেবে মহামায়া,তার হাত থেকে খাবার নিয়ে ডাইনিং টেবিলে রাখল।লাজুক হেসে বলল,

"স্যার আমি কিন্তু আপনার সাথে কথা বলব।খেতে আসেনি। প্লীজ একটু বসুন।আমরা শুধু আজ কথা বলব, নিজের কথা বলব, আর অন্যের কথা শুনব।আপনি টেনশন নেবেন না।একটু নিরিবিলি একদম দুজনে,মামাকে তাই থাকতেও বলি নেই। আমি আপনাকে এক শতাংশ বিশ্বাস করেই আপনার বাড়িতে এসেছি, আপনিও আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।"

এন এম যেন বাচ্ছা ছেলের বায়না ধরার মত বলল, "আমার ব্যক্তিগত জীবনের কথা আমি আগে বলব পরে তোমার কথা শুনব।"

মহামায়া হেসে বলল, "তাই বলুন স্যার, তবে আপনার কথা শোনার, খুব দরকার আমার নেই, আপনিই আপনার পরিচয়, আমার মত নগন্য তুচ্ছ নয়। তবু বলুন স্যার আমি শুনব। স্যার যদি কিছু না মনে করেন জানালার পর্দাগুলো একটু টেনে বন্ধ করে দি।পাশের কোয়ার্টার থেকে কেউ দেখছে মনে হয়।"

"আমি দিচ্ছি" বলে এন এম সাহেব নিজেই জানালার পর্দা টেনে দিল।তার পর হেসে বলল,

"তুমি আমাকে স্যার স্যার করো না,আপনি বলার দরকার নেই। আমি তোমার বস নই।"

"না স্যার,আপনি অনেক সম্মানিত মানুষ, বড় পদে আছে।আপনি বয়সেও বড়।স্যার বলতে আমার কোন অস্বস্তির অসম্মান হচ্ছে না। বরং ভালোই লাগছে " মহামায়া লাজুক হাসল।

"ঠিক আছে তবে, আমার জীবনের ঘটনাটা বলি, আমি যখন দুবছর বাবা মারা যায়, আমার মা বাপের বাড়ি আমাকে নিয়ে চলে আসেন।আমার বয়স তখন চার কী সাড়ে চার মা কোন মানুষের সাথে পালিয়েছিলেন। আমাকে মামার বাড়ির দাদু দিদা মানুষ করে।সেই প্রাইমারী থেকেই আমাকে মিশনে ভর্তি করে।পরিবার সংসার সে ভাবে আমার অভিজ্ঞতা নেই, আমার যারা মামা কাকা পিসি, তাদের সাথেও কোন সম্পর্ক নেই। দাদু মারা গেল তখন আমি নরেন্দ্র পুরে ক্লাস নাইনে পড়তাম।আমি ফিজিক্স মাস্টার করে বিসিএস দিয়ে এই কাজটা পেয়েছিলাম, তখন পঁচিশ বছর বয়স। দিদিমা এর দুবছর পর মারা যায়।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল এন এম সাহেব তার পর কেমন ক্লান্ত উদাসীন মুখে বলল,

"এখন আমি একা, আমিই আমার গর্জেন।বাবার বাড়ি সম্পত্তি কী তাই জানি না।কোনদিন পৈত্রিক ভিটে যাই নেই। ভালো লাগে না।"

মহামায়া বলে "সব বুঝলাম এতে সমস্যা কোথায়! বাবা মায়ের স্নেহ ভালোবাসা থেকে আপনি বঞ্চিত এটা খুব দুঃখের, শুনে তো  বরং আপনার প্রতি সমবেদনা বাড়বে।"

"আমার মায়ের কলঙ্ক কথা শুনে, অনেকেই আমার চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করতে পারে।"

"স্যার, কোন পাগল বা চাঁদোর বদমাস এমন বদনাম দিক,তাতে আপনার কিছুই যায় আসে না।আপনার মা হয়ত নিজের বাকী জীবনের কথা বেশী ভেবেছিলেন। আপনার ব্যপারে ভাবেন নি,আপনার দিদি দাদুর ভরসা করেছিলেন। এমন অনেক আছে। বিদেশে তো এটা কোন ব্যাপার নয়, বিজ্ঞানী নিউটনের জীবনের এমন একটা গল্প পড়েছিলাম। "

"এটা আমার আগাম বলার উদ্দেশ্য,এ বিষয়ে জীবনে কোনদিন কটাক্ষ করা আমি মানব না।যা আমাকে ভীষণ আঘাত করবে!"

"কে কটাক্ষ করবে!বললাম তো হয় সে পাগল বা বিকৃত মনের শয়তান বদমাস। আপনি তার গালে একটা কশিয়ে চড় মেরে দেবেন, দেখবেন আর সে আর এমন বলতে সাহস পাবে না।"

"তুমি কী তাই মনে করো! এটা আমার কোন কলঙ্ক বা দোষের নয়!"

"আমি মনে করার কে! যদি আমার জীবনের সব ঘটনা শুনেও নিজের উদরতায় আমায় আশ্রয় দেন।আমি তো এ জন্য আপনাকে বরং বেশী বেশী ভালোবাসব। আর দাদু দিদা ছাড়া কেউ আপনাকে ভালোবাসা দেয় নি, হয়ত আপনার মা আজও বেঁচে আছেন , কিন্তু মাতৃস্নেহ থেকে আপনি আজীবন বঞ্চিত এটা কত বড় দুঃখ যন্ত্রণার!উনার দোষও আমি দেবো না।দোষ হয়ত আমাদের সমাজের ,আপনাকে নিয়েই তো উনি নতুন সঙ্গী নিয়ে সংসার করতে পারতেন। সমাজ সংসার কী মানত!"

"তোমার ব্যক্তিগত জীবন শোনার আগ্রহ আমার নেই ,আমি তোমায় বর্তমান দেখছি ,অতিত নিয়ে আমার কী হবে?"

"শুনতে  আপনাকে হবেই,  না হলে এ বিয়েতে আমার সম্মতি নেই।"

কিছুটা যেন এন এম সাহেব অসন্তুষ্ট হয় তার এমন বেপরোয়া মনে ভাবে,তাই বলে, "তুমি ভীষণ জেদী! বেশ বলো আমি শুনছি।"

"আমার বয়স মামা কী বলল সেটা কিছু যায় আসে না।আমি এখন চব্বিশ পেরিয়ে পঁচিশ বছরে পড়ছি আজ থেকে তিন বছর আগে সালটা ছিল উনিশ তিয়াত্তর কার্তিক মাসের বারো তারিখ,"

বলতে বলতে মহামায়া কেমন ভাবুক হয়ে যায়।দুঃখ যন্ত্রণার স্মৃতি তাকে যেন গ্রাস করেছিল মুখ নামিয়ে ছিল দুহাত দিয়ে বার বার সে চোখের জল মুছছিল।

এন এম বললেন ,"থাক না এ সব!"

মহামায়া কান্না আপ্রান চেপে বললে লাগল,

" আমরা ভীষণ গরীব ,বাবা পুজো করে সামান্য আয় করে।আমাদের বাড়ি, মাটি দেওয়াল খড়ের ছাওনী তিনটে কুঁড়ে ঘর ,আর বাঁশের খুটি দেওয়া খোলা বারান্দায়,রাত তখন নটা হবে,আমরা রাতের খাবার খেতে বসেছি।হঠাৎ কটা রাজনৈতিক মস্তান ছেলে গ্রামের ত্রাস হড়মুড়িয়ে বাড়িতে ঢুকে এল । বাবার বুকে রিভালবার, ভায়ের গলায় চাকু ,আমার মুখ গামছায় বেঁধে দেবু বুট কাঁধে করে বাড়ি থেকে আমাকে তুলে নিয়ে গেল।

ওদের একটা পাটি অফিস ঘর ছিল ,একটু গ্রাম থেকে দুরে মাঠের দিকে পীচ রাস্তার ধারে।রাত দশটার পর এ দিকে সাধারণ মানুষ যাতায়াত করত না।ওরা মদ মাস খেতো ,নানা অসামাজিক কাজ করত বোম বাঁধা থেকে নানা আগ্নেয়াস্ত্র রাখা থাকত। পুলিশ জানলেও এ ঘরে আসার সাহস ছিল না। ঐ ঘরেই আমাকে তুলল, আমি ভয়ে কাঁপছিলাম মেঝে চিৎ করে খেলল।

পাঁচ ছটা গুন্ডা মস্তান, সবাই আমাদের গ্রামের চেনা মুখ।তাদের মুখে উল্লাস ক্রুর হাসি,কটমট করে আমার দিকে লোভী নজর, আমি নিশ্চিত আমাকে ওরা গনধর্ষন করে আজ হয়ত মেরেই ফেলবে।"

মহামায়া আবেগ তাড়িত খানিকক্ষন চুপ থাকে পরে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল,একটু স্বাভাবিক হয়ে বলল,

"দেবু বুট পালের সর্দার,ধনী ঘরের ছেলে,সেছিল বিবাহিত ,তিনটে মেয়ে ছিল, বয়স পঁয়ত্রিশ ছত্রিশ হবে। গুন্ডার মত,লম্বা শক্তপোক্ত শরীর, কোমরে সব সময়ই চেম্বার রাখত।আমাকে বলল,এত রূপ নিয়ে কতদিন অভুক্ত থাকবে! তুমি আমার আজ থেকেই বৌ, বাকী পাঁচটা গুন্ডাদের বলল,এই এ তোদের বৌদি সম্মান করবি।

মদের গন্ধে ওর মুখ ভক ভক করছে।বাকী পাঁচ টা ছেলে একবাক্য বলল , ঠিক আছে গুরু তোমার কথাই আমাদের বেদ বাক্য।

তাহলে যা ঘরের দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে, বাইরের বারান্দায় মদ খা আনন্দ কর,আমি আজ আমার বৌয়ের সাথে এ ঘরে ফুলশস্যা করব।

একজন বাইরে থেকে দরজার কপাট বন্ধ করতে করতে বলল, 

" গুরু সিঁদুর আর ফুলে জোগাড় করব!"

আগে তো শালা বলে এমন একটা অশ্লীল কথা বলল, আমার বিশেষ অঙ্গ মারি, বার বার বলতে বলতে জোর করে ,কাপড় ব্লাউজ সব টেনে খুলে   আমাকে উলঙ্গ করে দিল। আমি কাঁদছিল কাঁপছিল ঘরে ও আর আমি। আমাকে নিয়ে আমার শরীরের নানা অঙ্গ নিয়ে রসীকতা করছিল বিকৃত মনের মাতাল।আমি কোন প্রতিবাদ করিনি। ভয় হচ্ছিল যদি বাকিদের ঘরে ডেকে নেয়!

আমার ইজ্জত আমার কুমারীত্ব আমার সব কিছু লুট করল।পাগলের মত আমার নগ্ন শরীরের বিশেষ অঙ্গ গুলো কামড়ে খামচে একাকার করেছিল, মনে হচ্ছিল মরেই যাব, ভয়ে আর কষ্ট যন্ত্রণায় আমি প্রায় অসাড় হয়ে পড়েছিলাম।

একটু পর ও ঘুমিয়ে গেল। আমার শাড়ি ব্লাউজ গুলো ঘরেই ছুড়ে ছুড়ে ফেলেছিল। আমি ধীরে ধীরে উঠে বসলাম যন্ত্রণায় কষ্টে কুকড়ে ছিলাম, বিশেষ অঙ্গে

রক্ত স্রাব তখনও হচ্ছিল,শায়া শাড়ি ব্লাউজ আস্তে আস্তে পরে নিলাম, শায়াটা রক্তে ভিজে যাচ্ছিল।ভয়ে কাঁপছিলাম,কপাট খুলে ঢুকে যদি আবার ঐ পাঁচ শয়তানের দল আমার উপর এবার ঝাঁপিয়ে পড়ে মৃত্যু নিশ্চিত। দেবু তা হতে দেয়নি।

ভোরে আমার কপালে সিঁদুর ঢেলে ফুলের মালা পরিয়ে আবার আমাকে কোলে তুলে বাড়িতে দিয়ে গেল। দুজন গুন্ডা সমানে বাড়িতে ছিল। বাবার হাতে একটা দশ টাকার বান্ডিল গুজে দিয়ে বলল, এই হাজার টাকাটা রাখুন শ্বশুর মশাই,একটু আদর করতে গিয়ে ওর শরীরে কিছু কেটে ছিড়ে হয়ত যেতে পারে, নতুন স্বাদের রূপসী বৌ , ফুলশস্যার রাত তো একটু বন্য ছিলাম কামড়া কামড়ি করে ফেলেছি।

ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ ট্যাবলেট কিনে দেবেন,পরে আর এমন হবে না,কান মলছি বলে বীভৎস হাসল,মহামায়া আমার বৌ যখন দরকার নিয়ে যাব। এত খাসা মাল শালা আপনার মত হাঘরে ভিখারীর বাড়িতে হয় কী করে !আমার দিকে বীভৎস হেসে ,বলল,ভারী আনন্দ দিয়েছ মাইরি, খুব ভালো মেয়ে তুমি।দম আছে,আমি আবার আসব তখন তোমায় গয়না দেবো।

আমি ভেবেছিলাম আত্মহত্যা করব,কিন্তু হুমকী দিয়েছিল, যদি আমি আত্মহত্যা করি বা গ্রাম ছেড়ে পালাই, আমার ভাইকে খুন করবে। আমি নিজের ত্যাগের বিনিময়ে সংসারের বিপদ আটকে ছিলাম। আমাকে একটা সোনার হার আর তিন চারটে আংটি দিয়েছিল ,বাবাকে মাঝে মাঝেই টাকা দিতো,বাবা তা নিতো,ভায়ের তখন টিবি রোগে ধুকছিল,এই টাকা ওর চিকিৎসার কাজে লাগছিল। 

আমাকে ডাকলেই ওদের নির্জন অফিস ঘরে চলে যেতে হতো,না গেলে তো তুলে নিয়ে যাবে!আর কঠিন নির্যাতনের ভয় ছিল,প্রথম দিনের কথাটা মনে করিয়ে দিতো। প্রতি সপ্তাহেই একদিন রাতে ওদের ফিস্ট হতো লোকের ছাগল চুরি করা মাংস আর দুর্গন্ধ বাংলা মদ।আমি রান্না করতাম মদ পরিবেশন করতাম।গা পাক দিতো,তবু মাংস খেতে হতো,মদ খেতে জোর করত না।

আর শেষে দেবুর সাথে শুতে হত।বন্ধ ঘরে আর কেউ থাকত না।বাইরে ওর দুটো একান্ত অনুগত গুন্ডা বসে পাহাড়ায় থাকত। অন্য দু তিন জনের আমার দিকে লোভী নজর ছিল ,যেন বিষধর সাপের মত,দেখে মনে হত ফনা তুলে ছোবল মারার জন্য হিস হিস করছে। তবে দেবু ওদের ওঝা,দুটো খুন নিজের হাতে করেছে।

আমার সাথে অভব্য ব্যবহার করতে ওরা তাই সাহস পেতো না।বৌদি বলত।আমি ওদের বিশ্বাস ভরসা করতাম না,তবে অভিনয় করতে হত, ইয়ার্কী তামাশা করতাম। পাড়ার মানুষ আমার দিকে এমন তাকাতো যেন আমি অন্য জগতের মানুষ, ভয়ে কিছু বলত না।দেবুর ভয়।পাড়ায় হুমকি দিয়েছিল আমার বৌ আর শ্বশুর বাড়ির মানুষ রা যদি কারোর নামে নালিশ করে গুঁড়িয়ে দেবো।

দেবুর বাড়িতে ভীষণ অশান্তি হত,আমাকে দেবু তার বৌ বলত। ওর স্ত্রী শুনেছিলাম ভীষণ জেদী ওর সাথে রেগে ক্ষোভে মেলামেশা বন্ধ করেছিল, দেবুর শ্বশুরও মস্ত ধনী,ভালো প্রভাবশালী গ্রামেরই মানুষ।

ভেবেছিলাম এভাবেই আমায় বেশ্যার জীবন যাপন করতে হবে। সংসার সমাজ প্রতিবেশী কেউ আমার পাশে ছিল না,ভয়ে আর আত্মকেন্দ্রিক সংকীর্ণ মনের সামাজিক মানুষ ওরা।আমার সবার প্রতি ঘৃনা হত। তবে ভাইটা অসুস্থ দুর্বল দীর্ঘ দিন টিবিতে ভুগছিল, আমার চরম ত্যাগের টাকায় ওর ঠিক ঠাক চিকিৎসা হচ্ছিল এটাই আমার একমাত্র তৃপ্তি।

এর বছর খানেক পর হঠাৎই এক সন্ধ্যায় গ্রামে রটে গেল দেবু বুট নাকি মারা গেছে। কেউ বলছিল বিষ খেয়ে দেবু আত্মহত্যা করেছে আবার অনেকে বলছিল ওর স্ত্রী, দুধে বিষ মিশিয়ে ওকে খাইয়ে খুন করেছে।

বড় বড় মানুষের ব্যপার, ওর চামচা গুন্ডা মস্তান গুলো সেদিন খুব ব্যস্ত, দেবুর শরীর টা পুলিশ আসার আগেই পুড়িয়ে ফেলার দরকার। ভয় হুমকী দিয়ে স্বাভাবিক মৃত্যু তারপর কোন ডাক্তারকে দিয়ে সার্টিফিকেট তারা করিয়ে নেবে।

আমাদের বাড়িতে তখন খুব টেনশন, দেবু মারা যাবার পর নতুন কেউ আমাকে নিয়ে টানাটানি করতেই পারে।আর দেবুর মৃত্যুর পর পাড়ার মানুষের আচরণ হবে ভয়হীন , তখন আমাকে দিনের পেঁচার মত কাকের দল ছিঁড়ে খাবে। যারা আমার ইজ্জত সম্মান বাঁচাতে আসে না তারাই আমাকে বেশ্যা বলবে।এ বড় কঠিন বিপদ, তাই ঐ রাতেই বাবা আমাকে নিয়ে গোপনে গ্রাম ছেড়ে হাঁটা দিল।

সারারাত হেঁটে ভোরে ক্লান্তবিধ্বস্ত হয়ে আমারা কালনা এসেছিলাম, তারপর বাস ধরে বর্ধমান, সেখান থেকে দূর্গাপরে মামার বাড়িতে বাবা পৌঁছে দিয়েই চলে গেল। বাবা সব সত্যি মামা মামীকে জানায়নি, আমার প্রতি মস্তানদের খারাপ নজর পরেছে এইটুকুই বলেছিল। আমার রূপ আমার বিপদ। গরীব ঘরে তার নিরাপত্তা দেওয়ার সমস্যার, সমাজ সংসার আর সরকারের আইন প্রশাসন যেখানে ক্ষমতাসীন দলের ক্রীতদাস। আমি তার শিকার।এবার বলুন আমি তো এঁটো!অন্য পুরুষ দলেমেজে যেমন খুশী বিকৃত মনে উপভোগ করেছে। আপনাকে সেবা করার যোগ্যতা কী আমার আছে!

এন এম খুব আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েছিল, বলল,

"এটা তোমার বাবার লজ্জা ,সংসার সমাজ সরকার সবার লজ্জার। আমিও তার অংশ। তুমি কী ভাবো! এজন্য তোমাকে দোষী করব বা ঘৃনা করব! তাহলে আমার শিক্ষা বৃথা, মানুষের পরিচয় দেওয়া উচিত নয়।একটা নিরীহ একুশ বছরের মেয়েকে বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কী ভীষণ নির্যাতন, রক্তাক্ত করে নগ্ন করে ইজ্জত লুটে অপরাধী কোন শাস্তি পায় না। যদি ঐ পাপী অধম শয়তান না মরত, আজও তুমি নরক ভোগ করতে।"

পূর্ব স্মৃতিচারণে মহামায়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে ভীষণ কাঁদছিল। কাপড়ের আঁচল চাপা দিয়ে মুখ ঢেকে মহামায়া ভীষণ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিল ,সারা শরীর মাঝে মাঝে কেঁপে উঠেছিল।

এন এম তার মাথায় স্নেহের হাত রেখে বলে, আমি তোমায় দেখে সেদিন নারীর প্রতি ভালোবাসা আর মোহগ্রস্থ হয়েছিলাম, তোমার রূপে দিশেহারার মত তাকাচ্ছিলাম যা হয়ত শোভন ছিল না।কিন্তু আমার জীবনে প্রেমের স্বরূপ তুমি ,দেহের উদ্ধে প্রেম অত উচ্চ মার্গে আমি প্রেমী নই।তোমার রূপে মুগ্ধ হয়েছি প্রথমেই, পরে তোমার দুখী হতাশগ্রস্ত মুখ আমাকে আরও তোমার প্রতি আবেগ ভালোবাসায় অন্তর পাগল করেছিল।

তোমার একটা চাকরির কথা প্রথম ভাবলেও পরে দেখলাম , তুমিই পারো আমার অতৃপ্ত জীবন আনন্দে ভরিয়ে দিতে।মায়ের স্মৃতি আমাকে ভালোবাসা বিমুখ করেছিল ,শুধুই মনে হত প্রেম আত্মকেন্দ্রিক দায়িত্ব বোধ হীন। তোমার নিষ্ঠা সেবা আর নীরব ধৈর্য, কাজে দায়িত্ববোধ,অবসন্ন ঘামে ভেজা অসহায় তোমার ক্লান্ত মুখ আমার মনে হল তুমি শোষন হচ্ছ,কেউ তোমার পাশে নেই।তাই তোমার পাশে থাকব এই চিন্তা থেকেই তোমার মামাকে এই বিয়ের প্রস্তাব দিলাম।জীবনে বিয়ে করব না,সিদ্ধান্ত বদল শুধুই তোমার জন্য।"

মহামায়া বিনম্র ভাবে বলে "কিন্তু ঈশ্বরের সেবা নর্দমার পড়ে থাকা ফুলে তো হয় না!"

"আমি ঈশ্বর নয়,আর তুমি ফুল হবে কী দুঃখে! ফুল তো একবারই সৃষ্টির আধার, তোমার জীবনের এক বছর যদি বারোটা ফুল ঐ পাপীষ্ঠ পদ দলিতও করে নর্দমায় ফেলে ।সারাজীবন তোমার সৃষ্টিতে হবে তার বহুক্ষন!তুমি তো সহস্র ফুলের স্রষ্টা ।আমার আগামী পরিতৃপ্ত জীবনের কল্পতরু।"

মহামায়া আবেগ ঘন হয়ে বলে "আমিও আর বিয়ে করব না ঠিক করেছিলাম, জীবনে এই নরমসম যৌন হেনস্থার স্মৃতি,আবার নতুন করে পুরুষ সঙ্গ বিভীষিকা লাগত। আপনাকে দেখে এত সরল সহজ সাদাসিদে মনে হল ।সব ধারনা বদলে গেল।আমার কলঙ্ক জীবন জেনেও যদি আশ্রয় দেন, আমি নিজেকে ধন্য মনে করব, আমি আমার সাধ্য মত আপনার যত্ন সেবা করব।"

"আমার সেবা যত্নের জন্য তোমায় কাছে পেতে চাইছি না!আমার সব আছে, কিন্তু দিশাহীন অতৃপ্ত হৃদয়ের তুমিই পারো আনন্দে পরিপূর্ণ করতে।তোমার মধ্যেই আমি আমার কল্পনার নারী খুঁজে পেয়েছি। কবির কথায় ,নারী অর্ধেক কল্পনা অর্ধেক বাস্তব ,এই বাস্তব নারীর রূপ বড় কঠোর। তোমার মধ্যে আমি সবটাই কল্পনা রূপ দেখছি।তোমার কঠোর রূপ আছে আমার বিশ্বাস হয় না। এত রূপ,এত সহিষ্ণুতা আর ত্যাগ বিরল।"

মহামায়া দুচোখ জলে ভরে ওঠে এ তার আনন্দ অশ্রু! এন এম সাহেবর দিকে চেয়েছিল অপলক দৃষ্টিতে। পরিতৃপ্ত আর কৃতজ্ঞ চোখে।

এন এম সাহেব এবার মহামায়াকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরেছিল দুই বাহুর বন্ধনে,অকৃত্রিম স্নেহে আর নিষ্পাপ ভালোবাসার সোহাগে।তার পর বলে ,

" শুভ তিথি দেখে আমি তোমায় সামনের সপ্তাহেই রেজিস্ট্রেশন ম্যারেজ আক্টে বিয়ে করব।তুমি আর না করবে না।

মহামায়ার মনে হল সে স্বপ্ন দেখছে, কোন স্বর্গ সুখের স্বপ্ন। গভীর ভাবে এন এম সাহেবকে জড়িয়ে বুকে মুখ গুঁজে সে ভীষণ কাঁদছিল। নিরাপদ আশ্রয় পাওয়ার আনন্দে!

                           সমাপ্ত



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance