Paula Bhowmik

Romance Fantasy Inspirational

4.0  

Paula Bhowmik

Romance Fantasy Inspirational

সুখে থেকো

সুখে থেকো

4 mins
243


_____হ্যালো.......?

______হ্যাঁ বলো।

_____কি বলবো? 

_______এতক্ষনে মন্দির থেকে পারলে বেরোতে? 


কিছুক্ষণ নিজের মনেই চুপ করে থাকে চৈতালী।

হ্যাঁ তো বাড়িটা তো সত্যিই ওর মন্দির। এর মর্ম বোঝার ক্ষমতা নেই মার্টিনের। 

অথচ নিজের পরিচয় দেবার সময় বলেছিলো ছেলেটা, "আমার নামটা কিন্তু খুব আনকমন।"

ইংলিশে অনার্স পড়তে আসা ইলোরার অবাক লেগেছিলো এই কথাটা শুনে। কি এমন বাংলা নাম যা ওর কাছে এতোটা অচেনা হবে ! নামটা বলার পর মার্টিন বলেছিলো, "আসলে আমি খ্রীষ্টান তো !"


কথাটা তত বড় নয়, কিন্তু অনেক গভীর ছিলো ওর মুখে ফুঁটে ওঠা ঐ দুঃখের ছাপটা।


কলেজের নবীন বরণেই প্রথম দেখেছে ও মার্টিনকে। প্রায় ছ ফুট লম্বা দোহারা চেহারার শ্যামলা ছেলে। পরে জেনেছে সাঁতারে ওর স্হান নাকি বরাবর চ্যাম্পিয়নের পাশাপাশিই থাকতো। প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গেছিলো ইলোরার। দুজনেই বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজের সুডেন্ট। সবে ভর্তি হয়েছে। 


ইলোরা বোস। বারাসত শহরের নামী এ্যাডভোকেট সমীরণ বোসের একমাত্র মেয়ে। পড়াশোনায় বরাবর প্রথম সারিতে থেকে এসেছে, এখনও তাই। ড্রাইভার

গাড়ি করে পৌঁছে দেয় কলেজে। কারো দিকে তাকানোর সময় কোথায় ! কিন্তু মার্টিনের চেহারা খুব সুন্দর না হলেও সাধারণের চেয়ে এতটাই আলাদা যে উপেক্ষা করার উপায় নেই।


মার্টিন সরকারের বাড়ি গোসাবা তে। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বিদ্যাধরী নদী। কিছু জমিজমা, আর দুটো ভেরি আছে মাছের। বাবা উদয়াস্ত পরিশ্রম করেন। বড়দার পড়াশোনা মাধ্যমিকের পর আর এগোয়নি। এখন ওখানকার রুরাল হসপিটালের আর. এম. ও. র বাড়ির প্রাইভেট চেম্বারের হেল্পার। প্রায় অজ পাড়া গাঁ বলা চলে। মার্টিনের মাথাটা মোটামুটি পরিষ্কার বলে বাবা রাজি হয়েছে কলেজে পড়াতে। চাকরি বাকরির যা অবস্থা কি হবে কিছুই বলা যায় না। ঈংরেজী টা শেখা থাকলে অন্ততঃ কিছু করে কম্মে চলে যাবে ভবিষ্যতে। দুজনের কলেজে দেখা না হলে হয়তো কোনোদিন যোগাযোগ হতো কি না সন্দেহ।


নবীন বরণের পর আলাপ হতে হতে দুজনেই কাছাকাছি আসে। অনেক কথাই শেয়ার করে নিজেদের মধ্যে। ফোন নম্বরও এক্সচেঞ্জ করে। না তখন এখনকার মতো স্মার্ট ফোন নয়। এমনি ছোটো ফোন ছিলো। তবু কথা তো বলা যায়। পরস্পরকে মানুষের হঠাৎ কেন যে ভালো লেগে যায় কে বলতে পারে! ক্রমে পরিচয় এর এক বছর পার হয়ে থার্ড সেমিস্টারের আগে ফেব্রুয়ারি মাস না পড়তেই মার্টিন ফোনেই আবদার করে বসে, "সামনের ভ্যালেন্টাইন ডে তে তুমি আমায় তোমার হাতে তৈরী একটা রুমাল দিয়ো তো!"


_______সেকি! কেন? 


_____এমনি, স্মৃতি হিসেবে। 


________তুমি জানোনা যে রুমাল কাউকে গিফ্ট করতে নেই! এমন কান্ড করলে চির বিচ্ছেদ যে অবশ্যম্ভাবী। সে তুমি কুসংস্কার ভাবো আর যাই ভাবো। ও আমি কিছুতেই দেবোনা তোমাকে। আমার নিজের বানানো এম্ব্রয়ডারি হলেই চলবে, তাই তো?


সেই অনুযায়ী দরজিকে দিয়ে একটা সাদা রঙের খাদির কাপড়ের বালিশের ওয়ার তৈরী করিয়েছে।

তার পর কয়েকদিন ধরে নানা ফুল দিয়ে সাজানো একটা ছবি ফুটিয়েছে ওতে। স্কুলে হাতের কাজ হিসেবে শেলাইটা শিখিয়ে ছিলো ভাগ্যিস! তা না হলে তো জব্দ হতে হতো একদম। কি যে অদ্ভুত শখ! কি জানি হয়তো দেখেছে বাড়িতে কিংবা নিজেদের সোসাইটিতে। খুব ভালো করে প্যাক করেছে জিনিস টা। কাপড়েরই একটা ছোট্ট ব্যাগের মতো। মুখটা একদম সেলাই করা। যেন সামনে খুলতেই না পারে।

আর ব্যাগের ওপরে একটা টেডি আর দুটো লাভ সাইনের স্টিকার আটকে দিয়েছে। 


ড্রাইভার কমলদাকে ম্যানেজ করেছে কোনোমতে। 

ধর্মতলায় কালো রঙের চকচকে ইন্ডিকা টা পার্ক করা থাকবে। এই ফাঁকে ও একটু ঘুরে আসবে ভিক্টোরিয়া থেকে। হ্যাঁ সত্যি টাই বলেছে। ড্রাইভার হলেও মানুষ তো! মায়াদয়া আছে। আর জানে এই কারনে ওকে বেশ মোটা বখশিশ দিদিমণী নিশ্চয়ই দেবেন। বিপদে না পড়লে স্যার কে একথাটা বলার দরকার নেই। 


পায়ে পায়ে ভিক্টোরিয়া সামনে এসে দেখে মার্টিন আগেই এসেছে। দুজনে একসাথেই ঢোকে ভেতরে। একটু অবাক লাগে মার্টিনের উল্লাস নেই বলে। মুখটা খুশী বটে, কিন্তু যেন বিষাদ মাখানো। একটা ফাঁকা দেখে গাছের তলায় বসে। দুপুর বেলা বলেই বোধহয় ভিড় কম। 


গিফ্টের প্যাকেটটা হাতে তুলে দিতে, ওর কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়া য় মার্টিন। বলে "এটা আমি আমার অন্তর থেকে দিলাম, সুখে থেকো সারাজীবন"। এটাই ইলোরাকে এভাবে প্রথম আদর মার্টিনের। 

কেমন যেন হেয়ালি মনে হয় ইলোরার। তবু চুপ করেই থাকে। 

_______আসলে তোমাকে আমার কিছু বলার আছে। 

_____বলো।

_______আমি যে তোমাকে ভালবাসি এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। কিন্তু এক ই সাথে অনেক বেশী সম্মান করি। আমাদের পারিবারিক অবস্থান তোমাদের চেয়ে অনেক আলাদা। তোমাকে ভালো রাখতে না পারলে আমার খুব কষ্ট হবে। কিন্তু এর চেয়েও যেটা বড়, এ বিয়ে হলে লোকজনের কাছে তোমাদের মাথা হেঁট হয়ে যাবে। মুখে লোকে যতোই বলুক সব ধর্ম সমান, কিন্তু আমি জানি কোনো এক সময়ে আমাদের পূর্ব পুরুষ হিন্দু ছিলেন। আর্থিক পরিস্থিতির কারনে বা হয়তো চাপে পড়ে এক সময় এই ধর্ম গ্রহণ করেন। আমাদের ধর্মকে যদিও আমি শ্রদ্ধা করি, কিন্তু এই সম্প্রদায়ে জন্মেছি বলে নিজেকে ভাগ্যহীন বলেও মনে করি। 


আমি জানি তোমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমি যেন ভবিষ্যতের ছবি দেখতে পাই। ছেলেমেয়েদের যখন তোমাদের আত্মীয় স্বজনেরা আপন করে নিতে পারবেনা তখন তোমার মনে যে দুঃখ তুমি লুকিয়ে রাখবে তখন তা নিরসনের উপায় খুঁজে পাওয়া যাবেনা। সেটা আমি হতে দিতে পারিনা। 


আর আমার মধ্যেও এমন এক মন আছে যে বাঁধন সহ্য করতে পারেনা বেশীদিন। কে জানে হয়তো কখনও তোমাকেই বিয়ের পর অবহেলা করলাম। তার চেয়ে এই ভালো। আমাদের প্রেমটা আমাদের দুজনের হৃদয়ে চিরদিন অক্ষয় হয়ে থাকবে । 


একনাগাড়ে কথাগুলো বলার পর একটু চুপ করে থাকে মার্টিন। ইলোরার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে গাল বেয়ে। নিজের আঙুল দিয়ে মার্টিন তা মুছিয়ে দেয় আর নিজের মাথাটা দুদিকে নাড়িয়ে ইশারায় বারণ করে কাঁদতে। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance