STORYMIRROR

Partha Pratim Guha Neogy

Tragedy Others

3  

Partha Pratim Guha Neogy

Tragedy Others

স্বপ্নের রানী

স্বপ্নের রানী

5 mins
201

বিশাল পৃথিবীর অপরিচিত এই দুনিয়াতে আমাদের সাক্ষাৎ হয় কতই না মানুষের সাথে, যাদের সাথে আমরা কোনোদিন হয়তো পরিচয় করতে পারি না বা জানতে পারি না মানুষ টা কে, কিন্তু দাগ কেটে দিয়ে যায় সেই মানুষগুলো আমাদের জীবনে, আমাদের মনের ভিতর।

এমনই একটি ঘটনা ঘটে চলেছিল এই বেশ কিছু বছর আগে, হ্যাঁ আমি সেই যে পুরো বিষয় টা দেখে কিছুটা হলেও অনুমান করেছি কিন্তু হয়তো ওই দুই পৃথিবীর মধ্যে এক পৃথিবী আজও জানে না, তার কি স্থান এক অপরিচিত মানুষের জীবনে।


গল্পের এক পৃথিবী হলো রাজা আর তার জীবনের পৃথিবী হলো রীনা । অবশ্য আপনারা বললে হয়তো কেউ বিশ্বাস করবেন না কিন্তু আজ অব্দি তারা একে অপরের নাম জানে না। আর হয়তো কোনদিন জানতেও পারবে না। বেশ অবাক লাগছে তাই না, এমন কেন! গল্পের শুরুতেই আমি কি প্রলাপ বকছি, না না বিরক্ত হবেন না। চলুন না পড়ে দেখাই যাক আসল সত্য টা কি?


তখন গ্রীষ্মকাল,গ্রীষ্মকালের সেই চটচটে ঘামে বেশ বিরক্তির সাথে সারাদিনের ক্লান্তি বজায় রেখে রাজা বাড়ি ফিরল। এসেই এসি এর নিচে বসে একটু রিল্যাক্স ফিল করার পর ছাদে উঠে গেলো, এটা তার প্রতিদিনের অভ্যেস, অফিস থেকে বাড়ি ফিরে ও ঠিক এই ছাদে উঠে কিছুটা সময় ওই রাস্তার বিপরীত দিকের বিল্ডিং এর ৬ তলার ফ্ল্যাটের কাচের জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে আর হয়তো, অবাস্তব কিছু মনে মনে কল্পনা করে তারপর তার মায়ের ডাকটা হঠাৎ করে কানে এলেই সে দৌড়ে নেমে যায়।


রাজা অফিস এ বেশ ভালো রকমের উঁচু পোস্টে কাজ করে আর বেতনও পায় মোটা ধরনের। বাড়িতে সদস্য বলতে সে আর তার মা। খুব ছোটবেলাতেই তার বাবা মারা গেছেন। আজ অব্দি তাকে কোনো মেয়ের, রাস্তা ঘুরতে দেখিনি অর্থাৎ সে সর্বদাই মেয়েদের থেকে দূরে দূরে থাকতেই পছন্দ করে। কিন্তু, ‘আজ’ টা বলা ঠিক হয়নি আমার,সে ওই ৬ তলার ফ্ল্যাটের জানালার মধ্যে দিয়ে যে জিনিসটার দিকে তাকিয়ে থাকে - সে কোনো জিনিস নয় আদতে সে হলো একটি জলজ্যান্ত মেয়ে, যার নাম রীনা ।


রাজার যখন অফিস এর কাজের চাপ পড়েছিল তখন সে রাত জেগে কাজ করতো, এমনই একদিন সে কাজ করতে করতে তার জানালার দিকে ঝুঁকে কিছু দেখতে যায় তখন দেখতে পায়, ওপারে একটি মেয়ে টেবিল এর ওপর বই নামানো, মন দিয়ে সে পড়ছে। খুব শান্তি অনুভব করে রাজা, আর ভাবে রাতের আকাশের থেকে কি কোনো উর্বশী নেমে এলো তার জীবনে, সেদিন থেকে রাজার রাত জাগাটা অভ্যেসে পরিনত হয়েছে। সে প্রতিদিন ছাদে, তারপর নিজের রুমের জানালা থেকে দেখতে থাকে মেয়েটিকে। সে রাত ৩ টার দিকে বিছানায় যায় আবার ৬ টায় উঠে যায়। তাই এটা এখন রাজারও সেম রুটিন হয়ে গেছে। একেই শীর্ণ দেহ তার ওপর যেন রোগের মহিমা!


রীনা জয়েন্ট - এর প্রিপারেশন নিচ্ছে। ও পড়াশোনাতে খুবই ভালো। ছোট থেকে মা বাবাকে কোনোদিন কাছে পায়নি, তাই দাদু দিদার কাছেই তার বেড়ে উঠা।


মেয়েটি রূপে যেমন লক্ষ্মী ঠিক তেমন গুনেও সরস্বতী, সত্যি আমি নিজেও স্বীকার করছি তার মত অমন মেয়ে যার ভাগ্যে আছে সে সত্যি ভাগ্যবান।


প্রতিদিন রাজা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে কি করে তার সাথে পরিচয় করা যায়, আসলে রীনা বাড়ি থেকে বাইরে বেরোতে পছন্দ করতো না তাই তার সাথে আলাপ হওয়াটা অনেকটাই রাজার কাছে অলীক কল্পনার মত।


এদিকে অতৃপ্ত ইচ্ছার কারণে রাজার অফিসের কাজে মন বসে না, খাবার খাওয়াও সে ভুলতে বসেছে, কাজে তার প্রচুর ভুল, এমনকি প্রায়ই সে বসের কাছে বকা খাচ্ছে, তার একেবারে নাজেহাল অবস্থা। সে ভেবে পাচ্ছে না ‘ কি ভাবে আমার ওই রাতের স্বপ্নের রানীর কাছে আমি পৌঁছাতে পারবো।’ রাজাও সেভাবে কারুর সাথে মিশত না বলে সবাইকে চিনত না। আর চেনাদের মধ্যে সে কারুর কাছে জিজ্ঞাসা করতে পারেনি যে, ওই সামনের ফ্ল্যাট এর মেয়েটির নাম কি! তাই সে তার নাম রেখেছিল “স্বপ্নের রানী ”। রাজার স্বপ্ন বাস্তব সবটা ঘিরেই শুধু রীনা । আর এদিকে রীনা কোনোদিন একবারও লক্ষ্য করেনি যে রাত্রের ওই অন্ধকারে দুটি চোখ তাকে প্রতিদিন পাহারা দেয়, আসলে দোষ টা ওর নয়, ও সত্যি পড়ায় খুব মনোযোগী ছিল তাই হয়তো বই এর বাইরে কখনোই তার চোখ যায়নি।


এভাবেই চলতে চলতে মাস দুয়েক পর রীনার জয়েন্টের রেজাল্ট বের হল। joint এক্সাম ক্লিয়ার হয়ে গেছে সে দিল্লি চলে যাবে, সেখানে তার মাসীর বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করবে। ব্যাগ লাগেজ সব রেডি হলো, তারপর বিকেলে গাড়ি এলো আর রীনা তার দাদু দিদাকে বিদায় দিয়ে নতুন লক্ষ্যে রওনা দিলো।


এদিকে যে এতকিছু ঘটে গেলো রাজা টেরও পেলো না। ভাগ্যের কী পরিহাস,সে এই ক’দিন শারীরিক অসুস্থতার কারণে হসপিটালে ভর্তি ছিল। বাড়িতে ফেরার পর দেখে ৬ তলার জানালা একদম অন্ধকার। তাতে কোনো স্বপ্নের রানী বই নিয়ে বসে থাকে না আর। কিছুদিন দেখতে না পেয়ে সে আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারল না। ছুটে গেলো ওই ৬ তলার ফ্ল্যাটে । সেখানে পৌঁছে গিয়ে কলিং বেল বাজাতেই এক যুবতী এসে দরজাটা খুলল। রাজা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো আপনি কে ? এখানে যেই মেয়েটি থাকতো তাকে চেনেন? মেয়েটি বলল,কোন মেয়ে আমি তো জানিনা, আমি তো আজ সকালেই এখানে শিফট করেছি। হ্যাঁ তবে মেয়ে নাকি, জানিনা কিন্তু শুনলাম এখানে এক বৃদ্ধ দম্পত্তি থাকতো তারা তাদের গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেছেন।


রাজা বলল, তারা কি ফিরবে না আর?


মেয়েটি বলল, ক্ষমা করবেন আমি ওদের সম্পর্কে বিস্তারিত আর কিছুই জানি না।আপনি চাইলে ভেতরে আসতে পারেন ।


রাজা দৌড়ে বেরিয়ে গেলো প্রায় ১০- ১২ টা টাওয়ার পেরিয়ে আসার পর ঘাসের মাঠে গিয়ে আছড়ে পড়ে কাঁদতে লাগলো। তার স্বপ্নের রানী সারাজীবন তার কাছে হয়তো ‘স্বপ্নের রানী’ হয়েই রয়ে গেলো।


ছেলেটা এখন বদলে গেছে, প্রচুর পরিশ্রম করে।এখন সে নিজেই একটি নতুন কোম্পানি খুলেছে, হয়তো স্বপ্নের রানীকে ভোলার জন্য কর্মজীবনকেই সে বেছে নিয়েছে। একটা কথা সে খুব ভালো ভাবে বুঝে গেছে যে, ভালোবাসার কথা সঠিক সময়ে বলে দিতে হয়, অহেতুক দেরী করতে নেই। তার মনপ্রাণ দিয়ে সে বুঝতে পারে -


“পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো এক তরফা ভালবাসা। আর তারচেয়ে বড় কষ্ট হলো আপনি তাকে ভালোবাসতেন সে জানত, এখনও ভালোবাসেন কিন্তু সে জানে না ”।


সত্যি পড়ে খুব অদ্ভুত লাগল তাই না, আর এটাও ভাবছেন আমি কি করে জানলাম, আমি ওই ফ্ল্যাটেই থাকতাম কিন্তু আজ আমার বিদায় বেলা তাই পরিপূর্ণ অথচ অপরিপূর্ণ প্রেমের পৃথিবীর গল্পটা, যেটা হয়তো তাদের অজান্তেই আমি জানতাম, সেটা আপনাদের কাছে উপহার রূপে তুলে দিয়ে গেলাম। পারলে রাজার রীনাকে খুঁজে এনে ওদের পৃথিবীটাকে এক করে দেবেন, আমি সেটা পারিনি আর পারবও না কারণ আমি তো জড় বস্তু। ওই কাঁচের জানালাটা, যে লক্ষ্য রাখতো ঠিকই কিন্তু সে যে বাক্যহারা।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy