শংকর হালদার শৈলবালা

Abstract Fantasy Others

3.9  

শংকর হালদার শৈলবালা

Abstract Fantasy Others

স্তনের কারণে বেলের সৃষ্টি।

স্তনের কারণে বেলের সৃষ্টি।

4 mins
263



বৈকুন্ঠের লক্ষ্মীর মনে আক্ষেপ জন্ম নেয়।

লক্ষ্মী ভাবে মনে :- আমার স্বামী নারায়ন ত্রিজগতের সমস্ত কিছুর উপরে তাঁকেই (নিজে কে) প্রিয় বলে মনে করেন কিনা, বুঝতে পারছি না! স্বামী নিত্য সেবা কার্য ও নৈমিত্তিক সাধনায় নিজেকে সমর্পণ করেছি। স্বামী কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসেন?


এই প্রশ্নের সমাধান জানার জন্য হৃদয়ের মাঝে উথাল পাথাল করে মনোকষ্ট বৃদ্ধি হয়ে চলেছে। একসময় অনন্ত শয্যায় যোগনিদ্রায় নিদ্রিত স্বামীর কাছে এসে পদ সেবা করতে থাকে। লক্ষীর হাতের স্পর্শে নারায়ণের ঘুম ভেঙে যায়। 


নারায়ন চোখ খুলে লক্ষ্মীর চিন্তা যুক্ত মুখখানা দেখে নিজে চিন্তিত হয়ে বলেন :- "হে প্রিয়া লক্ষী, কি কারনে তুমি চিন্তা আচ্ছন্ন হয়ে মনোকষ্ট ভোগ করছো! আমাকে বলে। 


লক্ষ্মী তার আক্ষেপের কথাগুলো স্বামীকে জানায়। 


নারায়ণ শ্রুতিমধুর হাসি দিয়ে বলেন :- "মানুষের কাছে তার প্রাণ যেমন সবচেয়ে প্রিয়" তবে শোনো হে প্রিয়া তুমি আমার কাছে ততটাই প্রাণ স্বরূপ লক্ষী প্রিয়া। কিন্তু সত্য কথা বলতে কি জানো ; সবার চেয়ে সবকিছুর উপরে আমার প্রিয় হল সত্যম শিবম সুন্দরম। হর হর মহাদেব শিব কে যে ভক্তি শ্রদ্ধা সহকারে পূজা করেন। একমাত্র তিনি কিন্তু আমার শিবের সমান প্রিয় হন। 


জগদীশ্বর নারায়ণের কথা শুনে লক্ষীদেবী মাথা নিচু করে কয়েক মুহূর্ত মৌন থাকার পর ছলছল চোখের জলে বলে :- আমি শিব পূজা করে শিব ভক্ত হতে চাই এবং তোমার কাছে শিবের সমান প্রিয় হয়ে উঠতে চাই।


 নারায়ন অতি প্রসন্ন হয়ে লক্ষীর চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে, কানে কানে শিবের প্রিয় পঞ্চাক্ষর মন্ত্র ‘নমঃ শিবায়’ প্রদানের মাধ্যমে আশীর্বাদ করেন। তারপর বলেন :- শিবলিঙ্গ স্থাপন করে নিজের হাতে একশত পদ্ম চয়ন করে, শিবকে নিত্য পূজার আয়োজন করো। 


লক্ষীদেবী তার স্বামী নারায়নের নির্দেশ অনুসারে বৈকুণ্ঠ ধামের মধ্যে সোনা দিয়ে শিবের লিঙ্গ রূপে নির্মাণ করেন। রত্ন মন্দির বানিয়ে শিব মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন।


লক্ষীদেবী সরোবর থেকে নিজের হাতে গুনে গুনে একশত পদ্ম নিয়ে আসেন। সংকল্প করে নিত্য শিব পূজা শুরু করেন। মন্ত্র সাধন পূজা পাঠ করতে করতে একটি বছর পার হয়ে যায়। প্রকৃতির নিয়মে ঋতু চক্রের মাধ্যমে নতুন বছরের বৈশাখ মাস আবির্ভূত হয়।


 লক্ষীদেবী বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে পূজার আয়োজনের প্রস্তুতি চলতে থাকে। প্রতিদিনের ন্যায় আজও নিজে হাতে একশত পদ্ম চয়ন করে নিয়ে আসে। একটি থালার উপর সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রাখে। শিবের পূজায় বসে চোখ বন্ধ করে ধ্যান করতে শুরু করে।


 ভগবান শিব তার ভক্ত কে পরীক্ষা করার জন্য, থালা থেকে দুটি পদ্ম হরণ করেন। 


লক্ষীদেবী ধ্যান শেষ করে শিবের চরণে অঞ্জলি দেওয়া শুরু করেন। অঞ্জলি দিতে দিতে হঠাৎ লক্ষ্য করে দেখে একশত পদ্ম থেকে দুটি পদ্ম কম রয়েছে। আফসোস করে বলে চরম ভুল হয়ে গিয়েছে কিন্তু এখন পদ্ম কোথায় পায়। চিন্তিত মনে ভাবে পূজা সমাপন হবে কিভাবে ? মনের মধ্যে নানারকম কুচিন্তা এসে যায়। ভাবে অন্য কাউকে দিয়ে সরোবর থেকে দুটি পদ্ম নিয়ে আসা যাক। আবার পর মুহূর্তে ভাবে আমি সংকল্প করেছিলাম, নিজের হাতে পদ্ম চয়ন করে শিবের পূজা করবো। আসন ছেড়ে উঠে পড়লে, একদিকে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করা হবে। আবার অন্যদিকে পূজা শেষ না করে ভগবান শিব কে অপমান করা হবে। 


ভেবে ভেবে কোনো কূলকিনারা না পেয়ে ভীষণ অস্থির ভাবে স্বামী নারায়ণ কে স্মরণ করে। আর সেই মুহূর্তে বিষ্ণুর একটি কথা মনে পড়ে যায়। একদিন কথা প্রসঙ্গে বিষ্ণু তার লক্ষীর স্তন যুগল দুটিকে পদ্মের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। লক্ষীদেবী অন্তরে ভাবে- বিষ্ণুর কথা কখনোই মিথ্যা হতে পারে না।


 তার পদ্ম সাদৃশ্য স্তন্যদায়ী উৎসর্গ করে শিবের পূজা সম্পন্ন করবে মনে স্থির করে। ভাবনার সাথে সাথে তার বাম স্তন কেটে শিবের পূজায় আহুতি দান করে।


ভগবান শিব ভক্তের ভক্তি পুণ্য বলিদান দেখে, নিজের মনে অনুশোচনা জন্ম নেয়।


শিব ভাবে মনে :- পদ্ম দুটি হরণ না করলেই কিন্তু ভালো হতো।


 লক্ষীদেবী তার ডান স্তন কাটতে উদ্যত হয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তে মহাদেব আর চুপ করে থাকতে পারলেন না।


 লক্ষ্মী দেবীর সম্মুখে আবির্ভূত হয়ে হাত চেপে ধরে বলেন :- "মা, তুমি ক্ষান্ত হও।

 তোমার স্ত্রী অঙ্গ ছেদন করে আমাকে অনুতপ্ত করেছো। তোমার আত্ম বলিদানের জন্য, আমি প্রসন্ন হয়েছি। তুমি কি বর চাও বলো?


 লক্ষীদেবী ভগবান শিবকে প্রণাম করে বলেন :- হে দেবাদিদেব! আশীর্বাদ করুন, আমি যেন আমার স্বামীর সবচেয়ে প্রিয় হতে পারি।’ 


 শিব তখন মৃদু হেসে বলেন :- "তথাস্ত, ‘তাই হবে, মা। আমার আশীর্বাদে তোমার হারানো অঙ্গ ফিরে পাবে। আর তোমার এই বলিদানের কথা ত্রিজগতে কেউ কোনদিন ভুলতে পারবে না।

 কারণ, তোমার ঐ কাটা অঙ্গ থেকে ধরায় (পৃথিবীতে) জন্ম হবে ‘বেল’ নামক বৃক্ষের। তার পত্র হবে আমার ত্রিনয়ন। ফল হবে তোমার কৃত-উৎসর্গ অঙ্গের অনুরূপ। তোমার ‘শ্রী’ নাম স্মরণ করে লোকে এই বৃক্ষকে ‘শ্রী’ বলে ডাকবে, পাতাকে বলবে ‘শ্রীপত্র’, ফলকে বলবে ‘শ্রীফল'। যতদিন ধরায় চন্দ্র-সূর্য থাকবে, এই বৃক্ষও ততদিন থাকবে। এর পত্রে পূজা পেয়ে আমি হব পরম তুষ্ট।’    


শিবের অনুগ্রহের ভাবেই বৈশাখের তৃতীয়া তিথিতে পত্রপুষ্প ও ফল সহ বেলবৃক্ষের জন্ম হল পৃথিবীতে, বেলপত্র হয়ে উঠল শিব পুজোর আবশ্যিক অর্ঘ্য।

-----------------------------------------------------

গল্পের উৎস : শ্রীকৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস রচিত, 'শিব পুরাণ'।

-----------------------------------------------------




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract