STORYMIRROR

শংকর হালদার শৈলবালা

Classics

4  

শংকর হালদার শৈলবালা

Classics

রোমান্টিক গণেশের জন্ম।

রোমান্টিক গণেশের জন্ম।

5 mins
426

রোমান্টিক গণেশের জন্ম।


লেখক :- শংকর হালদার শৈলবালা।


কৈলাস পর্বতের মাঝে দেবী পার্বতী ও মহাদেবের পরিবার সহ প্রজাগণ কে নিয়ে মহাদেবের রাজত্ব। মাতা পার্বতী স্নানাগারে যাওয়ার আগে মহাদেবের প্রিয় নন্দীকে বলেন :- স্নানাগারের দ্বাররক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকো কিন্তু স্নানের সময় কাউকে ভিতরে যেতে দেবে না।


 মধ্য স্নানের সময় মহাদেব দ্বারে এসে উপস্থিত হয়ে বলেন :- আমি ভিতরে যেতে চাই। 


শিবের বাহন নন্দী দ্বার ছেড়ে দিয়ে বলে :- প্রভু ভিতরে প্রবেশ করুন কিন্তু মাতা স্নানাগারে আছে।


হঠাৎ করে স্বামীর আগমন মাতা পার্বতী নন্দীর উপর ক্রোধিত হয়ে শিবের শুধু একান্ত অনুগামী বলে ভর্ৎসনা করেন। 


মাতা পার্বতীর নিকটতম বান্ধবী জয়া ও বিজয় কে বলেন :- নন্দী যেমন শিবের আনুগত্য কিন্তু আমার নিজস্ব কোন আনুগত্য ব্যক্তি নেই। 


দুই বান্ধবীর পরামর্শে পর্বতের মাঝে কোন জলাশয় থেকে মাটি তুলে নিয়ে আসে অথবা মাতা পার্বতীর প্রসাধনের হলুদ মাখা হাতে নিয়ে প্রতিমা গড়ার মতো নাড়াচাড়া করতে করতে মনের গভীরের গিয়ে চিন্তা করে সুন্দর একটি শিশুর দেহ তৈরি করে। সেই দেহের মধ্যে প্রাণের আর্বিভাব ঘটায় এবং সাথে সাথে শিশু নড়েচড়ে উঠে।

 মাতা পার্বতী শিশুর গণেশ নামকরণ করেন। মাতা পার্বতী শিশুকে ভীষনভাবে ভালোবাসা দিয়ে নিজের সব চেয়ে পছন্দের সন্তানরূপে আদর-যত্ন করে বড় করে তুলতে থাকে।


 মাতা পার্বতী স্বামী মহাদেব কে সেবা যত্ন করতে করতে অনুরোধ করে বলেন :- গনেশকে আমার ইচ্ছা অনুসারে তৈরি করেছি। তুমি আমার স্বামী সেই কারণে গনেশকে সন্তান হিসাবে মেনে নেওয়া কর্তব্য।


মাতা পার্বতীর কথার কোন উত্তর না দিয়ে চুপ হয়ে থাকে।

 

মাতা পার্বতী বালক গণেশ কে তার স্নানাগারের দ্বাররক্ষীর দায়িত্ব প্রদান করে। নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছে।


 একদিন পিতা মহাদেব স্নানাগারের দরজায় উপস্থিত হয়ে বলেন :- পুত্র; আমাকে ভিতরে যেতে দাও।


 দ্বাররক্ষী গণেশ বলেন :- পিতা, মাতা স্নানাগারে কিন্তু তার নির্দেশ অনুসারে আপনার ভিতরে যাওয়ার আপাতত কোন অনুমতি নেই।


কিছুক্ষন পিতা-পুত্রের মধ্যে ঠেলাঠেলি চলার পর মহাদেব ক্রোধিত হয়ে বললেন :- হে বালক চলার পথে বাধা সৃষ্টিকারী না হয়ে সরে যাও। আমি কৈলাস পতি আর আমাকে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি নেই।


গণেশ বলেন :- হে পিতা; তাহলে আমাকে যুদ্ধের মাধ্যমে পরাজিত করে তারপর ভিতরে প্রবেশ করবেন। 


 মহাদেব বললেন :- হে বালক, তোমার সাথে কি যুদ্ধ করব?


কেউ তার জায়গা থেকে ফিরে আসতে চাইছে না। গনেশ তার দায়িত্ব প্রাপ্ত কাজের থেকে কর্তব্য অবহেলা করে একচুল লড়তে চাই না। কিন্তু মহাদেব তার উচ্চ মর্যাদার অপমান বোধ করে অহংকার বশীভূত হয়ে হুংকার দিয়ে বালক গণেশ কে যুদ্ধে আহ্বান করেন।


গনেশ তার মায়ের নাম স্মরণ করে অস্ত্র পরিচালনা করতে থাকে। পিতা পুত্রের মধ্যে তুমুল আকারের যুদ্ধ বেধে যায়। এমনকি স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল, ব্রহ্মলোক ও বিষ্ণুলোক সহ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যুদ্ধের হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে। ব্রহ্মলোক ও বিষ্ণুলোক থেকে ব্রহ্মা ও অনন্ত শয্যাশায়ী বিষ্ণু ছুটে চলে আসে। যুদ্ধের ভয়ংকরতা দেখে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যাবে এবার রসাতলে। মহাদেবের সামনে উপস্থিত হয়ে হাত জোড় করে বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু কোনো ফল লাভ হয় না।


ভয়ংকার যুদ্ধ চলাকালীন মহাদেবের অস্ত্র মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খেতে থাকে। তবুও মহাদেব হার স্বীকার করে না কিন্তু গণেশের যুদ্ধের রণকৌশলের পদ্ধতি দেখে মহাদেব বিস্মৃত হয়ে পড়ে। 


মহাদেব পরাজয় কে মেনে না নিয়ে তার ত্রিশূলে ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করে গণেশের দিকে ছুঁড়ে দেয়। গনেশ আক্রমণকারী আক্রমনকে প্রতিরোধ করার জন্য তার অস্ত্র পরিচালনা করেন। উভয়ের অস্ত্রেশস্ত্রে ভীষণ যুদ্ধ বেধে যায়। ব্রহ্মা বিষ্ণু সহ সকল দেবতাদের ত্রাহি ত্রাহি উঠে।


মহাদেবের যুদ্ধের অস্ত্রের আঘাতে গণেশের অস্ত্র পরাজিত হয়ে পড়ে এবং ছুটে এসে পরাজিত গণেশের মাথা কেটে নেয়। মহাজ্ঞানী মহাদেব তৎকালীন সময়ের যুদ্ধ নীতি লংঘন করে কিন্তু অস্ত্রবিহীন গণেশের মৃত্যু ঘটায়। উপস্থিত সকলেই আরো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির কথা চিন্তা করতে থাকে।


মহাদেব ছেলের খুনি হয়ে যুদ্ধ স্থল থেকে দ্রুত তার সাধনায় স্থলে এসে চুপচাপ ধ্যান করতে শুরু করে।


গণেশের মৃত্যুকালীন মা মা বলে আত্মনাথ চিৎকার করে ওঠে। মাতা পার্বতীর অন্তর কেঁপে ওঠে। দ্রুত স্নানাগার থেকে ছুটতে ছুটতে যুদ্ধ স্থলে উপস্থিত হয়ে, তার প্রাণের প্রিয় সন্তান গণেশের মৃতদেহ দেখতে পায়। কিছু সময় নিস্তব্ধ পাথরের মতো দাঁড়িয়ে গণেশের খণ্ডিত দেহের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তারপর খণ্ডিত দেহ কে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে। চোখের জলে বন্যার সৃষ্টি হয়। মাতা পার্বতী ক্রোধিত হয়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কে বিনাশ করার জন্য কালনাশকারী বিভিন্ন ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে ধ্বংসের জন্য এগিয়ে চলে। সকল দেবতাগণ অনন্ত শয্যা ধারী বিষ্ণু কে স্মরণ করে তার কাছে উপস্থিত হয়।


মাতা পার্বতী ধ্বংসলীলায় মত্ত হয়ে এত ক্রোধিত হয়ে পড়েছে যে তার সামনে দেবতা সহ ব্রহ্মা মৃত্যুর ভয়ে কেউ যেতে সাহস পাচ্ছেন না। বিষ্ণু তার ক্রোধকে সংবরণ করার চেষ্টা করেন। 


 বহুক্ষণ বোঝানোর পর মাতা পার্বতী বিষ্ণু সহ দেবতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন :- আমার দুটি শর্ত মেনে নিলে ধ্বংসলীলা বন্ধ করবো।


মাতা পার্বতী কে প্রণাম ও সন্তুষ্টি করণ স্তব করে হাতজোড় করে বিষ্ণু বলেন :- "মাতা, বলুন আপনার শর্তাবলী কি?


মাতা পার্বতী বলেন :- (প্রথম শর্ত)- গনেশকে পুনর্জীবিত করে দিতে হবে। (দ্বিতীয় শর্ত)- সকল দেবতা পূজার আগে কিন্তু গণেশের পূজা হবে অর্থাৎ গনেশ পূজা ব্যতীত অন্য কোন দেবতা পূজা হবে না।


বিষ্ণু মাতা পার্বতীর শর্তাবলী মেনে নেওয়ার জন্য সকল দেবতাদের অনুরোধ করেন।


দেবতাগণ মহা সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য, মাতা পার্বতীর শর্তাবলী মেনে নেয়।


মাতা পার্বতী ধীরে ধীরে উগ্র রূপ থেকে শান্ত হতে শুরু করে।


বিষ্ণু সহ দেবতাগণ মহাদেবের কাছে ছুটে চলেন। মহাদেব তখন ধ্যানে বসে ছিলেন। বিষ্ণু সহ দেবতাগণ মহাদেবের সমষ্টিকরণ স্তবাদি শুরু করেন।


মহাদেব ক্রোধ সংবরণ করে শান্ত গলায় বলেন বলুন আপনারা কি অভিপ্রায় নিয়ে আমার কাছে এসেছেন?


মাতা পার্বতীর ঘটনাবলী বলা শেষ করে বিষ্ণু বলেন :- দেবাদিদেব মহাদেব, আপনার অনুমতি না নিয়ে মাতা পার্বতীর শর্তাবলী মেনে নেওয়া হয়েছে। শর্তাবলী নিয়ম অনুসারে গনেশকে পুনর্জীবিত করতে হবে কিন্তু একমাত্র আপনি করতে পারেন।


ব্রহ্মার উদ্দেশ্য করে মহাদেব বলেন :- উত্তর দিকে গিয়ে প্রথম যে জীবের সাথে দেখা হবে তার মাথা নিয়ে আসতে হবে।


ব্রহ্মা তার দলবল নিয়ে উত্তর দিকে ছুটে চলেন এবং একটি হাতির সাথে দেখা হয়। হাতির মাথা কেটে হত্যা করে হাতির মুন্ডু নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে গণেশের খন্ডিত দেহের সাথে লাগিয়ে তার কুমন্ডল থেকে জল ছিটিয়ে দিতে থাকে। কিছু সময়ের মধ্যেই গণেশ হাতির মাথা নিয়ে নড়েচড়ে ওঠে। 


মাতা পার্বতী দ্রুত গণেশের নিকট এসে বুকে জড়িয়ে ধরে কিন্তু গণেশের সুন্দর মুখের পরিবর্তে হাতির মুখ দেখে অন্তরে ব্যথা অনুভব করে।


ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও দেবতাদের অনুরোধে হর হর মহাদেব গণেশ কে তার সন্তান হিসাবে স্বীকার করে নিয়ে জগতের মাঝে দেবতাদের পূজার আগে গণেশের পূজার প্রবর্তন করেন।

-----------------------------------------------------



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics