সংকল্প
সংকল্প
বছর শেষ হতে আর মাত্র ক’দিন বাকি। প্রত্যন্ত গ্রামের এই স্কুলে চাকরি করতে আসা অর্জুনের প্রাণটা তাই ছটফট করে বাড়ি যাওয়ার জন্য। কিছুতেই সে মানিয়ে নিতে পারেনা গ্রামের এই অশিক্ষিত লোকগুলোর সঙ্গে।
স্কুলে ঢোকার মুখে অর্জুন দেখতে পেলো বৃদ্ধ টুনু সোরেন ঝাঁকায় করে মাটি বয়ে নিয়ে যাচ্ছে মাঠ থেকে। এটা তো ঘর সারানোর সময় নয়, তাহলে মাটি নিয়ে যাচ্ছে কেন! নিছক কৌতূহল বশেই ডেকে উঠল অর্জুন, “ও কাকা মাটি নিয়ে কি করবে?”
শহুরে মাস্টারবাবুর প্রশ্নে বিগলিত টুনু সোরেন ঝাঁকা নিয়ে এগিয়ে এলো অর্জুনের কাছে, তারপর পান চেবানো দাঁতগুলো বের করে বললো, “ব্যাটার বিয়া দিব গো বাবু তাই বাদদুম বানাইবার লগে লিয়ে যাচ্ছি এগুলান। মোর ঘরের বউ এর অবস্তা ওই রামের বৌয়ের মত কিছুতেই হতে দিবক লাই বাবু, কিছুতেই না…”
বৃদ্ধের কথায় চমকে উঠলো অর্জুন। কিছুদিন আগেই কানে এসেছিল গ্রামের এক পুত্রবধূ ভোররাতে প্রাত্কৃত্য করতে জঙ্গলের ধারে গিয়ে রোষে পড়েছিল কোনো এক নরপিশাচের।
এই গ্রাম্য বৃদ্ধ জানেনা নিউ ইয়ার রেজলিউশন কাকে বলে কিন্তু আজ তার চোখের কোণে অর্জুন দেখতে পেলো এক অসম্ভব দৃঢ়তা, নতুন বছরের সঙ্গে সঙ্গে পুরাতন ধ্যানধারণাকে বিসর্জন করে নতুন ভাবে বেঁচে থাকার সংকল্প। একটা হিমেল হওয়া বয়ে গেল ওর শরীরের ওপর দিয়ে, আর কানে কানে প্রশ্ন করে গেল, “মাস্টারবাবু কি পারেনা এই মানুষগুলোর নতুন পথটাকে আরেকটু আলোকিত করতে?”
শেষ।