Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Debdutta Banerjee

Drama

0.6  

Debdutta Banerjee

Drama

স্নেহছায়া

স্নেহছায়া

6 mins
1.8K



শিম্পাঞ্জি.... একটা জ‍্যান্ত শিম্পাঞ্জি। চিড়িয়াখানা থেকে শিওর পালিয়ে এসেছে। জ‍্যাঠুকে দেখে দিয়ার এই কথাটাই প্রথম মনে এসেছিল। 

মা আর বাবা এ কোন আতান্তরে ফেলে গেল ওকে !! ভগবান ওকে বাঁচিয়ে রেখে কি শাস্তি ঠিক দিতে চাইছে কে জানে। বাবা মা বেঁচে থাকতে এই জেঠুকে কখনো চোখেই দেখেনি দিয়া। সারাজীবন গল্প শুনেছে ওর এক বড়লোক দাম্ভিক জেঠু রয়েছেন সোনারপুরের কাছে। বাবাকে নাকি এই জেঠুই কঠোর শাসনে মানুষ করেছিলেন। মা কে বাবা নিজের পছন্দে বিয়ে করায় জেঠু ওদের মুখ দেখেননি গত কুড়ি বছর। দিয়ার জন্মের খবর শুনেও দেখতে আসেননি। কিন্তু মা বাবার হঠাৎ দুর্ঘটনায় মৃত‍্যুর পর সতেরো বছরের নাবালিকা দিয়ার দায়িত্ব এখন জেঠুর। কি সব ভজঘট নিয়ম। গম্ভীর লোকটাকে দেখলে একমাত্র শিম্পাঞ্জির কথাই মনে পড়ে। কি বিশাল শরীর, ঘন লোমে ঢাকা, কুতকুতে চোখ, বেবুনের মত মুখ। আর কি ঠান্ডা চাহনি। যেন এক্সরে মেশিন দিয়ে শরীরের সব কটা হাড় ও মেপে নিচ্ছেন। 

কিন্তু বিধাতা দিয়ার কপালে ঐ জেঠুর কাছেই থাকা লিখেছিল। নিকট আত্মীয় আর কেউ নেই। মা ছিল অনাথ। দিয়াও অনাথ হল ওদের হারিয়ে।


পরশু শর্ট ফ্রকটা পরে একটু গড়িয়া যাবে বলে বেরোতে গেছিল। গম্ভীর গলায় শুধু একটা প্রশ্ন এসেছিল -'' কোথায় চললে ? এটা কি পোশাক ?''

-''একটু পুরানো পাড়ায় যাবো। '' শরীরের ও মনের সব জোর একত্রিত করেও দিয়া এই চারটে শব্দই বলতে পেরেছিল। 

-''আমি নিয়ে যাচ্ছি, বলাই গাড়ি বের কর। তুমি ড্রেসটা বদলে এসো।''

ধূর, ও পাড়ায় এই শিম্পাঞ্জির সাথে গিয়ে কি করবে দিয়া। কলেজেও যেতে হয় বাড়ির গাড়িতে। বলাই যেন ওর বডিগার্ড হয়েছে। কলেজের গেটেই দাঁড়িয়ে থাকে। তাই কলেজ থেকে কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। 

কাল ছিল নিশানের বার্থডে পার্টি, সাউথ সিটি মলে। কিন্তু এই শিম্পাঞ্জির নজর এড়িয়ে যেতে পারেনি দিয়া। সেদিন বলেছিল একবার বান্ধবীদের সাথে মুভি দেখতে যাবে, এভেঞ্জারস, এন্ড গেম। বুড়োটা এমন ভাবে তাকালো.... বুকের রক্ত জল হয়ে যায় দিয়ার। তারপর সেই ব‍্যরিটোন ভয়েসে বলল -''আমি নিয়ে যাবো অন‍্য একদিন।''

শিম্পাঞ্জির সাথে মার্ভেলের মুভি!!

অসম্ভব!!

নিশানের পার্টির ছবি আর ভিডিও দেখে নিজের ঘরে বসে চোখের জল ফেলেছিল দিয়া আর শিম্পাঞ্জিটাকে মনে মনে অভিশাপ দিয়েছিল। 

এতো নিয়ম পদে পদে মানা যায় নাকি? এ যে জেলখানার ও বেশি চাপ। এটা পরবে না, ওটা খাবে না, একা যাবে না।

আর খাওয়া দাওয়া !! ঐ বাহাত্তুরে বুড়ো ভুলেই যায় ও একটা সতেরো বছরের মেয়ে। ঐ সব উচ্ছে, নিম বেগুন, শুক্তো আর পাতলা মাছের ঝোল খাওয়ার জন‍্য বহুদিন পরে রয়েছে। এদিকে কি বাজে সব রান্না, জল খাবারে রোজ লুচি, পরোটা, মিষ্টি, পায়েস। দু দিনে মোটা হয়ে যাবে ও।এখন ওর নিয়ম ভাঙার দিন। 

 

কলেজ ক‍্যান্টিনে তাই তো ও এই গরমে সেদিন এগারোটা আইসক্রিম খেয়ে ফেলেছিল। তার ফল যে এত মারাত্মক হবে ও বোঝেনি। বাড়ি ফিরেই শরীরটা বেশ খারাপ লাগছিল, সাথে গলা ব‍্যাথা। খিদে নেই। তারপর হয়েছিল বমি। শিম্পাঞ্জিটা সবে জ্ঞান দিতে শুরু করেছিল, এই প্রথম চিৎকার করে উঠেছিল দিয়া -''আমার ব‍্যাপারে নাক গলানো বন্ধ করুন। নয়তো আমি পালিয়ে যাবো এই জেল থেকে। এর চেয়ে যাবদজীবন কারাদন্ড ও ভালো। উফ, এতো শাসন কেন করেন আপনি ? বাবা পালিয়ে বেঁচেছিল এখন বুঝি। " মাথাটা টলে উঠেছিল জ্বরের ঘোরে।

এরপর দু দিন প্রায় বেহুঁঁশ ছিল ও। মনে হচ্ছিল মা মাথা ধুইয়ে দিচ্ছে, বাবা কপালে জলপট্টি করছে। সেই সব চেনা স্পর্শে আরামে ঘুমিয়ে গেছিল ও। চোখ মেলে প্রথমেই বুঝতে চেষ্টা করছিল এটা কোন জায়গা, বেশ অপরিচিত। আস্তে আস্তে বুঝতে পেরেছিল, জেঠুর ঘর!! জেঠুর বিছানা। আর ঐ তো আরাম কেদারায় বসে আছে বৃদ্ধ লোকটা। ও চোখ মেলতেই ছুটে এসেছিল , কপালে হাত রেখে প্রশ্ন করেছিল -'' এখন কেমন লাগছে ? শরীরটা একটু ভালো তো ?''

না, এই গলাটা তো ঠিক শিম্পাঞ্জির মত নয়। বাবার মত। চোখ বন্ধ করে বাবার চেনা গন্ধটা খোঁজে দিয়া। অনেকটাই বাবার মতো। চোখ খুলতে ইচ্ছা করে না আর। 

দু দিন পর আজ উঠে বসেছে দিয়া। গরম গরম চিকেন স্টু টা মন্দ লাগছে না, দুপুরে খিচুরির সাথে বেগুন ভাজা পেয়ে মনটা ভালো হয়ে গেছিল। বিকেলে জেঠু নিজে হাতে আপেল কেটে খাওয়াচ্ছিল। কিন্তু দিয়া জানে ও সুস্থ হলেই বৃদ্ধ আবার শিম্পাঞ্জির মত হয়ে যাবে। হঠাৎ করে খুব রাগ হয় ওর।

বৃদ্ধ বেদানাটা ছাড়াতে ছাড়াতে বলে -''এই রবিবার এভেঞ্জারসটা দেখতে যাবো বলে বলাইকে টিকিট কাটতে বলেছি। তার আগে সুস্থ হয়ে উঠতে হবে। ''

রাগে গাটা জ্বালা করে ওঠে দিয়ার। নিশানের বার্থডের ছবি গুলো ভেসে ওঠে চোখের সামনে। বলে -''আমি তো সুস্থ হতে চাইনি। আমি মরে গেলেই ভালো হত। কি লাভ এই জেল খানায় বেঁচে থেকে?''

বৃদ্ধ তাকায় ওর দিকে। আস্তে আস্তে রূপ বদলাচ্ছে। শিম্পাঞ্জির মত হয়ে যাচ্ছে অবয়বটা। 

ফলের প্লেটটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে টলমল পায়ে উঠে দাঁড়ায় দিয়া, বলে -"আর এক সপ্তাহ পর আমার জন্মদিন। আমি আঠারোর হবো। সেইদিন আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। কোনো হোমে থাকবো, হোষ্টেল খুঁজে নেবো। তবু এখানে নয়। '' 

শিম্পাঞ্জির মুখটা ভেঙ্গে চুপসে যাচ্ছে। বেশ হয়েছে। দিয়ার মাথাটা ঘুরে যায়, খাটের স্ট্রান্ডটা ধরে ও বলে -'' লাইফটা হেল হয়ে গেলো, এটা করো না, ওটা করো না শুনতে শুনতে। আমি বাবা মায়ের বাধ‍্য ছিলাম। কখনো এমন কঠোর শাসন করেনি ওরা। আমি স্বাধীন ছিলাম। আমি মুক্তি চাই। ''

ঘরটা দুলে ওঠে । বৃদ্ধ বুক চেপে বসে পড়ে খাটের ধারে। পড়েই যাচ্ছিল যদি দিয়া না ধরত। এই প্রথম জিয়ার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে একটা চিৎকার -''জেঠুউউউ!!"


নিতাইয়ের মা, বলাই আর শম্ভু কাকা দৌড়ে এসেছিল। তক্ষুনি ধরাধরি করে বাড়ির পাশের নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হলো।কার্ডিয়েক আ্যরেষ্ট। তবে সঠিক সময়ে ডাক্তাররা ইনজেকশনটা দিতে পেরেছিল। হঠাৎ করে দিয়ার নিজেকে অপরাধী মনে হয়। অশক্ত শরীরে জোর করে বসে থাকে নার্সিহোমে। 

হঠাৎ কানে আসে নিতাইয়ের মা বলছিল -''হবে নি? কয়েক রাত ঘুম নাই চোক্ষে। দিয়া দিয়া কইরাই মলো। এই জল ঢালতাসে মাথায় তো এই পট্টি করতাসে। সারাক্ষণ বসা। ওষুধ পথ‍্যি নিজের খাওয়া সব বন্ধ। গত কুড়ি বছরে যে ভাই একবার খোঁজ নেয় নাই তার জন‍্য হা হুতাস কইরাই মলো। এবার জুটসে ভাইঝি....।''

দিয়া শুধুই শ্রোতা। 

বুড়ি আপন মনে বলে চলেছে -''ভাই ভাই কইরা বিয়া করল নি মানুষটা। এখন ভাইঝির জন‍্য আইজ এই অবস্থা। জীবনে ভাতে ভাত যে কোনোদিন করল নি সে মাংসর স‍্যুপ বানাইতাসে। আমি যারে সারা জীবন ফল কাইটে দি সে ভাইঝিকে ফল কাইটে খাওয়াইতাসে। আমরা নাকি পারবো নি। আর কত দেখবো!!''


-'' বেড নম্বর ৪০৫ এর বাড়ির লোক '' এনাউন্স শুনে দিয়া ছুটে যায়। 

ডাক্তার বলেন -''আপাতত সামলে নিয়েছি। কিন্তু অনেক নিয়ম মেনে চলতে হবে। খাওয়ার বেশ কিছু রেষ্ট্রিকশন আছে, ডায়েটিশিয়ান বলে দেবেন। ব‍্যায়াম আছে কিছু। আর রোজ সকালে হাঁঁটতে হবে। সিগারেট ছাড়তে হবে।'' দিয়া মাথা নেড়ে সব শুনে নেয়। 

দু দিন পর ছুটি পেয়ে বাড়িতে এলেন দিয়ার জেঠু। শোওয়ার ঘরে ঢুকেই হাঁক পারলেন।-''বলাই, আমার সিগারেট ? আর নিতাইয়ের মা আমায় কড়া করে এক কাপ কফি দাও। দুপুরে আজ বড় পাকা পোনার ঝোল খাবো। ''


এক ঝুড়ি ফল আর স‍্যুপের বাটি নিয়ে ঘরে ঢোকে দিয়া। জেঠুকে বিছানায় শুইয়ে বলে -''সিগারেট একদম বন্ধ। আর কফিও চলবে না। আপাতত এই ভেজ স‍্যুপ, আমি নিজেই বানিয়েছি তোমার জন‍্য। দুপুরে ছোট মাছের ঝোল হচ্ছে। আজ থেকে আমার বানানো নিয়মে চলতে হবে বুঝেছো। ''

বৃদ্ধ কথা বলতে ভুলে গেছেন। তাকিয়ে রইলেন দিয়ার দিকে। কিন্তু এ দৃষ্টি স্নেহের, অপত‍্য স্নেহ ঝরে পড়ছে দু চোখ দিয়ে। 

-''আর এই ওষুধগুলো নিয়ম করে খেতে হবে এবার থেকে। মুখ খোলো দেখি ?'' হাতে দুটো ক‍্যাপসল আর জল নিয়ে দিয়া বলে। 

-''এমন যত্ন পেলে আমি চিরজীবন শুয়েই থাকতে চাইবো রে।'' দিয়া দেখে তার শিম্পাঞ্জির চোখে জল। ওষুধ খাইয়ে হেসে ফেলে ও। বলে -''যতই বলো, ওটা হচ্ছে না। পরের সপ্তাহে তোমায় নিয়ে এভেঞ্জারস দেখতে যাবো । টিকিট কাটবো আজ অন লাইনে। সুতরাং সেরে ওঠো চটপট।''

দু জনেই হেসে উঠে। বহুদিন পর সোনার পুরের বাড়িটা দেখল সব নিয়মের বাইরে গিয়ে দু জন অসমবয়সি কি সুন্দর বন্ধু হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে।




Rate this content
Log in

More bengali story from Debdutta Banerjee

Similar bengali story from Drama