সন্ধি
সন্ধি
(১ম পর্ব)
সন্ধি পূজা দর্শনের ইচ্ছাটা কেমন যেন প্রবল হয়ে উঠল এবার। তাই অনেক বছর পর, পাড়ার পূজামণ্ডপে এবার হাজির হোল অবিনাশ। ধূপ, ধুনা আর ফুলের গন্ধে সুবাসিত, সুসজ্জিত মণ্ডপ, আজও যেন তেমনি আছে যেমন ছিল বছর বিশেক আগে। শুধু একটু বদলে গেছে মণ্ডপের সাজসজ্জা আর আলোর ব্যবহার। এল. ই. ডি. লাইট-এর যুগ, টিউব লাইটরা নিয়েছে বিদায়। মণ্ডপের ভিতর ফ্যানের বদলে শোভা পাচ্ছে বেশ কয়েকটা বড় বড় কুলার।
কিছু বয়স্ক ভদ্রলোক ও মহিলারা আগে থেকেই সামনের চেয়ারগুলো দখল করে বসে রয়েছেন, পিছনের চেয়ারগুলো বেশিরভাগই খালি। তবে সেখানে বাচ্চাদের রাজত্ব। কার ক্যাপের আওয়াজ কত বেশি এবং কার বন্দুকটা কত বড় – এসব নিয়ে চলছে ওদের বিরামহীন, জোরালো বিতর্ক।
পূজাবেদিতে পুরোহিত মশায় তাঁর পূজার উপকরণ সাজিয়ে নিচ্ছেন। দু’একজন তাঁকে সাহায্য করতে ব্যস্ত। বাইরে বর্ষিত হচ্ছে অকালের অবিরাম বারিধারা। তাই আজ সকালে মণ্ডপে লোক সমাগম কম। অবশ্য তা একদিক থেকে ভাল, কারণ এত বৃষ্টির মধ্যেও, কুলার চালিয়েও মণ্ডপের ভিতরে গরম কম নয়।
আজকাল ভিড়ভাট্টা বা উচ্চকিত শোরগোল, কোনটাই আর অবিনাশের তেমন ভাল লাগে না । অল্প ঘাম এলেই মাথাটা কেমন ঘোরে, তাই সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সন্ধি পূজা দেখার ইচ্ছাটা ত্যাগ করে, পিছনে বসাটাই তার শ্রেয় মনে হোল। একটু পিছনেই একটা কুলারের সামনে, একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পড়ল অবিনাশ।
দু'টি চোখ বন্ধ করে সে মা দুর্গার সেই স্বর্ণময়ী, পীতবস্ত্রা রূপটি স্বরণ করার চেষ্টা করতে লাগল। কতটা সময় এভাবে কেটেছে কে জানে? হঠাৎ মনে হল চণ্ড ও মুণ্ড যেন পিছন থেকে এসে মা দুর্গাকে আক্রমণ করল। ক্রুদ্ধা মাতার তৃতীয় নয়ন যেন উন্মোচিত হল, তাঁর সেই নীলাভ অবয়ব থেকে যেন উদ্গতা হলেন দেবী চামুণ্ডা – শীর্ণা অস্থি-চর্মসার কলেবর; দীর্ঘ দন্তা; নীল পদ্মের ন্যায় গাত্র বর্ণ; হস্তে অস্ত্র, দণ্ড ও চন্দ্রহাস; পরিধানে ব্যাঘ্রচর্ম। পূজাবেদি থেকে যেন ছুটে বেরিয়ে গেলেন পৃথিবীর সর্ব অঙ্গার দূরীকরণে উন্মত্তা এক নারীমূর্তি। ঠিক সেই মুহূর্তে অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণের আগমন বার্তা জ্ঞাপন করতে বেজে উঠল ঢাক।
(২য় পর্ব)
চোখ খুলে অবিনাশ দেখল ভীড় একটু বেড়েছে। একটি তরুণ আর একটি তরুণী কাছেই দুটি চেয়ারে বসে নিজেদের মধ্যে গল্পে মশগুল। অবিনাশের উপস্থিতি ওদেরকে বোধহয় নামমাত্রও উদ্বিগ্ন করছে না। যুগ পাল্টে গেছে। তরুণটি বলল – এইসব পূজা টুজা আমার একেবারে ধাতে সয়না। এক সুন্দর তির্যক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে, তরুণীটি জিঞ্জাসা করল – তবে এলি কেন? তরুণের পাল্টা প্রশ্ন – তুই জানিস না? অতঃপর তরুণীর কটাক্ষ – মেয়ে দেখতে? তরুণ জানাল – শুধু একটা মেয়েকে দেখতে। সেটা হচ্ছিস তুই। উড়িয়ে দেবার ভঙ্গীতে তরুণী সুর করে বলে উঠল – আ-হা-হা-হা...
ওদের কথোপকথন শুনতে শুনতে অবিনাশ যেন পৌঁছে গিয়েছিল প্রায় পঁচিশ বছর পিছনে। বেশ উপভোগ্য লাগছিল দুই আধুনিক তরুণ তরুণীর সংলাপ। তরুণটি বোধহয় ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে বেকার, তরুণীটি স্নাতকোত্তর কোন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরিক্ষা দিতে চলেছে। অর্থাৎ দু'জনেই পায়ের নীচে শক্ত মাটি খুঁজছে। আবার তার সাথে সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্নেও বিভোর। অবিনাশের একবার মনে হোল ওদের সতর্ক করে দেয়া প্রয়োজন। অবিনাশের একবার মনে হোল ওদের বলে, স্বপ্ন দেখার আগে স্বনির্ভর হও। কিন্তু আবার মনে পড়ল – আমাদের দেশে স্বনির্ভর হবার পর আর স্বপ্ন দেখার সময় থাকে না...
যথা সময় ঢাকের বাদ্যি সন্ধি পূজার সমাপ্তি ঘোষণা করল। এবার প্রণামীদান ও প্রসাদ গ্রহণপূর্বক ঘরে ফেরার পালা। সামনের চেয়ারে বসা লোকগুলো এক এক করে প্রসাদ হাতে অবিনাশের পাশ দিয়েই বেরিয়ে যেতে লাগল। ওদের সবাই স্থানীয় ও পরিচিত হওয়ায় দু’এক জনের সাথে একটা দুট কথাও হোল তার।
ওই তরুণ তরুণী স্থান পরিবর্তন না করলেও, এত লোকের শোরগোলের মাঝে, ওদের কথা আর ভাল করে শোনা যাচ্ছে না। হঠাৎ ভীড়ের ভিতর থেকে এক শুভ্রবসনা নারী একটি বালকের হাত ধরে তার (বালকের) ইংরাজীতে শুধান প্রশ্নের উত্তর বাঙলায় দিতে দিতে এগিয়ে এল। অবিনাশ স্পষ্ট শুনতে পেল, ছেলেটা তার মাকে জিজ্ঞাসা করছে – মম, ডু ইউ থিঙ্ক দ্যাট দ্য গড হ্যস হার্ড এভরিওয়ান’স প্লী? মা ছেলেটাকে বলল – দেবী দুর্গা সবাইকে জীবন যুদ্ধে জয়ী হবার শক্তি দেন। ছেলেটা আবার প্রশ্ন রাখল – বাট, ইফ এভরিওয়ান ইস হার চাইল্ড, হোয়াই ডু দে নীড এক্সট্রা পাওয়ার টু উইন দেয়ার স্ট্রাগলস? মা’র উত্তর – মানুষকে সংগ্রাম করেই লক্ষ্যে পৌঁছতে হয়, এটাই জীবনের নিয়ম।
(৩য় পর্ব)
সন্তানের হাত ধরে সেই নারী আরও একটু কাছে আসতেই চমকে উঠল অবিনাশ। প্রায় নিজের অজান্তেই, অস্ফুট স্বরে তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল একটা অদ্ভুত ডাক – সাথী... এ কি বেশ তোমার? শুভ্র বসনা সাথী ক্ষীণ স্বরে জবাব দিল – মোহ তো চিরদিন থাকেনা। একদিন না একদিন জীবনের সব রঙ মিলে গিয়ে সাদাই -তো হয়ে যায়, অবিনাশদা।
ইতিমধ্যে ছেলেটার প্রশ্ন আবার শুরু হোল। মম হু ইস দিস আঙ্কেল? ইস হি দ্যট এঞ্জেল হু লিভস ইন ইন্ডিয়া? তার মা’র উত্তর – হাঁ, সত্যি সত্যিই এক এঞ্জেল। আমার অনেক পুরান বন্ধু।
অবিনাশ কি বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছিল না। তবু কিছুতো বলতে হয়ই। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে সে বলল – কি হয়েছিল প্রত্যুষের? সাথীর সংক্ষিপ্ত উত্তর – এইডস। বুকের মধ্যে কেমন যেন একটা ব্যাথা মোচড় দিয়ে উঠল অবিনাশের। কাঁপা কাঁপা গলায় সে জিজ্ঞাসা করল – তবে কি প্রত্যুষ তোমার সাথে থাকতনা! ঠোঁট কামড়ে সাথী বলল – যেদিন বাইরের সঙ্গীনিরা ব্যস্ত থাকত সেদিন থাকত ঘরে। আমেরিকাতে অনেক ইন্ডিয়ান মেয়ের-ই এই অবস্থা। কেউ বলে, কেউ বলে না।
একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল অবিনাশের। একবার মা’র মুখের দিকে চেয়ে নিয়ে, ছেলেটা এবার তার দিকে এগিয়ে এসে তার হাতটা ধরে বলল – এঞ্জেল, হোয়েন উইল ইউ কাম টু আওয়ার হোম? এখানে আর বেশি কথা বাড়ালে যে একটা বাজে ‘সিন ক্রিয়েট’ হবে, অবিনাশ তা বেশ বুঝতে পারছিল। সম্ভবত ওই ছোট্ট ছেলেটাও সেটা অনুভব করতে পারছিল। নীরবতা ভেঙে অবিনাশ জিজ্ঞাসা করল – হোয়াট’স ইওর নেম? ছেলেটা বলল – আই এম পিকু। অবিনাশ বলল – ইফ আই কাম টু সি ইউ এট সেভেন পি. এম. টুডে, উইল দ্যট বি ওকে পিকু? পিকু মুখে একটা হাল্কা হাসির ঝলক এনে বলল – সিওরলি এঞ্জেল।
(৪র্থ পর্ব)
সাথীর সাথে অবিনাশের এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল স্কুলজীবন থেকেই। এ কথা সেসময় পাড়ার কারোরই অজানা ছিল না। সাথীর বাবা বঙ্কিম বাবুরও সেই অবাধ মেলামেশায় ছি
ল না কোন আপত্তি। মা-হারা মেয়েটা একটা ভাল ছেলের সাথে মিশছে, এতে আপত্তি জানানোর কি বা আছে? মনে মনে বঙ্কিম বাবু একটু কনফিডেন্টই বোধ করতেন, কারণ তিনি অবিনাশকে ভাল করেই জানতেন এবং এক প্রকার নিজের ছেলের মতই ভালবাসতেন।
কিন্তু শেয়ার মার্কেটের দালাল বঙ্কিম বাবুর স্বপ্নসমূহ চিরকালই অনেক ঊর্ধ্বাকাশে বিচরণ করত। তাই যখন তিনি এক ক্লায়েন্টের মাধ্যমে আমেরিকা প্রবাসী প্রত্যুষের সন্ধান পান, তখন এন. আর. আই. জামাই পাবার লোভ সম্বরণ করতে পারেননি। অবিনাশ তো তখন এক বেকার ইঞ্জিনিয়ার। যতই মেধাবী হোক না কেন – পকেট তো তার গড়ের মাঠ।
নিজের আত্মহত্যার ভয় দেখিয়ে, বঙ্কিম বাবু সাথীকে রাজী করিয়েছিলেন প্রত্যুষকে বিয়ে করতে। বাবার জোর জবরদস্তিতে সাথী নিজেই অবিনাশকে জানিয়ে দিয়েছিল – প্রেম করলেই বিয়ে করা যায়না। বিবাহিত জীবন চালানোর জন্য লাগে পয়সা। তাদের বাড়ীতে সে আর অবিনাশকে দেখতে চায়নি। দালাল বঙ্কিম বাবু কিন্তু ভাল মানুষটি সেজে বিয়ের যাবতীয় বাইরের ছোটাছুটির কাজই অবিনাশের ঘাড় দিয়ে তুলে নিয়েছিলেন।
(৫ম পর্ব)
মানুষ যাই করুক না কেন, ওপরে একজন সবকিছুতেই নজর রাখেন। এক মেয়ে সাথী যে বিবাহিত জীবনে সুখি হয়নি, এ কথা বঙ্কিম বাবু কিছুদিনের মধ্যেই জানতে পারেন। মনের দুঃখে সেই ধুরন্ধর দালাল মানুষটি একেবারেই কুঁকড়ে যান। নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ কিংবা একান্ত ঠেকায় পরে একদিন তিনি অবিনাশকে ডেকে পাঠান। সেই সময়ে তাঁর ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছে। পয়সার জোর থাকলে, অন্তত কিছুদিন মানুষের চিকিৎসা এবং দেখাশোনার অভাব হয়না। বঙ্কিম বাবুর সে জোর যথেষ্টই ছিল, তাই তাঁর চিকিৎসা এবং দেখাশোনা কোনটারই কোনরকম কমতি ছিলনা। কিন্তু হায়রে কপাল, এই পৃথিবীতে মুষড়ে পড়া মনের যে কোনোই চিকিৎসক আজও জন্ম নেননি।
বঙ্কিম বাবু নিজের দুর্বুদ্ধির সব কথা অকপটে স্বীকার করেন, এবং অবিনাশের কাছে অশ্রুসিক্ত নয়নে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। প্রত্যুষের দুশ্চরিত্র এবং দুষ্কর্মের কিছু কিছু কথা যা তিনি লোকমুখে জানতে পেরেছিলেন সেই সময়, তাও খুলে বলেন। অবিনাশ এই মৃত্যুপথযাত্রী মানুষটির চিকিৎসার সমস্ত তদারকি নিজের কাঁধে তুলে নেয়। মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অবিনাশ নিজের ছেলের মতই বঙ্কিম বাবুর দেখাশোনা করেছিল, এবং তাঁরই ইচ্ছায় তাঁর অন্তিম ক্রিয়াকর্মও সম্পন্ন হয় অবিনাশের হাতেই। অবশ্য অবিনাশকে জানিয়েই বঙ্কিম বাবু তাঁর অট্টালিকার ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’টা তার হাতেই তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন – এই আশা নিয়ে যে – যদি কোনদিন সাথী ফিরে আসে সে অন্তত বাস্তুহারা হবে না।
বঙ্কিম বাবুর অন্তিম কালে সাথী আসতে পারেনি, মানে তাকে আসতে দেয়া হয়নি। আমেরিকাতে নিয়ে গিয়েই প্রত্যুষ সাথীর পাসপোর্ট ও ভিসা লুকিয়ে রাখে, যাতে সে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনরকম পদক্ষেপ না নিতে পারে। বঙ্কিম বাবু জেনেই গিয়েছিলেন যে সাথীকে প্রত্যুষ কোনদিনই স্ত্রীর মর্যাদা দিত না, তার ঘরে চাকরানীর মত পরে থাকত সাথী। আর মার খেত কথায় কথায়। কিন্তু কি অদ্ভুত, বিয়ের পরে যা তিন চারটে চিঠি সাথী পাঠাতে পেরেছিল আমেরিকা থেকে, তার একটাতেও সে কিন্তু তার দুর্ভাগ্যের কথা জানায়নি বাবাকে। একবার একটা রেফারেন্স পেলেও, বঙ্কিম বাবু ডোমেস্টিক ভাওলেন্সের চার্জ আনতে পারতেন প্রত্যুষের বিরুদ্ধে। ও দেশে সেটা যে এক মস্ত অপরাধ। হায়রে ভারতীয় নারী, শুধু 'বাবার মনে কষ্ট দেবনা' বলে সারাজীবন নিজেই কষ্ট করে গেলি, কিন্তু কি লাভটা হোল?
(৬ষ্ঠ পর্ব)
নিজের হাতে 'পাওয়ার অব অ্যাটর্নি' থাকা সত্ত্বেও বঙ্কিম বাবুর দেহান্তের পর থেকে অবিনাশ আজ পর্যন্ত সাথীদের বাড়ীতে ঢোকেনি। তাঁর বাৎসরিক কাজগুলোও সে গঙ্গার তীরেই সেরে নেয়। সাথীর বিবাহের ঠিক পরেই অবিনাশ নিজের ফ্যাক্টরি খুলে, কিছু অর্ডার সাপ্লাই-এর কাজ শুরু করেছিল। ঈশ্বরের আশীর্বাদে আজ তার আমদানি ভালই, তার ওপর সে এক নেশাহীন, অকৃতদার। সুতরাং অর্থনৈতিক দিক থেকে আজ সে এ পাড়ার একজন নাম করা উচ্চবিত্ত। নিজের ফ্যাক্টরি-অফিসের একজন স্টাফ কে সে পারমানেন্টলি লাগিয়ে রেখেছে এই বাড়ীর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। বঙ্কিম বাবুর গচ্ছিত সম্পত্তি সাথীর হাতে তুলে দিতে পারলেই যেন তার পরম শান্তি। সাথীর আসার সংবাদ, সে বাড়ীতে রাখা কেয়ারটেকার বিষ্ণুর মাধ্যমেই পেয়েছিল। কিন্তু কিভাবে তার সামনে হাজির হবে, তা ঠিক করে উঠতে পারছিল না। যা হোক, আজ মা চামুণ্ডাই একটা রাস্তা করে দিয়েছেন। পিকুর আহ্বানত আছেই।
ঠিক সাতটার সময় সাথীদের বিশাল বাড়ীর সামনে হাজির হোল অবিনাশ। পিকু জানলায় দাঁড়িয়ে ছিল। দেখতে পেয়ে ছুটে এসে দরজা খুলে, তাকে হাত ধরে ওপরে নিয়ে এল। বিশাল ড্রইংরুমের এক কোণায় ডাইনিং টেবিল, তারই ওপর কনুইগুলো রেখে দুই হাতের তালুতে মুখ গুঁজে চেয়ারে বসে আছে সাথী। পিকু অবিনাশের হাত ছেড়ে আর একটা চেয়ার টেনে ডাইনিং টেবিলেই সেট করে দিল, তারপর বলল – প্লিস টেক ইয়োর সিট আঞ্জেল। অবিনাশকে বসিয়েই পিকু ছুটে কোথায় উধাও হয়ে গেল।
এক ঘর ভরা নীরবতার মাঝে, বিশাল ডাইনিং টেবিলের দুই ধারে অবিনাশ আর সাথী – একে অপরের চোখে চোখ রেখে বসে আছে। মুখে নেই কোন ভাষা। অথচ তিরিশ বছর আগে এই টেবিল কেঁপে উঠত ওদের চিৎকারে আর হাসিতে। তবে কি সত্যিই সময় মানুষকে নীরবতা শেখায়!
বেশ কিছুক্ষণ পরে নীরবতা ভেঙে অবিনাশ জিজ্ঞাসা করল – ক’দিনের ছুটি? সাথীর জবাব – চিরদিনের... বিস্মিত অবিনাশ প্রশ্ন করল – মানে? সাথী বলল – আর ফিরব না।
একটু চিন্তা করে অবিনাশ বলল – কিন্তু পিকুকি এই দেশের এই পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে? সাথীর সংক্ষিপ্ত উত্তর – ও ইন্ডিয়া কে ভালবাসে। অবিনাশ জিজ্ঞাসা করে – আর তুমি, এতকাল ওখানে থাকার পর... তার কথা কেটে দিয়ে সাথী বলে – আমি তো ওদেশে যেতে চাইনি একবারও।
অবিনাশ জানতে চাইল – পিকুর বয়স কত? সাথী বলল – সাত চলছে, ওকে স্কুলে ভর্তি করতে হবে। আমার কাছে কোন পেপার নেই, আর ওর বাবার নামও আমি বদলাতে চাই। অবিনাশ বলল – পিকু কি আমায় মেনে নেবে? সাথীর উত্তর – ও তোমার আমার সব কথাই জানে। আর এটাও জানে যে এখন থেকে তুমিই আমাদের গার্জেন। বাকীটা তোমার ওপর...
অবিনাশ কিছু বলার আগেই, হঠাৎ কোথার থেকে ড্রেস-আপ করে, পিকু ছুটে এল। এসেই সাথীকে বলল – ও মম, ইউ আর নট ইয়েট রেডি! প্লিস হারী আপ। তারপর অবিনাশকে জড়িয়ে ধরে বলল – আঞ্জেল, ওন্ট ইউ টেক আস টু শো দ্য দুর্গা পূজা ফেস্টিভাল ইন ক্যালকাটা? নিজের অজান্তেই অবিনাশের মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল – সিওরলি, মাই চাইল্ড। আই উইল ডু মাই বেস্ট ফর ইউ...
+++++সমাপ্ত+++++