SATYABRATA MAJUMDAR

Tragedy Classics Inspirational

5  

SATYABRATA MAJUMDAR

Tragedy Classics Inspirational

স্মরণীয় ইতিহাস

স্মরণীয় ইতিহাস

2 mins
562



গল্পের শিরোনাম :-" স্মরণীয় ইতিহাস "

গল্প লেখনী :-ডা: সত্যব্রত মজুমদার

তারিখ :-১৩//০৭/২০২২

---------------------- 


স্মরণীয় ইতিহাস 


ডাঃ সত্যব্রত মজুমদার 


ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে

 অবিভক্ত বাংলার যে বীর বীরাঙ্গনাদের দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করে গিয়েছিলেন, সেই আত্মবলিদানের ইতিহাসে উজ্জ্বল নক্ষত্র রূপে থাকলেন, বিপ্লবী বীনা দাস, শান্তি দাসগুপ্ত, নীনা দাসগুপ্ত, এবং আরো অনেক বঙ্গনারী ব্রিগেড বাহিনী, চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের এই মরনপণ লড়াইয়ে সামিল হয়েছিলেন এই বীর নারীদের সাথে হেমাচন্দ্র কানুন-গো, হরিনারায়ণ চন্দ্র, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, উল্লাসকর দত্তের মতন বিপ্লবীগণ ।

এইসব বিপ্লবীদের রক্তঝরানো, এবং জীবনপণের চরমপন্থী আদর্শের লড়াইয়ের মাঝে নিজের ছোট্টো জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞানে শহিদ হয়েছিলেন শান্তিদাশগুপ্তের ছোটোবোন মাত্র একুশ বছরের তরতাজা প্রাণের নীনা দাশগুপ্ত, যার কথা এই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে কিছুটা অন্তরালেই থেকে গেল আমাদের মাঝে ।


সেই সময়ের পরাধীন ভারতের এই বাংলার যে সব পরিবার এই স্বাধীনতা সংগ্রামে রক্তক্ষয়ি চরমপন্হী আদর্শে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাদের মধ্যে সুকঠিন মনোবলের, সুবক্তা, শিক্ষিত, যুক্তিবাদি শান্তিদাশগুপ্তের পরিবারের সকল ভাইবোন ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এই মহতি কর্মে। শান্তিদাশগুপ্তের আদরের ছোটোবোন, নীনা, ছেলেবেলা থেকেই, আদরের ছোটো বোন, প্রখরবুদ্ধিমতি, ডানপিটে, লেখাপড়া সহ সংগীতে প্রতিভাবান ছিলেন, সেই সময়েই, বাড়ির আদর্শের পরিমন্ডলের ঘেরাটোপে নীনাও সেই অল্পবয়সেই দেশের জন্য আত্মবলিদানের পথে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন।

এদিকে মাষ্টারদা সূর্য সেনের নির্দেশে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের মতন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গেছে, বাংলার সশস্ত্র আন্দোলনে সামিল বহু বিপ্লবী, তৎকালীন শাসক ইংরেজদের দমন পীড়ন, আর বন্দি জীবনের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য রাতারাতি গা ঢাকা দিতে শুরু করলেন, বিপ্লবী মাষ্টারদার সাথে স্বাধীনতার সশস্ত্র আন্দোলনের প্রধান সৈনিকদের মাঝে, শান্তি দাশগুপ্তের পরিবারের অনেকের সাথে ইংরেজদের হাতে একদিন অমাবস্যার কালো মধ্যরাতে গ্রেপ্তার হয়ে গেলেন, সকলেরই প্রিয় ছোট্টো বোন সুন্দরী নীনা দাশগুপ্ত, তখন তাঁর বয়স মাত্র কুড়ি বছর, ইংরেজ শাসক বর্গ গোয়েন্দা মারফত খবর পেয়েছিলেন এই দুঃসাহসিক সশস্ত্র সংগ্রামে বিশ্বাসী বিপ্লবী শান্তি দাশগুপ্তের পরিবারের অকুতোভয়হীন নীনার কথা।


রাতের অন্ধকারে যখন ইংরেজদের অধীনে ভারতীয় নির্দয় সিপাহীরা কালো কাপড়ে চোখ আর হাত বেঁধে ভ্যানে তুলছিল, সেই সময় নীনা গর্জে উঠেছিলেন, রাতের অন্ধকারকে খান, খান করে চিৎকার করে বলেছিলেন, শোনো, এদেশিও বেইমান পাষন্ডের সিপাহি দল, এক নীনা মরবে, হাজারো নীনা ঘরে, ঘরে গর্জে উঠবে স্বাধীনতা প্রাপ্তির জন্যে, সাথে, সাথে ইংরেজ সিপাহীর দল, নীনার কোমরে বুটের লাথি মারতে শুরু করলে, নীনা সাময়িক অচেতন হয়ে পড়েন কালো ভ্যানে।

সেই সময়ের জেলখানার স্যাঁতসেঁতে, অস্বাস্হ্যকর, অন্ধকার ছোট্টো কুঠরি সেলে, শুরু হলো অকথ্য অত্যাচার, বিপ্লবীদের গোপন খবর জানার জন্য, কিন্তু তা বারে, বারে ব্যর্থ হওয়াতে, অত্যাচারের মাত্রা দিনের পর দিন বাড়তে থাকল, ঠিকমত খাওয়া জুটত না, হাতের নখ সাঁড়াশি দিয়ে তুলে দেওয়া হল, কঙ্কালসার নীনার রক্তাক্ত শরীর পড়ে থাকল, পরাধীন দেশের বাংলাদেশের এক কুখ্যাত জেলখানায়, তথাপি ইংরেজ সিপাহীদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে, মাত্র একুশ বৎসরের তরতাজা ফুলের কুঁড়ি নীনা দাশগুপ্ত স্বাধীনতার স্বপ্নে জয়ী হয়ে চলে গেলেন মাত্র একুশ বৎসর বয়সে। এক বৎসরের কারান্তরালের সময়ে, জেলে অনাহারে, অকথ্য অত্যাচারে, আর চিকিৎসার অভাবে, দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দান করে গেলেন মহতী এই বীরাঙ্গনা নারী নীনা দাশগুপ্ত।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy