Sampa Maji

Tragedy Others

3  

Sampa Maji

Tragedy Others

স্কুলের স্মৃতি

স্কুলের স্মৃতি

4 mins
289


ক্লাস VII আমার রেজাল্ট খারাপ হয় ,পরীক্ষার সময় আমি অসুস্থ ছিলাম  । মন খুব খারাপ হয়ে যায় , এর অন্য কারনও আছে , আসলে VII উঠেলে আমার দাদা দিদিরা যে স্কুলে পড়ে সেই স্কুলে যেতাম , কিন্তু এখন আর হবে না । আসলে আমাদের একটাই সাইকেল যেটাতে দাদা দিদি যায় ,তাই আমাকে সামনে স্কুলে ভর্তি করেছিল । যখন আমি সেভেন উঠবো তখন দিদির উচ্চ মাধ্যমিক হয়ে যাবে ,আমি ওই স্কুলে  চলে যেতে পারবো । কিন্তু আমার ভাগ্য সহায় নয় তাই আমার  সাইকেল চড়ে স্কুলে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ  হলো না।  এদিকে আমার Bestfriend সঙ্গীতা আমি অন্য স্কুলে যাবে তাই সেও তার বাবাকে রাজি করিয়েছিল ,  এখন বাড়িতে বারন করতে পারছে না , তাই ওকে চলে যেতে হলো। এই সবের কারনে মন খারাপ হয়ে যায় , স্কুলে যেতে ভালো লাগে না , তবুও যেতে হয়।


  গরমে সকাল স্কুল কিছুতেই তাড়াতাড়ি যেতে পারি না দেরি হয়ে যায় ।তবে আমার জায়গায় ঘেরা থাকতো তাই বসতে পেতাম।  আমার ক্লাস চেঞ্জ হলেও বেঞ্চ চেঞ্জ হয়না আমি সব দিন দ্বিতীয় বেঞ্চের ধারে বসি , কিন্তু আমার জায়গায় লাবনী নামে নতুন মেয়েটা বসেছে । আমাদের ক্লাসে নতুন ভর্তি হয়েছে । কাকুলী জায়গা ঘিরে রাখলেও  লাবনী শুনতে চায় না ।

 বলে- আমি আগে এসেছি আমি বসব। অগত্যা দ্বিতীয় বেঞ্চ জায়গা থাকলেও আমি শেষ বেঞ্চে গিয়ে বসি । কিন্তু ক্লাসে  বড়দিদি জায়গা ফাঁকা থাকা সর্তও শেষ বেঞ্চে বসার জন্য খুব বকেন এবং আমাকে দ্বিতীয় বেঞ্চ উঠে আসতে বলেন। আমি বাধ্য হয়ে চলে আসি কিন্তু লাবনী ধারের জায়গা থেকে সরে না আমাকে ওর পরে বসতে হয়।এই ভাবে আর ও ৭দিন লাবনী সবার প্রথমে এসে জায়গা ঘিরে নেয়। লাবনী এটা দে ওটা দে করে আমাদের বিরক্ত করে , কিন্তু আমি কিছু বলিনা । তবে মঞ্জু মাঝে মাঝে বলে , তুই ওই জায়গাটা ছাড় না হলে তোকে কিছুই দেব না । আমরা বিরক্ত দেখালেও লাবনী কিছু মনে করে না ।


 জায়গাটা ফাঁকা আছে দেখে, আমি ছুটে গিয়ে ব্যাগ রেখে দেই , তখন পিছন থেকে লাবনী বলে, তোর জায়গা ছেড়ে দিলাম , বেঞ্চে বসাতে না পাওয়ার জন্য এতো রাগ ।এই কয়দিন আমি এতো বকবক করছি , তবুও তুই কিছু বলিস নি ।তোর ওই জায়গাটা খুব প্রিয় তাই না।

- ক্লাস ২ থেকে দ্বিতীয় বেঞ্চের ধারে বসে এসেছি, বুঝলি।এর জন্য কতো মার ও খেয়েছি ।

- আমাকে তোদের দলে নিবি ।

- নিতে পারি তবে আমার জায়গায় বসা যাবে না।

- ঠিক আছে যেখানে ইচ্ছে বসতে দিলেই হবে। আসলে দ্বিতীয় বেঞ্চের ধার আমার ও খুব প্রিয়।

এইভাবে লাবনী আমাদের প্রীয় বন্ধু হয়ে ওঠে , আমরা পাঁচ বন্ধু,সরি বান্ধবী আগে মতোই পাঁচ জন শুধু এখন সঙ্গীতার জায়গায় লাবনী । আমাদের মধ্যে লাবনী খুব হাসি খুশি মেয়ে , সব সময়  নিজেও হাসে আমাদেরকেও হাসায়  , আমাদের বেঞ্চটা টেবিলের ডানদিকে হওয়ায় দিদিদের সোজাসুজি তাই সহজে দেখা যায়, ওর এই বকবকের কারনে আমাদের সবাই কে অনেক বার বেঞ্চের ওপর দাঁড়াতে হয়েছে নয়তো ক্লাসের বাইরে গিয়ে নিলডাউন হতে হয়েছে । তবুও লাবনী বকবক বন্ধ করে না, তবে ওর এই কথা বলা , হাসানো আমাদের ও খুব ভালো লাগে,ও না স্কুলে আসলে আমাদের দিনটা খুব খারাপ যায় । ওর মতো বন্ধু পেয়ে আমাদের ও স্কুল যেতে খুব ভালো লাগত বিশেষ করে আমার। 


লাবনী এতো ছটপটে ছিল যে বেশি সময় চুপ করে থাকতো পারতো না, প্রার্থনার সময় লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলত । স্কুলে পড়াশোনা ছাড়াও যে এতো আনন্দ করা যাব সেটা লাবনীর আমাদের শিখিয়েছে , প্রেজেন্ট দেওয়ার সময় আমাদের মুখ চেপে ধরে আমাদের গলা নকল করে প্রেজেন্ট দিত । আর একটা মজার বিষয় লাবনীর সবাইয়ের নতুন নতুন নাম ধরে ডাকতো এর জন্য মার ও খেত   শুধু আমাদের না, দিদিদের ও নতুন নাম দিয়েছিল । লাবনী আমাদের জন্য আম , পেয়ারা, তেঁতুল আনতো টিফিনে আমরা খুব মজা করতাম । শহরে বেড়ে ওঠা মেয়ে যে এমন হয় ওকে না দেখলে বোঝা যায়। স্কুলের দিদিরা ও খুব ভালোবাসতেন ,অঙ্ক খুব ভালো পারতো তাই অঙ্কের দিদিদের খুব প্রিয় ছিল,আমাদের কেও অঙ্কে সাহায্য করতো। এই ভাবে দিন গুলো খুব তাড়াতাড়ি চলে যায় এবং আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা চলে আসে । 


পরীক্ষা পর প্রায় একমাস ছুটি থাকে,কারে সাথে দেখা ও হয়না কথাও হয়না। সবাইয়ের বাড়ি দূরে তাই যাওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠেনা ,একে বারে রেজাল্ট এর দিনে দেখা হবে খুব আনন্দ হবে মনের মধ্যে একটা উত্তেজনা টের পেতাম। 


রেজাল্ট বেরনোর দিনে সবাই আগে থেকে চলে আসবো ,এটাই ঠিক হয়েছিল পরীক্ষার শেষ দিন  ,কতো গল্প জুমে থাকবে বলতে হবে না। আমরা চারজনের তাড়াতাড়ি উপস্থিত হয়ে গল্প জুড়ে দিয়েছি  কিন্তু লাবনী আসছে না দেখে ওদের গ্রামের একটা মেয়েকে জিজ্ঞেস করতে গেলাম সে বলল , লাবনীদের বাড়িতে এখন কেউ থাকে না ,বাড়িতে তালা দেওয়া আছে , মনে হয় আসবে না। আমরা কিছুই বুঝতে পারলাম না কেন আসবে না। আমাদের রেজাল্ট ভালো এসেছে , রেজাল্ট নেওয়ার পরেও  অপেক্ষা করলাম কিছু সময়, যদি লাবনী আসে , কিন্তু কেউ এল না , মেয়েটার কথাই ঠিক হল।  সত্যি লাবনী আর আসেনি জীবনের তরে বিদায় নিয়েছে ।কয়েক দিন পর  বড়দিদিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তিনি বলেন লাবনীর দাদু রেজাল্ট নিয়ে গিয়েছে এবং সাথে ওর মৃত্যু সংবাদ টাও দিয়ে গিয়েছে। লাবনীর ব্লাড ক্যান্সার ছিল ওর হাতে মাত্র ৮ মাস সময় আছিল । ও বাবা মাকে বলেছিল জীবন শেষ দিন গুলো গ্রামের পরিবেশে থাকতে চায় এবং কেউ যেন ওর অসুখের কথা না জানে তাহলে সবাই ওর সাথে রোগীর মতো ব্যবহার করবে যেটা ও কোনো দিন চাই তো না , তাই কাউকে জানায়নি। এখন বুঝতে পারলাম মাঝে মাঝে এক সপ্তাহ স্কুলে আসতো না জিজ্ঞেস করলে বলতো কলকাতা গিয়েছিলাম ঘুরতে। 


 এমন প্রান উচ্ছ্বাস মেয়ে যে এমন ভাবে হারিয়ে যাবে ,আমরা স্বপ্নের ভাবিনি । আমাদের আগে থেকে কেন কিছুই জানালো না , লাবনী কি হারিয়ে যাবে বলেই আমাদের কে জীবনের আনন্দ শেখাতেই এসেছিল এই সব কতো প্রশ্ন মাথায় মধ্যে আসতে লাগল , কিন্তু কোনো উত্তর পেলাম না। আমার জীবন থেকে লাবনী হাড়িয়ে গেল আর কোনো দিন দেখা হবে না এটা বিষয়টা কোনো ভাবে নিতে পারলাম না। আমি এখনো ভাবি লাবনী জীবিত আছে আসবে আমার সাথে দেখা করতে । মানুষ পৃথিবী‌ ছেড়ে চলে গেলে আর ফিরে আসবে না জানি তবুও মন মানতে চায় না । মন যেন ভুল ধারনা নিয়েই খুশি থাকতে চায় বাকি জীবন।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy