STORYMIRROR

কবিতা মালা

Romance Tragedy Others

3  

কবিতা মালা

Romance Tragedy Others

সকালবেলার ফুল (পঞ্চম পর্ব)

সকালবেলার ফুল (পঞ্চম পর্ব)

3 mins
230


ফোনটা ছেড়ে দিয়ে সোহম শুয়ে রইল। তরকারি চাপিয়ে এক কাপ চা নিয়ে শ্রেয়া টেবিলে বসল। নির্জন পরিবেশে সুদীপ্তর সাথে একান্তে কাটানো মুহূর্তগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে। তখন সুদীপ্ত আর.জি .করেপড়তো । ফাইনাল ইয়ার। আর শ্রেয়া সবে কলেজ পাশ করে দুচারটে টিউশন করে কাকাকে সাহায্য করতো। তার বাবা ছিল না তাই কাকার বাড়িতেই থাকত। 

" আজ বিতানের (সুদীপ্তর বন্ধু) জন্মদিন । তোমাকেও যেতে বলেছে। যাবে?"

" ফিরবো কখন?"

" ডিনার করে ফিরে আসব। জানো ওর মা নেই। বাবা সারাক্ষণ ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। মাসের অর্ধেক সময়টা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ওনার কেটে যায়। ছেলের জন্মদিনের কথা মনেই থাকে না। ও ভীষণ একা। নিজের জন্মদিন নিজেই সেলিব্রেট করে। ওই বলল, যদি চাস শ্রেয়াকে নিয়ে আসতে পারিস।"

"ঠিক আছে যাবো। কাকিমাকে সত্যিটা বললে যেতে দেবে না। মধুমিতার জন্মদিন বলব।"

" সুদীপ্ত যা ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে মনে হচ্ছে তোদের আজ আর বাড়ি ফেরা হবে না। "

" বিতান দা কিছু একটা ব্যবস্হা করে দিন বাড়ির বাইরে রাত কাটালে কাকিমা তুলকালাম করবে। "

" কিন্তু শ্রেয়া এখন কোন ট্যাক্সিতো যেতে চাইবে না। সুদীপ্ত বরং ফোন করে কাকুকে বলে দিক আমার বাড়িতে আছে। আর তুমি কোন বান্ধবীর বাড়িতে ঝড় বৃষ্টিতে আটকে পড়েছ বলে জানিয়ে দাও।

টানা দুঘন্টা হয়ে গেল একভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। আজ আর থামবে বলে মনে হচ্ছে না।

বিতান আরো বলল

সুদীপ্ত আর আমি ড্রয়িংরুমে শুয়ে পড়ছি আর শ্রেয়া তুমি বেডরুমে শুয়ে পড়ো।"

**************

"এতো রাতে তুমি এ ঘরে ?"

সুদীপ্ত শ্রেয়ার মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরল। চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলল 

"তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছিল তাই।"

রাতের গভীরতা আর সুদীপ্তের স্পর্শে শ্রেয়ার সারা শরীর শিথিল হয়ে আসে। সেই মুহূর্তে সমাজ , সংস্কার সব বাধা পেরিয়ে সুদীপ্তর কাছে শরীর মন সমর্পণের তার ইচ্ছে জাগে। একসময় তারা সব সীমা অতিক্রম করে দূরে বহদূরে... পৌঁচ্ছে যায়।

পোড়া তরকারীর গন্ধে শ্রেয়ার চমক ভাঙে।" যাহ্ পুরোটা একেবারে কালো হয়ে গেছে। যাই আলু ভেজে নিই। আজ আর টিফিনে তরকারী করবো না। এক্ষুণি তমাল বাজার থেকে এসে পড়বে। তাড়াতাড়ি এগুলো ফেলে দিতে হবে।"

**************

ঘরে ফোন বাজচ্ছে। শ্রেয়া ফোনটা ধরল।

"হ্যালো।"

" এটা তমাল দার বাড়ি?"

" হ্যাঁ।"

"আপনি কে বলছেন?"

" আমি সবজী দোকানের লোক। তমাল দা আমাকে এই নম্বরটা দিয়েছিলেন অনেকদিন আগে।"

"বলুন।"

"আপনি বৌদিতো।"

"হ্যাঁ।"

"বাজারে এসে তমাল দার শরীরটা খারাপ লাগছে। বলছেন বুকে যন্ত্রণা করছে।আমি আমার দোকানে বসিয়ে রেখেছি। আপনি এসে নিয়ে যান।"

"হ্যাঁ, হ্যাঁ । এক্ষুণি আসছি।"

শ্রেয়া সোহমকে ডাকলো।

" হ্যাঁ মা, বলো।"

" তোর বাবার শরীর খারাপ হয়েছে। সবজী দোকানের লোক ফোন করেছিল। আমি তোর বাবাকে আনতে যাচ্ছি। "

" আমি কি যাবো?"

"না । দরকার নেই। তুই গেটটা চাবি দিয়ে দে।"

শ্রেয়া তমালকে বাজার থেকে নিয়ে এলো। অ্যাসিড হয়েছে ভেবে ওষুধও খাওয়ালো । কিন্তু সুস্হ হলো না। শ্রেয়া আর সোহম তমালকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। 

" দেখুন আমার মনে হচ্ছে ওনার হার্টের অবস্হা ভালো নয়। তবে ই.সি.জির রিপোর্ট পেলে নিশ্চত হতে পারবো।"

ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বললেন

" হ্যাঁ যা ভেবেছিলাম তাই। যতোটা সম্ভব তাড়াতাড়ি ওনার প্রেসমেকার বসানোর ব্যবস্হা করুন।"

"কতো টাকা লাগবে?"

টাকার পরিমাণ শুনে শ্রেয়া চিন্তায় পড়ে গেল। এই মুহূর্তে এতোগুলো টাকার জোগার করা। সোহম বলল 

"তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমি ঠিক একটা 

ব্যবস্হা করবো।"

তমালের অপারেশন হয়ে গেল। এখন সে খানিকটা সুস্হ। একদিন সোহম শ্রেয়াকে বলল

"মা,এতোদিন বাবা অসুস্হ ছিল তাই কিছু বলি নি। 

তোমরা তিথি আর আমার ব্যাপারে কি ঠিক করলে?"

" দ্যাখ তোর বাবার সবে অপারেশন হয়েছে এখন তাকে উত্তেজিত করা যাবে না।"

" উত্তেজিত কেন বলছো? তোমাদের আপত্তিটা কোথায়? সেটাই আমি জানতে চাইছি।"

" সোহম, কোন কারণ, বৃত্তান্ত আমি তোকে বলতে পারবো না। শুধু একটা কথাই বলবো তুই তিথিকে 

ভুলে যা। আর তাতেই সকলের মঙ্গল।"

" আমি মঙ্গল- অমঙ্গল বুঝি না। ওকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব।"

সোহম ঘরে চলে গেল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance