সকালবেলার ফুল (অষ্টম পর্ব)
সকালবেলার ফুল (অষ্টম পর্ব)
তিথি গাড়িতে ওঠার পর গাড়িটা ছেড়ে দিল।গাড়ির ভেতরের পরিবেশটা কেমন যেন থমথমে।সেই গাড়িতে সে আর সোহমের বন্ধু ছাড়াও
আরও তিন জন ছিল। তাদের মধ্যে একজন গাড়ি চালাছিল। চেহারাগুলো গুন্ডা মার্কা। তিথি বিপদের গন্ধ পেল। চিৎকার করে গাড়ির দরজায় ধাক্কামারতে থাকে । ঠিক তখনই তাদের মধ্যে একজনতার চোখ, হাত আর মুখটা বেঁধে দিল। ঝড়েরগতিতে গাড়িটা ছুটে চলল। বেশ কিছুক্ষণ পরএকটা নির্জন জায়গায় এসে গাড়ি থামে। তাকে ধরে এনেএকটা ঘরে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখে। চোখের বাঁধন খুলে দেয়। মুখটা বাঁধা থাকে। এতোক্ষণ চোখ বাঁধা থাকার জন্য তিথি প্রথমটা ঝাপসাদেখছিল। আস্তে আস্তে দৃষ্টি পরিষ্কার হতে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো এটা একটা গুদাম ঘর। হাল্কাকয়েকটা আলো জ্বলছে। ঘরটা কার্টুনে ঠাসা।কয়েকটা লোক ঘরের কোনে বসে তাস খেলছে ।
মাঝে মাঝে নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কথা বলছে। কালো ছোপ ধরা দাঁত বার করে কখনো
তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। মুখের বাঁধন খুলে দিতেই তিথি বলল
" আমাকে এখানে আটকে রেখেছিস কেন?কে বলেছে তোদের আমাকে আটকে রাখতে?"" ও, বাবা খুব তেজ তো। আবার তুই তুকারি
করছে! সোনামণি মালের জন্য । বস বলেছেন মাল আদায় হলেই তোমাকে ছেড়ে দিতে । সোহম আমাদের বস।"
যারা বসে তাস খেলছিল তাদের মধ্যে একজনবলল। আর অন্যরা হো হো করে হেসে উঠল।"সোহম এতো বড়ো বেইমান । " তিথি ভাবল। কথাটা ঠিক তার বিশ্বাস হচ্ছে না। কেমন যেন ভয় করতে লাগল। চুপ করে রইল। যে
ছেলেটা নিজেকে সোহমের বন্ধু বলে পরিচয় দিয়েছিল সে অন্যদের বলল
" বস বলেছে মেয়েটার যেন কোন ক্ষতি না হয়। তোদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে গেলাম। আমার অন্য কাজ আছে । সন্ধ্যের দিকে আবার আসব।"
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামে, সন্ধ্যা থেকে রাত্রি তিথি বাড়িতে ফিরলো না। সুদীপ্তর দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে। সে তিথির যে কজন বন্ধুদের চেনে তাদের ফোন করলো। কিন্তু কোন লাভ হলো না। প্রায় রাত বারোটার সময় সোহমের ফোন থেকে কল আসে।
" তিথি আমার কাছে আছে। নগদ পঞ্চাশ লাখ টাকা নিয়ে আসুন।" ফোনেই সে জায়গা আর সময়টা জানিয়ে দেয়।আরও বল"পুলিশে খবর দিলে তিথির প্রাণ সংশয় হতে পারে।"
"Hey bastard !!!!
I will kill you."
একটা ক্রুর হাসি সুদীপ্ত শুনতে পেল । তারপর ফোনটা কেটে গেল।
ফোনটা কেটে যাওয়ার পর সুদীপ্ত তিথির ডাইরী
ঘেঁটে শ্রেয়ার নম্বর খুঁজে পেল।
" হ্যালো।"
ফোনটা তুলতেই শ্রেয়া বুঝতে পারলো সুদীপ্তর গলা।
" সোহম কোথায়?"
" বন্ধুর বাড়িতে আছে।"
" মিথ্যে কথা।"
"মানে!"
" মানেটা হলো ও তিথিকে কিডন্যাপ করে আমার কাছে মুক্তিপণ আদায় করতে চাইছে। একটু আগে আমায় ফোন করেছিল।"
" তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে?"
" হ্যাঁ, হ্যাঁ । এখন আমার রক্ত চড়ে আছে । সামনে পেলে আমি তোমার ছেলেকে খুন করে দেব।"
" সুদীপ্ত মুখ সামলে কথা বলো । এইভাবে আমাদের অপমান করার মানেটা কি? সেদিন তুমি আমাকে বিপদে ফেলে চলে গিয়েছিলে একবার ও খবর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করো নি। বেঁচে আছি না মরে গেছি ।এখন আবার নতুন নাটক।"
শ্রেয়ার এতোদিনে জমা রাগ, বিদ্বেষ স্বাভাবিকভাবে বেরিয়ে এলো।
" নাটকের এখনো কিছুই দেখো নি। "
" তুমি কি ভাবছো আমি তোমায় ছেড়ে দেব।"
' কি হয়েছে? কার ফোন?"
তমাল জিজ্ঞেস করলো।
" দ্যাখো না, সুদীপ্ত বলছে সোহম নাকি তিথিকে কিডন্যাপ করেছে।"
"কি!! দাও তো একবার ফোনটা।
তমাল ফোনটা হাতে হাতে নিয়ে বলল
"তুই জানিস কার সম্পর্কে কী বলছিস।"
" তোমাকে এসব কথা বলতে কে বলল?"
তমালের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিল শ্রেয়া। সে
ফোনটা কানে দিয়ে বুঝতে পারলো সুদীপ্ত আগেই
ফোনটা কেটে দিয়েছে। তমালের কোন কথাই সে
শোনে নি। শ্রেয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।