সকালবেলার ফুল (ষষ্ঠ পর্ব)
সকালবেলার ফুল (ষষ্ঠ পর্ব)
এক শনিবার দুপুরে সরলাদেবীর আয়া একতলায় রান্নাঘরে খাবার গরম করছিল। তিথি কলেজ থেকে তাড়াতাড়ি ফিরবে তাই দরজার লকটা খুলে রাখল। সেই সময় কুমারেশ( সরলাদেবীর খুড়তুতো ভাই) দরজা খুলে সোজা ওপরে উঠে যায়। সেটা আয়া খেয়াল করলো না।
কুমারেশ সরলাদেবীর সামনে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বলল
" এখানে সই করে দাও।"
" সর্বস্ব নিয়েও তোর শান্তি হয় নি।"
স্ট্রোকে তার মুখটা বেঁকে গেছে তাই কথাগুলো অস্পষ্ট।
" যা বলছি তাই করো। সই না করলে সুদীপ্তর কাছে তোমার আসল রূপ ফাঁস করে দেব। ভালো করে ভেবে দেখো এই আশ্রয়টুকু হারিয়ে শেষে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে না হয়।"
দুজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক চলছে কিছুক্ষণের মধ্যে আয়া খাবার নিয়ে সেই ঘরে এলো।
" একি কে আপনি? ওপরে কখন এলেন?"
" ও একটা শয়তান সরলাদেবী বললেন।"
আয়ার কথার উত্তর না দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় কুমারেশ। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় বলে
" কাজটা কিন্তু ভালো করলে না।"
সে বেরিয়ে গেলে আয়া নীচে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। তাকে খাওয়ানোর জন্য আয়া ঘরে এলে সরলাদেবী তার কাছে কাগজ আর একটা পেন চাইলেন। আর বললেন
" এখন নয়। ঘন্টা খানেক পর খাবো।"
*****************
সুদীপ্তকে দেখার পর থেকেই শ্রেয়া মাঝে মাঝে
অন্যমনস্ক হয়ে যায়। বিতানের বাড়ি থেকে ফেরার পরের ঘটনাটা আজ তার ভীষণ মনে পড়ছে।
" রাত কাটিয়ে কোথা থেকে আসা হলো?"
তার কাকিমা বলল।
" আমি তো বলেছিলাম কাকিমা মধুমিতার জন্মদিন ছিল। কাল ঝড় বৃষ্টিতে আটকে পড়েছিলাম।"
"চোখ মুখ দেখে আমার বাপু ভালো ঠেকছে না।"
" আঃ সাত্বনা। মেয়েটা তো বলছে মধুমিতার বাড়ি ছিল । তুমি এতো অবিশ্বাস করো না। যা মা ঘরে যা। মুখ হাত ধুয়ে কিছু খেয়ে নে।"
মাসখানেক পর শ্রেয়া পরপর তিনদিন সকালে বমি
করলো।
" তোমার ভাইঝিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও। আমার সেদিনই সন্দেহ হয়েছিল। "
" তুমি যে কী বলো। গ্যাস অম্বলেও তো বমি হয়।"
" সেরকম কিছু হলেই ভালো.."
"ঠিক আছে ডাক্তারের কাছে না হয় নিয়েই যাই।"
"উনি মা হতে চলেছেন।"
বাড়ি ফেরার পথে শ্রেয়ার কাকা বললেন এমন করে মুখে চুন কালি মাখালি কেন রে মা? এখন তোর কাকিমাকে কি জবাব দেব?"
বাড়িতে ফিরে তার কাকা বারান্দায় মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন।
" যা বলেছিলাম সেটাই সত্যিতো? "
তার কাকা কোন উত্তর দিলেন না।
" এক্ষুণি বাড়ি থেকে দূর হয়ে যা।"
" কোথায় যাবে বেচারি এ অবস্হায়?"
কাকিমা মুখ ঝামটা দিয়ে বলল
" তুমি আর একটাও কথা বলবে না।"
শ্রেয়া বাড়ি থেকে বেরিয়ে সুদীপ্তকে ফোন করলো।
" তুমি এক্ষুণি বাস স্টপেজে এসে আমার সাথে দেখা করো।"
" ঠিক আছে। যাচ্ছি।"
শ্রেয়ার মা হওয়ার সংবাদ শুনে সুদীপ্ত বলল
" ভয় পাচ্ছ কেন? আমি তো আছি।"
" কাকিমা আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।"
" ঠিক আছে ।তুমি আমাদের বাড়িতে থাকবে। আজই আমি বাবাকে সব কথা জানিয়ে দেবো। ও হ্যাঁ, দিন পনেরো পর আমাকে বছর দেড়েকের জন্য লন্ডন যেতে হবে । ততদিন ফোন আর চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ থাকবে। ততদিনে বাচ্চাটাও হয়ে যাবে । ফিরে এসে আমি তোমায় স্বীকৃতি দেবো।"
একদিন সুদীপ্ত শ্রেয়াকে নিয়ে তার বাবার কাছে এলো। সব কথা শুনে তিনি বললেন
" তোমার সৎ সাহস দেখে আমি গর্ব অনুভব করছি। তুমি যখন স্বীকার করছো ওর গর্ভে আমাদের বংশধর বড়ো হচ্ছে। সেখানে আমার আর কিছুই বলার থাকতে পারে না। বেশ যতোদিন তুমি না ফিরছো ততদিন ওর দেখাশোনা করা আমাদেরই কর্তব্য।"
"ও বৌদি। দাদা কখন থেকে তোমায় ডাকছে। ওপর থেকে আমি শুনতে পাচ্ছি। তাই নীচে নেমে এলাম। এখনে বসে একা কি ভাবচ্ছো? যে পাশের ঘর থেকে ডাকছে শুনতে পাচ্ছো না।"
কাজের মেয়েটা বলল।
ক্রমশঃ.......

