সকালবেলার ফুল ( তৃতীয় পর্ব)
সকালবেলার ফুল ( তৃতীয় পর্ব)
শ্রেয়া আর তমাল বেরিয়ে যাওয়ার পর সুদীপ্ত তিথিকে বলল
" দরজাটা বন্ধ করে দে। আমি নার্সিংহোম বেরচ্ছি।"
" সকালে তুমি যে বললে আজ আর বেরবে না?"
সুদীপ্ত সেই কথার কোন উত্তর দিল না। নার্সিংহোমটা তার নিজের। সুদীপ্ত নার্সিংহোমে গেল ঠিকই কিন্তু কোন কাজ করলো না। দারোয়ানকে বলল আজ সে কারোর সাথে দেখা করবে না। চেয়ারে বসে মাথাটা হেলিয়ে দিল। আলতো করে চোখ বুজে ভাবল
" মা আর মামা তো বলেছিলেন শ্রেয়া বেঁচে নেই। তবে! তমাল শ্রেয়ার স্বামী! কিন্তু কেন? আমাকে একবারও জানানোর প্রয়োজন বোধ করলো না।"
সুদীপ্তর কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে সবকিছু ।
মাথা কিছুতেই কাজ করছে না।
" সব কথা খুলে জিজ্ঞেস করবে সেই সময়টা পর্যন্ত
তমাল দিল না।"
শ্রেয়া বেঁচে আছে আজ জানতে পেরে সে আনন্দিত।
" আজ বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে তাদের ভালোবাসার ফসলের কি হলো? তবে শ্রেয়া তাকে এই পৃথিবীর আলো দেখায় নি? হয়তো তমাল রাজি ছিল না।"
এমন হাজার প্রশ্নের ভীড়ে সুদীপ্ত হারিয়ে যাচ্ছে।যার উত্তর দেওয়ার কেউ নেই।
" শ্রেয়ার ফোন নম্বরও তো জানি না। যোগাযোগ হবেই বা কেমন করে। সোহমের ফোন নম্বর তিথির কাছে জানতে চাইবো।
পরক্ষণে ভাবল
"না,না। সে বড়ো দৃষ্টিকটু।"
****************
রবিবার তাই সোহম বাড়িতেই ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে শ্রেয়া আর তমাল বাড়ি এসে পৌঁছালো। গাড়ির আওয়াজ শুনে সোহম গেটের চাবি খুলে দিল।
" মা বাবাকে আপসেট মনে হচ্ছে। তবে তিথিকে তাদের পছন্দ হয় নি। নিজের থেকে এসব কথা জিজ্ঞেস করাটা হ্যাংলামি মনে হবে। অনেকটা জার্নি করে এসেছে এটা ক্লান্তির ছাপও হতে পারে।দুদিন গেলে মা হয়তো হেসে নিজেই সব কথা খুলে বলবে।"
সোহম নিজেকে শান্ত করার চেষ্ঠা করলো ঠিকই। কিন্তু ভেতরে একটা অস্বস্তি বোধ হতে থাকে।
রাতে শুয়ে শ্রেয়া এপাশ ওপাশ করতে থাকে । তমাল বলল
" ঘুম আসছে না?"
"না।"
"সব কথা তাকে জানাতে ইচ্ছে করছে তাই না?"
"ঠিক তা নয়।"
"তবে?"
"তাকে কিছু প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে।"
" আর তার যথাযথ উত্তর পেলে অতীতে ফিরে যেতে মন চাইবে তাই তো?"
" দ্যাখো তমাল পুরনো কথা আমাদের মনে আসা যাওয়া করে। তার এই যাতায়াত হাজার চেষ্ঠা করেও আমরা আটকাতে পারি না। কিন্তু ধুলোমাখা অতীতের সাথে বর্তমানের সুসংহত যোগসূত্র স্হাপন করা অসম্ভব।
শ্রেয়া আরও বলল
অনেকটা জং পরা আর কিছু ছিঁড়ে যাওয়া তারের মতো।"

