STORYMIRROR

Souradip Rakshit

Abstract Inspirational Others

3  

Souradip Rakshit

Abstract Inspirational Others

সিগারেট

সিগারেট

22 mins
229

                              


                   ১


কারেন্ট গেছে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা হবে। তখন রুদ্র স্নান করতে গিয়েছিল। আধ স্নান হয়েছে সবে আর তখনই বাথরুমের লাইট নিভে গেল। এখন বিকেল পাঁচটা বাজছে। বেশ গরম। এপ্রিল মাসের শুরু। সকালে যেমন গরম, বিকেলের পর খানিকটা ঠাণ্ডা, স্বস্তি। ছাদে বসে ব্যাম করছে রুদ্র। ৬৭ নম্বর ডন দিয়ে ৬৮ নম্বর দিতে যাবে ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠলো তার। ঋষি ফোন করেছে। 


"কিরে? তোদেরও কারেন্ট গেছে নাকি রে? আমাদের তো প্রায় চার ঘণ্টা হতে চললো।", রুদ্র ফোন রিসিভ করতেই বলল ঋষি, রুদ্রকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই। 


"হ্যাঁ রে। আরে দেখ না প্রায় চার ঘণ্টা হতে চললো, এখনো কারেন্ট আসার কোনো নামই নেই! বিরক্তিকর!", কথাগুলো বেশ চোটেই বলল রুদ্র।


"কি আর করবি বল। তবে বলিস তো আমার কাছে একটা ভালো আইডিয়া আছে।"


"কি?", বেশ কৌতূহলী সুরে জিজ্ঞেস করলো রুদ্র।


"বেরোবি?"


"কোথায়?"


"এমনিই। এদিক ওদিক। রাস্তায় ঠিক করে নেব। যাবি কিনা বল।"


দু-এক সেকেন্ড ভেবে নিয়ে রুদ্র বলল, "আচ্ছা। চলে আয় আমার বাড়ি। আমি জামা প্যান্ট পরছি।"


ফোন কেটে দেওয়ার পর ছাদ থেকে নেমে নিজের ঘরে এসে আলমারি খুলে জামা-প্যান্ট খুঁজতে লাগলো রুদ্র। 


"এই এই এই! কি করছিস? কি করছিস?", দরজায় দাড়িয়ে কড়া স্বরে জিজ্ঞেস করলেন রুদ্রর মা। 


"গাছ পুঁতছি। পুঁতবে?", মায়ের ঢ্যাটানি অবজ্ঞা করে মাকে খোঁচা মেরে বলল রুদ্র।


"ইয়ার্কি হচ্ছে? আলমারির মধ্যে গাছ পুঁতছিস!", বলেই কাছে এসে কান টেনে ধরলেন রুদ্রর, আর জুরলেন, "মায়ের সাথে ইয়ার্কি! সোজাসুজি কথার জবাব দিতে পারিস না? হ্যাঁ? তোকে ওইটুকু বয়স থেকে দেখছি। আগে তো এরকম বাঁদর ছিলিস না রে। এই ক্লাস ইলেভেনে উঠেই ডানা গজিয়েছে তোমার। এই ডানা কীকরে কাটতে হয় ভালো মতন জানা আছে আমার।"


"আরে আরে লাগছে তো! আরে আলমারিতে মানুষ কি করে! তুমিই বল!", কানমোলা খেয়ে কাঁচুমাচু মুখে করে জবাব দিল রুদ্র।


"সে তো জানি জামা খুঁজছিস। যাওয়া কোথায় হচ্ছে? কার সাথে? আর কালকেই তো আলমারি থেকে একটা জিন্স আর একটা t-shirt ভাঙলি, সেগুলো বুঝি আর গায়ে উঠছে না লাঠ সাহেবের!"


"আরে ওগুলো পরে তো কালকে ব্যান্ডেলে টিউশানে গিয়েছিলাম। ঘামের গন্ধ হয়েছে।" 


সপাটে গালে এক চর লাগিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে রুদ্রর মা বললেন, "তা সেটা আমায় বলা হয়নি কেন?", আর একটা চর মেরে বললেন, "আজ সকালে যখন কাপড় গুলো কাচ্ছিলাম তখন তো বলতে পারতিস। ও না না। তখন তো লাট সাহেব মোবাইলে মত্ত ছিলেন কি না! এই মোবাইলটাই যত নষ্টের গোড়া..." 


আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন রুদ্রর মা, কিন্তু দরজায় কলিং বেলটা বেজে ওঠায় তা আর সম্পূর্ণ হল না তাঁর। 


"কে? কে? যাই...", বলতে বলতে দরজা খুলে দেখেন ঋষি একটা কালো t-shirt আর নীল জিন্স পড়ে দাড়িয়ে আছে। হাতে আবার একটা ঘড়ি। টাইটান। 


"আন্টি বলছি রুদ্র কোথায়?", ঋষি জিজ্ঞেস করলো রুদ্রর মাকে।


"লাট সাহেব? ওই যে। যাও...", বলে দরজা থেকে সড়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন তিনি। 


                  ২


গঙ্গার ঘাটে এসে বসলো দুজনে। বেশ হাওয়া দিচ্ছে। একটু আগেও অবশ্যি হাওয়া দিচ্ছিল, তবে এত জোড়ে না। ঘাটে ওরা দুজন বাদেও অনেক লোকজনই আছে। একটু পর আরো ভিড় হবে। কিছু দাদুরা এসে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যাপারে সমালোচনা করবেন, রাজনীতি নিয়ে অনেক কথাই বলবেন, দেশে যেই সব কোর্ট কেসগুলোর মীমাংসা হয়নি, সেগুলোর অনায়াসে সমাধানও বের করে ফেলবেন। তবে, কোনো রকম নেশা জাতীয় দ্রব্য তারা স্পর্শ করেন না। দু একজন অবশ্যি নস্যি নেয়, তবে বিচারকদের আপত্তি থাকলে তারা "এবার আসি বুঝলেন" বলে উঠে পড়েন। অন্য দিকে প্রেমিক প্রেমিকাদেরও কোনো অংশে কমতি থাকে না এই ঘাটে। একটু সন্ধ্যে হলেই সবাই তাদের প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে এসে হাজির হবে এখানে। তাও ভালো কথাবার্তা ছেড়ে আর কিছু করার সাহস করে না এরা। একবার, অনেক বছর আগে, একটা দম্পতি এসেছিল এই ঘটে। বসে মদ গিলছিল তারা। অনেকেই আপত্তি করছিল, তবে তারা তাদের কথা কানে দিতেই রাজি নয়। তখন অবশ্য অন্য বিচারক দাদুদের দল বসতো এখানে। ছেলে মেয়েটিকে মদ খেতে দেখে তারা ঘোর আপত্তি জানায়। মদের নেশায় চুর হয়ে ছেলেটা নাকি দাদুটার গায়ে হাত অবধি তুলেছিল। সে কি তুলকালাম কণ্ড! শোনা যায় অনেক থানা পুলিশ হয়েছিল নাকি। 


রুদ্রর মুখ ভার দেখে "কি হয়েছে?" জিজ্ঞেস করলো ঋষি। রুদ্রর মুখে পুরো ঘটনাটা শুনে হোহো করে হেসে ফেলল সে।


"তুই হাঁসছিস! তুই যদি সেই চরগুলো খেতিস না, তাহলে বুঝতিস বুড়ির হাতে কত জোর।", বলল রুদ্র।


"তোর বাবা মারা যাবার পর থেকেই তো আন্টি এরকম হয়ে গিয়েছেন... না?", বলল ঋষি।


রুদ্র বেশ গম্ভীর ভাবে "হুম" বলে বলল, "আসলে কি বলতো, বাবা মারা যাবার পর মায়ের ঘাড়ে অনেক দায়িত্ব এসে পড়েছিল। দিদাকে দেখাশোনা করা, তার ওষুধ পত্র, ডাক্তারের খরচ, খাওয়া দাওয়া, আমার পড়াশোনার খরচ, বাড়ির খরচ... তাও তো দিদা দেশের বাড়ি চলে যাওয়ায় মায়ের চাপটা একটু কমেছে। আর তারপর মা পড়াশোনায় ভালো ছিল বলেই তো মামা মাকে স্কুল টিচারের চাকরিটা জোগাড় করে দিতে পেরেছিল। নহিলে আমাদের যে কি হতো।"


"বুঝলাম। ছাড় বাদ দে। কিন্তু যাই বলিস ভাই। আমি আর যাই করি, টিউশনের নাম করে কারুর সাথে দেখা করতে যাই না।" 


"আমি আবার কবে কার সাথে দেখা করতে গেলাম?", বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো রুদ্র।


"করেন নি বুঝি?", বলল ঋষি। "তবে কাল বাবাজি কোথায় যাওয়া হয়েছিল? হুম?"


"তুই... মানে? তুই কীকরে জানলি?", হকচকিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো রুদ্র।


"হুম হুম বাবা। কাল যার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন, সে যে আমারই মাসতুতো বোন। ক্লাস টেন, নন্দিনী। নন্দিনী মাইতি। আমায় সব বলেছে। তবে নন্দিনী ক্লাস টপার কিন্তু। তোর মতন কোনো রকমে ধেরিয়ে-ধুরিয়ে পাস করে না।"


"আমি মোটেই ধেরিয়ে-ধুরিয়ে পাস করি না। আমি ক্লাস টেনে এইট্টি সেভেন পার্সেন্ট পেয়ে ক্লাস ইলেভেনে উটেছিলাম।"


"আচ্ছা। তোর থেকে এইট্টি সেভেন পার্সেন্ট পার্সেন্ট কি এক্সপেকটেড? ক্লাস নাইনে নাইনটি ফাইভ পার্সেন্ট পেয়েছিলিস।"


"ক্লাস টেনের ফাইনাল পরীক্ষার সময় বাবা মারা গিয়েছিল মনে কর। তাও তো এইট্টি সেভেন পার্সেন্ট পেয়েছিলাম। আমার জায়গায় তুই বা অন্য কেউ থাকলে সেটাও পেতিস না। হু!"


"আচ্ছা ছাড়... আগে বল প্রেমটা কবে থেকে? আলাপ পরিচয় কীকরে?", বেশ কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল ঋষি।


"বলবো। তবে এখন না। সিগারেট খেতে খেতে।", বলল রুদ্র।


"তুই আবার সিগারেট ধরলি কবে? এই এইসব কিন্তু এখন একদম উচিত নয়। ক্লাস ইলেভেনের পরীক্ষা দিয়েছিস সবে। রেজাল্টও আসে নি। তোকে এইসব কে খাওয়াচ্ছে বল।", মুখ লাল করে বলল ঋষি।


"কে আবার খাওয়াবে? আমি নিজেই... আরে সেদিন ইউটিউবে একটা শর্ট ফিল্মে দেখলাম মেন ক্যারেক্টারটাকে সিগারেট খেতে। আগেও দেখেছি সিনেমাতে, কিন্তু সেদিন সেই ভিডিওটা দেখার পর জানি না কেন খুব ইচ্ছে হল। তাই একদিন নিজের পকেট মানি থেকে কিনে খেলাম। ভাই বিশ্বাস কর এরকম সুখ জীবনে পাইনি। আহা! প্রথম টানটা দেওয়ার পর বাজে লেগেছিল বটে, কিন্তু তার পর সেটা কন্টিনিউ করার পর মাথাটা ঝিম ঝিম করতে শুরু করলো। মনে হল জীবনের সব জ্বালা-যন্ত্রণা সব যেনো কোথায় উধাও হয়ে গেল। 'mental peace' মানে বুঝিস তো? সেটা জীবনে প্রথমবার অনুভব করলাম।", এক নাগাড়ে মগ্ন হয়ে বলে গেল রুদ্র।


"এই তোর প্রথম সিগারেট খাওয়া?", কি যেন ভাবতে ভাবতে জিজ্ঞেস করলো ঋষি।


"হ্যাঁ। এই আমার প্রথম", স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল রুদ্র। "জানিস কতদিন ধরেই তোকে বলবো ভাবছিলাম, তোকে বলে বেশ হালকা লাগছে।"


"হুম, বুঝলাম। এর পর কি আজ আবার খাচ্ছিস?"


" না না। এই সুখ পাওয়ার পর আবার তার পরের দিনই খেয়েছিলাম। জানিস, সেইদিন বাবাকে দেখতে পেয়েছিলাম। বাবা আমায় ডাকলো নিজের কাছে, আমি এগোতে গেলাম কি বাবা ভ্যানিশ হয়ে গেল..."


"তার পর?"


"তার পর বাবাকে দেখতে পাওয়ার ইচ্ছেতে খেতেই থাকলাম। রোজ একটা করে। কিন্তু বাবা আর আসে নি। দেখি আজ যদি আসে। জানিস খুব মিস করি বাবাকে। বাবা বলতো, "রুটি, তুই একদিন অনেক বড় হবি। দেশের নাম উজ্জ্বল করবি। তোর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আর আমি সবাইকে গর্বের সাথে বলবো 'রুটি, ইয়ে রুদ্র আমার ছেলে।'", এই বলে একটু থামলো রুদ্র। চোখ ছল ছল করছে তার।


"হুম বুঝলাম। রোজই খাচ্ছিস তার মানে। আজ টানা কত নম্বর দিন?", জিজ্ঞেস করলো ঋষি। 


"আজ এক নম্বর দিন। কালকে খাই নি। এর আগে ডের সপ্তাহ মতন খেয়েছি। কাল একচুয়ালি চান্স পাই নি। "


"কেন?"


"বিকেলে বেরোলাম মায়ের সাথে। দোকান বাজার করতে। তাই।"


"ওহ তার মনে বিকেলের দিকেই খাস।"


"বিকেল ঠিক না। সন্ধ্যে। মাকে বলি ঘুরতে যাচ্ছি। দিয়ে খেয়ে বাড়ি আসি।"


"গায়ে হাতে গন্ধ থাকে না? শুনেছি সিগারেটের নাকি গন্ধ থাকে একটা। যেতেই চায় না নাকি!"


"হুম থাকে। মুখের গন্ধের জন্যে ইউজ করি চুইং গাম আর গায়ের হাতের তার জন্যে পকেট পারফিউম।"


"আচ্ছা। বুঝলাম। তা আজ আমায় নিয়ে যাস। দেখি কি জিনিষ এই সিগারেট।"


                   ৩


খানিকক্ষণ বসার পর যখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো, তখন রুদ্র বলে, "চল ভাই। সিগারেটটা খেয়ে আসি। এসে একটু বসবো। গন্ধটা উড়ে যাবে এক্কেবারে, তার পর বাড়ি যাবো।"


কি একটা ভেবে ঋষি বলল, "হুম চল।"


খানিকটা হেঁটে রাস্তার পাশে একটা গুমটি মতন দোকানে গিয়ে কি যেন একটা বলল রুদ্র। দোকান থেকে এসে ঋষির সামনে দাড়াতেই ঋষি বলল, "কই সিগারেট?"


"এখানে কেউ খায়?", ঋষির কথা বিদ্রুপ করে বলল রুদ্র। "অন্য জায়গায় চল। 


খানিকক্ষণ হেঁটে একটা অন্ধকার মতন জায়গায় নিয়ে এলো রুদ্র। 


"এই দেখ।" বলে রুদ্র তার পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করলো। "এটা ঠিক এই ভাবে মুখে রাখতে হয়।" ঠোঁটের মাঝখানে সিগারেটটা রেখে রুদ্র বলল, "আর এটা দেশলাই। এবার এটা জ্বালিয়ে..." দেশলাই জালিয়ে সিগারেটটা ধরিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে আঙ্গুলের ফাঁকে সিগারেটটা গুঁজে বলল, "ঠিক এই ভাবে ধরিয়ে ধোঁয়া টেনে ছাড়তে হয়। বুঝলি? নে তোর টা।" এই বলেই পকেট থেকে আর একটা সিগারেট বের করে ঋষির দিকে বাড়িয়ে দিল রুদ্র। 


ঋষি মেজাজ দেখিয়ে বলল, "আমি বলেছিলাম কি যে আমি খাবো? আমি দেখবো বলেছিলাম। আমার দেখা শেষ। আমি বাড়ি যাবো। আমার নয়। তোর। দিয়ে এই রেকর্ডিংটা আন্টিকে শোনাবো। তার পর আন্টি যা ভালো বুঝবেন তাই করবেন। আমি এতক্ষন আমাদের কথাবার্তার অডিও রেকর্ড করছিলাম আমার ফোনে..."


মাথায় বাজ পড়লো যেন রুদ্রর। হাতের সিগারেট হাতেই থেকে গেল। মুখে আর উঠছে না। চোখ গুলো বড় বড় করে ঋষিকে বলল, "ভাই দয়া কর। বাড়িতে জানাস না। আমি শুধু একটু সুখের জন্যে খাই। তাও রোজ না..."


রুদ্রকে থামিয়ে ঋষি বলল, "রোজ না?"


"না না না। রোজ না। কালকে খাইনি।"


"কাল খাসনি কারণ তুই সুযোগ পাস নি। পেলে ঠিক খেতিস। আমায় শেখাস না। তুই যা ভালো বুঝেছিস করছিস। এবার আমি যা ভালো বুঝবো করবো। হ্যাঁ এবার তুই যদি বলিস যে আর..."


ঋষিকে থামিয়ে রুদ্র বলল, "কথা দিচ্ছি। কথা দিচ্ছি আর কোনোদিনও খাবো না। সত্যি। Promise promise।"


"আর যদি খাস?"


"খাবো না সত্যি।"


"যদি খাস?"


"বলছি তো খাবো না।"


"যদি খাস, তাহলে এই রেকর্ডিংটা আন্টিকে হোয়াটসঅ্যাপ করে দেবো। মাথায় থাকে যেন।", এই বলে এগিয়ে গেল ঋষি, আর একবার চেঁচিয়ে বলে গেল, "হাতের টা ফেল; বাড়ি যা।"



                  ৪


সাড়ে সাতটা বাজছে। কারেন্ট এসে গেছে অনেক্ষণ। বাড়ি ফিরে ঘরে দরজা দিয়ে বসে আছে রুদ্র। খুব নিরুপায় লাগছে তার। তার ওপর কিছু করতে পারছে না ভেবে রাগ হচ্ছে আরো। মনে মনে বলছে "কাউকে বিশ্বাস করে কিছু বলাই ভুল হয়েছে। এই ভুল আর জীবনে করবো না।" রাগের মাথায় দেওয়ালে দুটো ঘুষি মারলো সে। এমন সময় ফোন বেজে উঠল। নন্দিনী ফোন করেছে।


ফোন রিসিভ করতেই একটা মিষ্টি গলা শুনতে পেল রুদ্র। "হ্যালো? রুদ্র?"


"হ্যাঁ বলো।", সব রাগ যেন নিমেষের মধ্যে উবে গেল তার। মাথায় খালি একটাই নাম ঘুরছে 'নন্দিনী' আর কানে তার কণ্ঠস্বর শুনে বেশ তৃপ্তি পাচ্ছে সে।


"বলছি যে কালকের মতন আগামীকালও আসবে?", খুব মিষ্টি ভাবে অনুরোধ করলো নন্দিনী। " আসলে তোমার সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে আমার। আসবে প্লিজ?"


"ইয়ে কাল তো কোনো টিউশন নেই। তাও দেখছি যদি ম্যানেজ করা যায়।", বলল রুদ্র।


"থ্যাংকস আ লট।"


"এতে থ্যাংকসের কি আছে। আমি তোমার সব আবদারই মেটাবো, তেমনি কথা দিয়েছিলাম তো। তাহলে তুমি যখন আবদার করেছ, আমি নিশ্চই তা রাখবো।"


"আচ্ছা তোমার কী কিছু হয়েছে? না মানে একটু চিন্তিত লাগছে..."


"না ও কিছু না।"


"বলই না।"


"আসলে আমি সিগারেট খাচ্ছিলাম, সেটা আমার বন্ধু ঋষি রেকর্ড করে নিয়েছে, তার পর বলছে আমি যদি সিগারেট না ছাড়ি তাহলে সেই রেকর্ডিংটা মাকে দিয়ে দেবে। আরে তুমিই বলো, আমি আমার জীবনের একটু সুখের জন্যে সিগারেটটা খাই, এতেও নাকি ওর সমস্যা। উফ। কোথায় যে ফেঁসে গেলাম।"


"সুখের জন্যে সিগারেট খাওই বা কেন? আরো কত কি আছে। সিগারেটের টাকা বাচিয়ে ঘুরতে যাও? বা ফুচকা খাও? ফুচকা খেলে তো আমার সব জ্বালা জ্যন্ত্রণা মিটিয়ে যায়। আঃ সেই স্বাদ। ফুচকাটা বুড়ো আঙুল দিয়ে ফাটিয়ে, ওতে ঝাল ঝাল আলু ভরে, টক জলের মধ্যে ডুবিয়ে....আহা! ভাবলেই জিভে জল এসে যায়। তার ওপর কত রকম ভ্যারাইটির ফুচকা বেরিয়েছে এখন। চাটনি ফুচকা, দই ফুচকা, চকোলেট ফুচকা..."


"আচ্ছা, কালকে খাওয়াবো তোমায়।"


"তুমি বিকেলে আসবে?", চমকে গিয়ে বলল নন্দিনী।


"ফুচকা খেতে হলে তাই তো করতে হবে দেখছি। আচ্ছা আমি এবার রাখি। পড়তে বসি। টিউশনে টুয়েলভের সিলেবাস আরম্ভ হয়ে গেছে।"


ফোন রেখে দেওয়ার পর সিগারেট না খাবার প্রতিজ্ঞা নিলো রুদ্র। তবে সেটা কতদিনের বা কত ঘণ্টার সেটা উল্লেখ করেনি সে।



পরেরদিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ "মা মা" করে চ্যাঁচাতে চ্যাঁচাতে মায়ের ঘরে ঢুকলো রুদ্র। 


"কি হয়েছে? বল।", একটা বই পড়তে পড়তে বললেন রুদ্রর মা। আজ রবিবার। তাই স্কুল নেই। রবিবার বিকেল বেলা ঘরে বসে বই পড়াই তাঁর একমাত্র নেশা।


"বলছি একটু বেরোচ্ছি।"


"কোথায়?"


"এই একটু এদিক ওদিক।"


"কার সাথে?"


"একাই।"


"ওহ। যাবি যা। তবে সাবধানে যাবি। রাস্তায় অনেক গাড়ি ঘোড়া বেড়েছে। সব হুহু করে গাড়ি চালায়। রাস্তায় যে লোকজন পায়ে হেঁটেও বেরোতে পারে, তা এদের খেয়াল থাকে না..."


"ঠিক আছে মা। মনে থাকবে। আসলাম।" বলে বেরিয়ে গেল রুদ্র।



"ব্যান্ডেল স্টেশন ঢুকতে আর দু এক মিনিট লাগবে। তুমি টিকেট কাউন্টারের ওখানে দাঁড়িয়ে থেকো, আমি খুজে নেব।", নন্দিনীকে নির্দেশ দিয়ে ফোন কেটে ট্রেন কামরার দরজার সামনে এসে দাড়ালো রুদ্র।


ট্রেন থেকে নেমে টিকেট কাউন্টারের কাছে গিয়ে নন্দিনীকে খুঁজতে বিশেষ অসুবিধে হল না তার। নন্দিনী বলল, "চার্চ যাবে?"


"চলো।"


রাস্তায় একটা টোটো করে চার্চে এসে হাজির হল দুজনে। চার্চে ঢোকার আগে নন্দিনীকে "দাড়াও তো" বলে পাশের একটা দোকানে গিয়ে একটা সিগারেট আর দেশলাই কিনলো রুদ্র। 


"একি একি! তুমি না বলেছিলে সিগারেট খাবে না! খাচ্ছি কেন? ফেলো ওটা। ফেলো!", রুদ্রকে আদেশ করলো নন্দিনী।


"আরে আমি তো একটা করেই খাই। কিচ্ছু হবে না। চিন্তা করো না। আর আমার কোনো চেনা-শোনা এখানে থাকে বলে তো শুনিনি।", নন্দিনীকে ঠাণ্ডা করার জন্য বলল রুদ্র।


এর পর নন্দিনী যদিও কিছু বলল না আর রুদ্রকে, তবে রুদ্র বেশ বুঝতে পেরেছে যে নন্দিনী তার ওপর রাগ করেছে। চার্চ থেকে বেরিয়ে সামনেরই একটা দোকানে গিয়ে নন্দিনীর পছন্দ মত একটা কানের দুল কিনে দিল সে। দুলটা বেশ সুন্দর দেখতে। ঝুমকো লাগানো। বেশ পছন্দ হয়েছে নন্দিনীর। 


রুদ্র বলল, "ইয়ে শুধু ফুচকা খেলে তো হবে না, অন্য কিছুও খেতে হবে। চলো ওই দোকানটায় গিয়ে কিছু খাই। তার পর ফুচকা খাবো।


কথা মতন সামনের একটা ফাস্টফুডের দোকানে গিয়ে চাউমিন অর্ডার দিল রুদ্র। চাউমিন খেয়ে টাকা মিটিয়ে বেরিয়ে এলো দুজনে। 


"চলো এবার ফুচকা খাওয়া যাক।", বলল নন্দিনী।


"এক্ষুনি? এই তো চাউমিন খেলাম। পেট তো ভর্তি। একটু পর খাই?", নন্দিনীকে অনুরোধ করলো রুদ্র।


"না এক্ষুনি খেতে হবে। এর পর আমায় বাড়ি ফিরতে হবে। দেরি হয়ে গেলে মা বকবে।"


"আচ্ছা চলো। ওই যে একজন বসেছে স্টল নিয়ে, ওইটাতেই চলো।"


ফুচকা খাওয়ার পর রুদ্র মানি ব্যাগটা বের করতে যাবে, ঠিক সেই সময় নন্দিনী চট করে টাকাটা মিটিয়ে দিল। 


"কি হল এটা?", জিজ্ঞেস করলো রুদ্র।


"কি আবার হবে? আমার কি ইচ্ছে করেনা তোমায় খাওয়াতে? তোমার জন্যে কিছু করতে?", বলল নন্দিনী।


একটা হাসি দিয়ে বলল, "আচ্ছা বেশ। চলো এবার ফেরা যাওয়া যাক।"


"আচ্ছা চলো।"


বাড়ি ফিরতে ফিরতে সাতটা হয়ে গিয়েছিল রুদ্রর। বাড়ি এসে হাত মুখ ধুয়ে ঘরে ঢুকতে যাবে এমন সময় রুদ্রর মা রুদ্রকে হাঁক দিলেন।


মায়ের ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই রুদ্রর মা বললেন, "আয়। বস। বথা আছে।"


রুদ্রর মা ঘরের চেয়ারে-হাতে ফোন নিয়ে- বসেছিলেন। রুদ্র খাটের ওপর বসে মাকে জিজ্ঞেস করলো, "বলো। কি হয়েছে?"


রুদ্রর মা রুদ্রকে খুব কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলেন, "তুই সিগারেট খাস?"


রুদ্র হকচকিয়ে গেলো। ঋষি কি সত্যিই সত্যিই বলে দিয়েছে ওর মাকে? সত্যিই তো। আজ সে সিগারেট খেয়েছে! তাই তো কথা ছিল। আবার সিগারেট খেলে রেকর্ডিংটা মাকে...রুদ্র খুব আস্তে, ফিস ফিস করার মতন করে বলল, "কেন মা? কি হয়েছে?"


রুদ্রর মা রুদ্রকে তাঁর হাতের ফোনটা দিয়ে বললেন, "এটা তো তুই।"


ফোনটা হাতে নিয়ে দেখতেই চমকে উঠলো রুদ্র! এটাতো আজকের ছবি। রুদ্র যখন চার্চের সামনে দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিল, তখনের তোলা ছবি। তুললো কে? 


"কিরে? কি ভাবছিস? বল?", আবার বললেন রুদ্রর মা।


রুদ্র কি বলবে বুঝতে পারছে না। মাথা নিচু করে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে শুধু।


"তুইই তো? বেশ। আমি তোকে কিছু বলবো না সিগারেট খেয়েছিস বলে। সিগারেট মানুষ একদিনে ধরে না। আসতে আসতে খেতে খেতে নেশায় জড়িয়ে যায়। খাবার প্রথমে যখন ছাড়িস নি তখন আমি বলতেও ছাড়বি না। হ্যাঁ হতে পরে আরো সাবধানে খাবি। কিন্তু ছাড়বি না কারণ নেশা একবার ধরলে ছাড়া শক্ত। তোকে বুঝিয়ে-বাজিয়ে বললেও তুই শুনবি না জানা কথা। মেরে ধরেও কোনো কাজ হবে বলে মনে হয় না। শোন, তোকে বরং একটা উপদেশ দি, যদি কোনো কাজে লাগে। দেখ, সিগারেট ধরাতে যত সহজ ছিল, ছাড়াটা ততই কঠিন। তুই যদি নিজে থেকে আসতে আসতে কমাতে কমাতে ছাড়তে পারিস, তাহলে খুব ভালো কথা, নহিলে আমায় তোকে রিহ্যাবে পাঠাতে হবে। সিগারেট খা। বারণ করছিনা। তবে আমার টাকায় নয়। নিজের টাকায়। যেদিন রোজকার করবি, সেদিন খাস, কিছু বলবো না। কিন্তু এখন নয়।" 


কি বলবে বুঝতে পারছে না রুদ্র। ফোনের স্ক্রীন অফ হয়ে গেছে, তাও সেটার দিকেই তাকিয়ে আছে সে। একটুও নড়ছে না তার চোখ, মাথা। 


"যা ঘরে যা। আমার কাজ আছে কটা, করে নিয়ে রান্না করতে হবে। তুই পড়তে বস।", বলে ঘরের বাইরে চলে গেল রুদ্রর মা।


নিজের ঘরে এসে কি যেন ভাবতে লাগলো রুদ্র। কত আকাশ পাতাল চিন্তা করছে সে কে জানে। 


                  ৫



পাঁচ দিন হয়ে গেছে, এর মধ্যে একবারও সিগারেট ছোঁয় নি রুদ্র। খুব ইচ্ছে করেছে। করছে। তাও নিজেকে সংযত রেখেছে সে। স্নান করে ঘরে চুল আঁচড়াচ্ছে, তখনই ফোনের নোটিফিকেশন টোনটা বাজলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ইউটিউবের নোটিফিকেশন। লেখা, "How to smoke like professionals"। নিজেকে খুব অসহায় লাগলো তার। এই নোটিফিকেশনটা যেন ইচ্ছেটাকে আরো প্রবল করে দিলো, তাও কোনরকমে নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করছে রুদ্র। নিজের মনেই বলল, "না, একদম না। আমি ওই পাড়ার নেশাখোর গুলোর মতন নই। হতে চাইও না! কোনোদিনও না! নেভার!" 


রুদ্রর জীবনে তার কৌতুহলটা যেন সংগ্রামে পরিণত হচ্ছে দিন দিন। রোজ রোজ নিজের সাথে লড়াই করছে সে। নিজেকে প্রতিনিয়ত বোঝাচ্ছে যে সিগারেট শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর, সে এটার থেকে দূরে থাকবে। কিন্তু ওই যে, আমাদের শরীর আর মস্তিষ্ক কমফোর্ট জোনের দিকে বেশি আকৃষ্ট। সেই কৌতূহলবসত একবার সিগারেটের টানটা যতটা সোজা মনে হয়েছিল, এখন সেটাকে দূরে সরানোটা তার চেয়েও বেশি কঠিন মনে হচ্ছে। দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছে যেন। মনে হচ্ছে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। নিজেকে বন্দী বন্দী লাগছে। পড়াশোনায় মন বসছে না কিছুতেই। পড়তে বসলেই সিগারেটের কথা মাথায় আসে আর মনোযোগ বিগড়ে দেয়। রাস্তায় বেরোতে পারছে না। বেরোলেই সিগারেটের দোকান চোখে পরে, আর সেটা রুদ্রকে আরো বেশি আকৃষ্ট করে। আসতে আসতে মানুষের সাথে যোগাযোগও বন্ধ করে দিচ্ছে সে। মায়ের সাথেও খালি ডিনার টেবিলেই দেখা হয় রুদ্রর, নহিলে সারাদিন নিজেকে ঘরে বন্দি করে রাখে। রাতে ঘুম আসে না। তন্দ্রা এলে ঘুমানোর চেষ্টা করতে যাবে তখনই সিগারেটের কথা ভেবে আচমকা ঘুম ভেঙে যায়। চোখের নিচে কালি পড়েছে রুদ্রর। 


দের সপ্তা কেটে গেছে। রুদ্র এখনো নিজেকে শক্ত রেখেছে। একটাও সিগারেট খায় নি। চেষ্টাও করে নি। নিজেকে বাঁচাতে এক মক্ষম উপায় বের করল রুদ্র। তার কাছে যত টাকা আছে, সব শেষ করে ফেলবে সে তার পছন্দের খাবার খেয়ে। তাহলেই সিগারেট খাবার টাকা থাকবে না, আর মন মেজাজও ভালো হয়ে যাবে। মানিব্যাগ খুলে দেখে সাড়ে চারশো টাকা পরে আছে আর। মায়ের থেকে পাঁচশো টাকা পকেট মানি পায় সে। এখন মাসের শুরু, তাই সেরকম খরচ হয়নি। জামাকাপড় পড়ে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বেরিয়ে পড়লো রুদ্র। স্টেশনে বিরিয়ানি খেতে যাবে সে। রাস্তা দিয়ে হাঁটছে তখনই একটা সিগারেটের দোকান দেখতে পেলো রুদ্র। খুব ইচ্ছে করলো একটা কিনে ধোঁয়া ছাড়তে, তবে সে মুখ ঘোরাতেই দেখতে পেলো সেই দোকানের উল্টো দিকে, রাস্তার পাশে একজন ডালবড়া বিক্রি করছে। অনেকদিন ধরে খাবার ইচ্ছে ছিল রুদ্রর, সুযোগ হয়নি। তাই বেশি কিছু না ভেবে সেই দিকেই পা বাড়ালো সে। ডালবড়া খেয়ে আবার স্টেশনের দিকে এগোতে শুরু করল রুদ্র। রাস্তায় হটাৎ ঋষির সাথে দেখা।

"কিরে? ভুলে টুলে গেলি নাকি?", মজা করে বলল ঋষি।


বেশ অবাক হয়ে খানিকক্ষণ তাকালো রুদ্র ঋষির দিকে। তার পর বলল আলত গলায় বলল, "আরে না না। ভুলবো কেন? আসলে এই কদিন নিজের সাথেই সময় কাটাচ্ছি তো, তাই।"


"মানে?"


"মানে নিজের বাড়িটাকেই নেশা মুক্তি কেন্দ্র বানিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। নিজেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত। ডের সপ্তা সিগারেট ছুঁয়েও দেখিনি। খুব ইচ্ছে হয়, তাই যাতে নেশা না করতে পারি, তাই নিজের সব টাকা শেষ করার চেষ্টা করছি, নিজের পছন্দের খাবার খেয়ে।"


"বাঃ। এ তো সুখবর হে।"


"তোর কাছে এখনো আমার ওই সিগারেট খাবার অডিও রেকর্ডিংটা আছে?"


"হ্যাঁ আছে। তুই নেশা থেকে বেরিয়ে আয়, তখন ডিলিট করবো।"


"বিরিয়ানি খাবি?"


"এখন? এই বিকেল বেলা! পাগল! তুই গেল।"


"আচ্ছা তবে আসি রে।", বলে আবার হাঁটতে শুরু করলো রুদ্র।


বিরিয়ানি খেয়ে বাড়ি ফেরার সময় বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যে হতে যায়। স্ট্রিট লাইটগুলো জ্বলে গেছে। রাস্তার ধারে ফুচকাওয়ালারা সবে বসেছে। ফুচকার আলু মাখছে, জল গুলছে। আকাশে বক উড়ে যাচ্ছে। কাক ডাকছে। কোকিল ডাকছে। বাড়ি পৌঁছাতে এখনো আধ রাস্তা বাকি, তখনই রুদ্রর ফোনটা বেজে উঠলো। নন্দিনী। 

"হ্যালো? রুদ্র?", ওপাশ থেকে বলল নন্দিনী।


"হ্যাঁ বলো", বলল রুদ্র।


"বলছিলাম তুমি বলছিলে না যে তুমি সিগারেটের নেশা থেকে বেরোতে চাও, তাও পিছুটানে আটকে...এর জন্যে একটা ভালো উপায় আমার মাথায় এসেছে। ইনফ্যাক্ট গুগলেও তাই-ই দেখলাম।"


"কি?"


"তোমার যখনই সিগারেট খেতে ইচ্ছে করবে, তখনই মুখে চুইং গাম নিয়ে নেবে। এটা নাকি মানুষের মস্তিষ্ককে সিগারেট খাওয়ার থেকে ডাইভার্ট করতে সক্ষম। তুমিও ট্রাই করো, তুমিও পারবে।"


নন্দিনীর কথা অনুযায়ী একটা চুইং গামের ডিব্বা কিনলো রুদ্র। কেনার সঙ্গে সঙ্গেই একটা মুখে পুরে দিলো সে। মিন্ট ফ্লেভার। 



দু সপ্তাহ হয় গেছে রুদ্রর সিগারেট ছাড়ার সিদ্ধান্তের পর। কিছুই পাল্টায় নি, খালি সঙ্গী চুইং গাম আর আরো বিষণ্ণতা । পকেটের টাকা শেষ করে ফেলেছে সে। আর টাকা নেই। মাকেও বারণ করেছে আর টাকা দিতে। খাওয়া দাওয়া কমে গেছে। শরীর ভেঙে পড়েছে। চোখের নিচের দাগ যেন দিন দিন ঘন হচ্ছে। তবে রুদ্রর মনোবল ভাঙে নি। সে পণ করেছে এই নরক থেকে বেরোবে। বেরোবেই! এক রবিবার দুপুরে, খাবার টেবিলে রুদ্রর মা রুদ্রকে জিজ্ঞেস করলো, "আচ্ছা রুটি। ডাক্তার দেখব? সাইকোলজিস্ট?"


কথাটায় ভীষণ রেগে গিয়ে খাবার থালা মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে উচ্চস্বরে পাগলের মতন চিৎকার করে উঠে বলল, "আমি কি পাগল? পাগল আমি? পাগলের ডাক্তার দেখাব! পাগল আমি? হ্যাঁ? পাগল?" আর নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। 


ঘরের ঢুকে মেঝেতে বসে কাদঁছে রুদ্র। একি হচ্ছে তার সাথে? এগুলো কি তার প্রাপ্য? নিজেকে সামলানো যে এতটা কঠিন তা এতদিন অজানা ছিল তার কাছে। চোখের জল মুছে উঠে দাড়িয়ে টেবিলে রাখা পেনদানির ভিতর থেকে একটা সাদা রঙের বক্স কাটার বের করলো রুদ্র। তার থেকে ব্লেডটা বের করে নিজের হাতের দিকে তাকালো সে। কাটারটা হাতের সিরার ওপর রেখে চালাতে যাবে তখনই ভয় বুক কেঁপে ওঠায় হাত থেকে পড়ে গেল কাটারটা। তখনই রুদ্র বুঝতে পারে মৃত্যুকে সে কতটা ভয় করে। তাকে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আসতেই হবে। যেকরেই হোক। চোখ জ্বল জ্বল করে উঠল তার। ফোঁটা ফোঁটা জল তার চোখ থেকে গাল বেয়ে গলা অবধি পৌঁছে গেল। 


                   ৬


আরো এক সপ্তাহ কেটে গেছে। এতদিনে রুদ্র এইসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। রাতে ঘুম না আসা, খাওয়ার ইচ্ছে চলে যাওয়ায় ঠিক করে না খাওয়া, কোনো কাজেই মন না বসা, সারাদিন ঘরের এক কোণে পড়ে থাকা, কারুর সাথে দেখা না করা, কথা না বলা... এমনকি গত তিন দিন ধরে নন্দিনী ফোন করে যাচ্ছে, কিন্তু রুদ্র তা একবারের জন্যেও ধরে নি। রিং ব্যাকও করে নি। ১১৮ টা আনরিড হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ। তার মধ্যে ৬৩টা নন্দিনীর, ১৩টা ঋষির, আর বাকিগুলো অন্যদের। 


নিজের ঘরে শুয়ে ঋষি জানলা দিয়ে বাইরে দেখছে। বেশ কড়া রোধ পড়েছে আজ। কটা পায়রা উড়ছে আকাশে। মাঝে মধ্যে একটা-দুটো এরোপ্লেনও দেখা যাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার, রুদ্রর মা স্কুলে গেছেন। কাজের মাসির টেবিলের ওপর রেখে যাওয়া ছাতুর সরবতটা দশ মিনিট ধরে পরেই আছে। এমন সময় হটাৎ দরজায় ঘন্টি বাজলো। কাজের মাসিই দরজা খুললো। ঋষি এসেছে। তার মুখে এক চওড়া হাসি।


"রুদ্র কোথায় গো?", বলল ঋষি।


"ওই যে, ঘরে। যাও।", বলল কাজের মাসি।


ঋষি ঘরে ঢুকে রুদ্রর পাশে এসে বসলো। রুদ্র এখনো জানলা দিয়ে বাইরে দেখছে। রুদ্রকে ঠেলে বলল, "কিরে? আজকে কি মনে নেই?"


ঋষির প্রশ্নের বেশ কিছুক্ষণ পর রুদ্র নিম্নস্বরে জবাব দিলো, "কি আজ?"


"আরে আজ তো আমাদের রেজাল্ট!"


কোনো উৎসাহ না দেখিয়ে জানলার বাইরে তাকিয়ে থাকলো রুদ্র।


"তুই এবারেও ফার্স্ট হয়েছিস!", ঋষির গলায় আনন্দধ্বনি। 


"ওহ", জানলার দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল রুদ্র।


"তুই খুশি নস?"


"জানি না..."


"কি হয়েছে বল তো তোর? আজকাল মেসেজের রিপ্লাই দিস না, ফোন ধরিস না। কি ব্যাপার? নন্দিনীও বলছিলো আমায় কাল, তুই নাকি ওকেও ফোন মেসেজ করিস না। ঠিক আছিস তো?"


"না না। ঠিকই আছি। তবে ভালো লাগে না আজকাল ফোন মেসেজ করতে। এরকম একা থাকতেই ভালো লাগে।"


"চল বেরিয়ে আসি আজকে বিকেলে কোথাও। যাবি?"


"না রে। আজ না। অন্য একদিন যাবো..."


"আচ্ছা বেশ। ওহ হ্যাঁ ভালো কথা...", বলেই ঋষি তার ব্যাগ থেকে একটা সার্টিফিকেট বের করে রুদ্রকে দিয়ে বলল, "এই নে। তোর রেজাল্ট। সাবধানে রাখবি। টুয়েলভের অ্যাডমিশনের সময় কাজে লাগবে। আমি এলাম এবার। টাটা রে।", বলে চলে গেল ঋষি। রেজাল্টটা হাতে নিতেই তাতে কফোঁটা চোখের জল পড়ে গেল। রুদ্র ভাবলো কিছু দিন আগেও সব কিছু কীরকম অন্য রকম ছিল। আর এখন? সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। অগোছালো। কিচ্ছু আগের মতন নেই আর। 


এর ঠিক দুদিন পর, রুদ্রর সিগারেটের আকুলতা তুঙ্গে উঠে গেল। নিজেকে আর কিছুতেই সামলাতে পারছে না সে। এখন একটা সিগারেট চাইই! সঙ্গে সঙ্গে মানিব্যাগ হাতে নিয়ে কটাকা আছে তা দেখতে লাগলো সে। একটা নোটও নেই। দুটো কয়েন পরে আছে শুধু। একটা এক টাকার আর একটা দু টাকার। মাথায় রাগ চড়ে গেল তার। মানিব্যাগটা ছুঁড়ে জানলার বাইরে ফেলে দিল সে। চোখ-মুখ লাল হয়ে উঠেছে। সে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। কি করছে; মাথার ঠিক নেই। আচমকা দেওয়ালে জোরে ঘুঁষি মারলো সে। ব্যথায় ছটফট করে উঠলো পরক্ষণেই। জানলার সামনে গিয়ে গ্রিল ধরে চিৎকার করে উঠলো। তার পর বিছানার ওপর ধপ করে শুয়ে পড়ে চাদর কামড়াতে লাগলো। ছিঁড়ে গেল তা অনেকটাই। নিজেই নিজেকে চড় মারলো রুদ্র। বালিশের মধ্যে মুখ গুঁজে সে নীরব চিৎকার করে উঠল। খানিকক্ষণ পর হটাৎ একটা কণ্ঠস্বর কানে যেতেই চেতনা ফিরলো তার। বালিশ থেকে মুখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো নিজের বাবাকে! তাঁর মুখে একটা হালকা হাসি আভা । রুদ্রর মনে হল, এই হাসিটাকেই যেন এতদিন তার চোখ খুঁজেছে এসেছে। কয়েক মুহূর্ত পরস্পর পরস্পরের দিকে তাকিয়ে। তারপর রুদ্রর বাবা বললেন, "কিরে রুটি? কেমন আছিস?"


রুদ্র বিস্মিত হয়ে বলল, "বাবা তুমি এখানে?"


"হ্যাঁ। আমি তোর সাথেই দেখা করতে এসেছি।"


"কিন্তু বাবা, আমি যে আর সেই রুটি নেই। অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে আমার জীবনে..."


"জানি তো। কারুর জীবনই এক থাকে না। একটা সময়ের পর সবার জীবনেই পরিবর্তন ঘটে।"


"কিন্তু আমার এই পরিবর্তন যে ক্ষতিকর।"


"কে বলল ক্ষতিকর? অবশ্যই ক্ষতিকর, তবে তোর ক্ষতি করতে পেরেছে কি?"


"মানে?"


"তুই যে নিজেকে শোধরাবার চেষ্টা করছিস, সেটাই তো প্রমাণ যে এ তোর ক্ষতি করতে পারে নি। বেশির ভাগ মানুষই নেশা করার পর মানতে চায় না যে সেটা তাদের শরীরকে ক্ষতি করছে। আর এটাই নেশার সব থেকে বড় নেতিবাচক গুন। কিন্তু তুই তা বুঝেছিস, স্বীকার করেছিস, আর নিজেকে শুধরে নেয়ার চেষ্টাও করছিস।"


"কিন্তু আমি যে একা হয়ে গেছি।"


"সেটা তোর দোষ। তোকে কি কেউ বলেছে একা থাকতে? তুই নিজেই নিজেকে সরিয়ে ফেলেছিস। তুই তাদের কাছে গেলে তারা তোকে আগের মতই কাছে টেনে নেবে।"


"কিন্তু বাবা। আমি যে নিজেকে হটাৎ হটাৎ সামলাতে পারি না..."


"তুই নিজেকে সামলাতে পারিস না কারণ তুই নিজেকে সামলাতে সামলাতে ক্লান্ত হয়ে যাস। নিজেকে বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত হয়ে যাস যে সিগারেট শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।"


"তবে উপায়?" 


"তুই বড় হয়েছিস। নিজেই বিবেচনা করে বের কর..." 


ঘুম ভেঙে গেলো রুদ্রর। বালিশ থেকে মুখ সরিয়ে খাটে উঠে বসলো সে। ঘর অন্ধকার। বিছানা থেকে নেমে লাইট জ্বালিয়ে রুদ্র দেখলো, বিছানার চাদরটা অনেকটাই ছিঁড়ে গেছে। তার ডান হাতের উপরের অংশটাও লাল হয়ে গেছে। যেই বালিশটায় সে এতক্ষণ মুখ গুঁজে শুয়ে ছিল, সেই বালিশটাও ভিজে গেছে চোখের জলে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো সাতটা সতেরো বাজছে। এতক্ষণে মা এসে গেছে নিশ্চই। নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো বাড়ি অন্ধকার। কাজের মাসি দুপুরে বসুন মেজে দিয়ে চলে যায়, আবার পরের দিন আসে। তাই বাড়ির লাইট গুলো হয় রুদ্রকে জ্বালাতে হয়, নহিলে তার মা বাড়ি এলে জ্বালিয়ে দেন। গত কিছু দিন ধরে রুদ্রর মা-ই জলাচ্ছিলেন, তবে আজ অন্ধকার কেন? তবে তিনি কি এখনো বাড়ি ফেরেন নি? বাড়ির লাইটগুলো জ্বালিয়ে দিল রুদ্র। মিনিট পাঁচেক পর বাড়িতে কলিং বেলটা বেজে উঠলো। রুদ্র দরজা খুলতেই তার মাকে দেখতে পেয়ে বেশ আশ্বস্ত হল।


"এত দেরি হল?", জিজ্ঞেস করলো রুদ্র।


"ওই পাঁচালী দি আর পাওলি দি জোর করলো একটা কফি শপে নিয়ে গেলো, তাই দেরি হল। তোর কোনো অসুবিধে হয়নি তো?", বললেন রুদ্রর মা।


"না না।"


ঘরে এসে রুদ্র দেখলো নন্দিনীর চারটে মিসড কল। সঙ্গে সঙ্গে রিং ব্যাক করলো সে। দুবার রিং হতেই নন্দিনী ফোনটা ধরলো।


"হ্যালো। কি খবর? ভুলেই তো গেছো আমায়!", ঠাট্টা করে বলল নন্দিনী।


"না না। তোমায় ভোলা যায় কখনো?", বলল রুদ্র।


"তা? কেমন আছো?"


"ভালো। আগের থেকে বেটার। তুমি?"


"আমিও, ওই... আগের থেকে বেটার।"


"কেন তোমার কি হয়েছিল?"


"Periods।"


"বলো নি তো!"

 

"আমার ৬৩টা আনরিড মেসেজগুলো পড়ো, জানতে পারবে।"


"সরি গো। আমি একদম নিজের মধ্যে ছিলাম না এই কদিন। একদম সরি গো।"


"আরে না না। আমি তো মজা করছিলাম। সরি বলার কি আছে। আমি তো জানি তোমার পরিস্থিতিটা।"


আরো খানিকক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে পড়তে বসলো রুদ্র। পুরনো পড়াগুলো রিভাইস করবে সে। টিউশনে কতদূর কি হয়েছে তাও জানে না। সব জেনে তৈরি করতে হবে টুয়েলভের জন্যে। প্রত্যেকবারের মতন ভালো নম্বর পেয়ে পাস করতে হবে তাকে। পড়া শেষ করে উঠল তখন নটা বেজে চব্বিশ মিনিট হয়েছে। বেশ খিদে পেয়েছে রুদ্রর। পাশের ঘরে গিয়ে মাকে খেতে দিতে বলতেই চমকে উঠলেন তিনি। গত কয়েকদিন যে ছেলেকে ডেকে ডেকে খাওয়াতে হত, সে আজ নিজে খেতে চাইছে! তবে কি সুস্থ হচ্ছে রুদ্র? চোখ ছল ছল করে উঠলো তাঁর। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘরে আসতেই বেশ ঘুম পেলো রুদ্রর। একটা বড় হাই তুলে শুয়ে পড়লো সে। 


ঘুম ভাঙ্গল সকাল সাড়ে সাতটা। অন্যান্য দিনের মতনই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে দুধ বিস্কিট খেয়ে পড়তে বসলো রুদ্র। রুদ্রর মা রুদ্রকে জলখাবারে লুচি তরকারি বানিয়ে দিয়ে স্কুলে চলে গেলেন। রুদ্র বাড়িতে এখন একা। একটু পর অবশ্যি কাজের মাসি আসবে। দুপুরের রান্না করবে, ঘরদোর ঝারপোঁচ করবে, জামা কাপড় কাচবে...রুদ্র তখন হয় পড়াশোনা করবে, নয় ফোনে গেম খেলবে। দুপুরে খাওয়া শেষ করে কাজের মাসি চলে যাবার পর সন্ধে অবধি ঘুমাবে রুদ্র। 


দুপুরে খাওয়া শেষ করে ঘরে যাবে, এমন সময় লোডসেডিং হল। গরমে প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে যেন। বিকেলবেলা একটু হাওয়া দেওয়ায় ছাদে গিয়ে ডন বৈঠক দিচ্ছিল রুদ্র। ৬৮ নম্বর দিয়ে ৬৯ নম্বর ডন দিতে যাবে ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠলো তার। ঋষি ফোন করেছে। 


"হ্যালো? কিরে? মনে আছে সেদিন বলেছিলিস একদিন বিকেলে বেরোবি...আজ বেরোবি?", বলল ঋষি।


"কোথায়?", জিজ্ঞেস করলো রুদ্র।


"আয় না। রাস্তায় ঠিক করে নেব।"


"আচ্ছা আমার বাড়ি আয়। আমি জামা প্যান্ট পড়ছি।"


প্রায় পাঁচ মিনিট পর কলিং বেলটা বেজে উঠলো। রুদ্র দরজা খুলতেই দেখলো তার মা এসেছেন। 


"কোথাও বেরোবি?" জিজ্ঞেস করলেন রুদ্রর মা।


"হ্যাঁ ওই ঋষি আসবে... তুমি এত তাড়াতাড়ি?", বলল রুদ্র।


"লাস্টে দুটো পিরিয়ড অফ ছিল। তাই বেরিয়ে এলাম। আচ্ছা। সাবধানে যাস।"


রুদ্রর মায়ের আসার তিন চার মিনিট পরই ঋষি এলো। রাস্তায় দুজনে ঠিক করলো গঙ্গার ঘাটে গিয়ে বসবে। ঘাটে পৌঁছাতেই রুদ্র তার পকেটের মধ্যে থেকে একটা কৌটো বের করে ছুঁড়ে জলে ফেলে দিল। 


ঋষি জিজ্ঞেস করলো, "কি ছিল রে ওতে?"


"চুইং গাম" বলল রুদ্র।


ঘাটে একটা জায়গা বেছে নিয়ে দুজনে বসার পর রুদ্র ঋষিকে বলল, "আচ্ছা তুই যে বলেছিলিস আমার সিগারেট খাবার রেকর্ডিংটা ডিলিট করে দিবি, করলি না?"


ঋষি হেসে ফেলে বলল, "সেরকম কিছু রেকর্ড করিই নি কখনো।" 


রুদ্রও ঋষির সাথে হেসে উঠলো।।


                 সমাপ্তি



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract