সিগারেট বিরহ
সিগারেট বিরহ
ধূমপান যারা করে তারা জানে এটা ক্ষতিকর কিন্তু তারপরও করে। ধূমপান ডাক্তাররাও করে, প্রচুর ডাক্তার ধূমপান করে।
আপনি হয়ত জানেন না, এমন অনেক মানুষ আছে যাদের ধূমপান না করতে দিলে স্ট্রেসে চলে যায়।
আমি অতি প্রথম যখন ধূমপান করতাম না, তখন একবার পুরো গোল্ডলিফ টেনে অনূভুতি নেওয়ার চেষ্টা করেছি শরীরে বা ব্রেনে কি এফেক্ট হয়? কিছুই পাই নি। বন্ধুকে বললাম কি পাচ্ছিস!? আমি তো কিছুই পেলাম না। ধুরর্!! এর ৩ বছর পর আমি ধূমপায়ী হয়েছি, ভেবেছিলাম এটা আমার সঙ্গী হতেই পারবে না। তখন অনার্সে পড়ি। যদিও পড়াশুনা করাটা আমার ভান, কলেজে নাম ছিল আর কি! একটা মেয়ে বন্ধু সিগারেট খেত কিন্তু দোকানে গিয়ে কেনার সাহস ছিল না। আমি বিশ্বাসযোগ্য ছিলাম, তাই আমাকে বলত কিনে দিতে। আমি কিনে দিতাম, কিন্তু বলতাম কেন খাস? ছ্যাকা খেয়েছিস বলে সিগারেট খাস। ও বলল শুনছিলাম সিগারেট খেলে কষ্ট কমে। বরং কষ্ট আরো বাড়ে। ও আমার বন্ধু হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি ওকেও ঠকিয়েছি। প্রথম চুম্বনটা ওরই প্রাপ্য ছিল। আমি হাসতাম। একদিন চারটা পুরি আর দুটো সিগারেট নিয়ে ওর সাথে বসলাম ওর কাছ থেকে
গ্যাস লাইটারটা নিয়ে একটা ধরিয়ে ফেললাম। ও আমাকে অনেক মানা করেছিল। তোর মত ইনোসেন্ট বাচ্চার মুখে এটা মানায় না। শুনিনি তার কথা। প্রশংসাটা অপমানের মত বিধেছিল গায়। সেই থেকে শুরু। বান্ধবীটির বিয়ে হয়ে গেছিল তিন মাস পর, তারপর সে ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল সিগারেট। কিন্তু আমার সঙ্গী হয়েছিল। আড্ডায়, অপেক্ষায়, চিন্তায়, আনন্দে, বেদনায়, পার্টিতে, "মামা, একটা বেনছন।"
গত একবছর যাবত সিগারেট ছেড়েছি। হার্টের সমস্যা। ডাক্তার মানা করেছে।
হঠাৎ ভাবনায় আসল কেন খেতাম আর কি ই বা পেতাম?
আসলে পান আর সিগারেট ব্যক্তির শুধু নেশা নয়, একটা বন্ধুত্ব, একটা অভ্যাস। সিগারেটে অনুভূতি বা আবেগের হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটে না। কিছুই হয় না। এটাতে এক রকমের আনন্দ পাওয়া যায়। একটা এনজয়। দাদী বলে পান না খাইলে দিন ফুড়ায় না। অন্যকে সিগারেট খেতে দেখি কিন্তু আমি খাই না।তখন মনে হয় সিগারেট আমাকে বলতেছে, "তুই বেইমান, তুই কখনও আমার যোগ্যই ছিলি না।"
দুঃখিত আমার বন্ধু, আমার চিন্তার সাথী, আমার একাকিত্বের শব্দ তোমাকে আর সময় দিতে পারব না। চিরবিদায়।