STORYMIRROR

পূর্নব্রত ভট্টাচার্য্য

Drama Romance Others

2  

পূর্নব্রত ভট্টাচার্য্য

Drama Romance Others

শ্যামলী

শ্যামলী

3 mins
32

নদীর তীরবর্তী একটি ছোট্ট গ্রামে একদিন কতক গুলো শহুরে ছেলে এলো বেড়াতে। সেই গ্রামে শ্যামলী  নামে একটি শ্যামলা বর্নের মেয়ে থাকতো। বাবা মা কেউ ছিল না তার। শহর থেকে আগত সেই ছেলে গুলোর মধ্যে একটি ছেলের নাম ছিল আবির। সে ছিল একটু ভাবুক প্রকৃতির। লেখা লেখি করতে সে খুব ভালোবাসতো। এই নদীর তীরেই বিকাল বেলা ঘুরতে এসে তার সাথে দেখা হয়ে যায় শ্যামলীর।


আবির দেখে একটা শ্যামলা বর্ণের মেয়ে পরনে শাড়ি মাথায় একরাশ খোলা একরাশ কেশ। সে উঠে আসছে নদীর ঘাট হতে কলস কাঁকে। তার উচ্ছল যৌবন যেন  উছলে উছলে পড়ছে ঠিক তার কাঁকের কলসের জলের মতোই।   এক পলক সেই দিকে তাকিয়ে আবির নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়েই থাকে শ্যামলীর দিকে।


ততক্ষনে শ্যামলী চলে আসে একদম আবিরের কাছাকাছি। সম্ভবত আবিরকে ওই ভাবে তার দিকে চেয়ে থাকতে দেখে শ্যামলী বলে ওঠে। কিরে বাবু ; এই ভাবে কি দেখছিস তুই আমার দিকে। শ্যামলীর হিল্লোলিত রূপে আবিষ্ট হয়ে আবির শান্ত গলায় বলে , তোমাকে। সেই শুনে হেসে ওঠে শ্যামলী। আর ছুঁটে পালিয়ে যায় সেখান থেকে।


শ্যামলীকে দেখে সেদিন রাতেই সুন্দর একটি কবিতা লিখে ফেলে আবি। তার কবিতার খাতায়। তারপর আবির অনুভব করলো ; শুধু তার খাতার পাতাতেই  নয় সেই মেয়ে তার অন্তরেও নিজের জায়গা করে ফেলেছে। পরের দিন সেই কবিতা সে শোনায় শ্যামলীকে। তার কদিন পরেই আবিরের বাকি বন্ধুরা যখন ফিরে যাওয়ার মনস্থির করলো। তখন আবির তাদের বললো তোরা যা আমি আর কিছু দিন থাকবো এখানে। অগত্যা সেই কথা শুনে বাকি বন্ধুরা ফিরে গেল।


সেই দিন বিকালে আবির নদীর পাড়ে বসে আছে। শ্যামলী এসে বললো এ কবি বাবু তুই ফিরে গেলি না যে বড়ো। আবির কে কবি বাবু বলেই ডাকতো শ্যামলী। উত্তরে আবির বলল তোমাকে ছেড়ে আমি যেতে পারলাম না শ্যামলী । এই কথা শুনে শ্যামলী বললো ; কেন রে কবি বাবু ? আবির বললো আমি যে তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি শ্যামলী । তোমাকে ছেড়ে আমি কি করে ফিরে যাই । এই কথা শুনে লজ্জায় মুখে হাত চাপা দিলো শ্যামলী। আবির কাছে গিয়ে বাহু বলে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলো শ্যামলীকে। তারপর থেকে তারা ভালোবাসায় বিভর হয়ে রইল বেশ কিছু দিন।


এই কদিন শ্যামলীর বাড়িতেই ছিল আবির। একদিন আবির কে ঘরে না দেখতে পেয়ে শ্যামলী নদীর ঘাটে গিয়ে তাকে দেখতে পেল। দেখলো মন খারাপ করে বসে আছে আবির। শ্যামলী বললো কিরে কবি বাবু তোর মন খারাপ নাকি ।  আবির বললো হ্যাঁ ; আমি কাল চলে যাবো। শ্যামলী বললো তোর বাবা মা আমাকে মেনে নেবে তো কবি বাবু। আবির উত্তরে বললো তুমি যাবে না ; আমি একা ফিরে যাবো। আবিরের মুখে এই কথা শুনে শ্যামলী কাঁদতে কাঁদতে নানান ভাবে আবির কে বোঝাতে চাইলো । তাহলে  তার কি হবে। কিন্তু আবির নিরুত্তর হয়ে থাকে ।


সারারাত ধরে শ্যামলী আবিরকে খুশি করার চেষ্টা করে তার শেষ সম্বল দিয়ে। কেঁদে কেঁদে ভোর রাতে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল শ্যামলী। ঘুম ভাঙতে পাশে তাকিয়ে দেখে তার কবি বাবু নেই। সে তাড়াতাড়ি খোলা কেশ আর মাটিতে লুটিয়ে পড়া আঁচলটা বুকে তুলে নিয়ে ছুটতে ছুটতে নদীর ঘাটে পৌঁছায় । সেখানে গিয়ে সে দেখে সবে ঘাট থেকে নৌকা ছেড়েছে। আর সেই নৌকায় বসে আছে তার কবি বাবু। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়েই কান্নায় ভেঙে পড়ে শ্যামলী। আর চিৎকার করে বলতে থাকে কবি বাবু তুই নৌকা পাড়ে ভেড়া " আমি যাবো , আমি যাবো , আমি যাবো "।


সেই ডাকের কোনো উত্তর আসেনা কবি বাবুর কাছ থেকে। আস্তে আস্তে দূর থেকে দূরে মিলিয়ে যায় নৌকো খানা। আর সেই নদীর জলেই সলিল সমাধি নেয় শ্যামলীর দেহ।  


আজ অনেক বছর কেটে গেলেও অনেক মাঝি মাল্লারা আজও নাকি শুনতে পায় সেই ডাক। " কবি বাবু তুই নৌকা পাড়ে ভেড়া আমি যাবো , আমি যাবো  আমি যাবো "।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama