শুধু তোমারই জন্য
শুধু তোমারই জন্য
বর্ষা এলে শহরটা কেমন বদলে যায়। জানালার কাঁচে টুপটাপ শব্দে একটানা বয়ে যায় স্মৃতির স্রোত। ছাদে জমে থাকা জলে বৃষ্টির ছোঁয়া, বাইরে পাতার ফিসফাস- যেন প্রকৃতির নিজস্ব সুরেলা গোপন ভাষা, সেই 'Psithurism', আর বাতাসে ভেসে আসা 'Petrichor'—ভেজা মাটির সেই চেনা গন্ধে ভিজে যায় আমার মন ।
তুমি চলে যাওয়ার পর এই নিস্তব্ধতা যেন আরও ঘনিয়ে আসে। স্কুলের কাজ শেষে ঘরে ফিরে এই একা দুপুর গুলোতে, ঘরের কোণায় জমে থাকা স্মৃতিগুলো বর্ষার দিনে কেমন যেন আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে।
আজও বৃষ্টি পড়ছে। আমি জানালার পাশে বসে আছি, ঠিক সেই জায়গায় যেখানে তুমি বসতে। তোমার রেখে যাওয়া নীল কাঁথাটা আজও সোফার কোণে পড়ে আছে—নরম তুলোর মতো, এখনও তোমার পছন্দের সাবানের হালকা গন্ধ লেগে আছে তাতে। তুমি বলতে, "বর্ষায় কাঁথাটা জড়িয়ে গল্প শুনতে বেশ মজা লাগে। বৃষ্টির শব্দ আর গল্পের শব্দ মিলেমিশে যেন একাকার হয়ে যায়।"
আজ সেই গল্পগুলো আর কেউ শোনে না। শুধু আমি শুনি, আর হয়তো তুমি—অন্য কোনো শহরের জানালার পাশে বসে, দূর থেকে।
হঠাৎ, দরজার নিচে একটি খাম চোখে পড়ে। মনটা একবার থেমে যায়। কার চিঠি? এই বর্ষায়? হাত কাঁপতে কাঁপতে তুলে নিই। চেনা হাতের লেখা—
‘শুধু তোমারই জন্য...’
ভেতরে ছোট্ট একটা কাগজে লেখা:
“এই বর্ষাটা ভিজে থাকুক আমাদের গল্পে। ফিরে আসা না হোক, মনে পড়াটা তো আর নিষেধ না।”
চিঠিটা হাতে নিয়ে বসে থাকি। জানালার কাঁচে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো ঝাপসা হয়ে যায়, নাকি আমার চোখেই জল? বাইরের বৃষ্টি যেন এক লামহায় (লহমায়) ঘরের ভিতর ঢুকে পুরোনো স্মৃতিগুলোকে আরও একবার জাগিয়ে তোলে।নীল কাঁথাটা জড়িয়ে বসলাম জানালার পাশে, ঠিক যেমন তুমি চেয়েছিলে।
এই চিঠিটা রাখলাম আমি, পুরোনো সব চিঠিগুলোর পাশে। কারণ কিছু ভালোবাসা কখনোই শেষ হয় না—সেগুলো থেকে যায় বর্ষার গন্ধে, পুরোনো কাঁথার স্পর্শে, আর অপেক্ষার নিস্তব্ধতায়।
হ্যাঁ,কিছু ভালোবাসা সত্যিই শেষ হয় না—
সেগুলো রয়ে যায়, শুধু... তোমারই জন্য।

