📜 শেষ চিঠির আগে: নীরব আলো

✍️ এক পথিক

"কথা তাকেই উপহার দাও,  
যে শুনতে চায়।  
আর তুমি ছিলে সেইজন—  
যার জন্য এই অক্ষরেরা অপেক্ষায়।"



 🕯️ ভূমিকা

প্রেম সবসময় শব্দ চায় না।  
কিছু অনুভব বাতাসে ভেসে বেড়ায়—  
যেমন একটা না-বলা কথা,  
অথবা চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু।

এই চিঠিটি সেইসব অনুভবের নীরব প্রকাশ—  
যা বলা হয়নি, তবু অনুভূত হয়েছে।  
যা হারিয়ে গেছে, অথচ রয়ে গেছে আলোর মতো—  
পথ দেখাতে, ভেতরে আলো জ্বালাতে।

এ চিঠি এক পথিকের,  
যিনি ভালোবেসেছিলেন, হারিয়েছিলেন,  
তবুও সেই আলোটা আজও আগলে রেখেছেন।



📌 (এই মুহূর্তে, যখন লিখছি, মনে হলো—তোমার সঙ্গে শেষবার, আরেকবার কথা বলা দরকার।)

---

প্রিয়,

বিকেলের নরম আলো জানালার ফাঁক গলে ঘরে ঢুকছিল, আর তোমার কণ্ঠস্বর যেন সেই বাতাসে মিশে যাচ্ছিল।

মনে আছে সেই বিকেলটা?  
তুমি বলেছিলে—  
"কিছু কথা আছে, যা শুধু বাতাসে ভেসে বেড়ায়, কখনো মুখে আসে না।"

আজ সেই বাতাসে ভেসে থাকা কথাগুলোকেই  
কাগজে ধরে রাখতে চাইছি।

কলমটা কাঁপে… বারবার শুরু করি, আবার থেমে যাই।  
তোমার কথাটাই আজ সত্যি মনে হচ্ছে।



আমাদের ছিল হাজারো কথা বলার উপায়—  
ফোনে, চোখে চোখ রেখে, কিংবা হাতে হাত রেখে।  
তবু, চিঠিটাই যেন সবচেয়ে নিরাপদ।

এখানে কণ্ঠ কাঁপে না, চোখ ভিজে না—  
শুধু অক্ষরেরা নীরবে সাক্ষী হয়ে থাকে  
হৃদয়ের রক্তক্ষরণের।

এই নিস্তব্ধতায় আজও তোমার কণ্ঠস্বর কানে বাজে—  
"লিখে ফেলো, যা মনে আসে..."



মনে আছে সেই বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যাটা?  
নদীর ধারে বসেছিলাম দুজন,  
তুমি নীল শাড়ি পরেছিলে, হাতে সেই পুরনো বইটা—  
যার পাতাগুলো আমাদের আড্ডার সাক্ষী ছিল।

চারপাশে ভিড়, অথচ আমাদের মাঝে জমাট নীরবতা।  
তুমি চুপ, আমিও।  
বিদায়ের সময় অনেক কিছু বলার ছিল,  
তবু কিছুই বলা হলো না।

আজ সেই না-বলা কথাগুলোই কাগজে সঁপে দিলাম,  
যদি কখনো তারা তোমার কাছে পৌঁছায়।



তুমি ভাবছ— এতদিন পর কেন?  
কেন এই হঠাৎ নীরবতার ভাঙন?

আসলে কিছু কথা মুখে বলা যায় না—  
শুধু লেখা যায়।  
কিছু অনুভব কেবল কাগজের পাতায় নিরাপদ থাকে।

মুখে বললে কষ্টটা আরও ভারী হতো।  
চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে হারিয়ে যেতাম—  
তোমার সেই চেনা মোহনায়,  
যেখান থেকে ফেরার পথ আমার জানা নেই।

তাই এই চিঠি—  
যদি কখনো তোমার মন চায় শুনতে,  
তবে এ শব্দগুলো শুধু তোমার জন্য।



আমাদের গল্পটা অসমাপ্তই থেকে গেল।  
কত স্বপ্ন ছিল, কত মানচিত্র এঁকেছিলাম মনে মনে।  
একসঙ্গে চলার দিকনির্দেশ খুঁজেছিলাম।

তবু—

"আমাদের গন্তব্য থেমে গেল সিদ্ধান্তহীনতায়,  
পথেই হারিয়ে গেল পথিক—  
অদূরের ভুল ঠিকানায়।"



এই উপলব্ধি এক শূন্যতা এনে দেয়,  
যা ভাষায় ধরা যায় না।

মনে হয়, সবকিছু থাকতেও কিছু নেই।  
হাতে কম্পাস থাকলেও গন্তব্য অনিশ্চিত।



তবু, তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম—  
তুমি আমার জীবনে যে আলো এনেছিলে, তা নিভে যায়নি।  
হয়তো আর সেই চেনা পথে একসঙ্গে হাঁটা হবে না,  
তবু তোমার দেওয়া সেই আলো  
আজও আমার পথের দিশা।

স্মৃতির সেই মশাল এখনও জ্বলছে—  
হয়তো আগের মতো উজ্জ্বল নয়,  
তবু অন্ধকার দূর করার জন্য যথেষ্ট।

রাতের বেলা যখন পথ হারাই,  
তখনও সেই আলোর রেখা চোখে পড়ে।

তুমি একদিন বলেছিলে—  
"আলো কেবল চোখের নয়, পথেরও।"
আজ বুঝি, তা হৃদয়েরও দিশা।



এই চিঠিটা আদৌ পাঠাব কি না জানি না।  
হয়তো নিজের ডায়েরির পাতাতেই রয়ে যাবে—  
অব্যক্ত যন্ত্রণার নীরব সাক্ষী হয়ে।

তবু লিখে ভালো লাগছে।  
ভেতরের ভারটা একটু হালকা লাগছে।  
যেন এক দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে বেরিয়ে গেল কিছু জমে থাকা কষ্ট।



তুমি যেখানেই থাকো, যেভাবেই থাকো,  
শুধু এটুকু কামনা—  
তোমার আকাশ যেন শান্ত থাকে।  
তোমার মুখে যেন অমলিন হাসি লেগে থাকে।

তোমার সুখেই আমার শান্তি—  
যদিও সে শান্তি আজ অনেক দূরের তারা।



বিদায়ের আগে এই না-বলা কথাগুলো বলে গেলাম।  
যদি কোনো একদিন, আনমনে, এই অক্ষরগুলো তোমার চোখে পড়ে—  
তবে জেনে নিও—

একজন পথিক ভালোবেসেছিল।  
সে পথ চিনলেও ঠিকানায় পৌঁছাতে পারেনি।  
তবু তুমি যে আলো দিয়েছিলে,  
সেই আলো আজও তার সঙ্গী।

অন্ধকার রাতেও সে এগিয়ে চলে—  
একা, কিন্তু আলোকিত।

হয়তো কোনো একদিন, অন্য কোনো মোড়ে, আবার দেখা হবে—  নতুন আলোয়, নতুন গল্পে।

ভালো থেকো, প্রিয়। খুব ভালো।

তোমার,  
এক দিশাহারা পথিক।



🌙 উপসংহার: এক অনুভবের অনুরণন

এই চিঠি কোনো অভিযোগ নয়, কোনো অনুরোধ নয়।  
এটা এক দূরের বাতিঘর—  
যেখান থেকে একজন পথিক এখনো আলো খোঁজে।

সে জানে, ঠিকানা হারিয়েছে ভুল মোহনায়,  
তবু বিশ্বাস রাখে—  
কোনো একদিন হয়তো আবার দেখা হবে—  
নতুন আলোয়, নতুন গল্পে।  
অথবা শুধুই নীরবতায়।