শেষ চিঠি
শেষ চিঠি
আমি প্রত্যেক দিনের মতোই আমার বিছানায় শুয়ে ফোন ঘটছি হঠাৎ মা বললো, বাবু তোর নামে একটা চিঠি এসেছে।
আমি সদ্য কিছু চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম তাই ভাবতে থাকি হয়তো তারই কোনো ব্যাপার, কিন্তু হাতে চিঠিটা পাওয়া মাত্র আমার ভাবনা ভেঙ্গে গেলো।
চিঠিটা খুব একটা বড়ো না কিন্তু চিঠিটা খোলা মাত্র প্রথম লেখাটা দেখে চমকে উঠলাম লেখা প্রিয় বন্ধু , না ১০ বছর আগে হাতে কেউ প্রিয় বন্ধুর চিঠি পেলে চমকে উঠতো না কিন্তু ২০২১ সালে এই প্রিয় বন্ধুর নাম লেখা চিঠি পেয়ে একটু আশ্চর্যই হলাম যেখানে হোয়াটসঅ্যাপ এর চল গা ভাসিয়ে আমরা বেঁচে আছি।
জানিনা কেনো ওই চিঠিটার প্রতি একটা অনুভুতি এলো আমি চিঠিটা তৎক্ষণাৎ পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি আমার ঘরে দরজাটা বন্ধ করলাম ফোনটা এক ধারে রেখে চিঠিটা পড়া শুরু করলাম।
আপনাদের আমি এই চিঠির গল্পের সবটা পরিবর্তন না করেই লিখছি ,
শুরু করি তবে
শুরুতেই লেখা প্রিয় বন্ধু,
আমি সমু, সোমনাথ বেরা তোমার ছোট বেলার বন্ধু।
প্রথম ধাক্কাটা এখানেই খেলাম এই নামে আমার বর্তমানে কোনো বন্ধু নেই ছোটবেলায় কেউ ছিল কিনা সেটাও মনে করতে পারছিলাম না। ওতো না ভেবে আমি পড়া শুরু করলাম।
কাকিমা কেমন আছেন? আশা করি নিশ্চই ভালোই আছেন,
তার মানে এই বন্ধু আমার মাকেও চেনে মনে মনে তাই ভাবলাম কিন্তু সেই মুহূর্তে মাকে নাম জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করলাম না ভাবলাম এখনই পড়ে নিলে হয়তো তারই মনে পড়ে যাবে বন্ধুটি কে।
এর পর আরো লেখা
চিঠিটা পড়ার সময় হয়তো ভাবছো আমি কি ? বলবো নিশ্চই বলবো। আগে বলো ঘরের পাশের আমগাছটা এখনো আছে?
এবার আমি একটু বিরক্তই হলাম আমার ঘরের পাশে আম গাছ আছে সেইটাও সে জানে তবু আমি তাকে মনে করতে পারছিনা।
ছোটো বেলায় আমরা কতই না ওই গাছ ধরে ঝুলতাম আর ওই পাশের পাড়ায় গিয়ে ধরাধরি খেলার কথা মনে পড়ে, কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে সেই গোধূলি বেলা।
মনে মনে ভাবলো হ্যাঁ ঠিকই আমি ছোটবেলায় এই সবই করতাম
আমি আরো পড়তে লাগলাম
মনে পড়েছে আমকে এবার ? নাকি এখনও পড়েনি ? আরে কিছু মনে করোনা তুমি এখন বড়ো হয়েছো কলেজে মাস্টার্স পড়ছো মনে না পড়াই স্বাভাবিক অনেক কাল যে আমি আর তোমার খোঁজ নিইনি ।
সে তার মানে আমার বর্তমান অবস্থার খোঁজখবর রেখেছে।
এবার আমি বিরক্ত হবার জায়গায় একটু ভয় পেলাম আমার ছোটো বেলার বন্ধু কে যে আমার খোঁজ রেখেছে কিন্তু আমি তাকে চিনিনা।
আমি আরো পড়তে লাগলাম
তুমি আর আমি মিলে একসাথে ওই আম গাছের নিচে একটা টিনের বাক্সে কতগুলো কাগজ ফুল বানিয়ে মাটির নিচে পুঁতে রেখে দিয়েছি ।
চিঠির এই অংশে এসে আমি একটু অস্বস্তি বোধ করলাম কিন্তু কেনো জানিনা এর আগের লেখা গুলো এমন ভাবে মিলছে এইটাও কিছুক্ষণের জন্যে সত্যি মনে হতে লাগলো , আমি ভাবলাম যে বন্ধুর নাম আমি মনে করতে পারছিনা তার সাথে কি করেছি সেটা মনে রাখতে না পারা কি খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার ।
চিঠির শেষাংশে লেখা,
বন্ধু তুমি আমার খোঁজ না রাখলেও আমি তোমার খোঁজ রেখেছি বিগত ২০ বছরে তোমার খবর সব রেখেছি।
ইতি , তোমার বন্ধু সোমনাথ বেরা
আমি ভাবতে বসলাম কিছু যদি জানা যায় আমি চিঠির খাম উল্টে পাল্টে দেখলাম যে অ্যাড্রেস সেটাও আমার যে খুব চেনা তা চলে যেতে পারবো হয়তো এই টুকুই।
তখন আমি নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিলাম যে এই চিঠির সত্যতা যাচাই করতে হলে আমাকে আম গাছের নিচে মাটি খুঁড়তে হবে সেখান থেকে কিছু পেলে ঠিক নইলে আমি চলে যাবো এই ঠিকানায় , আমার মধ্যে যেনো এক অদম্য জেদ চেপে বসলো।
সেই দিন রাতের বেলায় আমি একটা কোদাল দিয়ে মাটি কোপাতে প্রস্তুত আমি জানিনা কেনো আমার মধ্যে একটা ভয় আস্তানা নিলো, আমি মাটি কোপাতে শুরু করলাম বেশ কিছুটা কুপালাম আমি তাতেও কিছু পেলাম না , ছোটবেলায় এর থেকে বেশি গর্ত করা সম্ভব নয় এই ভেবে আমি হাল ছাড়লাম আমার কাছে তখন কিছুই বোধগম্য হচ্ছেনা।
পরের দিন আমি ওই ঠিকানায় যাবো তার জন্যে আমি বদ্ধ পরিকর হলাম, এখানে বলে রাখি তার ঠিকানা আর আমার ঠিকানা দুটোই উহ্য রাখলাম আমার বাড়ি থেকে তার বাড়ির দূরত্ব প্রায় তিন ঘন্টার হবে।
সকাল বেলা আমি মাকে বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছি বলে চলে গেলাম ওই ঠিকানায় হাতে আমার ওই চিঠি ।
ঠিকানায় পৌঁছে একটা চায়ের দোকানে নাম বলতেই একবারে চিনে ফেললো তাকে, তার পর একটু অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাচ্ছে দেখে
আমি বললাম, কি কাকু এই ভাবে তাকাচ্ছেন কেনো।
তা কাকু বললেন ,বাবু তুমি কে হও ওর বললাম আমি ওর বন্ধু কাকু ছোটবেলার দেখা করতে এসেছি , চিঠির ব্যাপারটা অপ্রয়োজীয় ভেবে বললাম না,
কাকু আমাকে সঙ্গে করে তার বাড়িয়ে নিয়ে গেলো এক কামরা এর একটা ছোটো বাড়ি, আমি জিজ্ঞাসা করলাম সমু কই ঘর খোলা যে এই কথা শুনে কাকু অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো সে তো গতকাল অ্যাকসিডেন্ট করে মারা গেছে একটা লরি নাকি পুরো পিষে দিয়ে চলে গেছে।এই কথা শোনা মাত্র আমার শরীর দিয়ে একটা শিহরণ খেলে গেলো আমার পায়ের নিচে যেনো কিছুটা মাটি আলগা হয়ে গেলো।
তবু নিজেকে সামলে আমি কাকু কে এই চিঠির কথা বললাম কাকু বললো সমু নাকি মৃত্যুর একদিন আগে চিঠিটা লেখে আর কাকু নিজেই ডাক বাক্সে ফেলে দিয়ে আসে,
কাকুর এই কথাটা শোনার পর আমি বললাম এইটাই হয়তো ছিল তার শেষ চিঠি।
তার ঘরে ঢুকে টেবিলের দিকে তাকাতেই আমার চোখ পড়লো একটা টিনের বাক্সের উপর সেই বাক্সটা অজান্তেই খুলতে মন চাইলো খুলা মাত্র দেখতে পেলাম কতো গুলো রং বেরঙের কাগজের ফুল।