শেষ বসন্ত
শেষ বসন্ত
স্টেশনে নামার পর ট্রেন লাইন ধরে মাত্র দশ মিনিট হাঁটলেই রেল ফাটক।সেখান থেকে বা দিকে ঘুরে দু মিনিট হাঁটলেই শংকর নারায়ণবাবুর বাড়ি।এটাই হল সোজা পথ।
হালকা হলুদ রঙের দোতলা বাড়ি।গেটের পাশে কালো মার্বেল পাথরের উপর বাড়িটির নাম খোদায় করা আছে।শংকর ভিলা।তাও যদি চিনতে অসুবিধা হয় তখন গেটের বাইরে উল্টোদিকে একটা মোটামত নিম গাছ চোখে পড়বে।মিলিয়ে নিয়ে গেটের কলিং বেল দাবালেই হল।কেউ না কেউ আওয়াজ দেবেই।
সেই মত রাজু সামনের গুমটিতে একটা সিগারেট ধরিয়ে লাইন বরাবর আগাতে লাগল।দিনের আলো অনেকক্ষণ আগেই নিভে গেছে।চাপ,চাপ অন্ধকার ঢেকে ফেলছে চারিদিক।পরিস্কার আকাশ।খই ছড়ানোর মত তারাগুলো ফুটে আছে,তবে চাঁদের দেখা নেই।ফুরফুরে বাতাস,এলোমেলো বইছে।স্টেশনের আলোটা ম্লান হয়ে আসতেই রাজু মোবাইলের ফ্লাশ লাইটটা অন করল।আর তখনি সে একটা মিষ্টি গন্ধ নাকে পেল।
কী জানি কিসের গন্ধ!
দুপাশে ঝোপঝাড় তো যথেষ্ট রয়েছ।রাজু সেদিকে একবার আলোটা ঘুরিয়ে দেখে নিল।হতে পারে কোন অজানা ফুলের গন্ধ!বসন্তকাল বলে কথা।এসময় সবার মনে রঙ লাগে।ধনী,গরীব, লতা হোক বা বনস্পতি যৌবন কাউকে ছাড়ে না।সবাইকে সমানভাবে তার সুরভী মাখায়। আবার গন্ধটা দামী কোন ধূপেরও হতে পারে।
পা বাচিয়ে অতি সাবধানে রাজু এগিয়ে চলেছে।আগে,পিছনে দুদিকেই তাকাতে হচ্ছে। কোনদিক থেকে লোকালগুলো হুস করে ঢুকে পড়ে, বলা মুশকিল।সাবধানের মার নেই।তাই রাজু লাইনের ধার ঘেষে চলছে।যাতে ট্রেন দেখা মাত্রই চট করে সরে দাঁড়াতে পারে।
সে যত সামনে এগিয়ে যাচ্ছে,গন্ধটাও তত তীব্র হচ্ছে।কিছুক্ষণের জন্য তো তার ভারী মাথাটা পর্যন্ত হাল্কা হয়ে গেল।অতক্ষণ ধরে রাজ্যের টেনশন তার মাথায় ভর করে ছিল।
মনে,মনে ভেবে দেখল,এইবার যদি তার কাজ নারায়ণবাবুর পছন্দ নাই হয় তবু পরোয়া নেয়।সে ঘুরে আবার চেষ্টা করবে।এই লাইনে এক চান্সে পাশ করা ভাগ্যের ব্যাপার। তার আগে অনেকবার ফেল হতে হয়।তবে মনটাকে ভাঙলে চলবে না। আরো না হয় কিছুদিন থিয়েটারেয় নিজের অভিনয়টাকে শান দেবে।
আগামীকাল নারায়ণবাবুর টেলিফিল্মের কাজ শুরু হচ্ছে। সকালের মধ্যেয় স্পটে পৌছানোর কথা।অথচ রাজু থাকে সেই ষাট,সত্তোর কিমি দূরে মফঃস্বলে।মোট দশজনের টিম।বাকিদের বাড়িগুলো আশেপাশে চার,পাঁচ কিমির ভেতরে। তারা সময়ের মধ্যেয় পৌছে যেতে পারবে।একমাত্র তারই যত অসুবিধা।সমাধানটা নারায়ণবাবু নিজেই বের করলেন।রাজুকে আগের দিন সন্ধে পর্যন্ত নিজের বাড়িতে আসার পরামর্শ দিলেন।রাতটা থেকে সকালে তার গাড়ি করে স্পটে গেলেই হবে।
সেইমতো রাজুও বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিল।সন্ধের আগেই তার নারায়ণবাবুর বাড়িতে ঢুকে যাওয়ার কথা।কিন্তু বাধ সাঁধল ট্রেনের গোলযোগ।যে লোকালটা ধরব করে এসেছিল।সেটা আজ বন্ধ।অগত্যা আরো দেড় ঘন্টা বসে থাকল স্টেশনে। পরের লোকাল ধরার জন্য।সেটাও আবার এক ঘন্টা লেট করে স্টেশনে পৌছাল। সাতে,পাঁচে তার এই অবস্থা!
নাহলে কিছুতেই অত রাত হয় না।
নারায়ণবাবুকে লাস্ট কল প্রথম ট্রেনটা যখন পায়নি তখন করেছিল। তারপর আর করেনি।উনিই বলেছেন,ফোন না করলেও চলবে।সোজা বাড়ি পৌছে যেন করে।
এক জায়গায় রাজু হঠাৎ টাল খেয়ে একটু হলেই পড়ে যাচ্ছিল।মুখ থেকে সিগারেটটা খসে দূরে ছিটকে গেল।লাইনের উপর একটি মেয়ে অন্ধকারে বসে আছে।পরনে নীল পাড়,সাদা শাড়ি।কাঁধে ইস্কুল ব্যাগ।শরীরের সবটুকু শাড়িতে ঢাকা।শুধু মুখটুকু বাদে।যদিও মুখটা দেখা যাচ্ছে না। দুই হাঁটুর মধ্যে গুঁজে রেখেছে।তবু বয়সটা অনায়াসে অনুমান করা যায়।উনিশ,কুড়ির মধ্যে।মেয়েটি যে পায়ে আঘাত লেগে পড়ে গেছে,সে ব্যাপারে রাজু একদম নিশ্চিত।কারণ মেয়েটি হাতদুটোই করে আঘাতপ্রাপ্ত পায়ে মালিশ করছে।
রাজু আলোটা মেয়েটির দিকে করেই সেটা একবার আশপাশে ঘুরিয়ে নিল।কেউ কোত্থাও নেই।শুধুমাত্র ঝিঝি পোকার ডাকটুকুই কানে আসছে।
রাজু প্রশ্ন করল,কে তুমি? এই অন্ধকারে এভাবে বসে আছো কেন?
উত্তরে মেয়েটি হাঁটু থেকে মুখটা তুলল।সেই দেখে রাজু একটা বড়সড় বিদ্যুতের শক খেল।মনে হল মেয়েটির মুখে কোন চামড়া নেই।রক্তাক্ত একটা মুন্ডি!
টসটস করে কাঁচা রক্ত মাটিতে ঝরে পড়ছে!
মুহূর্তে শরীরের প্রতিটা লোম কাঁটার মত দাঁড়িয়ে গেল।সেটা মাত্র কয়েক সেকেন্ড।তারপর আবার রাজুর ঘোর ভাঙল।
মেয়েটি বলে উঠল, ট্রেন লেট ছিল বলে সোজা পথ ধরে তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌছানোর জন্য হাঁটছিলাম।হঠাৎ শাড়ির পাড় লেগে দুম করে পড়ে গেলাম।পা টা মচকে গেল।হাতের মোবাইলটাও কোন দিকে ছিটকে গেছে।পাচ্ছি না।সাহায্যের জন্য কাউকে ডাকারও উপায় নেই।সেই থেকে অসহায়ের মত অন্ধকারে পড়ে রয়েছি।ভাগ্যিস আপনি এই পথ ধরে এলেন।না হলে সারা রাতটা আমাকে বোধহয় এভাবেই কাটাতে হত।পায়ে অত ব্যথা যে ভর দিয়ে উঠতেও পারছি না।
রাজু মনের ভুলটা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠল। মেয়েটি আসলে অপূর্ব সুন্দরী!আর সেটা দেখামাত্রই রাজুর বুকে একটা ভাললাগার শিহরণ খেলে গেল।মোবাইলের ফ্লাশ লাইটে মেয়েটিকে অত অপরূপ লাগছে যে রাজু চোখ সরাতে পারল না। এমন নির্জন,অন্ধকার এক মায়াবী রাতে একজন সুন্দরী মেয়ের সাহচার্য পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার! এমন দিন যে তার রুক্ষ্য জীবনে কখনো আসবে কল্পনাও করেনি।
মেয়েটির যেমন টানা চোখ!তেমনি নাক আর ঠোঁটের আকৃতি!সব যেন ঈশ্বর সময় নিয়ে গড়েছেন!
রাজুর তো সেই "দিলবালে" সিনেমায় অন্ধকারে মাচিশ কাঠির আলোতে অজয় দেবগনের দেখা রবিনা ট্যান্ডনের মুখটা মনে পড়ে গেল।তারসাথে সেই গানটাও।অবিকল সেই রকম দেখতে মেয়েটি।
রাজু তাই মেয়েটির জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠল।কাছে গিয়ে ঝুঁকে দেখল।সত্যিই মেয়েটির পা টা মচকে অল্প বেঁকে গেছে।
রাজু বলে উঠল,ইস!..সত্যিই তো।এক মিনিট।
বলেই মেয়েটির পা টা ধরে টেনে সোজা করতে লাগল।মেয়েটি যন্ত্রণায় চেঁচিয়ে উঠল।রাজু সাবধান হয়ে থেমে গেল। একে তো রাত! তার উপর মেয়ের চিৎকার!শুনতে পেয়ে কেউ এসে পড়লে একটা মারও মাটিতে পড়বে না।সবকটা তার ঘাড়েই পড়বে।
তাই বলে উঠল,এখন উপায়?আপনাকে তো কোনরকমে ডাক্তারখানা পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে।আপনি তো দেখছি এক পাও নড়তে পারছেন না। আর পা টেনে সোজা করারও উপায় নেয়।
মেয়েটি সে কথা শুনে আফসোসের গলায় বলে উঠল,কী আর করবেন?...যান তাহলে।আমি এভাবে একা পড়ে থাকি সারারাত।
পরক্ষণেই মেয়েটি সুর পাল্টে আবার বলে উঠল,কিন্তু একটা কথা বলুন তো,আমার জায়গায় যদি আপনার গার্লফ্রেন্ডের এরকম অবস্থা হত...আপনি কি একথা বলে চলে যেতে পারতেন?
কথাটা শুনে রাজুর বুকে আর একটা রক্তের টেউ ছলক করে উঠল।তার পঁচিশটা বসন্তের ফুল একসাথে মাথা দুলিয়ে নেচে উঠল।
রাজু দুঃখী গলায় উত্তর দিল,সরি ম্যাডাম।আমার কোন প্রেমিকা নেই।আসলে কাঠ বেকার তো।থিয়েটার করে বেড়ায়।অল্প অভিনয়টা শিখেছি..এটুকুই যা গুণ।তাই কোন মেয়ে সাহস করে হাত ধরেনি।
মেয়েটি নির্দ্বিধায় তার একটা হাত রাজুর দিকে বাড়িয়ে দিল।
সেই হাতটার দিকে তাকিয়ে রাজু আবার একবার চমকে উঠল।যে রক্তটা এতক্ষণ ধরে নাচ করছিল,এখন তা বুকের মধ্যে জমাট বেঁধে গেল।
একটা বীভৎস রকমের লোমস তীক্ষ্ণ নখওয়ালা কালো হাত চোখের সামনে ভেসে উঠল।মনে হল এটা একটা নরখাদক কোন জন্তুর হাত।
মাত্র কয়েক সেকেন্ড।আবার চোখের ভ্রম মিটে গেল।
মেয়েটি একইরকমভাবে হাতটা বাড়িয়ে বসে আছে।ঠিক হাত নয়।যেন কোন দৈবতুলি!এতটুকু কোথাও খুঁত নেই।হাত থেকে সোনা গলে,গলে পড়ছে।তেমনি সরু শালুক ডাটার মত আঙুল!
রাজুর বুকে রক্ত গলে আবার উথল,পাথাল শুরু করল।
মেয়েটি অল্প হেসে বলে উঠল,কেউ হাত বাড়ায়নি তো কী হয়েছে?..আজ থেকে আমিই না হয় তোমার গার্লফ্রেন্ড হলাম।কই ধরো হাত।শুধু ধরা নয়।কোলে উঠিয়ে নিয়ে চলো আমায়।
রাজুর মনে হল,সে কোন স্বপ্নের দেশে হারিয়ে যাচ্ছে!এতদিন ধরে নিজের উপর জমে থাকা অভিমানের পাহাড়টা নিমেষে ধুয়ে,মুছে পরিস্কার হয়ে গেল।নিজেকে বলিউডের কোন হিরোর থেকে কম মনে হচ্ছে না।
মেয়েটিকে দুহাতে তুলতেই রাজুর খেয়াল হল।এতক্ষণ ধরে যে একটা মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছিল। সেটা আসলে মেয়েটির গায়ের সুগন্ধ!সেই মন মাতানো গন্ধ আর মেয়েটির ফেনার মত শরীরের স্পর্শে রাজু আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল।কল্পনা,বাস্তব,স্বপ্ন সব মিলেমিশে একাকার হয়ে দিকশূণ্য কোন নাবিকের মত ভাসতে লাগল অথৈ জলে!মেয়েটির দুচোখের তারা তাকে চুম্বকের মত টানছে।সুখের স্বর্গবিহারে এখন সে মত্ত।কোথায় যাচ্ছে?...কোনদিকে যাচ্ছে..কিছুই তার খেয়াল হচ্ছে না। অপার্থিব এক মোহটানে সে হেঁটে চলেছে।
দুচোখে হঠাৎ একটা তীব্র আলোর ঝলকানি এসে ধাক্কা খেল।সঙ্গে,সঙ্গে কিছু মানুষের হৈ,হট্টোগোল আর চিৎকার,চেঁচামেচি কানে ভেসে এলো।
রাজু চোখ খুলে দেখল,চারিদিকে আলোর বন্যা বইছে।আর সে শুয়ে আছে একটা হাসপাতালের বেডে।দুজন ডাক্তার চিন্তিনমুখে তার দিকে চেয়ে রয়েছেন।তাদের একজন শান্তভাবে বলে উঠলেন,বলো তো আমি কে?
রাজু বলে উঠল, নিশ্চয়ই ভগবান।
অন্যজন তার কথা শুনে অল্প হাসলেন।তারপর আবার প্রথমজন বলে উঠলেন,আমরা ভেবেছিলাম,তোমার মেমোরি লস হতে পারে।গুড নিউজ।
রাজু উঠতে গিয়েই থমকে গেল।তার জাঙ থেকে পা দুটো নেই।কাটা পড়েছে।
বুঝতে পেরে রাজু পাগলের মত চিৎকার করে উঠল,ডাক্তারবাবু।একি!...একি হল আমার?..কেন..কেন ..কীভাবে হল এসব?
একজন ডাক্তার তার কাঁধে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনার দিয়ে বলে উঠলেন,শান্ত হও ভাই।এটাই বাস্তব।তাকে মেনে নিতে শেখো।সেটাই তোমার পক্ষে মঙ্গল।চাইলে তুমি কৃত্রিম পা ব্যবহার করতে পারো।এখানে সবরকম সুবিধে আছে।চিন্তার কোন কারণ নেই।টেক ইট ইজি।তোমার যা অবস্থা হয়েছিল তাতে করে বাঁচানোই সম্ভব হত না।বরাত জোরে বেঁচে গেছ।ট্রেনের ধাক্কায় পটরিতে ঢুকে পড়েছিলে।পা দুটে কাটা গেছিল বলেই রক্ষে।না হলে তোমার বডিটায় খুঁজে পাওয়া যেত না।
অন্যজন বলে উঠলেন,তুমি অত রাতে লাইনের উপর কী আত্মহত্যা করার জন্য হাঁটছিলে?ট্রেনের হুইসেল...আলোর ঝলকানি কিছুই কী মাথায় যায়নি?..না ইচ্ছে করেই দাঁড়িয়ে পড়েছিলে?
রাজু চোখের কোণ থেকে অশ্রু কটা মুছে ভারী গলায় বলে উঠল,আমি তখন নেশায় ছিলাম ডাক্তারবাবু।তীব্র প্রেমের নেশা।একটা অশরীরী মেয়ের ছলনায় আমি দিশাহারা হয়ে পড়েছিলাম।কোনরকম পার্থিবজ্ঞান আমার মধ্যে ছিল না।
উত্তরে ডাক্তারবাবু বলে উঠলেন, ওই জায়গায় আজ পর্যন্ত কম করেও পঞ্চাশটার মত এক্সিডেন্ট ঘটেছে। লাস্ট দু বছরে সবথেকে বেশি।ওখানে ভূতুড়ে অস্বিস্ত অনেকেই আগে টের পেয়েছে।সেই কারণেই সন্ধ্যের পর এখন আর লাইন ধরে কেউ বাড়ি ফেরে না। তুমি হয়তো ব্যাপারটা জানতে না। তাই ঢুকে পড়েছিলে। ওই পথটা এড়িয়ে গেলে তোমার এই এক্সিডেন্টটা হত না।
মনটাকে শক্ত করে বেঁধে রাজু বলে উঠল,টের আমিও পেয়েছিলাম ডাক্তারবাবু।কিন্তু গ্রাহ্য করিনি।আমি তখন ওর শরীরীনেশায় মাতাল হয়ে পড়েছিলাম।
তারপর গলাটাকে উঁচু করে আবার বলে উঠল,আচ্ছা ডাক্তারবাবু আমি কী কৃত্রিম পা নিয়ে মঞ্চে অভিনয় করতে পারব?
----সব পারবে।যদি মনের জোরটা না হারাও।
রাজু চোয়ালদুটো পাথরের মত শক্ত করে বলে উঠল
---আমি পারব।পারতেই হবে।জীবনের সব নেশা আমার কেটে গেছে ডাক্তারবাবু।এবার আমি নিজের কাছে জিততে চাই।একবার মোবাইলটা দিন তো, বাড়িতে একটা ফোন করে খবরটা জানাই।
------সমাপ্ত----