Sayantani Palmal

Drama Horror Classics

4.7  

Sayantani Palmal

Drama Horror Classics

শেষ বিচার

শেষ বিচার

8 mins
533


শেষ বিচার


(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ দুই বিঘা জমি’ কবিতাটি থেকে অনুপ্রাণিত এই গল্পটি। কবিগুরুর প্রতি এই অর্বাচীন লেখিকার সামান্য শ্রদ্ধার্ঘ্য)


রাত্রি প্রায় দুই প্রহর হইবে জমিদারের আয়েশি বপুখানা ফরাসের উপর শায়িত। রোশনি বাইয়ের রূপের মৌতাত লইবার পর তিনি এক আনন্দময় ক্লান্তিতে সুখনিদ্রায় মগ্ন। সুরা, তাম্বুল আর রোশনি বাইয়ের ত্রহ্যস্পর্শে আর এস্থান ত্যাগ করিবার অবকাশ পান নাই তিনি। দেওয়াল ঘড়িখানা রাত্রি বারোটার ঘোষণা করিল। ঝাড়বাতিটা বহুক্ষণ হইল জমিদারের ন্যায় শয্যা গ্রহণ করিয়াছে। ঘরের মধ্যে শুধু একখানি পিতলের প্রদীপ পিলসুজের উপর অর্ধজীবন লইয়া জাজ্জ্বল্যমান। প্রদীপের মৃদু আলোয় ঘরের মধ্যে আলো আঁধারির ছায়াছবি।



    "কত্তামশাই, ও কত্তামশাই শুনতেছেন।"এক নারীকন্ঠের আহ্বানে জমিদারমশাই চেতন-অবচেতনের মধ্যে দোদুল্যমান অবস্থায় সাড়া দিলেন," হুঁ।" " আমগাছটা যে কে কেটে নিল কত্তা।" ফিসফিস করে বলল সেই নারী। মুদিত চক্ষে স্খলিত কণ্ঠে জমিদার শুধালেন, “কে?" "বলছি আপনার এক শত্তুর এয়েচে। আপনার সাধের বাগানবাড়ি সে ধ্বংস করবে বোধ হচ্ছে।" কথাগুলি কর্ণকুহরে প্রবেশ করিতেই জমিদারের তন্দ্রা ছুটিয়া গেল। সত্বর উঠিয়া বসিয়া দেখিলেন সেই নারীমূর্তি দ্বার হইতে অন্তর্হিত হইল। একঝলক তাহাকে দেখিয়া লতু গয়লানি বলিয়া ভ্রম হইলেও পরক্ষণেই আপন মনে হাসিয়া ফেলিলেন। কলিকাতার মদিরা আর লাখনৌর রোশনি বাই এই দুইয়ের প্রভাবে নেশাটা কিঞ্চিৎ অধিক হইয়া গিয়াছে নইলে ওই মেয়েমানুষটাকে লতু গয়লানি বলিয়া বোধ হয়! সে তো ছয়মাস পূর্বেই গলায় দড়ি দিয়াছে। মেয়েমানুষের বুদ্ধি একেই বলে! তোর স্বামী খাজনা দিতে পারে নি। তুই যদি জমিদারকে একটু খুশি করিয়া দিতিস তাহলে খাজনাও মুকুব হইত আর তোর সংসারটাও বাঁচিয়া যাইত। আত্মহত্যা করিয়া তোর সতীত্ব রক্ষা হইল কিন্তু সংসারটা তো ভাসিয়া গেল। ছেলেমেয়েগুলা নাকি অনাহারে পটল তুলিয়াছে আর রসু গয়লা তো পাগল হইয়া পথে পথে ঘুরিতেছে।



এই মেয়েমানুষেটা মানু দাসী বলিয়াই জমিদার মশাই ধারণা করিলেন। মানু দাসীর গড়নটাও লতু গয়লানির ন্যায়। যৌবনের পাত্র যেন কানায় কানায় পরিপূর্ণ, দেখিলেই প্রথম রিপু জাগ্রত হয়।

   সত্যই বাগানের দিক হইতে একটা আওয়াজ আসিতেছে। জমিদার হাঁক পাড়িলেন, " সর্দার, সর্দার। বাগানে কে?" কোনও প্রত্যুত্তর পাইলেন না। বাগানবাড়িতে বেশি লেঠেল নাই আজ কিন্তু একলা মাধব সর্দারই দশজন মানুষের মহড়া লইতে সক্ষম। বেশ কয়েকবার ডাকাডাকির পর জমিদার মশাই বিরক্তি সহকারে গাত্রোত্থান করিলেন। বন্দুকখানা লইয়া বাহিরে আসিয়া মাধব সর্দার বা তার লেঠেল বাহিনীর কারুর দেখা পাইলেন না। মনে মনে বলিলেন, " হারামজাদাদের মরণ ঘুমে ধরেছে । মজা টের পাবে সকালে। একটাকেও ছাড়ব না।" আকাশে ত্রয়োদশীর চাঁদ নিশ্চুপ হইয়া এই দুনিয়ায় রঙ্গলীলা দেখিতেছে যেন। জমিদার মশাই ভাল করিয়া ঠাহর করিয়া দেখিলেন আমগাছের নিকট এক ছায়ামূর্তি ঘুরিয়া ফিরিয়া বেড়াইতেছে। পৌরুষে আঘাত লাগিল তাঁর। এ তালুকে কার স্কন্ধে দুইটা মাথা যে জমিদারের বাগানবাড়িতে মধ্য রাত্রে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে! একলাই বাগানে প্রবেশ করিলেন জমিদার মশাই। বিলাতি ফুলের গাছ, বাহারি পাতার সারি সব পার হয়ে আমগাছের নিকট উপস্থিত হইয়া বজ্রগম্ভীর কণ্ঠে শুধালেন, " কে রে? কে তুই?" সেই রহস্যময় ছায়ামূর্তির কন্ঠস্বর শান্ত বাতাসের ন্যায় ভাসিয়া আসিল, " আমি উপেন গো কত্তামশাই।" জমিদার গর্জন করিয়া উঠিলেন, " কে উপেন?" স্বল্প চন্দ্রালোকে জমিদারের মনে হইল ছায়ামূর্তি কিঞ্চিৎ হাসিল। "আমায় ভুলে গেলেন কত্তা! এত বড় তালুক-মুলুকের মালিক হয়েও যার শেষ সম্বল দুই বিঘা জমি না নিলে আপনার বাগানবাড়ি মাপে কম পড়তেছিল আমি সেই হতভাগা। তিনমহলা প্রাসাদের বাসিন্দা হয়েও যার কুঁড়ে ভেঙ্গে আপনার এই আমোদ করার ঘরখানা তুলেছেন আমি সেই সর্বহারা উপেন।"


জমিদার বক্রোক্তি করিলেন, " ওহ, তুই সেই সাধুবেশী চোর উপেন! " উপেন হাসিয়া কহিল, " সাধুবেশী চোরই বটে। কলিকালে যে ছল করে দুর্বলের সহায়-সম্বল হরণ করে সেই হয় উত্তম আর সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী গাছের দুইটা ফল নিলেও হয় তস্কর!" উপেনের কথায় কর্ণপাত না করিয়া জমিদার তাচ্ছিল্য পূর্ন স্বরে কহিলেন," হঠাৎ গাঁয়ে এসেচিস কি উদেশ্যে?আবার চুরির মতলব আছে নাকি?" "নাড়ির টান গো কত্তা, নাড়ির টান। এ জমির সাথে উপেনের নাড়ির টান আছে। এই আম গাছ আমার বিশ বছর আগে হারান মায়ের স্মৃতি জাগায়। বৃষ্টি ভেজা এই জমির সোঁদা গন্ধে আমার বাপের ভালোবাসা ভাসে গো কত্তামশাই। বাপ-পিতেমোর ভিটের মায়া যে বড় মায়া। এ জমির প্রতিটি কোণায় তাদের আশীর্বাদ আছে গো কত্তা তাই তো শেষ দেখা দেখতে এলুম।" উপেনের কথা বিশ্বাস হয়না জমিদারের। তাঁর অন্তরে সন্দেহ জাগরূক হয় যে ইহার মনে নিশ্চয় মন্দ অভিপ্রায় আছে। আমগাছের তলায় আধো অন্ধকারের মধ্যেই উপেনের দিকে বন্দুক তাক করিয়া হুঙ্কার ছাড়েন, " তুই একটা মিথ্যাবাদী, সাধুবেশী চোর। সত্যিকথা বল কি উদ্দেশ্য নিয়ে এত রাতে এসেচিস ?" উপেন কহিল, " যার সর্বাঙ্গ মিথ্যার পরতে আবৃত সে অন্যের সত্য দেখবে কীরূপে?" উপেনের ব্যঙ্গক্তি শুনিয়া ক্রোধে সর্বাঙ্গ জ্বলিয়া গেল জমিদারের। এত সাহস এই ভিখিরিটার! তিনি তো ভালোয় ভালোয় জমিটা চাহিয়া ছিলেন। উপেন রাজি না হইতে তবে না তিনি বাধ্য হইয়া বাঁকা পথে জমিটা হস্তগত করিয়াছিলেন।


এখন তাঁহাকে মিথ্যাবাদী বলিতেছে শয়তানটা। এ ধৃষ্টতার মার্জনা নাই। জমিদারের রাগ সে বড় ভয়ংকর বস্তু উচিত-অনুচিত কিছু মান্য করে না। অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা না করিয়া উপেনের বুকে নিশানা করিয়া বন্দুক চালাইয়া দিলেন। কিন্তু ঈশ্বরের একী লীলা প্রত্যক্ষ করিতেছেন তিনি! তাঁহার বন্দুকের গুলি উপেনের শরীর ভেদ করিয়া প্রাচীর গাত্রে আঘাত করিল অথচ উপেন নির্বাক, নিশ্চল হইয়া দন্ডায়মান। সহসা উপেন উচ্চস্বরে হাসিয়া বলিল," কত্তামশাই আর অল্পক্ষণের ভিতর যে শরীরটা গঙ্গার ঘাটে চিতার আগুনে পুড়ে এক মুঠা ছাই হয়ে যাবে তাকে আপনার বন্দুকের গুলি আঘাত করবে কী করে?" প্রকৃতি বেশ শীতল, অল্প অল্প হিম পড়িতেছে কিন্তু তাহার মধ্যেও জমিদারের চওড়া কপালে স্বেদবিন্দু দেখা দিল। " কি কইতেছিস শয়তান? আমাকে ভয় দেখাবার মতলব করতেছিস?" " না গো কত্তা মশাই। আমার মত সামান্য মানুষের কি ক্ষমতা যে আপনাকে ভয় দেখাই। গেল বার যখন ভিটে-মাটির টানে এ গাঁয়ে ফিরেছিলাম আম চুরির দায়ে আপনি একশ ঘা বেত মারার আদেশ দিয়েছিলেন আর আপনার পাইকরা নিজেদের মনের আর হাতের উভয়েরই সুখ করে নিয়েছিল । এ গরিবের শরীর সইতে পারে নি গো কত্তা। গায়ে ধুম জ্বর নিয়ে এ গ্রাম ছেড়ে ছিলাম। অভুক্ত, অসুস্থ অবস্থায় এক তীর্থযাত্রী দলের সঙ্গ ধরে বহু কষ্টে বিশ্বনাথ ধামে পৌঁছাই। এক সন্ন্যাসীর আখড়ায় ঠাঁইও মিলে যায় কিন্তু শরীর আর টিকল না। সন্ন্যাসীরা চেষ্টা করেছিলেন, তুচ্ছ বলে অনাদর, অবহেলা করেননি কিন্তু ভগবান যার নামে ঢেরা কেটে দিয়েছেন তাকে আটকে রাখে সে সাধ্য কার। জানেন কর্তা চোখের সামনে আলো মুছে অন্ধকার নেমে আসার ঠিক আগের মুহুর্তে আমার এই পূর্ব পুরুষের ভিটে, এই আমগাছ সব ছবির মত ভেসে উঠল সামনে। সেই মায়ার টানেই এই দুনিয়া থেকে মুক্তির আগে শেষ বারের জন্যে এলুম এই গাঁয়ে। এ গাঁ যে আমার বড় আপন। দেখুন, দেখুন কত্তা, আপনার বাইজি বাড়ির জায়গায় আমার কুঁড়েখানা কেমন দেখা দিতেছে আমাকে।"


জমিদার অবাক হইয়া দেখিলেন কোথায় তাঁর সুরম্য প্রমোদ ভবন তার পরিবর্তে উপেনের অধুনা লুপ্ত কুটিরখানি শোভা পাইতেছে! সময় বিশেষে বিজ্ঞ মানুষও মূর্খের ন্যায় আচরণ করেন, নির্ভীক ব্যক্তিও ভীত হইয়া পড়েন। দোর্দন্ড প্রতাপশালী, তিনখানা তালুকের দন্ড মুন্ডের কর্তা জমিদার মশাইও বন্দুকের গুলি দিয়া এক বিদেহীর প্রতিরোধ করিবার প্রচেষ্টায় রত হইলেন। বন্দুকের গুলি নিঃশেষ হইলে জমিদার মশাইয়ের চেতনা ফিরিল। শূন্য বন্দুক হস্তে জমিদার মশাইয়ের শিরদাঁড়া বাহিয়া হিমশীতল স্রোত বহিয়া গেল। উপেন তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইয়া অট্টহাস্য করিয়া কহিতেছে," কত্তা মশাই যেদিন ডাক আসবে ওপার থেকে ধন-দৌলত সবই রইবে, সঙ্গে যাবে শুধু পাপ-পুণ্যের হিসাব খাতাখানা। আপনার খাতাখানায় তো আবার পুণ্যের পাতা সব সাদা।" জমিদারের পা দুখানি কে যেন মাটিতে প্রোথিত করিয়া দিয়াছে। তিনি পলায়ন করিতে অক্ষম। অকস্মাৎ লক্ষ্য করিলেন চারিপাশ হইতে আরও কিছু ছায়ামূর্তি এদিক পানে আসিতেছে। শুষ্ক কম্পিত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন," কে ? কে তোমরা?" দুইটি শিশুর হাত ধরিয়া আসা নারীর অবয়ব কহিল, " আমি লতু গয়লানি গো কত্তা। ঝি-ব্যাটাকে লিয়ে উপেন দাদার সঙ্গে দেখা করতে এয়েছি। " লাঙ্গল কাঁধে ছায়ামূর্তি বলিল, "আমি মাধা বাগদি গো। ভাবলুম আমরা পাপী-তাপি মানুষ কবে মুক্তি পাব জানিনে। আমাদের উপেন কত পুণ্যি করা, সাধুসঙ্গ করা মানুষ । সে তো সত্বর মুক্তি পাবে তার দর্শন কইরে আসি একটু।" বেঁটে খাটো ছায়ামূর্তিটা বলিয়া উঠিল," আমি হাট পাড়ার নিতাই গো কর্তা মশাই । উপেন কাকার সাথে আপনার পাপ-পুণ্যির হিসাবখানা কেমন করে হয় দেখতে এলুম।" অকস্মাৎ শিশু দুইটা মায়ের হাত ছাড়াইয়া ছুটিয়া আসিল জমিদারের পানে। “একটু ফ্যান দাও না গো খাবো, দাও না একটু ফ্যান।" জমিদারের দুই হাত ধরিয়া নাড়াইতে নাড়াইতে আধো আধো স্বরে বলিতে লাগিল তারা। হায় রে অদৃষ্ট, ভগবানের সৃষ্ট এই পৃথিবীতে অন্ন নয়, দুগ্ধ নয় দুইটা অবোধ প্রাণের আর্তি শুধু একটুখানি ফ্যানের জন্য! শিশু দুইটির ক্রমাগত ক্রন্দনে জমিদারের কানের পর্দা ফাটিয়া যাইবার উপক্রম হইল। “চুপ কর হতভাগারা।" চিৎকার করিয়া উঠিলেন জমিদার। পরমুহূর্তেই অনুভব করিলেন তাহাদের হাত সাঁড়াশির ন্যায় তাঁহার কব্জিতে চাপিয়া বসিতেছে। তাহাদের অক্ষি কোটরের স্থানে দুইখান আগুনের গোলা। আতঙ্কিত জমিদার মশাইয়ের হাত হইতে বন্দুকটা খসিয়া পড়িল। চিৎকার করিবার প্রচেষ্টা করিলেন কিন্তু কন্ঠ অবরুদ্ধ, কোনও আওয়াজ বাহির হইল না। এমতাবস্থায় লতু গয়লানি তাঁহার সামনে আসিয়া দাঁড়াইল। রাত্রির আঁধার ভেদ করিয়া তাহার গলায় মোটা রশির কালো দাগটা স্পষ্ট দেখিতে পাইলেন জমিদার। " কত্তা, আপনার তো আমাকে খুব পচন্দ ছিল। আমি আপনার কাছে এয়েচি ভাইলো করে দেকুন।" লতুর শরীর হইতে ধীরে ধীরে চামড়া খসিয়া পড়িতেছে। জমিদারের সম্মুখে এখন একটি নারীকঙ্কাল দাঁড়াইয়া আছে।তাহার খিলখিল হাসিতে অতি বড় সাহসীও শিহরিয়া উঠিবে।


" কত্তা গো নয়ানজুলির পাঁকে বড় হাঁসফাঁস লাগে।" মাধা বাগদি অগ্রসর হইতেছে। তাহার সর্বাঙ্গে কালো কালো কীট কিলবিল করিতেছে। জমিদারের দমবন্ধ হইয়া আসিতেছে। এক অদৃশ্য লৌহমুষ্টি যেন তাঁহার গলা চাপিয়া ধরিয়াছে। " কর্তা মশাই আপনার লেঠেলরা কি সুন্দর আমার মাথা ফাটিয়েছে দেখবেন?"। নিতাই তাহার স্কন্ধ হইতে অবলীলায় মস্তকখানা খুলিয়া ফেলিল যেন রথেরমেলায় কেনা কাঠের পুতুল। দশ গজ দূর হইতেই নিতাইয়ের অতিমানবিক লম্বা কঙ্কালহস্ত মস্তকটি জমিদারের সম্মুখে উপস্থাপিত করিল। রক্তমাখা বীভৎস মুন্ডটি দেখিয়া আতঙ্কে চক্ষু বুজিলেন জমিদার। তাঁহার হৃদস্পন্দন ক্রমশ বৃদ্ধি পাইতেছে। লতু, মাধা আর নিতাইয়ের অট্টহাসিতে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়া উঠিতেছে। এতক্ষনে আবার উপেন মুখ খুলিল, " ভগবানের দুয়ারে শেষ বিচারের আসর বসেছে গো কত্তামশাই। চোখটা খুলুন। দেখুন কারা আসতেছে।"।আত্মহত্যা করা লতু, মাধব সর্দারকে দিয়ে নয়ানজুলির পাঁকে পুঁতে দেওয়া মাধা, লেঠেল দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া নিতাইয়ের পশ্চাতে আরও ছায়ামূর্তি জড়ো হইতেছে। জমিদার জানেন সংখ্যাটা আরও বাড়িবে।


  পরদিন প্রত্যুষে মাধব সর্দার বাগানবাড়ি হইতে ছুটিতে ছুটিতে আসিয়া জমিদারগৃহে দুঃসংবাদটা দিল। জমিদার মশাই বাগানের আম গাছটার তলায় পড়িয়া আছেন। বন্দুকটাও পাশে আছে। বোধহয় দেহে আর প্রাণ নাই। মাধব আফসোস করিয়া কহিল যে গতরাত্রে তাহাদের দুই চোখে যেন কাল ঘুম নামিয়া আসিয়াছিল নতুবা হয়ত এই অঘটন প্রতিরোধ করা সম্ভব হইত। জমিদার মশাই অত রাতে বাগানে কেন গিয়াছিলেন কেহই জানে না। আর একটা অদ্ভুত কান্ড ঘটিয়াছে, আমগাছটা একরাতের মধ্যে সম্পূর্ণ শুকাইয়া গিয়াছে। সবুজের লেশমাত্র নাই। রুক্ষ,শুষ্ক ডালপালাগুলি লইয়া যেন অন্তিম প্রহর গুনিতেছে।খবর শুনিয়া কান্নাররোল উঠিল। দাসীরা কানাকানি করিতে লাগিল বাগানবাড়িতে বাইজি লইয়া মচ্ছব করিবার ফল। এত পাপ কি ভগবানে সয়? গ্রামের লোকে দেখিল রসু পাগলা ঊর্ধ্ববাহু হইয়া নৃত্য করিতে করিতে পথে পথে ঘুরিয়া বলিয়া বেড়াইতেছে," ভগবানের শেষ বিচার হয়েচে / জমিদার চোখ উল্টে মরেচে।"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama