স্বপ্ন কি অলৌকিক
স্বপ্ন কি অলৌকিক
স্বপ্ন কেন দেখি আমরা জানি না, আগাম কি হতে চলেছে সেটা কি স্বপ্ন আমাদের জানান দেয় তাও আমরা জানি না।
অনেকেই বলেছেন স্বপ্নের কোন বাস্তবমূল্য নেই। তবুও সেই মূল্য নির্ণয়ে বর্তমানে স্বপ্ন নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা সবচেয়ে চর্চিত বিষয়। জার্মান মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড
বলেছেন, স্বপ্ন হলো মানুষের অবদমিত ইচ্ছা-আকাক্ষার ছদ্মবেশী পূর্ণতা লাভ।
তবে স্বপ্নের বিষয়টি যতোই জটিল বা ব্যাখ্যাতীত হোক না কেন, আসন্ন বিপদের আগের মুহূর্তে কেউ কেউ এর আভাস পেতে পারেন। এর পক্ষে জোরালো যুক্তি হাজির করেছেন মনোবিজ্ঞানী রিচার্ড ওয়াইজম্যান তার লেখা ‘প্যারানরমালিটি’ বইয়ে। দাবি করেছেন স্বপ্নে মানুষ সত্যি সত্যিই এমন কোনো ইঙ্গিত পেতে পারেন।
অলৌকিক না লৌকিক, মানুষের পক্ষে অসম্ভব লোকাতীত।স্বপ্নের মধ্যে ভবিষ্যত দর্শন এবং তার পূর্ণতা লাভ মানে দৈবিক বা ভৌতিক ক্ষমতা অথবা অলৌকিক ক্ষমতাও অনেকে ভেবে নেন। তথ্য ও বক্তব্য ছেড়ে মোদ্দা কথায় আসা যাক, কিছু অবিশ্বাস ও বিশ্বাসের পাঁচিলের পরিধি দীর্ঘ করা যাক।
জানি না আপনারা আমার কথাগুলো আদৌ বিশ্বাস করবেন কিনা। আসলে নিজেরও সময় লেগেছে বিশ্বাস করতে, আবারও বেশি বকবক না করে আসল কথায় আসি।
ছোটো থেকেই একটা জিনিস আমি খেয়াল করেছি আমার স্বপ্ন থেকে উঠে আসা ভাবনাগুলো কোনো না কোনো ভাবে সত্যি হয়ে যায়!
সাধারণ ভাবেই এই সামান্য কথাগুলো আমি আমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছিলাম, কিন্তু একটা ঘটনা আমার স্বপ্নগুলোর বাস্তবতার বিশ্বাসের ভিত আরো শক্তপোক্ত করেছিল।
তখন বোধহয় আমি ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেনীতে পড়ি। কোনো এক দুপুরবেলা ভাতঘুমের মাঝে দেখা একটা স্বপ্ন কেমন অস্থির অস্থির করে তুলেছিল আমায়। থাকতে না পেরে পাশে ঘুমিয়ে থাকা মাকে তুলে বলেছিলাম যে -"আজ কাউকে সাপে কামড়াবে দেখো মা,আমি স্বপ্নে দেখেছি! আর আমার মনও বারবার এককথা বলছে।" মা কথাটার গুরুত্ব দেননি, হেসে বলেছিলেন ঘুমিয়ে পড়ো, সারাদিন গল্পের বই পড়ে তোমার মাথাটা গিয়েছে।
আমিও আর কিছু বললাম না, বিকেল থেকে সারাটা সন্ধ্যা মনখারাপের রেশ নিয়েই কেটেছিল। হঠাৎ রাত এগারোটা নাগাদ মায়ের কাছে একটা ফোন আসে যে, আমার মনি মানে মাসিমনিকে সাপে কামড়েছে, হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানি না মা কি বুঝলেন, আমাকে বুকে চেপে হাউহাউ করে কেঁদে ছিলেন সেদিন।
সেই থেকে মায়ের বিশ্বাস যে আমার মধ্যে নাকি কোনও অলৌকিক ক্ষমতা বিরাজমান! আমি অবশ্য এখনো সম্পূর্ণ ভাবে মানি না, কিন্তু এর পরেও বেশ কিছু ঘটনা মনে ভাবনা তৈরি করে যে অলৌকিক ক্ষমতা সত্যিই আছে হয়তো।
যেমন আরেকটি স্বপ্ন দেখেছিলাম আমাদের পাড়ার এক দাদাকে নিয়ে। ছয় বছর ধরে অনেক চেষ্টা করেও চাকরি হয় না তার। একদিন আমার সাথে দেখা হতে রাস্তায় আমি বললাম যে এই বছরের শেষেই মিষ্টি খাওয়াতে হবে কিন্তু তোমার চাকরির খবরে। দাদা উত্তর দিয়েছিলো সে আর এইজন্মে নাই। আমি বললাম আমি স্বপ্নে দেখেছি আর আমার স্বপ্ন মিথ্যা হয়না। আমি ও সেই দাদাও সেদিনের আলাপচারিতা ভুলেই গেছিলাম প্রায়। কিন্তু অক্টোবরের শেষ দিকে একদিন বিকেলে আমার বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে হাজির সেই দাদা, কারণ সে সত্যি সত্যিই চাকরি পেয়েছিল । সেদিনও আমি আশ্চর্য হয়েছিলাম নিজের এই ক্ষমতা নিয়ে। কিন্তু গুরুত্ব না সেদিনও দিয়েছি না আজও। তবুও এইসব ছাড়াও আমার স্বপ্ন অর্থাৎ ঘুমপাড়ানি দেশের জগৎ নিয়ে এক ইচ্ছে আছে।
সবাই বলে যে মানুষ মারা গেলে ভূত হয় যদিও ভূত মানে অতীত,তবুও মৃত্যুর পর পঞ্চভূতে বিলীন হলে তাকেই আমরা ভূত বলি।
এখনো অবধি এরকম কোনো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হইনি আমি, তবে চাই যেন হয়। আমার দিদান মারা যাওয়ার পর পিন্ডদানের সময় আমি পুরুতমশাইকে বলেছিলাম যে পিন্ডদান মানেই তো সমস্ত ইহলোকের মায়া থেকে আত্মার মুক্তি দেওয়া,কিন্তু আমি চাই না আমার দিদান মুক্তি পাক। তিনি যেন একবার যেন আমার সামনে এসে দাঁড়ায়, আমি আমার দিদানকে আর একবার দেখতে চাই, মা খুব বকেছিলেন সেদিন আমার এইসব কথা শুনে। কিন্তু আমি আজ ও চাই যে একবার হলেও যেন দিদানের দেখা পাই সে স্বপ্নে হলেও। কারন আমার ধারণা আমার স্বপ্নে দেখা সমস্ত কিছুই যদি সত্যি হয় তবে হয়তো দিদানকেও আবার একবার দেখতে পাবো।