স্বজন
স্বজন
"বাচ্চার জন্ম দেওয়ার সময় মনে ছিল না? ওটা কেটে ঝুলিয়ে রাখ!"
কথাগুলো এক শ্বাসে বলে গেল স্মিতা! এ ক'বছরে সম্পর্কটা তিক্ত হতে হতে এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যে একেক সময় মনে হয় সব ছেড়ে ছুড়ে চলে গেলেই ল্যাঠা চুকে যায়। কিন্তু বাঁধ সাধে এক রত্তি মেয়েটা।
সমরেশ কথা গুলো শুনল। রাত তখন ২টো প্রায়। সে সাধারণত স্মিতার এহেন তীক্ষ্ণ শ্লেষের উত্তর দেয় না। কথায় কথা বাড়ে। সে আগেও দেখেছে। আগুন লাগলে জল ঢালতে হয়, পাল্টা আগুন দিলে তাতে কিছুই লাভ হয়না।
"ঠিক আছে, তুমি ঘুমাও, আমি চেষ্টা করছি।"
এই বলে ছোট মেয়েটা কে আদর করে কোলে তুলে নিলো সে।
"ঘুমাবি না মা? অনেক রাত হলো যে!"
"বাপি, মা কি কেটে নেওয়ার কথা বলল?"
সমরেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল একটু। স্মিতার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে তার নিজের ক্লান্ত অবসন্ন শরীর টাকে ঘুম পাড়িয়ে ফেলেছে।
"বাপি বলো না!"
"সে অনেক গল্প মা। আজ নয়, একদিন বলব। আসলে তোর মা সারা দিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে তো, এই সময়টায় খালি একটু বিশ্রাম পায়। যেদিন থেকে কারখানাটা বন্ধ হল, সেদিন থেকে সে একা লড়ে যাচ্ছে। সে ভাবে আমি কিছু বুঝিনা, কিন্তু বিশ্বাস কর মা, আমি বুঝি। কিন্তু কি যে করি! চেষ্টা তো কম করলাম না..."
কথা গুলো বলে যেন নিজেকেই আশ্বস্ত করছিল সমরেশ, হঠাৎ তাকিয়ে দেখে, ছোট্ট মেয়েটি যখন যেন ঘুমিয়ে কাদা হয়ে গেছে। পরম স্নেহে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় সে।
সে ঘড়ির দিকে তাকায়, প্রায় ৩টে বাজে। আজও ঘুম আসবে না মনে হচ্ছে।
রাস্তার একটি কুকুর কখন থেকে কেঁদে চলেছে, যেন স্বজন হারানোর যন্ত্রণা ভোলার চেষ্টা করছে সে।