জীবন সংগ্রাম
জীবন সংগ্রাম
ছেলেটা বাইক চালানো বন্ধ করে ফোন টা ধরলো।
"উফ্ মা, আবার ফোন করলে কেনো?"
ওপাশের কথা শোনা গেলো না। খালি এপাশের কণ্ঠস্বর শোনা যায়।
"হ্যাঁ, এই শেষ পিৎজা টা দিয়ে আসছি। অত চিন্তার কিছু নেই। জ্বর কম আছে।"
ছেলেটা ফোন টা রেখে হাতঘড়ি টা দেখে। রাত ১০:৩০ বাজে। মা কিছু বোঝে না। সংসার টা চলবে কি করে কাজ না করলে! একটু জ্বর হয়েছে বলে কি বাড়িতে বসে থাকা যায়?
রাতের সুনসান রাস্তায়, সে ঝড়ের গতিতে নিজের বাইক নিয়ে উড়ে চলে। এটা দিতে পারলে, আরেকটা ডেলিভারি হয়ে যাবে রাত ১১ টার মধ্যে। যত বেশি ডেলিভারি, তত বেশি পয়সা। এমনই চুক্তি তার কোম্পানিটার সাথে।
লক ডাউন একটু শিথিল হয়েছে, তাই এখন তবু কিছু উপার্জন করা যাচ্ছে, না হলে এই ক'মাস কি ভাবে কেটেছে, ভাবলে এখনও ভয় করে।
বহু বছর আগে বাবা এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তখন রাজেশের বয়স নেহাৎ ১২ বছর। দুটি বোন কে নিয়ে টানাটানির সংসার। আজ বাবা বেঁচে থাকলে হয়ত অন্যরকম জীবন হত তার। কিন্তু বিধাতার লিখন কে খন্ডাবে। মা কোনো রকমে রাজেশ কে বড় করেছেন। মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্বেও শুধু পয়সার অভাবে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়। এই সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে সে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলে।
গন্তব্য আসতে এখনও কিছু টা দেরি। মাথা টা কেনো যেনো ঝিম ঝিম করছে আজ। জ্বরটা কি আবার বাড়লো? সে বেশি কিছু ভাবতে পারলো না। এটা নিয়ে দুটো ডেলিভারি করতেই হবে। কলকাতা নিউ টাউন যেনো ঘুমোচ্ছে। দূরে স্নেহ দিয়া অ্যাপার্টমেন্টের ঝকঝকে লাইট চোখে পড়ে।
এভাবে বেশ কিছু দুর চালানোর পর সে খেয়াল করল, জি পি এস বলছে সে পৌঁছে গেছে। এই তো মেঘা টওয়ার। সুবিশাল প্রাচীর বেষ্টিত ঝা চকচকে আধুনিক অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স। গেটে সিকিউরিটি দাড়িয়ে।
"কাহা জানা হায় আপকো?"
"পিৎজা ডেলিভারি। রবি শুক্লা। ফ্ল্যাট h১০ সে অর্ডার হ্যা।"
"ওকে। ইধার আইয়ে। টেম্পারেচার দেখনা হ্যায়।"
"আরে দাদা, কম হ্যায়। চেক হুয়া হ্যায় তো কোম্পানি সে।"
সে শুনলো না। মাথার কাছে থার্মাল গান টা রেখে বোতাম টিপলেন। মুহুর্তের মধ্যে একটা টিং করে আওয়াজ হল।
রাজেশের কপালে ভাঁজ পড়ল। এই রে। এবার এটা না দিতে পারলে, একে তো দিনের পুরো বেতন পাবে না, তার ওপর জ্বর লোকানোর দায়ে জরিমানা হতে পারে, এমনকি চাকরিও যেতে পারে।
কিন্তু কি অদ্ভুত! সিকিউরিটি কিছুই আপত্তি করলেন না।
"যাইয়ে!"
আর কথা না বলে চটপট ফ্ল্যাটে পৌঁছে গেলো সে। বেল বাজিয়ে গৃহকর্তা কে পিৎজা টা দিল।
"সিকিউরিটি টেম্পারেচার চেক করেছে তো?"
"হ্যাঁ স্যার।"
"আচ্ছা।"
"স্যার রেটিং টা দিয়ে দেবেন প্লিজ।"
"আচ্ছা!"
সে চটপট নেমে এলো। মনে একটু যেনো অপরাধবোধ কাজ করছে। যা সময় পড়েছে। জ্বর যদি সত্যিই বেড়ে থাকে, সেটা সেই ভয়ংকর অসুখের পূর্বাভাস নয়ত, যার জন্য এত নিয়ম চারিদিকে?
তার থেকে তাহলে আজকে অনেকের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়বে যে!
সে আর ভাবতে পারলো না। যা হবে হবে।
রাজেশদের কি বাঁচার অধিকার নেই?