Sayandipa সায়নদীপা

Drama Inspirational

3.4  

Sayandipa সায়নদীপা

Drama Inspirational

রূপকথা

রূপকথা

2 mins
17.4K


"জ্যেঠিমা, স্যার আছেন?”

“থাকবেনা তো কোথায় যাবে! ভেতরের ঘরে গিয়ে দেখ গে বুড়ো কাগজপত্র নিয়ে বসে আছে।”

অন্যদিনের মত আজ জ্যেঠিমার কথা শুনে হাসলো না তুর্য, নিঃশব্দে ঘরের ভেতর ঢুকে দেখলো হ্যারিকেন জ্বেলে মেঝে ভর্তি কাগজপত্র নিয়ে ডায়েরিতে কিছু লিখতে ব্যস্ত করুনাময়ী প্রাইমারি স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক তীর্থঙ্কর বাবু। বয়েসের কারণে দৃষ্টি কমে এসেছে, কারেন্ট না থাকলে দেখতে ভীষন অসুবিধা হয় কিন্তু তাও কাজে বিরাম নেই তাঁর। তুর্য নরম গলায় ডাকে, “স্যার।”

“হুঁ কে?” মুখ তুলে তাকান তীর্থঙ্কর সেন।

“স্যার আমি।”

“ওহো তুর্য, বল কি খবর?”

“স্যার বলছি যে বইঘর থেকে রূপকথার কপি ফেরত এসেছে।”

“কটা?”

“প্রায় সবগুলো। সর্বসাকুল্যে মোটে পাঁচটা কপি বিক্রি হয়েছে এবারে।”

“রেখে যা ওদের।”

তুর্যর রেখে যাওয়া ব্যাগটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন তীর্থঙ্কর বাবু। সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে সেই কলেজ জীবন থেকে ইচ্ছে ছিল ছোটোদের জন্য মনের মত একটা পত্রিকা বের করবেন, সেই ইচ্ছেরই রূপান্তর “রূপকথা"। চাকরি পাওয়ার পর ইচ্ছেটা অবশেষে পূরণ হয়েছিল। টানাটানির সংসারে শত গঞ্জনা সহ্য করেও পত্রিকা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সব দিন তো আর সমান যায়না; রিটায়ারমেন্টের পর রোজগার কমলেও সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ছাপার কালি কাগজের খরচ। তবুও তখন দমে যাননি তীর্থঙ্কর বাবু; কিন্তু পাঠক যখন বিমুখ তখন সম্পাদক আর কি করবে! ছোটছোটো শিশুগুলোর মোটামোটা পড়ার বই আর স্মার্টফোনের ভিড়ে আর এঁটে উঠতে পারছেনা “রূপকথা”।

সারারাত ধরে অদ্ভুত স্বপ্ন দেখছেন তীর্থঙ্কর বাবু, তাঁর রূপকথার রঙিন পৃথিবীটা এসে গ্রাস করছে একটা ধূসর দানো। সকাল হতেই রূপকথা ভর্তি ভারী ব্যাগটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন তিনি। তাঁর মানস কন্যা আজ মৃতা, সৎকারের ব্যবস্থা করতে হবে।

“এই যে মাস্টারমশাই ভালো হলো আপনাকে পেয়ে গেলাম, আপনার দুটো চিঠি এসেছিল কাল। দিতে আসতে পারিনি।” স্থানীয় পোস্ট অফিসের পিওনের হাত থেকে খাম দুটো নিলেন তীর্থঙ্কর বাবু। কি মনে হতে ওখানেই খুললেন ওগুলো। একটা রূপকথার প্রতি অকুন্ঠ ভালোবাসা জানিয়ে লেখা একটা চিঠি, সেই সাথে পরের সংখ্যা পাঠানোর জন্য আব্দার আর অন্যটা রূপকথার জন্য পাঠানো একটা গল্পের পাণ্ডুলিপি। বিগত দশ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে নিয়মিত আসে এই চিঠি দুটো, প্রেরকেদের কোনোদিনও দেখেননি তীর্থঙ্করবাবু, তারাও দেখেনি এই প্রবীণ সম্পাদককে কিন্তু তবুও তারা চেনেন পরস্পরকে। তিনজনেই যে একই রূপকথার রাজ্যের বাসিন্দা। চোখের কোণটা চিকচিক করে উঠলো বৃদ্ধ সম্পাদকের; হাতের মুঠোয় নতুন করে অনুভব করলেন রূপকথার হৃদস্পন্দন…


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama