রিতার লাশ
রিতার লাশ
মেয়েটির বয়স অনুমান ৩২ এর মতো।
পাতলা ছিপছিপে চেহারা শ্যামলা আর মধ্যমা সুন্দরী। আমি তখন স্কুলে পড়ি।
রিতার বাড়ি আমাদের এলাকায় নয়।
হটাৎ করে কয়েকটা দিন ধরে তাকে আমার বাড়ির সামনের বাড়িতে দেখছি। সে এলাকায় নতুন। নতুন মানুষ দেখে স্বভাবতই কৌতুহল জন্মে।
পরে জানলাম সেখানে নাকি ভাড়ায় থাকছে। শুনলাম যে, বিয়ে হয়েছে, তবে এখন সাথে হাসব্যান্ড নেই।
একাই থাকে। তবে তার কয়টা বিয়ে হয়েছে এটা নিয়ে সঠিক তথ্য এলাকার লোকজনের নেই।
মেয়েটির নাম খুব চেষ্টা করে ও মনে করতে পারছি না। ভুলে গেছি বলা যায়।
আচ্ছা তার নাম দিলাম রিতা। এই নামেই গল্পটা চলুক পাঠক।
তবে গল্পটা সত্য।
রিতার চলাফেরা, চাহনি আর শরীরে জমানো চমকানি নিয়ে এলাকায় বড়দের মনে আর মুখে বেশ কানাঘুষা থেমে নেই। একটা নতুন নারী। তার উপর দেখতে একেবারে খুব মন্দ নয়। আরেকটা বিষয় রয়েছে, তা হলো মেয়েটির চরিত্র। যেসকল মেয়েদের চরিত্র কিঞ্চিৎ খারাপ হয় সেখানে পুরুষ মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। নারীর শরীরের উপর পুরুষের আসক্তি নতুন নয়। আমি এতে দোষ দেখিনা। নারীর প্রতি পুরুষের আকর্ষণ নারী কে আরও সুন্দর করে তুলেছে। থাক সে কথা।
বড়দের গল্পের ভিতর কান পেতে এসব শুনি।
শুনতে ভালোই লাগতো। হয়তো বয়সের কারণে। গুপ্ত জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরন্তন একটা সত্য ঘটনা।
সকাল হলে একটা শাড়ি পরে, রোজ রোজ একটা নতুন শাড়ি। কোন দিন শরিষা ফুলের মতো হলুদ শাড়ি, নয়তো মেঘমুক্ত আকাশের মতো নীল শাড়ি। হাতে পেপার, সংবাদপত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
অবশ্য পেপার ওয়ালি নামেই এলাকায় তার পরিচিতি পায়।
সংবাদপত্র নিয়ে বাজারে বিভিন্ন দোকান আর বাড়িতে বিক্রি করত।
কিন্তু তার সাজ পোশাক দেখে তো আক্কেলগুড়ুম হতে হয়।
বেশ ফিটফাট হয়ে সন্ধায় কোথায় যেন রোজ রোজ বেরিয়ে পড়তো। রাতে ফিরত।
আর কখন ফিরত সে খবর আমার কাছে নেই। তবে রোজ রোজ যে বেরিয়ে পড়তো সেটা কয়েক দিন আমি ও দেখেছি। কিন্তু তাকে জিজ্ঞাসা করার মতো উপযুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আমি ছিলাম না। এটা বড়দের বিষয়।
অল্প দিনের ভিতর একটা নতুন কথা এলাকায় রটে গেছে।
আমাদের গ্রামের একটা ছেলে নাকি রিতা কে বিয়ে করেছে। তবে ঘরসংসার? একসাথে করতে দেখিনি।
সেই ছেলের বাড়িতে বউ বাচ্চা আছে। তাই রিতাকে আগের মতো থাকতে হয়। হয়তো এভাবেই রিতা বহু পুরুষের সাথে ঘর সংসার করে আসছে।
আর রিতার এই সংসার যে কতদিন টিকে থাকবে তারই গ্যারান্টি নেই।
এর আগেও নাকি আরও তিনটা বিয়ে রিতার হয়েছিল।
যাক সে কথা।
হটাৎ করে রিতা আমাদের এলাকা ছেড়ে চলে গেল। আর কোথায় গেল সে খবর কারো কাছে নেই। বহুদিন আর তাকে দেখিনি। সে চলে যাওয়ার সাথে সাথে এলাকার বড় মানুষ গুলো ও কেন জানি নীরব তার বিষয় নিয়ে। এমন মেয়েদের মোহ টা হয়তো খুব ক্ষনিকের জন্য। এই সমস্ত মেয়েদের মানুষ মনের ভিতরে ঠাঁই দেয় না। এই চাহিদা টা জৈবিক। এর বেশি কিছু আর মনে হয় না।
এভাবে প্রায় তিনমাস পর হটাৎ বাজারে আমার সাথে তার দেখা হলো।
আমাকে দেখেই কাছে এগিয়ে এসে, কি রে বাবা কেমন আছিস? যেহেতু আমার বাড়ির সামনের বাড়িতে সে কিছুদিন ছিলো তাই আমাকে মনে রেখেছে। সেখানে থাকতে তো কমবেশি দেখা হতোই।
বললাম ভালো। তাকেও জিজ্ঞেস করলাম,
আপনি কেমন আছেন?
বললো ভালো আছে,।
কই আছেন এখন?
আর সে নাকি এখন বাজারের পাশে একটা ভাড়া বাসায় থাকছে। তাই বললো।
আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। আর কখনো তার সাথে আমার দেখা বা কথা হয়নি।
এরপর আরও কিছুদিন চলে গেছে। মাস যায়। পরে জানতে পারি যে, সে নাকি
এরই মধ্যে আরও কয়েকটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে রিতা। আমার গ্রামের ছেলেটা নাকি তাকে তালাক ও দিয়েছে। সাব রেজিস্ট্রার অফিসের এক লোকের সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে বেশ খবর বের হতে শুরু করেছে।
কারো কারো মুখে শুনি যে, তাদের নাকি বিয়ে হয়েছে।
আর ঘর সংসার সে তো আগের মতোই। লোকটা শুধু রাতে গিয়ে রিতার কাছে থাকে। রিতার সন্তুষ্টি এটাই। তার একটা পরিচয় তো থাকলো। সমাজে বসবাস করতে একটা পরিচয় লাগে। তা না হলে বিপদ পদে পদে। নারী পুরুষ সম্পর্কে যাই কিছু বলুক না কেন। নারীর জন্য পুরুষ একটা ছায়ার মতো। একটা ছায়া না থাকলে মানুষ পুড়ে যায়। যে সমস্ত নারী পুরুষদের ছায়া ভাবে না, একলা চলতে চায় তাদের জীবন অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ।
যাইহোক।
তার মধ্যে নাকি আরও কিছু বেহায়া পনা আর খারাপ সম্পর্ক রিতার পিছু ছাড়ে না। রিতা এভাবেই অভ্যস্ত। পুরুষের দৈরত্ব আর খবরদারি তার চক্ষুশূল। রেজিস্ট্রার অফিসের লোকটা হয়তো ভালো বেসে ফেলেছিল রিতা কে। আর দশ টা মানুষের মতো স্ত্রী হিসেবে রিতা কে ভাবতে চেয়েছিল। রিতা উড়ন্ত বলাকা। ঘর সংসার শব্দটা তার কাছে বে মানান। পুরুষের হাত ছাড়বে, পুরুষের হাত ধরবে, এমন হাত বদল এর মতো সুন্দর জীবন রিতার কাছে অনেক দামী।
দারুণ তেতিয়ে তুলে রেজিস্ট্রার অফিসের সেই লোকটা কে।
ছলে বলে রিতাকে একটা চাতালে ডাকে। রিতা সাহসী। ভর রাত হোক আর ভর দুপুর তাতে কি। আর যেহেতু তার স্বামী ডাকছে যেতে সমস্যা কি? খারাপ কিছু ভাববার ও কোন কারণ থাকার কথা নয়।
তার ভয় নেই। হারাবার ও কিছু নেই।
রিতা চাতালে চলে চলে যায় একা। ভীষণ রোদ সেদিন। এত টাই রোদ ছিলো যে রাস্তায় মানুষ জন ও খুব প্রয়োজন ছাড়া তেমন বের হয়নি। ফাঁকা চাতাল। রিতা চাতালে যাওয়া মাত্র। তার স্বামী ও তার বন্ধুরা হাসি মুখে আমন্ত্রণ জানায় রিতা কে।
একজন বলে, ভাবি আমরা আজ পিকনিক খাচ্ছি, তাই আপনাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসেছি।
খাওয়া দাওয়া শেষ হলে ঠান্ডা পানীয় দেয়া হয় রিতা কে। রিতা খেয়ে আর চোখ খুলে রাখতে পারেনি। সেখানে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে দেয়া ছিলো। ঘুমের ভিতর ডুবে যায় রিতা। রিতার স্বামী
রেজিস্ট্রার অফিসের সেই লোকটা সহ আরও তিন চারজন মিলে রিতা কে চাতালের একটা গোডাউনে দিনে ও সারারাত সবাই মিলে অনেকবার পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
একসময় রিতার জ্ঞান ফিরে আসে। কিন্তু রিতার বাধা দেয়ার মতো শক্তি ছিলো না।
ভোরবেলা রিতাকে গলা টিপে মেরে ফেলে।
এরপর বস্তাবন্দি মরদেহ রেজিস্ট্রার অফিসের সেই লোকটা তার মোটরসাইকেলের পিছনে তুলে বেধে, শহর থেকে বহুদুর একটা নদীতে ফেলে দিতে চলে যায়।
তখন ভোর প্রায়। গ্রামের রাস্তা। কিছুটা দুরে নদী।
পথিমধ্যে একজন মানুষের সাথে মুখোমুখি দেখা হয় তার একজন পরিচিত লোকের।
বস্তায় কি?
দোকানের মালামাল।
তা এদিকে কই যাও? তা এইদিকে এত ভোরে?
সামনের একটা দোকানে দিয়ে চলে আসব।
আচ্ছা আচ্ছা যাও।
রেজিস্ট্রার অফিসের সেই লোকটার বুকের ভিতর কেঁপে উঠে আতংকে।
জোরে চালিয়ে একটা ব্রিজের নিচে ফেলে দেয় রিতার বস্তাবন্দি মরদেহ।
দু'দিন পরে লাশ ভেসে উঠে নদীতে।
হাজার মানুষ ভীড় জমায় লাশ দেখতে। শহরের মানুষ জন ও ছুটে আসে।
অনেকে চিনতে পারে রিতার লাশটি।
সেই লোকটা ও গিয়েছিল সেখানে। যে পথিমধ্যে বস্তা বাধা মোটরসাইকেলের দেখা পেয়েছিল।
সে এখন বুঝতে পারে সমস্ত ঘটনা।
পুলিশ রিতার লাশটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
মামলা হলো। রিতার কোন ওয়ারিশ ছিলো না। একটা হত্যা মামলা হয়। পুলিশের নিকট এটা একটা অলাভজনক মামলা মনে হয়। দিনে দিনে হারিয়ে যায় সব আলামত, পুলিশকে ম্যানেজ করে তার স্বামী। তারপর যতদুর শুনেছি
কখনো আর সে মামলা আলোর মুখ দেখেনি।